আগামী দিনের উদ্যান
ইলমের প্রতি মহব্বত
মদীনা মুনাওয়ারা প্রিয় নবীর প্রিয় শহর। তাঁর জন্ম মক্কা মুকাররমায়। কাফেরদের নির্যাতনের কারণে তাঁকে হিজরত করতে হয় মদীনায়। জন্মভূমির লোকেরা দেশত্যাগে বাধ্য করে। অথচ মদীনার লোকেরা তাঁকে বুকে টেনে নেন। শ্রদ্ধা, মহব্বতের সঙ্গে বরণ করে নেন। ইতিহাসের পাতায় আজও জ্বলজ্বল করছে তাঁদের সেই আনন্দ। সেই থেকে প্রিয় নবীজির সঙ্গে মদীনা ও মদীনার লোকদের ভালোবাসার সম্পর্ক। তাই মদীনাকে বলা হয় ‘মদীনাতুন নাবী’।
ছোট্ট বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয় জানো ওখানেই আছে মসজিদে নববী। এই মসজিদে আছে নবীজির রওজা মুবারক। সেখানে মানুষ দুরূদ ও সালাম পেশ করে।
জানো, একসময় মসজিদে নববী ছিল ইলমের কেন্দ্রবিন্দু, হাদীসের দরসগাহ। নবীজির ওফাতের পর থেকে বড় বড় সাহাবী, তাবেয়ী, তাবে—তাবেয়ী ওখানে হাদীসের দরস দিয়েছেন। দূর—দূরান্ত থেকে ইলম—পিপাসুরা ছুটে আসত মদীনার মসজিদে নববীতে। দিন—রাত তাঁরা ইলমের পিপাসা নিবারণ করতেন। মসজিদে নববী ছিল একটি সমৃদ্ধ ফুল বাগান। যাতে রয়েছে রং—বেরংয়ের ফুল। ইলম—পিপাসুরা যেন মৌমাছি। দলে দলে তাঁরা ভিড় করত ফুল বাগানে। বের হতো মধু আহরণে তৃপ্ত হয়ে।
এই বাগানেরই একটি ফুল ছিলেন হযরত মালেক ইবনে আনাস রহ.। তাঁর দরসগাহে থাকত সব সময় উপচেপড়া ভিড়। অনেক দূর দেশের মানুষ আসত তাঁর কাছে। তেমনি একজন ছাত্র ইয়াহইয়া। তিনি কত দূর থেকে এসেছেন জানো?
সুদূর স্পেন থেকে। চিন্তা করে দেখো কোথায় মদীনা আর কোথায় স্পেন। হঁ্যা, শুধু ইলমের মহব্বত তাঁকে নদী, পাহাড়, সাগর ডিঙ্গিয়ে এখানে নিয়ে এসেছে। দিন—রাত তিনি পড়ে থাকতেন মসজিদে নববীতে উস্তাদের দরসগাহে। আরবদেশে তো ঘোড়া ছিল অনেক। অনেক উটও ছিল। কিন্তু হাতি ছিল না। তাই হাতি সম্পর্কে তাদের অনেক কৌতূহল। একদিন ইমাম মালেক রহ. এর দরস চলছে। দরসের মনোযোগী ছাত্রদের একজন ইয়াহইয়া। সবাই মনোযোগ দিয়ে উস্তাদের দরস শুনছেন। এমন সময় বাইরে শোরগোল শোনা গেল—হাতি! হাতি!
ছোট্ট বন্ধুরা, একবার ভাবো তো, তুমি আমি হলে কী করতাম?
নিশ্চয় কিতাব রেখে দিতাম দৌড়। যেখানে হাতি নেই সেখানে হাতি দেখার সুযোগ কি হাতছাড়া করা যায়? না সংবরণ করা যায় দেখার লোভ?
