প্রতিষ্ঠাতা: মুজাহিদে আযম হযরত মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ.

জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলূম ফরিদাবাদ, ঢাকা-এর মুখপত্র

প্রতিষ্ঠাকালঃ ১৯৩৭ ঈসায়ী

তোমাদের লেখা

তোমাদের লেখা

৩১ জানুয়ারি ২০২১, রবিবার

[বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল—হাসান লন্ডন থেকে ঢাকায় এসেছেন ইলম অর্জনের জন্য। কিছু কিছু বাংলা বলেন আর ভাঙা ভাঙা বাংলা লেখেন। এ লেখা তার বাংলা শেখার কসরতেরই একটি অংশ। ‘তোমাদের লেখা’ বিভাগের প্রবীণ পাঠক হিসেবে তোমাদের কাছে এ টুকরো অংশটুকু পাঠিয়েছেন।]

আল্লাহ তাআলার ফজল ও করমে আমি বাংলাদেশে এসে অনেক দিন মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়াতে পড়তে পেরেছি। আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু ওয়ালাকাশ শুকুর। প্রথমে এসেছি ১০ মে ২০১৮ সালে। প্রায় তিন বছর হয়ে যাচ্ছে। প্রথম বর্ষ শেষ করে লন্ডন গিয়েছিলাম। এরপর আর যাওয়া হয়নি। মনে খুব ইচ্ছা, কখন যাব, মা—বাবা, ভাই—বোন সবাইকে দেখব। তাদের সঙ্গে বসব, মনের কথা বলব।

আমার উপর মা—বাবার বহু এহসান। দিল খুলে পড়াশোনা করার সুযোগ দিয়েছেন। বহু সবর ও বহু কোরবানী করেছেন।

رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا

তাঁদের অনেক আশা ও চাওয়া। তাঁরা অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া—এ পড়াশোনা করে আমার অনেক ভালো লেগেছে। অনেক কিছু অর্জন করতে পেরেছি। শুরুতে সবকিছু অচেনা লাগছিল। আসাতিযায়ে কেরাম এবং হিতাকাক্সক্ষী সাথিদের মহব্বত না পেলে নিঃসন্দেহে আমার বাংলাদেশে পড়াশোনা অসম্ভব হতো। সামনের বছর আরও পড়াশোনা করার নিয়ত আছে। আল্লাহ তাআলার তাওফীক যদি সঙ্গ দেয়। সবার কাছে দুআর দরখাস্ত করছি।

মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল—হাসান

 

একটি যাপিত প্রভাতের কথা

১৮—০৯—১৪৪১ হিজরী, মঙ্গলবার

সাহরীর পর হাতে নিলাম আমার পরম প্রিয় স্বপ্নপুরুষ, সায়্যিদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. সম্পর্কে লিখিত সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভী : বিশ্ববরেণ্য মনীষীদের চোখে বইটি। বইটি সংগ্রহ করেছিলাম ঈশ্বরগঞ্জ (মোমেনশাহীর একটি থানা) বাজারের বইমেলা থেকে। কী সুন্দর নাম বইটির! পড়তেই হৃদয় আন্দোলিত হয়। সুখাবেশের তরঙ্গ জোয়ারে ভরে ওঠে মন। বইটি সংগ্রহ করার পর দীর্ঘ আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও বইটির কয়েকটি বাক্য ছাড়া আর কিছুই পড়া হয়নি; বরং বলা ভালো—আমি ইচ্ছে করেই পড়িনি। কারণ, আমি চাচ্ছিলাম, প্রিয় এই বইটি এমন সময় পড়ব, না ভুল বললাম, এমন সময় অধ্যয়ন করব, যখন হৃদয়সাগরে ভাবের ঢেউ ওঠে এবং আবেগের জোয়ার আসে। আল্লাহ তাআলার রহমতে পবিত্র রমযানের আজকের সুবহে সাদিকের পরম পবিত্রক্ষণে হৃদয়সাগরে সেই ঢেউ উঠল এবং সেই জোয়ার এল, যার জন্য আমি দীর্ঘদিন প্রতীক্ষার প্রহর গুনছিলাম। একটা সময় আসে যখন সমুদ্রের তলদেশ থেকে এক ফোঁটা বৃষ্টির সীমাহীন আশা নিয়ে উঠে আসে ঝিনুক এবং ব্যাকুল দৃষ্টিতে আকাশের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে প্রতীক্ষার প্রহর গোনে। সেই পরমক্ষণে যখনই লাভ করে বহু প্রতীক্ষিত এক ফোঁটা বৃষ্টি অমনি মুখ বন্ধ করে ডুব দেয় সমুদ্রের তলদেশে এবং …। আমার উপমাও ঠিক সেই প্রতীক্ষমাণ ঝিনুকের মতোই। আমি উন্মুখ ছিলাম একটি ভাবের জন্য এবং ব্যাকুল ছিলাম একটি আবেগের জন্য। আল্লাহর রহমতে আজকের পরম মুহূর্তে সে ভাব ও আবেগ এসে হৃদয়ে দোলা দিল। অমনি সেই ঝিনুকের মতো ডুব দিলাম। ডুব দিয়েই তরতর গতিতে এগিয়ে চললাম গভীরে। ও মা! সূর্যোদয়ের তো আর মাত্র কিছু সময় বাকি! এখনো তো ফজর আদায় করা হয়নি। মনের অজান্তেই অস্ফুট স্বরে বলে উঠলাম, এত দীর্ঘ সময় কোথায় ছিলাম? প্রিয়তম স্বপ্নপুরুষের জীবন—সাগরে তাহলে এতক্ষণ ডুবে থাকা যায়?

