আব্বাজানের ঘরোয়া জীবন
মাওলানা মুহাম্মদ সাঈদ পালনপুরী
দারুল উলূম দেওবন্দের শাইখুল হাদীস ও সদরুল মুদাররিসীন আব্বাজান হযরত মাওলানা মুফতী সাঈদ আহমদ পালনপুরীর ইন্তেকালের পর থেকেই তাঁকে নিয়ে লেখালেখির ধারা এখনো চলছে। সে লেখাগুলোতে লেখকগণ তাঁর জীবনের নানা দিকের উপর আলোকপাত করেছেন। আব্বাজানের জীবনের একটি দিক ছিল তাঁর ঘরোয়া জীবন। আমরা ভাইদের প্রতি আব্বাজানের ঘরোয়া জীবন সম্পর্কে লেখার নির্দেশ হলো। কারণ, আরবী প্রবাদ আছে,
صاحب البيت أدرى بما فيه
ঘরের মানুষই ভালো জানে ঘরের ভেতর কী আছে।
সে নির্দেশ পালন করতেই কিছু লিখছি।
সমতা রক্ষা করা
আমাদের পরিবার অনেক বড়। আমরা ভাই—বোনই এক ডজনে বেশি। আমাদের ছেলে—মেয়েদের নিয়ে চার ডজন প্রায়। এত বড় পরিবার হওয়ার পরও আব্বাজান রহ. সবার মাঝে সমতা রক্ষা করতেন। নাতি—নাতনিদের কিছু দিতে হলে সবাইকে ডেকে আনতেন। এমন হতো না, যাদের প্রতি বেশি টান তাদেরকে বেশি দিতেন বা লুকিয়ে কিছু দিতেন। এটা ছিল তাঁর স্বভাব পরিপন্থী। অন্যান্য বিষয়েও তাঁর সমতা রক্ষার ব্যাপারটি বরাবর চোখে পড়ত। কুতুবখানার বার্ষিক হিসাবের সময় একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ সন্তানদের বাড়তি ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রদান করতেন। এটা শুধু যারা দেওবন্দে ছিল তারাই পেত এমন নয়। ছেলে মেয়ে যে যেখানেই থাকুক সবাই পেত। বোনরা শুধু মীরাসের ক্ষেত্রে শরীয়ত অনুযায়ী অর্ধেক পেত। বাকি সব জায়গায় আব্বাজান ছেলে—মেয়ে, বিবাহিত—অবিবাহিতের মাঝে কোনো পার্থক্য করতেন না। সবাইকে সমান দিতেন।
শুধু সমতা নয় ইনসাফও
এই যে সমতা রক্ষা, এটা চোখ বন্ধ করে সবসময় সবজায়গায় অবলম্বন করতেন না। কখনো ব্যতিক্রমও হতো। আর এ ব্যতিক্রমও কারও উপর জুলম করার জন্য নয়, ইনসাফ ও নায্যতার স্বার্থেই হতো। যেমন : কুতুবখানার বাৎসরিক আয় থেকে আব্বাজান যে অর্থ বাড়তি অর্থ প্রদান করতেন, তাতে বিবাহিত অবিবাহিত সবাইকে সমান দিতেন না। এটা তো স্পষ্টই যে বিবাহিতদের পরিবার পরিচালনার খরচ অবিবাহিতদের চাইতে কয়েকগুণ বেশি। আব্বাজান এই পার্থক্যের প্রতি লক্ষ রাখতেন। এজন্য অবিবাহিতরা কিছুটা কম পেত।
যৌথ সংসার, না আলাদা সংসার
বিয়ের পর সন্তানদের একসঙ্গে রাখা ভালো, না আলাদা করে দেওয়া ভালো—মানুষ এ বিষয়ে অনেক কথা বলে। অথার্ৎ যৌথ সংসার ভালো, না আলাদা আলাদা সংসার? উভয় পক্ষেরই লোক পাওয়া যায়। সবাই নিজ নিজ মতের উপকারিতা বর্ণনা করে সে বিষয়ে চিন্তা—ভাবনা করতে আহ্বান করে। দলীল—প্রমাণ ও উদাহরণও পেশ করে। আব্বাজান রহ. আমাদের ভাইদের জন্য মাঝামাঝি একটি পথ অবলম্বন করেছেন। যার দ্বীনি ও দুনিয়াবী ফায়দা সবাই উপলব্ধি করছে। তিনি আমাদের আলাদা করে দিয়েছেন, আবার আলাদা করেনওনি। এক দৃষ্টিকোণ থেকে ভিন্ন, আরেক দৃষ্টিকোণ থেকে অভিন্ন। আলাদা করে দেওয়া হয়েছিল এভাবে, তিনি সন্তানদের সবসময়ের জন্য আঁচলে বেঁধে রেখে দেননি। আমাদের পরিবারে এমন হতো, ছোট ভাইয়ের বিয়ের তারিখ ঠিক হওয়ার মানে বড় ভাইয়ের জন্য আলাদা হয়ে যাওয়ার সংকেত। আব্বা—আম্মা তাদের সাথে শুধু নতুন বউকে রাখতেন। যতদিন না পরের জনের বিয়ে ঠিক হয়ে যাচ্ছে ততদিন তার তরবিয়ত করতেন। দেড়—দুই বছর পর যখন ছোট ভাইয়ের বিয়ে হত, তখন বড় ভাইকে ডেকে নিয়ে আলোচনা করতেন এবং নিজের পায়ে দাঁড়াতে উৎসাহিত করতেন। কয়েক মাসের খরচ, খাদ্যসামগ্রী, চুলা, থালা—বাসন, কাপড়—চোপড় রাখার আলমারি এবং একটি ফ্রিজও দিয়ে দিতেন।
সবচেয়ে বড় কথা অনেক সাহস যোগাতেন। বলতেন, ‘দেখো, আমরা শুধু তোমাদেরকে আলাদা করে দিচ্ছি। মরে তো যাচ্ছি না। আলাদা করে দিচ্ছি যেন নিজ পায়ে দাঁড়াতে শেখো। আজ না হোক কাল আমাদের মৃত্যুর পর তো আলাদা হতেই হতো। আমরা চাচ্ছি, কীভাবে সংসার পরিচালনা করতে হয় তা আমরা বেঁচে থাকতেই শিখে নাও। সংসার পরিচালনায় কোনো ধরনের সমস্যা হলে আমাদের কাছে আসতে পার।’ তাদের এই সাহস যোগানো এবং পরে ঘরের বিভিন্ন বিষয়ে সর্বদা খোঁজ—খবর রাখার বদৌলতে, আলহামদুলিল্লাহ আমাদের ভাইদের সবাই আব্বাজানের জীবদ্দশায়ই নিজেরা উপার্জন করতে পারছি। নিজেদের সংসার চালাতে পারছি। সবার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর আব্বাজানের ইচ্ছায় তাঁর খাবারের ব্যাবস্থা ভাই আহমদ সাইদের ঘর থেকে হতো। অন্য ঘরেও মাঝেমধ্যে খেতেন।
এ তো গেল আলাদা করার কথা। আর আলাদা না করার অর্থ হলো, সবাইকে ভিন্ন ভিন্ন মহল্লায় বা আলাদা প্লটে দিতেন না। একটি বড় প্লটে ইংরেজি ইউ অক্ষরের মতো করে সবার সংখ্যানুযায়ী মধ্যমাকৃতির ঘর বানিয়ে দেন। প্রতিটি ঘরের বিদ্যুতের মিটার, পানির লাইন সব আলাদা ছিল। আব্বাজানও এই ঘরগুলোর একটিতে থাকতেন। এভাবে আমরা সব ভাই আলাদা আলাদা ছিলাম কিন্তু দেখতে সবাই আব্বাজানের সঙ্গেই ছিলাম। কাউকে প্রয়োজন হলে ডেকে নিতে পারতেন। তাঁর শরীর সামান্য খারাপ হলেও ভাইরা সবাই দ্রুত তার কামরায় একত্র হয়ে যেতাম। মানুষ বলে, দুই বাসন একসাথে হলেই টক্কর লাগে। কিন্তু আব্বাজানের আশ্চর্য সুন্দর এ নীতির ফলে সমস্যার সব আশংকা দূর হয়ে যায়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে দুআ করি, সবসময় এমনই আমাদেরকে এর থেকে হেফাযত করুন।
اللَّهُمّ لاَ تَفْتِنَّا بَعدَهُ وَلاَ تَحْرِمْنَا أجْرَهُ.
