প্রতিষ্ঠাতা: মুজাহিদে আযম হযরত মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ.

জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলূম ফরিদাবাদ, ঢাকা-এর মুখপত্র

প্রতিষ্ঠাকালঃ ১৯৩৭ ঈসায়ী

তাফসীরুল কুরআনিল কারীম

তাফসীরুল কুরআনিল কারীম

মাওলানা মুতীউর রহমান


اَلَاۤ اِنَّ اَوْلِیَآءَ اللهِ لَا خَوْفٌ عَلَیْهِمْ وَلَا هُمْ یَحْزَنُوْنَ ﴿ۚۖ۶۲﴾  الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَکَانُوْا یَتَّقُوْنَ ﴿ؕ۶۳﴾  لَهُمُ الْبُشْرٰی فِی الْحَیٰوۃِ الدُّنْیَا وَفِی الْاٰخِرَۃِ  ؕ لَا تَبْدِیْلَ لِکَلِمٰتِ اللهِ     ؕ ذٰلِکَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِیْمُ ﴿ؕ۶۴﴾

অনুবাদ : জেনে রেখো, আল্লাহর বন্ধুদের ওপর কোনো ভয়ও নেই, আর তারা চিন্তিতও হবে না। যারা ঈমান এনেছে এবং ভয় করে (গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে)। তাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ দুনিয়াবি জীবনেও, আখেরাতেও। আল্লাহর কথার মধ্যে কোনো প্রকার পরিবর্তন হয় না। আর এটা (অর্থাৎ সুসংবাদ) বিরাট কামিয়াবী।—সূরা ইউনুস, ১০ : ৬২—৬৪

 

তাফসীর : اَوْلِيَاء শব্দটি وَلِيٌّ—এর বহুবচন। অর্থ বন্ধু। প্রখ্যাত মুফাসসির আল্লামা ইবনে কাছীর রহ. বলেছেন, ‘আল্লাহর ওলীদের ওপর কোনো ভয় নেই আর তারা চিন্তিতও হবে না’—এর অর্থ হচ্ছে, হাশরের ময়দানের বিভীষিকা ও মহাবিপদের ভয় তাদেরকে পাবে না এবং দুনিয়ার কোনো জিনিস হাতছাড়া হয়ে গেলে তারা তজ্জন্য চিন্তিতও হন না। (যেমন চিন্তিত দুনিয়াদাররা হয়ে থাকে। কারণ, আল্লাহওয়ালাদের লক্ষ্য থাকে আখেরাত। তাদের অন্তর সর্বদা আল্লাহর মহত্ত্ব ও ভয় দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে। যার ফলে দুনিয়ার সুখ—স্বাচ্ছন্দ্য ও ভোগ—বিলাসকে তারা কিছুই মনে করেন না। তাই সেটা হাতছাড়া হয়ে গেলেও তারা তেমনটা চিন্তিত হন না।)

 

ওলী—আউলিয়া কারা ও তাদের পরিচয় কী?

এক পরিচয় তো আল্লাহ নিজেই পরবর্তী আয়াতে বর্ণনা করে দিয়েছেন। অর্থাৎ আল্লাহর ওলী হচ্ছেন তারা যারা ঈমান আনয়ন করেছেন এবং যারা মুত্তাকী—পরহেযগার। যারা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকেন। ঈমান ও তাকওয়ার যেমন বহু স্তর রয়েছে ঠিক তেমনই বেলায়েতের এবং আউলিয়াদেরও বহু স্তর রয়েছে। বেলায়েতের সর্বোচ্চ স্তরে আসীন হলেন আম্বিয়ায়ে কেরাম। আর আম্বিয়ায়ে কেরামের মাঝে সর্বোচ্চ স্তরে আসীন হলেন আমাদের সায়্যিদুল মুরসালীন হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এরপরে পর্যায়ক্রমে নিচে অসংখ্য স্তর রয়েছে।

ঈমান ও তাকওয়া যে পর্যায়ের হবে বেলায়েতও সে পর্যায়ের লাভ হবে। তবে যেমনইভাবে দশ টাকা—বিশ টাকাও মাল, লক্ষ টাকা কোটি টাকাও মাল। কিন্তু পরিভাষায় দশ টাকা বিশ টাকার মালিককে মালদার বলা হয় না; বরং লক্ষ লক্ষ টাকা বা কোটি কোটি টাকার মালিক হলে পরিভাষায় মালদার বলা হয়। তেমনই বেলায়েতের এক বিশেষ পর্যায়ে পেঁৗছলেই তাকে পরিভাষায় ওলী বলা হয়।

 

ওলী চিনার উপায়

ওলীর বাহ্যিক আলামত তো হচ্ছে শরীয়ত ও সুন্নতের পূর্ণ পাবন্দ ও অনুসারী হওয়া। এর আরেকটি আলামত হচ্ছে, তাকে দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়। যেমন : ইবনে মাজাহ শরীফে হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ রাযি. হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আউলিয়াদের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন :

الذين اذا رُؤوا ذكر الله.

অর্থাৎ তাদের দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ আসে।

এ ছাড়াও আল্লাহর আরেফ বান্দারা ওলীর বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন এবং আলামত বর্ণনা করেছেন।

لَهُمُ الْبُشْرٰی فِی الْحَیٰوۃِ الدُّنْیَا وَفِی الْاٰخِرَۃِ.

তাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ দুনিয়াবি জীবনেও, আখেরাতেও।

দুনিয়াবি জীবনের সুসংবাদ হচ্ছে সত্য খাবসমূহ, আল্লাহর নেক বান্দা এমনকি সাধারণ মানুষের কাছেও প্রশংসিত হওয়া প্রভৃতি। এমনইভাবে মৃত্যুকালে ফেরেশতা কতৃর্ক সুসংবাদ জানানো। যেমন : এ আয়াতে কারীমায় বলা হয়েছে :

وَ اَبْشِرُوْا بِالْجَنَّۃِ  الَّتِیْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ.

আর তোমরা ওই জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ করো, যার ওয়াদা তোমাদের সাথে করা হতো।—সূরা হা—মীম—সাজদা, ৪১ : ৩০

আর আখেরাতের সুসংবাদ সেটি যা এ আয়াতে বর্ণিত আছে :

بُشْرٰىكُمُ  الْیَوْمَ جَنّٰتٌ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهٰرُ.

আজ তোমাদের জন্য সুসংবাদ এমন বাগানসমূহের যেগুলোর তলদেশ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত হবে।—সূরায়ে হাদীদ, ৫৭ : ১২

[মাআরেফুল কুরআন ও ফাওয়াদে উসমানিয়া থেকে সংকলিত]

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকেও তাঁর বেলায়েতের কিছু হিসসা দান করুন। আমীন।

লেখক সম্পর্কে
Avatar

zobayer

একটি কমেন্ট করুন