ছাত্ররা স্থান—কাল ভুলে হাতি দেখতে দিল দৌড়। পেছনে রয়ে গেল কিতাব আর উস্তাদ। উস্তাদ ছাত্রদের আগ্রহ বুঝতে পারলেন। তাই কিছু বললেন না। শুধু মুচকি হাসলেন। তাদের থেকে নজর ফেরাতেই দেখতে পেলেন একজন ছাত্র দরস শুনতে বসে আছে। উস্তাদ জিজ্ঞেস করলেন, কী ব্যাপার ইয়াহইয়া, তুমি যে গেলে না? তোমাদের দেশ স্পেনেও তো শুনেছি হাতি নেই।
ইয়াহইয়া কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থাকলেন। তারপর আদবের সঙ্গে জবাব দিলেন, আমি নিজ দেশ ছেড়ে এখানে এসেছি ইলম হাসিল করতে। হাতি দেখনে আসিনি। দরস রেখে হাতি দেখতে যাওয়াটা আমার ভালো মনে হয়নি। হাতি বরং পরে দেখে নেব।
ছাত্রের এমন সুন্দর জবাব শুনে উস্তাদ কিছুক্ষণ নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। হৃদয় তাঁর ভরে উঠেছে খুশিতে। মুহূর্তেই তাঁর যবান থেকে উচ্চারিত হলো ছাত্রের প্রতি স্নেহসিক্ত দুআ :
‘আল্লাহ তোমার ভালো করুন, ইয়াহইয়া। একদিন তুমি অনেক বড় আলেম হবে ইনশাআল্লাহ।’
উস্তাদের দুআ কি কখনো বিফল হতে পারে?
পারে না। নেক দুআও না, বদ দুআও না। তাই তো একদিন তিনি হলেন অনেক বড় আলেম। মুয়াত্তা ইমাম মালেকের প্রসিদ্ধ রাবী—বর্ণনাকারী হলেন, হযরত ইয়াহইয়া ইবনে ইয়াহইয়া মাসমুদী রহ. (মৃত্যু : ২৩৪ হি.)। মদীনার এত এত তালিবে ইলম থাকতেও তাঁর রেওয়ায়াত—বর্ণনা সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধি পেয়েছে। তাহলে বোঝো, কী পরিমাণ একাগ্রতার সঙ্গে তিনি পড়ে থাকতেন উস্তাদের দরসগাহে ইলম অর্জনের জন্য।
এসো ছোট্ট বন্ধুরা, এখন আমরা একটু মন দিয়ে দুআ করি। দয়াময় আল্লাহ যেন আমাদেরও দান করেন ইলমের এমন মহব্বত। উস্তাদের এমন নেক দুআ আমাদের ভাগ্যেও যেন জোটে। আমরাও যেন হতে পারি এমন সোনার মানুষ।
উম্মে হাবীবা তামান্না
বরকতময় সেই পেয়ালা
আজ থেকে প্রায় সাড়ে চৌদ্দ শ বছর আগের কথা। মিকদাদ বিন আমর রাযি. প্রিয় নবীর প্রিয় সাহাবী। ৩৩ হিজরীতে তিনি ইন্তেকাল করেন। বয়স হয়েছিল সত্তর।
তিনি বলেন, একদিনের কথা, আমি এবং আমার দুই সঙ্গী মদীনায় বেড়াতে এলাম। সফরের কষ্ট এবং ক্ষুধায় আমরা ছিলাম খুব ক্লান্ত। চোখ, কান বন্ধ হয়ে আসছিল প্রায়। ওদিকে এখনো মেযবান মিলেনি। সাহাবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হচ্ছে আতিথেয়তার বিষয়ে, কেউ এখনো কিছু বলছেন না।
আমরা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলাম। তিনি আমাদেরকে তাঁর মেহমান করে নিলেন। নিয়ে গেলেন তাঁর ছোট্ট কুটিরে। বাড়িতে সর্বসাকুল্যে তিনটি বকরি ছিল। তিনি বললেন, আমরা এখন থেকে বকরি তিনটি দোহন করে বণ্টন করে পান করব। আমরা বকরি তিনটি দোহন করতাম। প্রত্যেকে নিজ নিজ অংশ পান করে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্যও একটি অংশ রেখে দিতাম।
তিনি রাতের বেলা এসে আমাদেরকে সালাম দিতেন। এতে ঘুমন্তদের ঘুমে কোনো ব্যাঘাত ঘটত না; তবে জাগ্রতরা ঠিকই শুনত। এরপর তিনি ঘরে নির্ধারিত স্থানে নামায পড়তেন। সবশেষে দুধটুকুও পান করতেন।