হে আল্লাহ, আমাদেরকে তার পর ফিতনায় আক্রান্ত করবেন না। আমাদেরকে এর সওয়াব থেকে বঞ্চিত করবেন না।
আলাদা আলাদা থাকার দ্বীনী ফায়েদা
ভাইয়েরা আলাদা থাকার কারণে দ্বীন—দুনিয়ার অনেক ফায়েদা আমরা অনুভব করেছি। দুনিয়াবি ফায়দার তালিকা অনেক দীর্ঘ। এখানে তা উল্লেখ করছি না। দ্বীনী ফায়েদাগুলোর মধ্যে একটি বড় ফায়েদার দিক উল্লেখ করলে আশা করি উপকার হবে। তা হলো, আমাদের ভাইদের স্ত্রীরা যে হেফয করতে পেরেছেন তার পেছনে এই আলাদা সংসারের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। তারা হাফেযা হয়ে শুধু নিজ সন্তানদেরই হাফেয বানাচ্ছেন না; বরং মহল্লার ছেলে—মেয়েদেরকেও সহীহ তেলাওয়াত শেখাচ্ছেন। হাফেয বানাচ্ছেন। এভাবে আব্বা—আম্মার আমলনামায় নেকী বৃদ্ধি করার উসিলা হচ্ছেন। আমার স্ত্রী বাচ্চা হওয়ার পরও এই নীতির বরকতে হিফযের সৌভাগ্য অর্জন করে। আমি বুঝতেই পারিনি, সে কখন হাফেযা হয়। সে নিজেও না। তার হিফজ সম্পন্ন হলে এই আনন্দ ও সৌভাগ্যের কথা বন্ধুদের একটি গ্রুপে শেয়ার করলাম। তারা অনেক মুবারকবাদ দিলেন ও দুআ করলেন। জানতে চাইলেন, বিয়ের পর বাচ্চা—কাচ্চা হওয়ার পরও কীভাবে হিফয করা সম্ভব হলো?
এর উত্তরে যে পোস্ট গ্রুপে শেয়ার করেছিলাম তা সবার ফায়েদার জন্য এখানে লেখা উচিত মনে করছি। যেন আব্বাজান—প্রণীত এই ব্যবস্থাপনা ও রুটিন কেউ চাইলে গ্রহণ করতে পারে। বিশেষ করে সেই উস্তাদদের জন্য যারা মাদরাসার কোয়াটার্রে থাকেন। তাদের জন্য এ ব্যবস্থাপনা ও রুটিন বিশেষ উপকারী হবে। আমাদের ভাইদের ঘরগুলোও এমন ছিল।
সর্বপ্রথম জরুরি হলো, নিজেদের চুলা অন্যদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা থাকবে। দ্বিতীয় জরুরি বিষয় হলো, টাইমিং। এ ক্ষেত্রে মাদরাসার টাইমিংয়ের চাইতে ভালো কিছু হতে পারে না। অনেক বরকতময় টাইমিং। পরীক্ষা করে দেখুন। আমরা দারুল উলূম দেওবন্দের ঘণ্টা অনুসরণ করতাম। প্রথম ঘণ্টা বাজতেই পড়া শুরু। শেষ ঘণ্টা বাজলে ছুটি।
আসুন পড়ানো শুরু করি। কখন থেকে শুরু করব? আসুন মাগরিব থেকে শুরু করি। মাগরিব থেকে এশা পর্যন্ত নতুন সবক মুখস্থ করা হবে। আযান হলে ছুটি। এশার পর পড়া থেকে ছুটি, ঘরের কাজ থেকে নয়। আযানের পর খাবারের প্রস্তুতি। রাতে নতুন তরকারী রান্না হবে না। রুটিও এখন বানানো যাবে না। সব আসরের সময়ই রান্না হয়ে যাবে। হ্যাঁ, এশার পর ভাত রান্না করা যাবে। চাল আগে থেকেই ভিজানো থাকবে। আযানের আধা ঘণ্টা পর নামায হবে। নামাযের পর রাতের খাবার। মনে রাখবেন, মাগরিবের পর খাবার অভ্যাস থাকলে তা অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। মাগরিবের পর অনেক মূল্যবান ও বরকতময় সময়। এ সময় খাবার খেয়ে নষ্ট করা যাবে না। রাতের খাবারের পর ১৫—২০ মিনিট খাবার হজম হওয়ার জন্য এদিক সেদিক ঘুরাফেরা করবে। এরপর দ্রুত শুয়ে পড়তে হবে। যেন ফজরের সময় উঠা সহজ হয়।
ফজরের সময় উঠে সবক আবার পড়বে। নামাযের পর সবক শুনাবে। এরপর নাশতা প্রস্তুত করতে হবে। মনে রাখবেন, সকালেও নতুন রুটি বানানো হবে না। রাতের বাসি রুটি; বরং আসরের সময় বানানো রুটি। নাশতা এই বাসি রুটিতেই সারতে হবে। হ্যাঁ সবক শুনানোর পর যথেষ্ট সময় থাকলে নতুন রুটি বানানো যেতে পারে। নাশতা শেষে বাচ্চা থাকলে তাদেরকে মাদরাসা—স্কুলের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। বাচ্চাদেরকে পাঠিয়ে দিয়ে নিজে পড়তে বসে যাবে। প্রথম থেকে চতুর্থ ঘণ্টা পর্যন্ত আমুখতা পড়বে। সকালে আমুখতা পড়তে হবে কারণ, সকালে সময় বেশি। বিকালে সবকের পারা। দুপুরে পেঁয়াজ রসুন ইত্যাদি কাটার সময় তা পড়তে থাকবে। পড়তে পড়তে ওয়াশিং মেশিনে কাপড়ও ধুয়ে ফেলতে পারেন। চতুর্থ ঘণ্টার সময় আমুখতা শুনাবে। শোনানো শেষে খাবার রান্না করবে। মনে রাখতে হবে, দুপুরে এতটুকু তরকারি রান্না করতে হবে যেন রাতের জন্য যথেষ্ট হয়; বরং পরের দিন সকালের নাশতাও চলে এতে।
