প্রতিষ্ঠাতা: মুজাহিদে আযম হযরত মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ.

জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলূম ফরিদাবাদ, ঢাকা-এর মুখপত্র

প্রতিষ্ঠাকালঃ ১৯৩৭ ঈসায়ী

তাফসীরুল কুরআনিল কারীম – ফেব্রুয়ারি ২০২১

তাফসীরুল কুরআনিল কারীম – ফেব্রুয়ারি ২০২১

মাওলানা মুতীউর রহমান

قَدْ جِئْنٰکَ بِاٰیَۃٍ  مِّنْ رَّبِّکَ     ؕ وَالسَّلٰمُ عَلٰی مَنِ اتَّبَعَ الْهُدٰی ﴿۴۷﴾  اِنَّا  قَدْ اُوْحِیَ  اِلَیْنَاۤ  اَنَّ الْعَذَابَ عَلٰی مَنْ کَذَّبَ وَتَوَلّٰی ﴿۴۸﴾  قَالَ فَمَنْ رَّبُّكُمَا یٰمُوْسٰی ﴿۴۹﴾  قَالَ رَبُّنَا الَّذِیْۤ اَعْطٰی كُلَّ شَیْءٍ خَلْقَهٗ ثُمَّ هَدٰی ﴿۵۰﴾

অনুবাদ : আমরা (হযরত মূসা আ. ও হযরত হারুন আ.) তোমার কাছে তোমার রবের পক্ষ হতে নিদর্শন (অর্থাৎ মুজেযা) নিয়ে এসেছি। শান্তি ও নিরাপত্তা সেই ব্যক্তির জন্য, যে সরল পথে চলবে। আমাদের প্রতি এ নির্দেশ এসেছে যে, আযাব সেই ব্যক্তির উপর, যে অস্বীকার করবে এবং মুখ ফিরিয়ে রাখবে। সে (ফেরআউন) বলল, হে মূসা, তোমাদের রব কে? তিনি বললেন, আমাদের রব ওই সত্তা, যিনি প্রত্যেক বস্তুকে তার আকৃতি দান করেছেন অতঃপর হেদায়াত বা পথ প্রদর্শন করেছেন।—সূরা ত্বহা, ২০ : ৪৭—৫০

তাফসীর : হযরত মূসা আ. ও হযরত হারুন আ. আল্লাহর পক্ষ হতে মুজেযা নিয়ে এসে ফেরআউনকে তাওহীদ ও দ্বীনের দাওয়াত দিলেন এবং বনী ইসরাঈলকে মুক্ত করে দিতে বললেন। আর বললেন যে, আমরা তোমার রবের পক্ষ থেকে মুজেযা নিয়ে এসেছি। তখন ফেরআউন বলল, বলো তো তোমাদের রব কে? হযরত মূসা আ. তখন রবের পরিচয় দিতে গিয়ে তাঁর এমন এক গুণের কথা বললেন, যা সমস্ত সৃষ্টিজগৎব্যাপী। অর্থাৎ আমাদের রব ওই সত্তা, যিনি প্রতিটি বস্তুকে তার অস্তিত্ব ও আকৃতি দান করেছেন অতঃপর তাকে হেদায়াত বা পথ প্রদর্শনও করেছেন।

এই হেদায়াত বা পথপ্রদর্শনের অর্থ কী?

এক হেদায়াত বা পথপ্রদর্শন হচ্ছে নবী—রাসূলগণের কাজ, যার লক্ষ্য হচ্ছে বিশেষভাবে জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ ও জিন জাতি। এ ছাড়া আরেকটি হেদায়াত বা পথ প্রদর্শন রয়েছে, যা জিন—ইনসান ছাড়াও অন্যান্য প্রত্যেক বস্তুব্যাপী। আগুন, বাতাস, পানি, মাটি এবং এসব কিছুর সমন্বয়ে গঠিত যত বস্তু রয়েছে সবকিছুকেই মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলা বিশেষ একধরনের অনুভূতি দিয়েছেন, যা মানুষের অনুভূতির মতো শক্তিশালী না হওয়ার কারণে তাদের উপর হালাল—হারামের আহকাম বর্তায় না বটে, কিন্তু সেই অনুভূতির ভিত্তিতে তাদের মধ্য হতে কার কী কাজ ও দায়িত্ব প্রত্যেককে সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন এবং তারা স্ব স্ব দায়িত্ব বুঝেও নিয়েছে। আসমান—যমীন, চন্দ্র—সূর্য, গ্রহ—নক্ষত্র, আগুন, পানি, মাটি, বাতাস সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব উপলব্ধি করে তা পালন করে যাচ্ছে। তাতে কোনো প্রকার ত্রুটি তারা করছে না। হ্যাঁ, যখন বিশেষ কোনো পরিস্থিতিতে সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা হয় কোনো একটির ক্রিয়া—ক্ষমতা রহিতকরণের তখন সেটা ভিন্ন বিষয়। যেমন, আগুনের কাজ হলো দাহন। কিন্তু আল্লাহ তাআলা যখন ইচ্ছা করবেন তার দাহন—ক্ষমতা রহিত করার তখন তা রহিত হয়ে যাবে এবং আগুন নিঃস্ক্রিয় হয়ে যাবে ও ফুলবাগানে পরিণত হয়ে যাবে। যেমন, হযরত ইবরাহীম আ.—কে যখন কাফেররা অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করেছিল তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ হয়েছিল—

