প্রতিষ্ঠাতা: মুজাহিদে আযম হযরত মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ.

জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলূম ফরিদাবাদ, ঢাকা-এর মুখপত্র

প্রতিষ্ঠাকালঃ ১৯৩৭ ঈসায়ী

তাফসীরুল কুরআনিল কারীম

তাফসীরুল কুরআনিল কারীম

মাওলানা মুতীউর রহমান

 

الَّذِیْنَ یُنْفِقُوْنَ فِی السَّرَّآءِ وَالضَّرَّآءِ وَالْکٰظِمِیْنَ الْغَیْظَ وَالْعَافِیْنَ عَنِ النَّاسِ ؕ     وَاللهُ یُحِبُّ الْمُحْسِنِیْنَ ﴿۱۳۴﴾ۚ      وَالَّذِیْنَ  اِذَا فَعَلُوْا فَاحِشَۃً اَوْ ظَلَمُوْۤا اَنْفُسَهُمْ ذَکَرُوا  اللهَ  فَاسْتَغْفَرُوْا لِذُنُوْبِهِمْ      ۪      وَمَنْ یَّغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اللهُ        ۪۟     وَلَمْ یُصِرُّوْا عَلٰی مَا فَعَلُوْا وَهُمْ یَعْلَمُوْنَ ﴿۱۳۵﴾  اُولٰٓئِکَ جَزَآؤُهُمْ مَّغْفِرَۃٌ مِّنْ رَّبِّهِمْ وَجَنّٰتٌ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهٰرُ خٰلِدِیْنَ فِیْهَا     ؕ   وَنِعْمَ اَجْرُ الْعٰمِلِیْنَ ﴿۱۳۶﴾

অনুবাদ : যেসব লোক খরচ করে অভাব—অনটনের সময়ও, সুখ—স্বাচ্ছন্দ্যের সময়ও এবং ক্রোধকে নিয়ন্ত্রণ করে আর মানুষকে ক্ষমা করে। আর আল্লাহ তাআলা নেককর্মশীলদেরকে ভালোবাসেন। আর যখন কোনো প্রকাশ্য গোনাহ করে বসে কিংবা কোনো গোনাহ করে নিজেদের ক্ষতি করে (সঙ্গে সঙ্গে) আল্লাহকে স্মরণ করে অতঃপর আপন গোনাহের জন্য ক্ষমা চায়। আর আল্লাহ ছাড়া কে আছে গোনাহ ক্ষমা করার। আর তারা আপন মন্দ কৃতকর্মের উপর অনড় থাকে না আর তারা (এসব বিষয়) জানেও বটে। ওইসব লোকের প্রতিদান হচ্ছে ক্ষমা যা আপন রবের পক্ষ হতে লাভ হবে আর এমন জান্নাত বা বাগানসমূহ যেগুলোর তলদেশ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত হবে। আর কতই—না উত্তম পারিতোষিক আমলকারীদের জন্য।—সূরা আলে ইমরান, ০৩ : ১৩৪—১৩৬

 

তাফসীর : পূর্ববর্তী আয়াতে মুত্তাকীদের জন্য এমন জান্নাত তৈরি করা হয়েছে বলে সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে, যার প্রশস্ততা আসমান—জমিনের প্রশস্ততার ন্যায় (বরং তার চেয়ে অনেক বেশি যা বিভিন্ন হাদীস দ্বারা বোঝা যায়)। আর উল্লিখিত আয়াতসমূহে সেই মুত্তাকীদের গুণাবলি ও পরিচয় বর্ণনা করা হয়েছে। সেসব গুণ হচ্ছে এই—

এক. তারা সুখ—স্বাচ্ছন্দ্যে, অভাব—অনটনে সর্বাবস্থায় আপন মাল আল্লাহর পথে খরচ করে। অর্থাৎ শুধু প্রচুর মাল থাকলেই খরচ করে এমন নয়; বরং অভাব—অনটনের সময়ও খরচ করে। এতে বোঝা গেল গরিবদেরও সাধ্যানুযায়ী কিছু না কিছু খরচ করা চাই। অল্প মনে করে সদকা—খয়রাত করা বাদ না দেওয়া চাই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

اتقوا النار و لو بشق تمرة

এক টুকরা খেজুর সদকা করে হলেও জাহান্নাম থেকে বাঁচো।

অপর এক হাদীসে বলা হয়েছে,

الصدقة تطفئ الخطيئة كما يطفئ الماء النار

পানি যেমন আগুন নিভিয়ে দেয় তদ্রুপ সদকা গোনাহ (যা জাহান্নামের কারণ) নিভিয়ে দেয়।—মিশকাত

আর আল্লাহর পথে দান করা কেবল মালের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং নেক কাজের জন্য সময় ও শ্রম ব্যয় করলেও সেটা সদকা এবং আল্লাহর পথে খরচ হিসেবে গণ্য হবে।

দুই. তারা ক্রোধকে দমন করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে দেয়। এ দুটিও অতি উঁচু গুণ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে জনৈক ঘোষক ঘোষণা করবে—আল্লাহর কাছে যে ব্যক্তির হক রয়েছে সে যেন দাঁড়ায়। তখন ওইসব লোক দাঁড়াবে যারা দুনিয়াতে মানুষের জুলুম, দুর্ব্যবহার ও ত্রুটি—বিচ্যুতি ক্ষমা করেছে।

ইমাম বায়হাকী উল্লিখিত আয়াতের তাফসীরে হযরত আলী ইবনে হুসাইন রাযি. সম্পর্কিত একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন। সেটি হচ্ছে—একবার তাঁর এক বাঁদি তাঁকে ওযু করাচ্ছিল। হঠাৎ ওযুর পাত্র বাঁদির হাত থেকে তাঁর গায়ে পড়ে যায়, যার ফলে তাঁর কাপড় ভিজে যায়। এতে গোস্বা আসা স্বাভাবিক। তাই বাঁদির আশঙ্কা হলো, না জানি মালিক আজ আমাকে কী শাস্তি দেন। তাই সে তৎক্ষণাৎ কোরআনে কারীমের এ আয়াত পাঠ করল—

وَالْکٰظِمِیْنَ الْغَیْظَ وَالْعَافِیْنَ عَنِ النَّاسِ

وَالْکٰظِمِیْنَ الْغَیْظَ ‘যারা ক্রোধ দমন করে’ পড়ার সাথে সাথে তাঁর সমস্ত গোস্বা ঠান্ডা হয়ে গেল। অতঃপর যখন দ্বিতীয় অংশ অর্থাৎ وَالْعَافِیْنَ عَنِ النَّاسِ ‘আর মানুষের অন্যায়—অপরাধ ক্ষমা করে দেয়’ পাঠ করল তখন তিনি বললেন, আমি অন্তর থেকে ক্ষমা করে দিলাম।

বাঁদিটি ছিল অত্যন্ত বুদ্ধিমতি। অতঃপর সে

এ আয়াত পড়ল—وَاللهُ یُحِبُّ الْمُحْسِنِیْنَ ‘আর আল্লাহ তাআলা নেক ও সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।’

এ আয়াত শুনে হযরত আলী ইবনে হুসাইন রাযি. বললেন, যা আমি তোকে আযাদ করে দিলাম।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকেও এসব উন্নত গুণ অবলম্বন করে জান্নাত লাভের তাওফীক দান করুন। আমীন।

Avatar

niyamot

একটি কমেন্ট করুন