বারোটা বাজতেই খাবার খেয়ে নিতে হবে। এরপর যোহর পর্যন্ত হালকা বিশ্রাম। যোহর নামাযের পনেরো মিনিট পর দারুল উলূমের ঘণ্টা বাজে। ঘণ্টা বাজতেই পড়া শুরু। সবকের পারা মুখস্থ করবে। যেহেতু সবকের পারা, তুলনামূলক দ্রুতই মুখস্থ হয়ে যাবে। তো বাচ্চাদের হোমওয়ার্কে সহযোগিতাও করা যাবে। আাসরের পর রাতের জন্য রুটি বানাতে হবে। এতটুকু বানাতে হবে যেন সকালের নাশতাও করা যায়। এর সঙ্গে ভাতও রান্না করা যেতে পারে। শরীর খারাপ হলে অথবা মেহমানদের সঙ্গে আলাপ করে আসরের পরের সময় চলে গেলে রুটি বাজার থেকে কিনে আনবে। একইভাবে যেদিন সবক বেশি কঠিন হবে সেদিন রুটি বাজার থেকে কিনে আনা যেতে পারে। আসরের পর মাগরিব। মাগরিব থেকেই তো আমরা দিনের হিসাব শুরু করেছিলাম। এভাবেই একদিন পূর্ণ হলো। দৈনন্দিন রুটিনের বাইরে যে কাজ যেমন, সেলাই করা, ঘর সাফাই করা, কোথাও যাওয়া—আসা, কাউকে দাওয়াত করা ইত্যাদি—এ ধরনের কাজ হয়তো আসরের পর অথবা বৃহস্পতিবার আসরের পর থেকে জুমা পর্যন্ত সময়ের ভেতরে করবে। অথবা মহিলাদের বিশেষ দিনগুলিতে করবে।
মীরাস বণ্টন
আব্বাজান রহ. তাঁর জীবদ্দশায়ই সন্তানদেরকে স্বনির্ভর বানিয়ে নিজ দায়িত্ব কমিয়ে আনেন। এ জন্যই তিনি বেঁচে থাকতেই মীরাস বণ্টন করে দেন। মীরাস বণ্টনের এই কাজটি ছেলেদেরকে আলাদা করে দেওয়ার মতোই গুরুত্বপূর্ণ। আত্মীয়—স্বজন কেউ মারা গেলে আব্বাজানকে দেখেছি, মৃত্যুর তিন—চারদিনের মাথায়ই মীরাস বণ্টন করে দিতেন। সর্বশেষ তিন—চার মাস আগে আমাদেরই ভাই হাফেয সাঈদ আহমদ রহ. এর মীরাস বণ্টন করেছেন। পাঠক জানেন, ঘরের অভিভাবকের মৃত্যুর পর ফেতনা থেকে আত্মরক্ষা এবং পরিবারের জীবিতদের মাঝে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব বজায় থাকার জন্য যে, اللهم لاَ تَفْتِنَّا بَعدَهُ (হে আল্লাহ, আমাদেরকে তার পর ফিতনায় আক্রান্ত করবেন না।) বলে দুআ করা হয়, মীরাস বণ্টনের এই কাজে সামান্য এদিক সেদিক হওয়াই সে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বকে চুরমার করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। মীরাসে শুধু সম্পদই নয়, মানুষের মনও ভাগ হয়ে যায় অনেক সময়।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আব্বাজানের মর্যাদা বৃদ্ধি করুন, তিনি অন্তরগুলোকে বিভক্ত করার মতো এ স্পর্শকাতর বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান করে গেছেন জীবদ্দশায়ই। ইন্তেকালের দেড় দুই বছর আগে আমাদের ভাই—বোন সকলকে ঈদের ছুটিতে দেওবন্দে আসতে বলেন। এক রাতে তাঁর কামরায় সবাইকে একত্র করলেন। নিজ খরচের জন্য কিছু রেখে বাকি সব সম্পত্তি সন্তানদের মাঝে শরীয়ত মোতাবেক বণ্টন করে দেন। যেখানে নিয়মতান্ত্রিক বণ্টনের বিষয় ছিল সেখানে নিয়মতান্ত্রিক বণ্টন করেছেন। যেখানে অগ্রাধিকার দেওয়ার মতো কেনো কারণ ছিল না সেখানে লটারির মাধ্যমে বণ্টন করেছেন। এভাবেই এ কঠিন কাজটি কারও কোনো আপত্তি ছাড়াই সম্পন্ন করেন। এই অগ্রিম বণ্টনের বরকতে ইন্তেকালের আগের সপ্তায় আব্বাজানকে দেওবন্দে থাকা সন্তান, ঘর ও ব্যবসা—বাণিজ্য নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হয়নি। শেষ সপ্তায় তাঁর শুধু দুটি দায়িত্ব ছিল :
প্রথম দায়িত্ব ছিল, গাঠামন মাদরাসার নতুন মুহতামিম এবং শিক্ষাসচিব নিয়োগ করা। অসুস্থ অবস্থায়ই তিনি রাত আড়াইটায় মাদরাসার প্রবীণ উস্তায ও সদরুল মুদাররিসীন মাওলানা মুহাম্মদ ইউসুূফ সাহেবকে ফোন করে মুহতামিম নিযুক্ত করেন। ভবিষ্যতের কাজ সম্পর্কে নির্দেশনা প্রদান করেন।
দ্বিতীয় দায়িত্ব ছিল, নামায। আইসিউতে থাকার কারণে শেষ সপ্তায় নামায কাযা করতে হয়। যখনই একটু কথা বলতে পারতেন, কাযা নামাযের সংখ্যা জানতে চাইতেন। গোসল করার জন্য হাসপাতালের ড্রেস খুলে নিজের কাপড় পরতে চাইতেন। যেন ছুটে যাওয়া নামায আদায় করতে পারেন। যারা দেওবন্দে রয়ে গিয়েছিল তাদের কাছে শুধু এই পয়গাম পাঠান, ভাইকে (সম্মানিত চাচাজান মাওলানা মুহাম্মদ আমীন পালনপুরী সাহেব দা. বা.) সালাম বলো!