یٰنَارُ كُوْنِیْ بَرْدًا وَّ سَلٰمًا عَلٰۤی اِبْرٰهِیْمَ

হে আগুন, তুমি ইবরাহীমের (আলাইহিস সালাম) উপর ঠান্ডা ও শান্তিদায়ক হয়ে যাও।

তৎক্ষণাৎ সে আগুন দাহন—ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

লক্ষ করুন, সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথে কীভাবে বুঝতে পারে যে, তার ক্ষুধা নিবারণের জন্য মায়ের স্তনে মুখ লাগিয়ে দুগ্ধপান করতে হবে। এটা একমাত্র মহান সৃষ্টিকর্তারই কাজ। এমনিভাবে তার অন্যান্য প্রয়োজনেও একটু কেঁদে ওঠে, তাতেই মা দৌড়ে আসে, তার প্রয়োজন মিটায়। এ ক্রন্দনও তিনিই শিখিয়েছেন। মুরগির ডিম ফেটে বাচ্চা বের হওয়ার সাথে সাথেই কুট কুট করে দানা খেতে শুরু করে। মুরগি বাচ্চাওয়ালা হওয়ার আগে কত শান্ত থাকে কিন্তু বাচ্চাওয়ালা হওয়ার সাথে সাথেই সে কত হিংস্র ও সতর্ক হয়ে যায়—যা বাচ্চার হেফাজতের জন্য একান্তই প্রয়োজন—তা লক্ষ করেছেন কি? এটা কে শেখাল? মহান সৃষ্টিকর্তা শিখিয়েছেন। এ ধরনের অগণিত দৃষ্টান্ত রয়েছে।

মোটকথা, যত প্রাণী রয়েছে সবাইকে তার জীবনধারণ ও আত্মরক্ষার সব বিষয়ের হেদায়াত বা পথ প্রদর্শন করে দিয়েছেন। এমনকি উদ্ভিদের প্রতি লক্ষ করলে সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারবেন যে, তাদেরকেও আল্লাহ তাআলা জীবনধারণ ও আত্মরক্ষার হেদায়াত বা পথ প্রদর্শন করে দিয়েছেন। একটি গাছ প্রথমে লাগানোর সময় সোজা ছিল, কিন্তু কিছুদিন পর দেখা যাচ্ছে সেটা অন্য দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে, যেদিক খোলা এবং যেদিক থেকে সূর্যের আলো আসে। লাউ গাছ, শিম গাছের মতো যেগুলো কাণ্ডবিহীন এবং সাধারণত যেগুলো অন্য কিছুর উপর ভর করেই বড় হয় দেখা যায়, ধারে—কাছে কোনো লাকড়ি বা ডাল থাকলে হাত বাড়িয়ে সেটাকে ধরে ফেলে অর্থাৎ চিকন সুতার ন্যায় দেহাংশের সাহায্যে পেঁচিয়ে ধরে। এই উদ্ভিদকে এহেন অনুভূতি ও শিক্ষা কে দিয়েছে? মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দিয়েছেন। তাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুমিনের মুখ থেকে উচ্চারিত হবে—

فَتَبٰرَکَ اللهُ  اَحْسَنُ الْخٰلِقِیْنَ

মহান ও মহীয়ান আল্লাহ, যিনি অতি উত্তম সৃষ্টিকর্তা।

وَ هُوَ الْخَلّٰقُ الْعَلِیْمُ

আর তিনি অতি মহান সৃষ্টিকর্তা ও মহাজ্ঞানী।

[মাআরেফুল কুরআন থেকে সংকলিত। সংক্ষেপিত ও সংযোজিত।]

লেখক সম্পর্কে
Avatar

niyamot

একটি কমেন্ট করুন