রমযানে আমাদের দেশের আমল হলো, সুবহে সাদিকের পরপরই ফজরের সালাত আদায় করে শুয়ে পড়া। হয়তো বহির্বিশ্বেও এমনই। কিন্তু পূর্ববর্তী বুযুর্গানে দ্বীনের মামূল ছিল অন্যান্য সময়ের মতোই রমযানেও পরিবেশ কিছুটা ফর্সা হলে মুস্তাহাব ওয়াক্তে ফজর আদায় করা। ইলমে হাদীসের জগতে আমাদের তারকাতুল্য পুরুষ শাইখুল হাদীস যাকারিয়া কান্ধলভী রহ.—এর লেখায় তো জেনেছি, তিনি যথাসময়ে ফজর আদায় করতেন এবং সূর্যোদয়ের পর ইশরাক আদায় করে শয্যা গ্রহণ করতেন। এখনো হয়তো যামানার বুযুর্গানে দ্বীনের মাঝে উক্ত আমলটি অব্যাহত রয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ, আমি বিগত দু—বছর যাবৎ যে মাদরাসায় (বীর কামটখালি হামিউস সুন্নাহ মাদরাসা, নান্দাইল, মোমেনশাহী) লেখাপড়া করছি সেই মাদরাসায় উক্ত আমলটি গুরুত্ব সহকারেই পালন করা হয়। ইশরাকের বিষয়টি অবশ্য ব্যক্তিগত। উসতাযে মুহতারাম তো তারগীব দেনই। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনোরকম চাপ সৃষ্টি করেন না। আল্লাহ তাআলা আমাদের উপর হুযুরের ‘রহমতপূর্ণ ছায়াকে’ আপন মর্জি অনুযায়ী দীর্ঘায়িত করুন। আমীন।

আজ সাহরীর পর প্রিয়তম আলী মিয়া নদভী রহ.—কে নিয়ে লেখা সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভী : বিশ্ববরেণ্য মনীষীদের চোখে গ্রন্থটি অধ্যয়ন করতে করতে কখন যে সময় ফুরিয়ে গেল টেরই পাইনি। হঠাৎ চোখ তুলে তাকিয়ে দেখি, পরিবেশ প্রায় আলোকোজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। বেলা ওঠার বাকি মাত্র ১৭/১৮ মিনিট। তাই তাড়াতাড়ি ফজরের সালাতে দাঁড়িয়ে গেলাম। সালাতের জরুরত সেরে ওযু করলাম। অতঃপর পায়চারির উদ্দেশ্যে ধীরে ধীরে চলে গেলাম বাড়ির সম্মুখস্থ প্রাণের সেই ‘সবুজ ভূমিতে’যেখানে জড়িয়ে আছে আমার এ ক্ষুদ্র জীবনের অসংখ্য সুখ—দুঃখের স্মৃতি। ভোরের পাখিদের কলকাকলিতে পুরো পরিবেশটা মুখরিত হয়ে উঠল। শিশিরভেজা সবুজ ঘাসের উপর পা ফেলে ফেলে পায়চারি করতে খুবই ভালো লাগছিল। মনে হলো, হুযুর যে বলেন, ইশরাক আদায় করে ঘুমাতে। এতে অনেক শান্তি লাগবে, প্রশান্তি জাগবে—আসলেও তো তা—ই। আমরা তো শুধু ঘুমের প্রস্তুতি গ্রহণেই ব্যস্ত থাকি। তাই বুঝি না কোথায় শান্তি ও প্রশান্তি। এভাবে বিশ—পঁচিশ মিনিট পায়চারি করে একটি কোমল অনুভূতি নিয়ে ঘরে ফিরলাম। অতঃপর চার রাকাত ইশরাক আদায় করে শুয়ে পড়ি।

