আব্দুল্লাহদের বাসায় আজ অনুষ্ঠান
আব্দুল্লাহদের বাসায় আজ অনুষ্ঠান। ঘর—দোর পরিষ্কার করা হয়েছে। বিছানায় নতুন চাদর বিছানো হয়েছে। সবকিছু গুছিয়ে পরিপাটি করা হচ্ছে। রান্নাঘর থেকে ভেসে আসছে মজার ঘ্রাণ। পোলাও, রোস্ট, কাবাব আরও কী কী যেন রান্না হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর ভাইয়া আসবেন। জারির, মুহাম্মদ, নুসাইবা, লুবাবা সবাই এসেছে। সবাই আজ দুপুরে একসঙ্গে খাওয়া—দাওয়া করবে। আব্দুল্লাহ আর ফাতেমার জন্য ওদের আব্বু নতুন জামা এনেছেন। সবাই খুব আনন্দে আছে। আব্দুল্লাহ অপেক্ষা করছে, কখন ভাইয়া আসবে।
কিন্তু আজকের এত আয়োজন কেন? কেন আজ সবাই একত্র হচ্ছে? ভাইয়াই—বা কেন আজ বাসায় আসছেন? আব্দুল্লাহ ও ফাতেমাকে কেন নতুন জামা কিনে দেওয়া হলো? আজ তো ঈদের দিন নয়। তাহলে এত সব কিসের জন্য? আব্দুল্লাহ কিছুই বুঝতে পারছে না। আব্বু—আম্মুকে এ পর্যন্ত কয়েক বার জিজ্ঞেস করেছে। তাদের একই উত্তর, তোমার ভাইয়া এলে সব জানতে পারবে।
ফাতেমাকে জিজ্ঞেস করলে ও কেবল মুচকি হাসে। বলে, ভাইয়া সব জানে।
আব্দুল্লাহর মেজাজটা খুব খারাপ হয়। আপুর হাসি দেখে খুব বিরক্ত লাগে। এই আপুটা না ওকে অনেক কিছুই বলে না। নিজে বুঝলেও ওকে বোঝায় না। কখনো প্রশ্ন করলে বলে, তুমি ছোট। এত কিছু বুঝবে না। ইশ, আমি ছোট! আর ও বুঝি অনেক বড় হয়ে গেছে? ও কি আব্বুর মতো বড়? আম্মুর মতো বড়?
আচ্ছা, ভাইয়া আসুক। ভাইয়া থেকেই আজ সব জেনে নেওয়া যাবে।
টিং টং… কলিং বেইল বেজে উঠল।
ভাইয়া এসেছে, ভাইয়া এসেছে বলে আব্দুল্লাহ দৌড়ে গেল দরজার দিকে। আব্দুল্লাহর পিছু পিছু ছুটল সব বাচ্চারা।
আম্মু দরজা খুলে দিলেন।
—আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।
—ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু।
ভাইয়া হাতে এতগুলো কী? আব্দুল্লাহ বলল।
—তোমাদের জন্য অনেক কিছু এনেছি। মিষ্টি, চমচম, দই আর আইসক্রিম।
আব্দুল্লাহ বলল, ভাইয়া আজ এত কিছু কেন এনেছেন? বাসায় আজ কিসের অনুষ্ঠান? আজ…
আম্মু বললেন, আরে ওকে কি আজ তোমরা দরজার সামনে দাঁড় করিয়ে রাখবে? বাসায় ঢুকতে দাও না। এরপর তোমাদের যা প্রশ্ন করার করবে।
আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার…
জোহরের আযান হচ্ছে।
আব্দুল্লাহ আজ মহাখুশী। আজ তার খেলার সঙ্গী অনেক। এর মধ্যে পাশের বাসার আলী ও নাহিদও এসে যোগ দিয়েছে তাদের সঙ্গে।
আব্দুল্লাহ… মুহাম্মদ… দাদা ডাকছেন।
—কী তোমরা শুধু খেলেই যাবে? আযান হয়েছে শুনেছো? চলো আমরা মসজিদে গিয়ে নামায পড়ে আসি। নামাযের পর সবাই বসে গল্প করব। এরপর খাওয়া—দাওয়া।
গল্পের কথা শুনে সবাই একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠল : গল্প….. কি মজা কি মজা।
জোহরের নামায পড়ে সবাই মসজিদ থেকে আসল। বাসায় মেয়েরাও নামায আদায় করে নিয়েছে। সবাই সোফার রুমে গিয়ে বসল। ভাইয়া এসে বসলেন। হাতে সুন্দর একটি প্যাকেট। সবাই তাকিয়ে এটার দিকে। কী হতে পারে এটার ভেতর। সবার মনেই কৌতূহল। আব্দুল্লাহ জিজ্ঞেস করে বসল, ভাইয়া, এটাতে কী? কী এনেছেন আমাদের জন্য?