এক রাতের কথা। আমি আমার অংশ পান করেছি মাত্র, ঠিক তখনই ইবলিশ এসে আমায় প্ররোচনা দিয়ে বলল, মুহাম্মদ তো আনসারীদের বাড়িতে গেছেন। তাঁরাই তাঁকে আপ্যায়ন করাবে। তিনি ওখানেই খেয়ে আসবেন। একঢোক দুধের কীই—বা চাহিদা থাকবে তাঁর। কথাটা আমার মনে ধরল। আমি নবীজির অংশটুকুও পান করে ফেললাম। দুধ পান শেষ করতেই এবার শয়তান আমায় তিরস্কার শুরু করল। বললো, হায়! এ কী করলে তুমি! মুহাম্মদের অংশটুকুও পান করে নিলে! নবীজির অংশ! ধিক তোমায়, শত ধিক। তিনি এসে যখন দেখবেন তাঁর অংশটুকু নেই তখন তিনি তোমায় বদদুআ করবেন। তোমার দুনিয়া—আখেরাত সব খোয়াবে। ধ্বংস তোমার অনিবার্য।
মিকদাদ রাযি. বলেন, আমার চোখে ঘুম নেই। গায়ে জড়ানো ছিল ছোট একটি চাদর―মাথা ঢাকলে পা বের হয়ে যায়, পা ঢাকলে মাথা। পাশেই আমার দুই সঙ্গী নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। তাঁরা তো আমার মতো অপরাধী নয়।
একসময় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে প্রতিদিনের ন্যায় সালাম দিলেন। নামায পড়ে দুধের পাত্রের দিকে অগ্রসর হলেন, ঢাকনা সরিয়ে দেখেন তা খালি। তিনি আকাশের দিকে তাকালেন। আমি মনে মনে বলতে লাগলাম, হায়! এই বুঝি তিনি বদদুআ করবেন; আর আমি…।
কিন্তু না, রাতের নীরবতা ভেঙে দিয়ে তিনি বললেন, হে আল্লাহ, যে আমাকে আহার করাবে তাকে তুমি আহার দিয়ো, যে আমাকে পান করাবে তার পিপাসা দূর কোরো।
আমি এক লাফে বিছানা ছাড়লাম। চাদরটা গায়ে জড়িয়ে ছুরি হাতে নিলাম। প্রিয় নবীর আপ্যায়নে সবচেয়ে মোটা তাজা বকরিটা জবাই করব। আমার দৃষ্টি পড়ল বকরির ওলানে। দেখি সবগুলো দুধে ভরপুর। পাত্র এনে দুধ দোহন করলাম। ফেনা উপচে পড়ছে প্রায়। আমি নবীজি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর সামনে পাত্র উপস্থিত করলাম।
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা রাতে দুধ পান করেছ? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনি পান করুন। তিনি পান করলেন। আমি বললাম, আরও পান করুন। তিনি আরও পান করে আমাকে দিলেন। যখন আমি নিশ্চিত হলাম তিনি পরিতৃপ্ত এবং আমি তাঁর দুআয় গর্বিত প্রাপক, আনন্দে হাসতে হাসতে আমি মাটিতে বসে পড়লাম।
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, মিকদাদ, এত হাসির নেপথ্যে কী?
আমি নবীজিকে পুরো কাহিনি শোনালাম। বৃত্তান্ত শুনে তিনি বললেন, ‘এটা আল্লাহ তাআলার বিশেষ রহমত, তাঁরই আজলা—ভরা দান।’ সঙ্গী দুজনের দিকে তিনি তাকিয়ে বললেন, তুমি আগে বললে তাদেরকেও জাগাতাম। তারাও চুমুক দিত বরকতের এই পেয়ালায়।—সহীহ মুসলিম, হাদীস নং : ২০৫৫
মুহাম্মদ জিহাদুল ইসলাম
মোমেনশাহী, বাংলাদেশ
মেঘওয়ালা
প্রাচীনকালে এক লোক ছিল ইবাদত—বন্দেগী, অল্পেতুষ্টি, আর দুনিয়া বিমুখতায় প্রসিদ্ধ ছিল। দুআ করলে আল্লাহ তাঁর দুআ কবুল করতেন। চাইলে দান করতেন। তাঁর আশা পূরণ করতেন। সে পাহাড়ে বসবাস করত। রাতে তাহাজ্জুদ পড়ত। আল্লাহ তাআলা এক খণ্ড মেঘ তাঁর জন্য নিয়োজিত করে দিয়েছিলেন। এটা তাঁর সঙ্গে সঙ্গে চলত। পবিত্র ও মিষ্টি পানি বর্ষণ করত। সে পানি দিয়ে ওজু করত, পান করত।
