তাফসীরুল কুরআনিল কারীম
মাওলানা মুতীউর রহমান
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تُلْهِكُمْ اَمْوَالُكُمْ وَ لَاۤ اَوْلَادُكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ ۚ وَ مَنْ یَّفْعَلْ ذٰلِکَ فَاُولٰٓئِکَ هُمُ الْخٰسِرُوْنَ ﴿۹﴾ وَ اَنْفِقُوْا مِنْ مَّا رَزَقْنٰكُمْ مِّنْ قَبْلِ اَنْ یَّاْتِیَ اَحَدَكُمُ الْمَوْتُ فَیَقُوْلَ رَبِّ لَوْ لَاۤ اَخَّرْتَنِیْۤ اِلٰۤی اَجَلٍ قَرِیْبٍ ۙ فَاَصَّدَّقَ وَ اَكُنْ مِّنَ الصّٰلِحِیْنَ ﴿۱۰﴾ وَ لَنْ یُّؤَخِّرَ اللهُ نَفْسًا اِذَا جَآءَ اَجَلُهَا ؕ وَ اللهُ خَبِیْرٌۢ بِمَا تَعْمَلُوْنَ ﴿۱۱﴾
অনুবাদ : হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ধন—সম্পদ ও সন্তান—সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে ফেলে। যারা এমন করবে তারা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তভুর্ক্ত হবে। আর আমি যা তোমাদেরকে দান করেছি তা থেকে খরচ কর তোমাদের কারও মৃত্যু আসার আগে, তখন (আফসোস করে) বলবে, হে পরোয়ার দিগার! আমাকে কিছুদিনের জন্য সুযোগ দিলেন না কেন― যাতে আমি কিছু সদকা—খয়রাত করতাম এবং নেককারদের অন্তভুর্ক্ত হয়ে যেতাম। আর আল্লাহ তাআলা কারও মৃত্যুর সময় যখন এসে যায় কখনও তাকে সুযোগ দেন না। আর আল্লাহ তাআলা তোমাদের সব কর্ম সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত।—সূরা মুনাফিকূন, ৬৩ : ৯—১১
তাফসীর : উক্ত সূরার শুরুতে মুনাফেকদের মিথ্যা কসম ও ষড়যন্ত্রের কথা আলোচনা করা হয়েছে। আর এসব কিছুর মূল কারণ ছিল দুনিয়ার ভালোবাসা। তাই খাঁটি মুমেনদেরকে বলা হচ্ছে, তোমরা মুনাফেকদের ন্যায় দুনিয়ার ভালোবাসায় নিমজ্জিত হয়ে যেয়ো না।
সম্পদ ও সন্তান দ্বারা সব ধরনের দুনিয়াবী বস্তু উদ্দেশ্য। কিন্তু এ দুটিই যেহেতু সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তাই এ দুটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
ধন—সম্পদ ও সন্তান—সন্ততির সাথে সম্পূর্ণরূপে সম্পর্ক ছিন্ন করা শরীয়তের উদ্দেশ্য নয় এবং সম্পর্ক রাখা সর্বাবস্থায় দোষণীয়ও নয়। বরং কোনো কোনো অবস্থায় সম্পর্ক রাখা জরুরিও বটে। দোষণীয় হচ্ছে ঐ অবস্থায় যখন এ সম্পর্ক ও ভালোবাসা আল্লাহর স্মরণ থেকে ও আল্লাহর ইবাদত—বন্দেগী থেকে গাফেল করে দিবে।
“আল্লাহর স্মরণ” দ্বারা আয়াতে কারীমায় কী উদ্দেশ্য সে ব্যাপারে মুফাসসিরগণের বিভিন্ন উক্তি রয়েছে। কারও মতে নামায, কারও মতে হজ এবং যাকাত আর কারও মতে কুরআনে কারীম। হযরত হাসান বসরী রহ. এর মতে সমস্ত ইবাদত—বন্দেগী। হযরত হাসান বসরীর এ তাফসীর অন্য সবগুলিকেই অন্তভুর্ক্ত করে নেয়।
‘আর তোমরা খরচ কর ঐ সম্পদ থেকে যা আমি তোমাদেরকে দান করেছি তোমাদের কারও মৃত্যু আসার আগে।’ মৃত্যু দ্বারা উদ্দেশ্য এক্ষেত্রে মৃত্যুর আলামত। আর ‘আল্লাহর স্মরণ’ দ্বারা যেহেতু আল্লাহর সমস্ত হুকুম—আহকাম এবং সমস্ত ইবাদত—বন্দেগী উদ্দেশ্য তাই আল্লাহর পথে সম্পদ ব্যয় করার বিষয়টিও এসে যায়। কিন্তু তারপরও একে পৃথক করে বর্ণনা করার মধ্যে বিভিন্ন রহস্য থাকতে পারে। যথা: এক. ধন—সম্পদই আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল করে রাখার সবচেয়ে বড় কারণ। দুই. মানুষের মৃত্যুর আলামত যখন সামনে এসে যায় তখন অন্যান্য ইবাদত যেমন : ছুটে যাওয়া নামায, হজ, যাকাত ইত্যাদির কাযা তো আর তার সাধ্যের ভিতরে থাকে না, কেবল তার সামনে থাকে। সম্পদ যা খরচ করে তা দ্বারা সম্পদ সম্পর্কিত ইবাদতের ত্রুটির সম্পূরণ সম্ভব। তাই ঐ সময় সে কিছু সম্পদ আল্লাহর ওয়াস্তে খরচ করে যাবে। অধিকন্তু সদকা—খয়রাত অন্যান্য সমস্ত বালা ও আযাব দূরীভূত করণের ক্ষেত্রেও কার্যকর।
লেখক, ভাইস প্রিন্সিপাল, ফরিদাবাদ মাদরাসা