তালীম ও তরবিয়ত
আব্বাজানের পরিবার অনেক বড় ছিল। দারুল উলুম দেওবন্দে তিরমিযী, বুখারী ও হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগার মতো গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল কিতাবের দরস ও লেখালেখির এত ব্যাস্ততার পরও তিনি সব সন্তানের তালীম—তরবিয়তের দায়িত্ব খুব আগ্রহের সঙ্গে আঞ্জাম দিতেন। তালীম—তরবিয়তের এই কাজ তিনি জীবনের শেষ পর্যন্ত করে গেছেন। শুরুতে আমাদের চাচাদের করেছেন। এ বিষয়ে বেশি কিছু বলার নেই। দারুল উলূমের উস্তায ও ফত্ওয়া বিন্যস্তকারী, চাচাজান হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আমীন পালনপুরী সাহেব দা.বা. বিস্তারিত লিখেছেন এ বিষয়ে। চাচাদের পর এলো আমাদের পালা। আমাদের সবার বড় ভাই মুফতী রশিদ আহমদ পালনপুরীর সঙ্গে আম্মাজানকেও হিফয করালেন। আম্মাজানকে হাফেয বানানো তাঁর জন্য খুবই উপকারী ও সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। আম্মাজানের মতো সহযোগী পেয়ে অন্য সন্তানদেরকে হিফয করাতে তাঁর কষ্ট অনেক কমে যায়। এরপর আব্বাজান শুধু বিসমিল্লাহ করাতেন। বাকিটুকু আম্মা করতেন।
নাজেরা শেষ হলে আব্বাজান ফজরের পর সবক শুনতেন। আমুখতা, সবকের পারা আম্মাই শুনতেন। লোকে বলে, হাতের পাঁচ আঙুল সমান হয় না। তো ডজনভর সন্তান সবার মেধা সমান হবে, এটা সম্ভব নয়। কম—বেশি হওয়াই স্বাভাবিক এবং ছিলও তা—ই। আমাদের মাঝে কয়েকজন এমন ছিল, যারা মেধার দুর্বলতার কারণে আব্বাজানের কাছে হিফয করতে পারত না। হিফযের ক্ষেত্রে যে ধৈর্য, সহনশীলতা ও সহিষ্ণুতার প্রয়োজন তা পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের থাকে বেশি। এরপর মহিলা যদি সে বাচ্চার মা হন তাহলে তো ধৈর্য ও সহনশীলতা আরও বহু গুণ বেড়ে যায়। এ জন্যই মেধার এত পার্থক্যের পরও আম্মাজান সবাইকে হিফয করাতে পেরেছেন। ভালোভাবে শেষ হলে আব্বাজানের কাছে পাঠাতেন।
আব্বাজান খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দাওর শুনতেন। তাঁর নিধার্রিত মানদন্ডে উত্তীর্ণ হলে উদুর্ ফারসী পড়ানো শুরু করতেন। শ্লেটে লেখা শেখাতেন। এখান থেকে আব্বাজানের কাজ শুরু হয়ে যেত। উদুর্, ফারসী ও আরবী কিতাবগুলো নেসাব মোতাবেক তিনি নিজে পড়াতেন। তাঁর দৃষ্টিতে কোনো কিতাব সহজ মনে না হলে নিজেই সে বিষয়ে কিতাব রচনা করতেন। আসান সরফ, আসান নাহু এবং আসান ফারসী কাওয়ায়েদ—এ ধারারই অংশ। পড়ানোর জন্য কখনো কখনো কারও সহযোগিতা নিতেন। দারুল উলূমের নাযিমে তালীমাত হযরত মাওলানা মুফতী খুরশিদ আনওয়ার দা.বা., দারুল উলূমের উস্তায হযরত মাওলানা কারী শফিকুর রহমান সাহেব ও হযরত মাওলানা ড. ইশতিয়াক আহমদ কাসেমী সাহেবের সহযোগিতা নেন। আরবী দ্বিতীয় শ্রেণি (দুওয়াম), কখনো তৃতীয় শ্রেণি (সুওয়াম) পর্যন্ত পড়ানো হতো। এরপর দারুল উলূমের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হতো। ভর্তি হওয়ার পর সবসময় পড়াশোনার খোঁজ—খবর রাখতেন। দরসে উপস্থিতি এবং অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল খুব ভালোভাবে খেয়াল করতেন। পর্যায়ক্রমে মাদরাসার নেসাবভুক্ত হিন্দি, ইংলিশ, অংক ইত্যাদি জরুরী বিষয় এবং প্রাথমিক কিতাবও পড়াতেন। পড়ালেখা শেষে প্রত্যেককে জীবিকার কাজে লাগিয়ে দিতেন। যে মাদরাসায় খেদমত করবে তাকে মাদরাসায়, অন্যদেরকে ব্যবসায় লাগাতেন। তিনি তো শিক্ষকও ছিলেন ব্যবসায়ীও ছিলেন। উভয় ক্ষেত্রেই তিনি দক্ষ ছিলেন। এজন্য তাঁর প্রত্যেক সন্তানকেই তার কর্মজীবনের উপযোগী কর্মপদ্ধতি বলে দিতে পারতেন। নিজের জীবনের অম্ল—মধুর অভিজ্ঞতার আলোকে উপদেশ ও পরামর্শ দিতেন।
প্রতিভা ও অনন্যতা
আজ যখন আমরাও বাবা হয়েছি, দু—চারটি সন্তানকে পড়াতে হয়, এখন বুঝে আসে আমাদের তালীম—তরবিয়ত ও শিক্ষা—দীক্ষার জন্য আব্বাজান কেমন আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। কেউ যদি তার জীবনে আর কোনো কাজ না করে শুধু এক ডজন সন্তানের তালীম—তরবিয়ত ভালোভাবে করে এবং তাদেরকে উপার্জনক্ষম ও এমন স্বনির্ভর করে তোলে যে, বাবা বা মুরব্বীর মৃত্যুর পর তারা কারও মুখাপেক্ষী হবে না, তো এই একটি বিষয়ই তাঁর কৃতিত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের জন্য যথেষ্ট। কেউ যদি জীবনে আর কিছু না করে, কেবল শিক্ষকতার দীর্ঘ প্যাচানো আঁকাবাকা কঠিন পথ এভাবে পাড়ি দেয় যে, আকাবিরদের জন্যও ঈর্ষার পাত্র হয়ে যায়, তাহলে এ একটি বিষয়ই তাঁর অনন্যতার জন্য যথেষ্ট। কেউ যদি জীবনে আর কোনো কাজ না করে শুধু লেখালেখি ও রচনাজগতে অনবদ্য সব কাজ আঞ্জাম দেয় এবং শাস্ত্রীয় ও গবেষণামূলক রচনা এ পরিমাণ হয় যে, রচনার আধিক্যের দিক থেকে তিনি তার কাফেলার হাতে গোনা কয়েক জনের মধ্যে গণ্য হন, আর অধিক রচনার কারণে যদি কাউকে তার সময়ের ‘হায়ওয়ানে কাতিব’ বা ‘লেখকপ্রাণী’ বলা হয়—তাহলে এই এক কথাই তার অতুলনীয় হওয়ার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু কারও মধ্যে যদি উপরিউক্ত সকল গুণ ও যোগ্যতার সমাহার ঘটে তাহলে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও জ্ঞানগরিমার শুধু অনুমানই করা যেতে পারে, কোনা শব্দের কাঠামোতে তাকে আবদ্ধ করা বা কোনো ভাষায় তা ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। সত্য কথা হলো, ভাগ্য বণ্টনকারী মহান আল্লাহ আব্বাজানকে মহত্ত ও প্রতিভা এবং পূর্ণতা ও অনন্যতার এইসব গুণ ও বৈশিষ্ট্য ছাড়াও এধরনের আরও অনেক গুণে অভিষিক্ত করেছিলেন।