এভাবে চলতে চলতে একসময়ে তার ইবাদতে অলসতা দেখা দিল। ফলে আল্লাহ তাআলা মেঘখণ্ডটি সরিয়ে নিলেন। দুআ কবুল করা বন্ধ করে দিলেন। সে অনেক অস্থির ও বিষণ্ণ হয়ে পড়ল। নেয়ামতপূর্ণ মেঘখণ্ডটির আগ্রহে সে আফসোস করতে লাগল। পরে একরাতে স্বপ্নে দেখল, একব্যক্তি তাকে বলছে, তুমি মেঘখণ্ডটি ফিরে পেতে চাইলে অমুক দেশের অমুক রাজার কাছে যাও। তাঁর কাছে আবেদন করো তিনি যেন আল্লাহর কাছে দুআ করেন। তাঁর নেক দুআর বরকতে আল্লাহ মেঘখণ্ডটি ফিরিয়ে দিতে পারেন।
পরদিন সকালে লোকটি রওনা হলো। স্বপ্নে বর্ণিত দেশে গিয়ে পেঁৗছল। রাজার সন্ধান নিয়ে তাঁর প্রাসাদে গেল। গিয়ে দেখে গেইটে বিশাল এক চেয়ারে এক গোলাম বসা। গায়ে সুন্দর পোশাক। লোকটি দাঁড়িয়ে সালাম দিল। বালকটি সালামের উত্তর দিয়ে জিজ্ঞাসা করল, কী প্রয়োজন তোমার?
বলল, আমি রাজা মহাশয়ের সাক্ষাৎ চাই। তাকে আমার প্রয়োজনের কথা বলতে এসেছি।
বালকটি বলল, সুযোগ নেই। কারণ তিনি সপ্তাহে একদিন অভিযোগ শোনেন। সেদিন সবাই তাঁর কাছে যায়। এটি অমুক দিন। তুমি ওই দিনের অপেক্ষা করো। জনগণ থেকে রাজার এই দূরত্ব লোকটির অপছন্দ হলো। মনে মনে বলল, এমন রাজা কীভাবে আল্লাহর ওলী হয়। সে নির্দিষ্ট দিনের অপেক্ষা করতে লাগল।
নির্দিষ্ট দিনে সে দরবারে হাজির হলো। দরজায় কিছু লোক অনুমতির অপেক্ষা করছে। সে তাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেল। এক মন্ত্রী গোলাম সঙ্গে নিয়ে বাইরে এসে অপেক্ষারতদের ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দিল। অন্যান্য লোকের সঙ্গে মেঘওয়ালা ভেতরে গেল। দেখল রাজা মহাশয় রাজ্যের গণ্যমান্য লোকদের নিয়ে বসে আছেন। মন্ত্রী দাঁড়িয়ে একজন একজন করে রাজার সামনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে মেঘওয়ালার পালা এল। রাজা তাকে দেখে বললেন, মেঘওয়ালা, স্বাগতম! তুমি বসো। আমি অবসর হয়ে নিই। সে রাজার কথায় অবাক হলো। আল্লাহর কাছে তাঁর মর্যাদার বিষয়টি মেনে নিল। বিচারকার্য শেষ হলে রাজা উঠলেন। মন্ত্রী ও সভাসদবর্গ উঠে গেল। তারপর বাদশা মেঘওয়ালার হাত ধরে প্রাসাদে নিয়ে গেলেন। সে দেখল, সামনে এক কালো গোলাম। তার মাথার উপর অস্ত্র, ডানে বামে ঢাল—তলোয়ার। মেঘওয়ালা বলেন, গোলাম প্রাসাদের দরজা খুলে দিল। বাদশা তাতে প্রবেশ করলেন। তিনি আমার হাত ধরে হাঁটছেন। সামনে পড়ল ছোট একটি দরজা। রাজা নিজে সেই দরজাটি খুলে পরিত্যক্ত ও বড় এক ভবনে প্রবেশ করলেন। তারপর এমন এক কামরায় প্রবেশ করলেন যাতে শুধু একটি গালিচা, একটি ওজুর পাত্র আর কিছু খেজুর পাতা আছে। তিনি দরবারের পোশাক খুলে পশমি সাদা খসখসে জুব্বা পরলেন, মাথায় পশমি টুপি দিলেন। তিনি বসলেন, আমাকে বসালেন। স্ত্রীকে ডেকে বললেন, জানো আজ আমাদের মেহমান কে?
