খেলব না আর পুতুল খেলা!
খুশির সকাল
শীতের সকাল। কুয়াশার চাদর ভেদ করে সূর্যের মিষ্টি আলো এসে পড়ছে পৃথিবীর মাটিতে। ছোট্ট নাফিসা আজ খুব খুশি। অনেকদিন পর সে বড় চাচ্চুর বাসায় বেড়াতে যাবে। সেখানে আছে তাঁর চাচাতো বোন যায়নাব আপু। যায়নাব আপু তাঁর চেয়ে একটু বড়। নাস্তা শেষে সবাই প্রস্তুত হলো। নাফিসা তার প্রিয় পুতুলটি সাথে নিতে ভুলল না। দু-বছর বয়সি ছোট্ট ভাই নোমান ও মা-বাবার সাথে নাফিসা রওনা হলো চাচ্চুর বাসার উদ্দেশে।
কলিং বেল বেজে উঠল যায়নাবদের বাসায়। দরজা খুললেন যায়নাবের আব্বু।
-আসসালামু আলাইকুম! কেমন আছ মামণি নাফিসা? আরে নোমান বাবাটা বেশ বড় হয়ে গেছে!
-জি ভাই আমরা সবাই ভালো আছি। যায়নাব কোথায়? যায়নাবের মাদরাসা বিরতি শুনেই নাফিসা আসতে অস্থির হয়ে পড়েছে। বলল, নাফিসার আব্বু ।
-বেশ! ভালোই করেছিস। অনেকদিন যাবৎ দেখা-সাক্ষাৎ নেই। বলল, যায়নাবের আব্বু।
কে সুন্দর!
যাযনাবের কামরায় এলো নাফিসা-
-আসসালামু আলাইকুম আপু। কেমন আছেন?
-আলহামদুলিল্লাহ। ভালো আছি। তুমি কেমন আছ?
-ভালো আছি।
-আচ্ছা নাফিসা, তোমার কোলে ওটা কী?
-আপু এটা আমার সবচেয়ে প্রিয় পুতুল। খুব সুন্দর, তাই না আপু?! নাফিসার উচ্ছ্বসিত প্রশ্ন।
-হ্যাঁ দেখতে তো খুব সুন্দর। তবে এর চেয়েও বেশি সুন্দর তুমি। মাশাআল্লাহ! কারণ, তোমাকে বানিয়েছেন আল্লাহ। আর এই পুতুলগুলো বানিয়েছে মানুষ।
– কিন্তু আপু, আমি তো অত ফর্সা না। এই পুতুলটা কত সুন্দর, কত ফর্সা! বলল নাফিসা।
জবাবে যায়নাব হেসে বলল, হ্যাঁ বোন, এটা আমাদের চোখে হয়তো মনে হয়। আমাদের তো সবকিছুর বোঝার শক্তি নেই। তবে আল্লাহ তাআলা কোরআন শরীফে বলেছেন,
لَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ فِيْ اَحْسَنِ تَقْوِيْمِ
অবশ্যই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সর্বোত্তম অবয়বে।-সূরা ত্বীন : ৪
বোন! আল্লহ তাআলা নিজ হাতে আমাদের বানিয়েছেন ও ঘোষণা করেছেন ‘আমরা সবচেয়ে সুন্দর’। তাই নিজেকে অসুন্দর বলার সুযোগ নেই!
-আচ্ছা তাই নাকি! খুব সুন্দর কথা তো! আমি তো এগুলো জানি না!
এরই মধ্যে যায়নাবের আম্মু এলেন নাস্তার ট্রে হাতে। বললেন,
-কী ব্যাপার দুই বোনে তো একেবারে গল্পে ডুবে গেছ! নাও মামণিরা নাস্তা করো আর গল্প করো।
নাস্তা শেষ করে যাযনাব ও নাফিসা বিছানায় বসল। যাযনাব বলল, নাফিসা, তুমি কি জানো পুতুল নিয়ে খেলা করলে গোনাহ হয়?
-না তো! কেন গোনাহ হয় আপু? অবাক হয়ে জানতে চাইল নাফিসা।
যাযনাব আপু বলল, আমাদের নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন আযাব দেওয়া হবে তাদের, যারা এ ধরনের ছবি আঁকে।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৭৫৮
-নাফিসা বলল, কিন্তু আপু, ওটা তো ছবি।
-যায়নাব হেসে বলল, আরে বোন, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যারা ছবি অংকন করে তাদের অনেক শাস্তি দেবেন আল্লাহ তাআলা। এখন ছবিটা যেভাবেই আঁকা হোক। তা হতে পারে কাপড়-সুতায়, কাগজ-কলমে, সিমেন্ট-লোহার তৈরি ছবি বা মোবাইলে তোলা ছবি। মোটকথা, প্রাণ আছে, এমন জিনিসের ছবি বানানো যাবে না। বানালে আল্লাহ তাআলা অনেক অনেক শাস্তি দেবেন। যেটা বানানো নিষেধ, সেটার ব্যবহারও নিষেধ।
আমাদের সাথে রহমতের ফেরেশতা থাকেন। আল্লাহ তাআলা তাঁদের পাঠান, আমাদের দেখাশোনা করার জন্য। কিন্তু ছবি, পুতুল এসবের কারণে সেই ফেরেশতা ঘরে প্রবেশ করতে পারেন না। আর ফেরেশতা না এলে শয়তান ঘরে আসবে। তাই এগুলো যারা ঘরে রাখে, তাদের কাছে ফেরেশতা রহমত, বরকত ও আদর নিয়ে আসেন না। তাদের ভালো কাজ করতে ভালো লাগে না।
এ কথা শুনে নাফিসা বলল, আপু, আমার কী হবে তাহলে? আমার সাথে ফেরেশতা নেই! আমার বাসায় অনেক পুতুল। তাহলে তো আমার ঘরে শয়তান আছে। আমি শয়তানকে ভয় পাই আপু।
যায়নাব নাফিসার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, ‘আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। সবগুলো পুতুল ছিঁড়ে টুকরো করে ফেলে দেবে ডাস্টবিনে।’
‘এই পুতুল, তোমাকে এখনই ভেঙে ফেলব।’ এই বলে নাফিসা পুতুল ভেঙে ফেলল।
বাড়ি ফেরা
বিকেলে নাফিসারা বাড়ির উদ্দেশে বের হলো। নাফিসার আম্মু বললেন, নাফিসা, তোমার পুতুলটা কোথায় গেল? বাড়ি গিয়ে তো আবার কাঁদবে!
নাফিসা গম্ভীর হয়ে বলল, ওটা ফেলে দিয়েছি। বাসায় গিয়ে সবগুলো পুতুল ফেলে দেব। ওদের জন্য আমার ঘরে ফেরেশতারা আসতে পারে না। শয়তান ঢুকে বসে থাকে।
নাফিসার আম্মু বুঝতে না পেরে যায়নাবের দিকে তাকালেন। যায়নাব হেসে এগিয়ে এলো। সবকিছু খুলে বলল। সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠল।
-বিনতে এনএম জাহাঙ্গীর