ذٰلِکَ فَضْلُ اللهِ یُؤْتِیْهِ مَنْ یَّشَآءُ
তরবিয়ত
আব্বাজানের হিসাবে তরবিয়তের বিষয়টি নানা দিক ও অনেক বিস্তৃত শাখা—প্রশাখাবিশিষ্ট একটি অধ্যায়। এক প্রবন্ধে তা বর্ণনা করা সম্ভব নয়। আব্বাজান সন্তানদের তরবিয়তের কতটা ফিকির করতেন তা অনুুুুমান করার জন্য এটুকুই যথেষ্ট, দাওরায়ে হাদীসে সুনানে তিরমিযী ও সহীহ বুখারীর ইবারত পড়ার জন্যও ছাত্রদের তরবিয়ত করতেন। যে কেউ তার দরসে ইবারত পড়তে পারত না। প্রথমে ইবারত পড়ার সহীহ তরীকা, ই’রাব ও দ্রুততা থেকে শুরু করে পড়ার ভঙ্গি পর্যন্ত বলে দেওয়া হতো। আগ্রহীরা এ হিসাবে নাম লিখিয়ে নিত। এরপর তাঁর মজলিসে ওই ছাত্রদের পরীক্ষা করা হতো। যে অযোগ্য প্রমাণিত হতো সেখানেই তার নাম বাদ দিয়ে দেওয়া হতো। যে সামনে চলার উপযুক্ত হতো এবং সামান্য কিছু ত্রুটি দেখা যেত, তাকে সেগুলো চিহ্নিত করে ঠিক করার তাকিদ দিতেন। যারা উত্তীর্ণ হতো একটি কাগজে তাদের নাম লিখে ক্লাস প্রতিনিধির কাছে দেওয়া হতো।
এর মানে এই নয়, এই তালিকা থেকে কেউ কখনো বাদ পড়ত না; বরং পুরো বছর তাদের পর্যবেক্ষণ করতেন। ইবারত পড়ার সময় নাহু, সরফ ও তাজভীদে ভুল করলে অথবা নির্ধারিত মানদণ্ডে টিকে না থাকতে পারলে অনেকের নাম এ তালিকা থেকে কেটে দেওয়া হত। এ থেকে অনুমিত হয়, যে ব্যক্তি ইবারত পড়ার মতো বিষয়ে—যাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয় না—তরবিয়তের গুরুত্ব দিতেন, আপন সন্তানের তরবিয়তের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কতটা চিন্তাশীল হবেন। এটাই কারণ ছিল, তিনি তার অধীনদের দ্বীনি দুনিয়াবী উভয় ব্যাপারে আজীবন পরামর্শ দিয়ে গেছেন। এই তালীম—তরবিয়তের অধ্যায়ে তার চেষ্টা সামান্য ত্রুটি রাখেননি। এ ব্যাপারে অনেক ঘটনা পাওয়া যাবে। তাঁর ইন্তেকালের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখা শোক প্রকাশমূলক লেখাগুলোতেও অনেকে এ বিষয়ে লিখেছেন। দু—একটি ঘটনা আমিও বলি।
শিক্ষক হয়ে পরীক্ষা দিতে হলো
আসরের পর কোনো এক মজলিস ছিল। আমিও সেখানে হাজির ছিলাম। মজলিসে প্রশ্নকারী কেউ ছিল না। কবরের নিস্তব্ধতা বিরাজ করছিল। এ ধরনের নীরবতা আমাদের জন্য বড় কঠিন পরীক্ষা নিয়ে আসত। সাধারণত আব্বাজান নিজে তখন প্রশ্ন করতেন। সে প্রশ্ন হতো খুবই কঠিন।
তো জিজ্ঞেস করলেন, কোন কোন কিতাব পড়াও?
কিতাবগুলোর নাম বললাম। এর মধ্যে একটি ছিল শরহে আকায়েদে নাসাফী।
জিজ্ঞেস করলেন, কতটুকু পড়া হয়েছে?
বললাম, এত পৃষ্ঠা।
কয়েক সেকেন্ড চুপ করে রইলেন। এরপর যতটুকু পড়া হয়েছে এর মধ্য থেকে একটি ইবারত মুখস্থ পড়ে বললেন, এই ইবারতের ব্যাখ্যা করো।
আল্লাহু আকবার! এই কথাগুলো লিখতে গিয়েও আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। তার প্রভাব এমন হতো, আজকে পড়ানো সবকের কোনো ইবারত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেও জিহ্বা তালুর সঙ্গে যেন আটকে যেত। সপ্তাহ বা মাসখানেক আগের সবকের তো কথাই নেই। অন্যান্যদের মতোই তো আমরা, পড়ালাম এরপর ভুলে গেলাম। প্রথমে তো অনেক কথা বললেন। এরপর তার যুগবিখ্যাত সেই নসীহত করলেন, ‘তৎক্ষণাৎ মোতালাআ করে পড়িয়ে দেওয়া কোনো গুণের বিষয় নয়। এভাবে যদি বিশ বছরও এক কিতাব পড়াও , কিছু মনে থাকবে না। শিক্ষকের পূর্ণতা হলো, পূর্ণ কিতাবের সব আলোচনা এভাবে মনে থাকবে যে, যখনই যে কিতাব থেকে প্রশ্ন করা হয়, সে উত্তর দিতে পারবে। শরাহ দেখে হল করে উত্তর দিতে হলে কি আর উত্তর হলো।’
এরপর কিতাবের আলোচ্য বিষয়বস্তু স্মরণ রাখার জন্য নিজস্ব উপায় বাতলে দিলেন। এ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হলেও অনেক সাহসের প্রয়োজন।
দেওবন্দের প্রসিদ্ধ জিনিস
এটা তো ছিল বিশেষ প্রশ্ন। একটি সাধারণ প্রশ্নও শুনুন। আসর পরের মজলিস ছিল। আমরা ছাত্ররাও সেখানে ছিলাম। আব্বাজান প্রতিদিনের মতো আধশোয়া। এক তালিবে ইলম মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছে। চোখ বোজা। ছাত্ররা বিভিন্ন প্রশ্ন করছে। হঠাৎ আব্বাজান এসব প্রশ্ন বাদ বললেন, শোনো।
সবাই নীরব হয়ে গেল। ছাত্ররা সবাই মনোযোগ দিল।
তিনি বললেন, একটি প্রশ্নের উত্তর দাও। এক লোক দেওবন্দ আসল কোনো কাজে। দু দিনে তার কাজ শেষ। আজকে বিকালে তার গাড়ি। কিছু পয়সা পকেটে রয়ে গেছে। ভাবছে ফেরার আগে এখানকার প্রসিদ্ধ কিছু কিনে নিয়ে যাই। কিন্তু তার জানা নেই, দেওবন্দে প্রসিদ্ধ কী আছে? সে তোমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, দেওবন্দে প্রসিদ্ধ কী আছে, যা আমি কিনতে পারি? বলো তুমি তাকে কী কিনতে বলবে?