সে উত্তর দিল, জি, তিনি মেঘওয়ালা।
স্ত্রীকে বললেন, ভেতরে আসো। স্ত্রী প্রবেশ করতেই দেখি, ছবির মতো সুন্দর এক নারী। চেহারা চাঁদের মতো জ্বলজ্বল করছে। গায়ে আলখিল্লা, মাথায় দুপাট্টা।
রাজা আমাকে বললেন, ভাই, তুমি কী চাও আমাদের খবর শুনবে? নাকি তোমার জন্য দুআ করে দেব তুমি চলে যাবে?
মেহমান বলল, আমি আপনাদের খবর শুনতে আগ্রহী।
রাজা বলতে লাগলেন, আমার বাপ—দাদারা রাজা ছিল। মৃত্যু পর্যন্ত ওয়ারিস সূত্রে একের পর এক রাজা হতে হতে রাজত্ব আমার কাছে এসে পেঁৗছেছে। আর আল্লাহ তাআলা রাজত্ব আমার কাছে অপছন্দনীয় করে দিয়েছিলেন। আমি চেয়েছিলাম দেশে দেশে ঘুরে বেড়াব। জনগণের ব্যাপার জনগণের হাতে ছেড়ে দেব। কিন্তু আমার কল্পনায় ধারণা হলো, আমার অবর্তমানে তারা ফেতনা, শরীয়তের বিধিবিধান লঙ্ঘন এবং ধর্মীয় ঐক্য নষ্ট করে বসতে পারে। তাই রাজত্বের বিষয়টি যেমন ছিল তেমনি রেখে দিয়ে নিজে রাজত্ব গ্রহণ করেছি। প্রত্যেকের জন্য নির্দিষ্ট ভাতা নির্ধারণ করে দিয়েছি। রাজার পোশাক পরেছি। দুষ্ট লোকদের ভয় দেখানো, ভালোদের হেফাযত এবং দণ্ডবিধি কায়েম করার জন্য গেইটে গেইটে গোলামদের বসিয়ে দিয়েছি।
ওই সব থেকে অবসর হলে ঘরে যাই। এই পোশাকগুলো খুলে ফেলি। এখন যে পোশাক দেখছ তা পরি। ও আমার স্ত্রী। চাচাতো বোন। অল্পেতুষ্টি আর দুনিয়াবিমুখতায় সে আমার সঙ্গ দিয়েছে। ইবাদত—বন্দেগীতে আমার সহায়তা করে। আমরা রোযা রাখি। দিনে এই খেজুর পাতার কাজ করে সে উপার্জন দিয়ে ইফতার করি। এভাবে আমাদের প্রায় চল্লিশ বছর পার হয়ে গেছে। তুমি আমাদের সঙ্গে থাকো। খেজুর পাতা বিক্রি করি। তুমি আমাদের সঙ্গে ইফতার কোরো। রাতে থাকো। পরে ইনশাআল্লাহ তোমার প্রয়োজন পুরো করে চলে যাবে।
বিকালে এক গোলাম এল। খেজুর পাতার যে কাজ তারা করেছে ওটা বাজারে নিয়ে গেল। বিক্রি করে রুটি—সবজি নিয়ে এল। আমি তাদের সঙ্গে ইফতার করে ঘুমিয়ে গেলাম। তারা মধ্যরাতে উঠলেন। নামায পরে রোনাজারি করতে লাগল। যখন ফজরের সময় হলো রাজা মহাশয় বললেন, হে আল্লাহ, এ তোমার বান্দা। তোমার কাছে তার মেঘখণ্ডটি ফিরে পেতে চাচ্ছে। তুমি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। তুমি তার দুআ কবুল করো। মেঘখণ্ডটি ফিরিয়ে দাও। তার স্ত্রী বলল, আমীন। আল্লাহ তুমি কবুল করো।
হঠাৎ দেখি মেঘখণ্ডটি আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে। আমি আনন্দিত হলাম। তাদের প্রতি ঈর্ষান্বিত হলাম। তাদেরকে বিদায় জানিয়ে ফিরে এলাম। মেঘখণ্ডটি আমাকে আগের মতো সঙ্গ দিতে লাগল।