ফাতেমা বলে উঠল, তুমি কীভাবে জানো, এটা আমাদের জন্য আনা হয়েছে। হতে পারে এটা ভাইয়ার কোনো জরুরি জিনিস হবে।
আব্দুল্লাহ রেগে গেল, আপু, তুমি শুধু আমার কথায় দোষ ধরো। ভাইয়া, আপু আমার সাথে ভালোভাবে কথা বলে না। আজ কত বার জিজ্ঞেস করলাম, আজ কিসের অনুষ্ঠান। কেউ কিছু বলে না। আপুকে জিজ্ঞেস করলে শুধু হাসে আর বলে, ভাইয়া জানে। আব্বুও বলে না। আম্মুও বলে না।
আব্দুল্লাহর রাগ দেখে সবাই একযোগে হেসে উঠল।
ভাইয়া বলল, আহা রাগ করো না। ফাতেমা তোমাকে খারাপ কিছু বলেনি। আর আজকের অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তোমাদেরকে কিছু বলতে আমিই বারণ করেছিলাম। ভেবেছিলাম, তোমাদের একটি চমক দেব।
—ভাইয়া আজ কী? আব্দুল্লাহর প্রশ্ন।
—বলছি। এর আগে আমি তোমাদের জিজ্ঞেস করি, আজ কত তারিখ?
—২০ তারিখ। ফাতেমা ও নাহিদ বলল।
—কোন মাসের ২০ তারিখ?
—কেন, এখন তো জুলাই মাস। জুলাই মাসের ২০ তারিখ। নাহিদ বলল। সঙ্গে মুহাম্মদও সায় দিল।
ভাইয়া বললেন, ফাতেমা, তুমি বলো, আজ কোন মাসের ২০ তারিখ।
—আজ যিলহজ মাসের ২০ তারিখ।
আলী বলল, ফাতেমা, তুমি কী নাম বললে, আবার বলো তো।
—যিলহজ।
—যিলহজ? এ নাম তো কখনো শুনিনি। ভাইয়া, যিলহজ আবার কী নাম? আমরা তো স্কুলের বইয়ে পড়েছি, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল, মে, জুন, জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর।
নাহিদ বলল, বাংলায়ও বারো মাসের নাম আছে। বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন, চৈত্র। কিন্তু ইংরেজি বা বাংলা ১২ মাসের মধ্যে তো ‘ডিলহা’ নামে কোনো মাস নেই।
—‘ডিলহা’ নয় যিলহজ।
—ও আচ্ছা।
আব্দুল্লাহ বলল, ভাইয়া, এ কি শুরু করল সবাই। জিজ্ঞেস করলাম, আজ কিসের অনুষ্ঠান, আর সবাই কি নিয়ে ঝগড়া শুরু করেছে। ভাইয়া আজ কী বলেন না। নাহিদ ভাইয়া, আর কোনো কিছু বলবেন না। ভাইয়া, বলেন না আজ কিসের অনুষ্ঠান।
—ঠিক আছে, বলছি। আজ যিলহজ মাসের ২০ তারিখ। ফাতেমার ৭ বছর পূর্ণ হয়েছে। গত ১৪৩৬ হিজরীর ২০ যিলহজ ফাতেমার জন্ম হয়েছিল।
—৭ বছর হলে কী হয়, ভাইয়া? নাহিদের প্রশ্ন।
—আমাদের নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সাত বছর বয়স হলে সন্তানদের নামায পড়ার আদেশ করো। দশ বছর হয়ে গেলে নামায না পড়লে প্রয়োজনে শাস্তি প্রদান করো।’ তো ফাতেমার আজ সাত বছর পূর্ণ হয়েছে। সে যদি আরও আগ থেকেই নামায আদায় করে। তবে এখন থেকে নিয়মিত নামায আদায় করবে। ফজরের সময়ও উঠবে, ইনশাআল্লাহ। কী বলো, ফাতেমা?
—জী, ভাইয়া। ইনশাআল্লাহ, আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করব।
—তোমরা সবাই ফাতেমার জন্য দুআ করবে। আর আব্দুল্লাহর যেদিন সাত বছর পূর্ণ হবে সেদিনও আব্বু একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন বলেছেন। আচ্ছা নাহিদ, তোমার জন্ম তারিখ কত জানো?
—১ অক্টোবর ২০১২।
—হিজরী সন বলো।
—হিজরী সন কী তাতো জানি না।
—হিজরী সন হলো মুসলমানদের প্রচলন করা সন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর হিজরতের বছর থেকে এ সনের গণনা শুরু বলে তাকে হিজরী সন বলে। আমাদের ধর্মের বেশির ভাগ ইবাদত হিজরী সনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই মুসলমানদের জন্য হিজরী সনের হিসাব রাখা ফরয। তোমরা সবাই তোমাদের আব্বু—আম্মুকে বলে নিজেদের জন্ম তারিখ কত হিজরীতে তা জেনে নিবে।
—ভাইয়া, আপনাদের কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমরা মিষ্টি আর আইসক্রিম কখন খাবো?
—ও হ্যাঁ, মিষ্টি, আইসক্রিম, পোলাও, কাবাব সবই খাবে। তবে এর আগে একটি কাজ করতে হবে।
—কী কাজ?
—সবাই আজ হিজরী সনের মাসগুলোর নাম মুখস্থ করে ফেল। আমার সঙ্গে মুখে মুখে বল :
মুহাররম
সফর
রবিউল আউয়াল
রবিউস সানী
জুমাদাল উলা
জুমাদাল আখিরাহ
রজব
শাবান
রমাদান
শাওয়াল
যিলকদ
যিলহজ
—চলো, এখন খাবার খেতে বসি।
নুসাইবা আর জারির বলে উঠল, ভাইয়া গল্প কি খাওয়ার পরে শুনব?
—গল্প? গল্পের কোনো কথা তো ছিল না!
—দাদা ভাই বলেছেন, নামাযের পর খাওয়া—দাওয়া ও গল্প হবে। আব্দুল্লাহ বলল।
—ঠিক আছে। আগে খাওয়া—দাওয়া পরে গল্প।