আমরা ছাত্ররা দেওবন্দের প্রসিদ্ধ জিনিস কী ভাবতে লাগলাম। কেউ বলল, হযরত ওই হোটেলের হালুয়া অনেক প্রসিদ্ধ। সেই হালুয়া কিনতে বলব। কেউ বলল, দেওবন্দের বরই খুব প্রসিদ্ধ। কেউ বলল, কাজী মসজিদের নীচের পালঙ্কতোড় অনেক প্রসিদ্ধ।
আব্বাজান সবার উত্তর শেষে হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে বললেন, ভালোই বলছিলে তোমরা।
একজন বলে উঠল, হযরত পিপি কিনতে বলব।
আব্বাজান জানতে চাইলেন পিপি কী?
সে বলল, হযরত আপনাদের মহল্লায়ই তৈরি হয়। বাচ্চাদের খেলনা। এটা বাজালে পি পি শব্দ করে।
আব্বাজান শব্দ করে হাসলেন এবং বললেন, মাশাআল্লাহ।
তাঁর এভাবে মাশাআল্লাহ বলাটা আমাদেরকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দিল। সবচেয়ে বেশি হলো ওই পিপিওয়ালা নিজে। সে ভাবতে লাগল, সে হয়তো জিতে গেছে। সে আমাদের দিকে প্রশংসাপ্রার্থীর দৃষ্টিতে সঙ্গীদের দিকে তাকাতে থাকল।
আমাদের নিবুর্দ্ধিতা দেখুন, এরপর আমরা আরও নিম্নমানের জিনিসের কথা বলতে থাকলাম। উত্তরগুলোতে আব্বাজানকে হাসানোর চেষ্টাই মনে হচ্ছিল। আব্বাজান শুধু মাথা নাড়তে থাকলেন। মুখে কিছুই বললেন না। আমরা প্রসিদ্ধ জিনিসের তালিকায় এমন সব জিনিসও বললাম যা মূলত প্রসিদ্ধ নয়। যখন সবাই নিজ বুঝমতে উত্তর দিয়ে শেষ করল, মজলিস নীরব হয়ে গেল।
আব্বাজান চোখ খুলে জিজ্ঞেস করলেন, সবার উত্তর দেওয়া শেষ?
বলা হলো, জ্বী হযরত শেষ।
মজলিসে আবার নীরবতা ছেয়ে গেল। আগ্রহের কারণে সামান্য সময়ও কয়েক ঘণ্টা মনে হচ্ছিল। পিপিওয়ালা নিজেই জিজ্ঞেস করে বসল, কোন উত্তরটি ঠিক ছিল হযরত?
এরপরও চুপ করে রইলেন। আমাদের চোখ—কান উভয়টিই তার উপর নিবদ্ধ হয়ে রইল। কিছুক্ষণ পর তার ডান হাতটা সামান্য উঠালেন। চোখ না খুলেই বললেন, আরে বেকুবের দল, কিতাব কিনতে বলবে কিতাব! তোমরা কি কিতাবকে দেওবন্দের প্রসিদ্ধ কিছু মনে করো না? দেওবন্দ তো কিতাবের মারকাজ। পালঙ্কতোড় আর পিপিতে আটকে আছ তোমরা। কুতুবখানায় ঢুকতেই পারছ না!
এতটুকু বলে চুপ হয়ে গেলেন। আমরা লজ্জায় তার বড় টেবিলের আড়ালে মাথা লুকাতে চাইলাম। চিন্তা করলাম, আমরা কোথায় মাটিতে পড়েছিলাম আর তিনি সুরাইয়া নক্ষত্রে! তিনি তো এ জবাব চোখ না খুলেই দিয়েছিলেন। কিন্তু তা আমাদের দৃষ্টি খুলে দেয়। এখন বুঝলাম, এই মাশাআল্লাহ বলা মুচকি হাসি মূলত হাসির আড়ালে আফসোস ছিল। এই প্রশ্ন থেকে আমরা শিক্ষা পাই আমরা তো আসল উত্তর থেকে ততটুকু দূরে ছিলাম, মাটি থেকে নক্ষত্র যত দূর। এ প্রশ্নে তিনি আমাদের কিবলা ঠিক করে দিলেন। ইলম ও ইলম—সম্পর্কিত সব কিছুকে সবার আগে রাখার অমূল্য সবক শেখালেন। আল্লাহ তাঁকে জান্নাত নসীব করুন।
তুমি শুধু ভয়ই দেখালে
মহল্লার মসজিদের ইমাম সাহেব কিছুটা অসুস্থ ছিলেন। মুআযযিন সাহেব আব্বাজানের উপস্থিতিতে নামায পড়াতে চাচ্ছিলেন না। ইমাম সাহেব আমাকে এই অবস্থা জানিয়ে দুই একদিন ইমামতি করতে বললেন। আমি রাজি হয়ে গেলাম। ফজর নামাযে প্রথম রাকাতে সূরা আর রহমানের প্রথম দুই রুকু পড়লাম। দ্বিতীয় রাকাতে পড়লাম ইমামদের স্বাভাবিক রীতি অনুসারে সূরা তাকভীর। সালাম ফিরালাম, নামায শেষ হলো। আয়াতুল কুরসী পড়া পরিমাণ সময় নীরবতা ছিল। এরপর আব্বাজান বললেন, তুমি আমাদের শুধু ভয়ই দেখালে। প্রথম রাকাতেও ভয় দেখালে, দ্বিতীয় রাকাতেও ভয় দেখালে। প্রথম রাকাতে দেখিয়েছ জাহান্নামের বিভীষিকার ভয় (সুরা আর রহমনের দ্বিতীয় রুকুর কথা বুঝিয়েছেন)। দ্বিতীয় রাকাতে ভাবলাম এখন তুমি তৃতীয় রুকু وَ لِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهٖ جَنَّتٰنِ থেকে শান্তি ও সুসংবাদের জান্নাত সম্পর্কিত আয়াত পড়ে সে ভয় কিছুটা দূর করবে। কিন্তু তুমি ফের ভয় দেখালে اِذَا الشَّمْسُ كُوِّرَتْ পড়ে। এবার দেখালে কেয়ামতের ভয়। তো তুমি আমাদেরকে উভয় রাকাতে ভয়ই দেখালে। এটা ঠিক না। কোরআনে কারীমে উভয় বিষয় একসঙ্গে আসে। যেখানে জাহান্নামের কথা আসে এরপরই জান্নাতের কথাও আসে। যেখানে সুসংসবাদ আসে, সেখানে ভীতি প্রদর্শনের আয়াতও থাকে। এই দুই ধরনের আয়াতই নামাযে পড়া উচিত। হয়তো দ্বিতীয় রাকাতে সূরা আর—রহমানের তৃতীয় রুকুও পড়বে। যদি দুই রুকুই পড়তে হয়, তবে শুরু থেকে না পড়ে كُلُّ مَنْ عَلَیْهَا فَانٍ থেকে শুরু করবে।