—হুসাইন আহমদ সিদ্দীক

বীর কামটখালী, নান্দাইল, মোমেনশাহী

 

মহান রবের দরবারেই কেবল ফরিয়াদ করো

১৭ই রবিউস সানী, ১৪৪২ হি./ ০৩.১২.২০ ইং

আজ রাতে তাকালাম দক্ষিণ দিকটায়, নদীর দিকে। দেখি ঘন ধোঁয়ার জমাটবাধাঁ লালিমা! প্রায়ই তো দেখি, কিন্তু.. আজ আমার কাছে মনে হলো অন্য কিছু! ধীরে ধীরে ধোঁয়াগুলো আকাশে ছড়াতে লাগল, আমি চেয়ে আছি নিষ্পলক দৃষ্টিতে! রাতের আকাশের কতকটা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ল সেই লালিমা এবং রূপান্তরিত হলো আরাকানের মানচিত্রে!

তারপরের ধোঁয়া জুড়ে নিল পূর্বের ধোঁয়ার স্থান! ম্লান হয়ে গেল আরাকানের মানচিত্রসদৃশ ধোঁয়ার কুণ্ডলী! আগুয়ান ধোঁয়াগুলো এবার ফিলিস্তিনের মানচিত্রে পরিণত হলো এবং ‘মাক্ববুযা’      (ইসরায়েল কতৃর্ক দখলকৃত অংশ) ও ‘ফী আইদীনা’ (ফিলিস্তিনি মুসলিমদের হাতে যে অংশ) অংশ দুটো স্পষ্ট প্রতিভাত হলো আমার সামনে। যেন এক অংশে ‘কাপুরষতা ও হিংস্রতা’, অপর অংশে ‘সাহসিকতা ও প্রতিরোধ—প্রচেষ্টা’!

সব ধোঁয়া ছাপিয়ে পরবর্তী ধোঁয়ার কুণ্ডলী কাশ্মীরের মানচিত্রে রূপ নিল এবং ধীরে ধীরে বিদ্রোহী—প্রতিবাদীভাবে ছড়িয়ে পড়ল পুরো আকাশে! সঙ্গে সঙ্গেই যেন শুনতে পেলাম উদ্যত কুফফারদের প্রতি ছুড়ে দেওয়া মুজাহিদীনের দারাজ কণ্ঠ, ‘সানায়ুদ ইনশাআল্লাহ’ এর বজ্রধ্বনি এবং অদূর ভবিষ্যতের বিজয়ী—আশ্বাসবাণী…!!

আমি চলে গিয়েছিলাম সুদূর ফিলিস্তিনের বালুময় ময়দানে, আরাকানের সবুজ—শ্যামল খেতে ও কাশ্মীরের ঝিলাম নদের তীরে তুষার—ঘেরা পর্বত চূড়ায়! কিন্তু তখন তা দৃষ্টিনন্দন ছিল না! ফিলিস্তিনের সেই ময়দানে ছিল চাঁদ—তারকা খচিত পতাকার গৌরবান্বিত প্রতিবাদী উড্ডয়ন! শ্যামল খেতে চলছিল পাষণ্ড মগ—দস্যুদের তাণ্ডব—লীলা! আর কাশ্মীরের তুষারঘেরা পর্বত হতে বরফের বদলে যেন গড়িয়ে পড়ছিল ফোঁটা ফোঁটা রক্ত! আযাদীর খুন!!! শাহাদাতের খুন!! হঠাৎ কোনো কিছুর শব্দে বাস্তবে ফিরে এলাম। যেন আপন মনেই বলে উঠলাম, ‘ওহ, আমি তো বাংলার ঘরকুনো এক কন্যা’…! মাজলুম দেশগুলোর পতাকা যেন আমার দিলের পর্দায় আজ একের পর এক ভেসে উঠছে! প্রত্যেক মানচিত্রের যেন একটি দাবি, একটিই আকুতি : ‘আমাদের থেকে শিক্ষা নাও হে মুসলিম জনপদ, আমরা আজ শিক্ষার খোরাক। তোমরা শিক্ষার খোরাক হয়ো না, হে আমার ভাই—বোন! মুমিনের শানে জীবন গড়ো হে বন্ধু! কাফেরের খড়গ যখন আসবে মাথার উপর, কেউ আসবে না সাহায্যে। তাই ফরিয়াদ করো শুধুই মহান রবের দরবারে। তাঁর কাছেই সাহায্য চাও!!’