এক শ্বাসে দু তিন আয়াত
ইমাম সাহেব ঈদুল আজহার ছুটিতে বাড়ি যান। নামায পড়ানোর জিম্মাদারী ছিল এই অধমের। হেরেম শরীফের কোনো এক ইমামের মতো করে পড়তে গিয়ে সূরা ফাতেহার দুই—তিন আয়াত এক শ্বাসে পড়েছিলাম। দুই—তিন ওয়াক্ত পর্যন্ত আব্বাজান সহ্য করলেন। পরের দিন এশার নামায শেষে বললেন, হাদীসে এসেছে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সূরা ফাতেহার প্রতি আয়াতের পর জবাব দেন। নামাযের কাতারে বসেই প্রথমে হাদীসের ব্যাখ্যা করলেন এবং আল্লাহ কী জবাব দেন তা শোনালেন। এরপর আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, কিন্তু তুমি তো কসম খেয়েছ আল্লাহকে বলতে দিবে না! এক শ্বাসে দুই—তিন আয়াত পড়ে ফেলছ। এটা ঠিক না। ধীরে ধীরে পড়ো। প্রতিটি আয়াত থেমে থেমে পড়ো।
وَلَا الضَّآ لِّیْنَ এর মদ
এমনই সুরা ফাতেহায় আরও একটি ভুল ধরে দিয়েছিলেন। তোমার সবগুলো মদ ঠিক হয়, কিন্তু وَلَا الضَّآ لِّیْنَ এর মদ ঠিক হয় না। وَلَا الضَّآ لِّیْنَ এ তোমার কী হয়ে যায় জানি না, তুমি কিছুটা বেশিই টেনে পড় এবং টানতেই থাক। প্রথমে وَلَا الضَّآ لِّیْنَ এ লম্বা করো। এরপর লীনের লামে বেশি সময় লাগাও। এরপর লীনকে পড় লম্বা করে। আমাদের মুখ ‘আমীনে’র জন্য প্রস্তুত থাকে। তুমি শেষ করলে আমরা ‘আমীন’ বলব। কিন্ত তোমার আর শেষ হয় না। وَلَا الضَّآ لِّیْنَ এর মদকেও অন্যান্য শব্দের মতোই মদ করবে।
সন্তানদেরকে হজ করানো
আব্বা আম্মা সন্তানদের বিয়ের ব্যাপারে যতটা গুরুত্ব দিতেন ততটা গুরুত্ব সন্তানদের হজ করানোতেও দিয়েছেন। যখন বড় ছেলেকে আলাদা করে দিতেন, তাকে ডেকে ঘরের খরচ থেকে হজের জন্য কিছু টাকা বাঁচাতে বলতেন। বলতেন, শুধু তোমার খরচ তুমি জোগাড় করো, বউয়েরটা আমি দিচ্ছি। আরও বলতেন, হজে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া উচিত। বেচারী সারা জীবন কষ্ট করে। জীবনের সফরে সে তোমার সঙ্গী হলে, এই সফরেও সঙ্গী হওয়া উচিত। একথাও বলতেন, যৌবনেই হজের মজা। ভাইদের মধ্যে যারা মাদরাসায় পড়াতেন তাদেরকে বলতেন, তোমাদের জন্য তো হজ করা আরও বেশি জরুরী। হজ করে নাও। হাদীস ও ফিকহের কিতাবে হজ অধ্যায় পড়াতে সহজ হবে। না হয় শুধু আন্দাজে কথা বলা হবে।
সাধারণত দুই ভাইকে একসঙ্গে সস্ত্রীক হজে পাঠাতেন। বোনদেরকেও তাদের স্বামীদের সঙ্গে পাঠতেন। আমার সময়ে আমরা তিন ভাই একসঙ্গে গিয়েছিলাম। মূলত তাদের দুইজনের যাওয়ার কথা ছিল, তারা টাকাও জমা করে ফেলেছিলেন। কিন্তু আমি যেহেতু মাদরাসায় পড়াতাম, সম্ভবত এজন্যই আব্বাজান আমাকেও হজ করিয়ে দেওয়া মুনাসিব মনে করলেন। আমাকে ডেকে বললেন, তোমার বড় দুই ভাই তো টাকা পুরোটাই জমিয়েছে, তোমার কাছে যদি টাকা থাকে তুমিও তাদের সঙ্গে চলে যাও। আমি বললাম, আমার কাছে তো পুরো টাকা নেই।
কত আছে জিজ্ঞেস করলেন। বললাম বিশ হাজারের মতো। ২০০৭ সালের কথা। তখন একজনের হজ করতে নব্বই হাজারের মতো লাগত। বললেন, তুমিও ফরম পূরণ করে নাও। তোমার স্ত্রীরটা তো দেবই, তোমার বাকি টাকাও দিচ্ছি। হজ থেকে এসে দিয়ে দিও। এভাবেই আমরা তিন ভাই একসঙ্গে হজ আদায় করি। হজের পর যখন টাকা আদায় করতে গেলাম তখন তিনি লিখছিলেন। একবার আমার দিকে তাকিয়ে ফের লেখায় মনোযোগ দিলেন। সেদিকে তাকিয়েই বললেন, কেন এসেছ?
বললাম, হজের আগে আপনি যে টাকা দিয়েছিলেন তা দিতে এসেছি।
বললেন, আচ্ছা এটা তুমিই ঘরের খরচে কাজে লাগাও।
হজযাত্রী ছেলে এবং তার স্ত্রীকে একটি নসীহত করতেন, হজের সফরে অনেক সমস্যা ও বিপদ হতে পারে। মানুষ করে কী, এসময় নিজেরা ঝগড়া করতে থাকে। অবস্থা যেমনই হোক তোমরা নিজেরা কখনো ঝগড়া করবে না। ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করবে। আল্লাহ তাআলা আব্বা—আম্মার মযার্দা বাড়িয়ে দিন। তাদের সহযোগিতায় আমরা পূর্ণ যৌবনেই হজ করার সৌভাগ্য লাভ করেছি। হিফযে কোরআনের পর এটা ছিল দ্বিতীয় সৌভাগ্য, আব্বাজানের সাহায্য, পৃষ্ঠপোষকতা ও চেষ্টার বদৌলতে আমাদের সব ভাই—বোনের তা লাভ করেছিল। ছোট তিন ভাই—বোন, ফাতেমা, আব্দুল্লাহ এবং উবায়দুল্লাহর হজ এখনও বাকি। আব্দুল্লাহর প্রস্তুতি সম্পন্ন। ভাইদের সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এদেরকেও আব্বাজানের তরিকায়ই হজ করাব। আল্লাহ তাআলা তাওফীক দিন। আমাদের সব ভাইদের একতা ও ভ্রাতৃত্ব বন্ধন স্থায়ী হোক। আমীন।
হজ করে মনে হয়েছে, হজ আসলেই যৌবনে করা উচিত। এই লেখকের হজের দশ বছর পরে আল্লাহর অনুগ্রহে উমরা করারও সৌভাগ্য হয়েছে।এই সফরে স্ত্রী সাথে ছিল না, তাই এটাও বুঝতে পেরেছি আব্বাজান কেন স্ত্রীকে সঙ্গে পাঠাতেন।
ধৈর্য ও দৃঢ়তা
দৃঢ়তার কথা বললে এই গোনাহগারের দু চোখ আব্বাজানের চাইতে অধিক ধৈর্যশীল কাউকে দেখিনি। কঠিন সময়ে নিজে তো সবর করতেনই, অন্যদেরও আল্লাহর নাম নিতে বলতেন। তার হার্টের অপারেশন হয়েছিল। এমন অসুস্থদের কোনো দুর্ঘটনার সংবাদ দেওয়ার আগে সংবাদের বিষয় ও বলার পদ্ধতি নিয়ে ভাবতে হয়। পাছে তার অসুস্থতা বেড়ে যায় কিনা। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ, আব্বাজানের ব্যাপারে অতটা ভাবতে হতো না। তার কাছের লোকজন এক এক করে আল্লাহর কাছে চলে যাচ্ছিলেন। এমন সংবাদ শুনে আঘাত পাওয়ার বদলে তিনি আখেরাতের জন্য নিজের প্রস্তুতি আরও বাড়িয়ে দিতেন। দারুল উলূম দেওবন্দে তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী হযরতুল উসতায মাওলানা রিয়াসত আলী যফর বিজনুরী সাহেব রহিমাহুল্লাহর ইন্তেকাল হয়ে গেল। আব্বাজান তখন লন্ডনে ছিলেন। এই সংবাদ তার জন্যে অনেক বেদনাদায়ক ছিল। হাসান ভাই তার সঙ্গে ছিলেন। তিনি বলেন, আমি আব্বাজানকে হযরত মাওলানা রিয়াসত আলী সাহেবের ইন্তিকালের সংবাদ দিলাম। তিনি শুনে চুপ হয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। এরপর বললেন, এবার আমার পালা। এই সংবাদের পর আব্বাজান আখেরাতের সফরের প্রস্তুতিস্বরূপ নিজের জীবদ্দশায়ই মীরাস বণ্টন করে নিলেন। এভাবেই আসান বয়ানুল কোরআনের কাজ রাত—দিন এত বাড়িয়ে দিলেন যে, তার কম্পিউটার অপারেটর হাসান ভাই অসুস্থ হয়ে পড়লেন।
ব্যক্তিগত এমন দুঃসংবাদের আরও একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়। আব্বাজানের পার্থিব কাজে তার সবচেয়ে বড় সাহায্যকারী ও সহযোগী ভাই আহমদ সাঈদ ও ছোট বোনের শ্বশুর, জামেয়া নুরুল উলুম গাঠামনের প্রতিষ্ঠাতা ও মুহতামিম, গুজরাট সফরে আব্বাজানের একমাত্র মেজবান ও আমাদের সবার প্রতি স্নেহপরায়ণ মুহাম্মদ চাচার ইন্তেকালের সংবাদ। চাচাজানের অবস্থা অনেক দিন থেকেই ভালো যাচ্ছিল না। তাঁর ব্যাপারে এ চিন্তা হত, তার ইন্তেকাল আব্বাজানের জীবদ্দশায়ই হলে কীভাবে সে সংবাদ আব্বাজানকে দেব? কিন্তু হলো কী, হঠাৎ তাঁর ইন্তেকাল হয়ে গেল। আগের দিনও তার মেয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছে। তো হঠাৎ তার ইন্তেকালের খবর এলো। এলোও এমন সময় যখন ঘরে পুরুষ কেউ ছিল না। যারা মাদরাসায় পড়াতেন তারা মাদরাসায় ছিলেন। যারা ব্যাবসায়ী তারা দোকানে ছিলেন। আব্বাজানও বুখারীর দরসের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। চায়ের অপেক্ষা করছিলেন। গুজরাট থেকে সংবাদ প্রথমে না আব্বাজানের কাছে এলো, না চাচার মেয়ে বেগম আহমদ সাঈদের কাছে এলো। প্রথম সংবাদ এলো বেগম কাসেমের কাছে। সংবাদ এত বড় ছিল এবং এমনভাবে এসেছিল যে, তিনি ভাইদের আসার অপেক্ষা আর করেননি। ভাবীদেরকে সঙ্গে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে আব্বাজানের কাছে গিয়ে বললেন, মুহাম্মদ চাচা ইন্তেকাল করেছেন।
আব্বাজান ‘ইন্নাল্লিাহ’ পড়লেন। ভাবীদেরকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, ‘এতে কাঁদার কিছু নেই। সবাইকে আল্লাহর কাছে যেতে হবে। কেউ আগে কেউ পরে।’ এরপর গাঠামন পালনপুরে চাচাজানের ঘরে ফোন করলেন। তারপর চাচাজানের মেয়ে বেগম আহমদ সাঈদকে ডাকলেন। তার পিতার মৃত্যুসংবাদ দিলেন। তাকে সান্ত্বনাও দিলেন। এরপর বুখারীর দরসের জন্য এ কথা বলে উঠে গেলেন, এখন তো পড়াতে যেতে হবে। ফিরে এসে পালনপুর যাওয়ার ব্যবস্থা করব। নিয়মমাফিক দরস করলেন। চাচাজানের জন্য দুআও করলেন। যে সংবাদের ব্যাপারে আমাদের আব্বাজানের অপারেশন ও জীবনের ভয় করছিলাম, সে সংবাদের ব্যাপারেই তিনি আমাদেরকে সান্ত্বনা ও ধৈর্য ধারণের কথা বলছিলেন। এখন তার ইন্তেকালের পরে আল্লাহ আমাদেরকে সবরে জামীল দান করুন।
[উদুর্ থেকে অনুবাদ করেছেন, মাওলানা মুরতাজা মাহদী, শিক্ষক, জামেয়া হুসাইনিয়া, শায়েস্তাগঞ্জ, হবিগঞ্জ]