—বিনতে এন. এম. জাহাঙ্গীর

নারায়ণগঞ্জ।

 

রোজনামচা

২৩/১০/২০২০ ইং

লকডাউনে মাদরাসা বন্ধ থাকার কারণে দীর্ঘদিন যাবৎ পুরোনো সাথি—ভাইদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় না। বসুন্ধরাতে যাদের সাথে পড়েছি, আমি ব্যতীত সবাই বসুন্ধরা মারকাজে অধ্যয়নরত আছে। কিছুদিন যাবৎ তাদের কথা খুব মনে পড়ছে। আজ শুক্রবার, তাই তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। তখন পরিস্থিতিটা ছিল এমন যে, আমাদের প্রাণপ্রিয় শায়েখ আল্লামা আব্দুল কুদ্দুছ হাফিযাহুল্লাহকে নিয়ে যে মিথ্যা অপবাদ রটানো হয়েছে, তা মাদরাসাগুলোতে বেশ আলোচিত বিষয়। কয়েক মাদরাসার ছাত্র—ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছে। সবাই ওই মিথ্য অপবাদ নিয়ে শায়েখের ব্যাপারে প্রশ্ন তোলে। শুধু শায়েখের গীবত করাতে ব্যস্ত। একদিকে কিছুটা ভালো লাগল যে, হুজুরের আমলনামায় ওদের নেক আমলগুলো জমা হচ্ছে। হুযুরের নামে মিথ্যা অপবাদ শুনে কষ্ট লাগে। কারণ, তিনি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করেছেন।

শায়েখের এক একটা দরস জীবনে আমূল পরিবর্তন আনে। আমার মনে হয় প্রত্যেকটা দরসই ছাত্রদের জন্য জীবন চলার পথ ও পাথেয়। হযরতের নুরানী চেহারা দেখলে নিষ্পাপ ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না। এমন একজন আল্লাহওয়ালার নামে মিথ্যা অপবাদ রটালে কার না খারাপ লাগে।

আমি বসুন্ধরায় যাওয়ার সময় অক্টোবর মাসের মাসিক নেয়ামত সঙ্গে নিয়ে গিয়েছি। সেখানে পৌঁছেও যখন ওইসব মিথ্যা প্রসঙ্গের সম্মুখীন হতে হলো, তখন তাদের কয়েকজনকে পত্রিকার মধ্য থেকে ‘ব্যথিত হৃদয়ের কৈফিয়ত’ শিরোনামে শায়েখের বক্তব্যটি পড়তে দিলাম। শায়েখের আখলাক, আচার—ব্যবহার, দরস—তাদরীস, বয়ান ইত্যাদি সম্পর্কে কিছু বললাম। এতে শায়েখের প্রতি তাদের ভুল ধারণাটা সুধারণায় পরিণত হলো। তারা সঠিক বিষয়টি বুঝতে পেরে খুশিও হলো।

তখন তাদের অনেকেই হুজুরের তাকরীরে বুখারী ও তাকরীর তিরমিযীর খুব প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, বাংলা ভাষায় উচ্চতর ও জামে—মানে তাকরীর।

খুব ভালো লাগল। উস্তাদে মুহতারামের ভূয়সী প্রশংসা শুনে মনটা ভালো হয়ে গেল। আসলে নিজের উস্তাদের প্রশংসা অন্যের মুখে শুনলে মনটা খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা হযরতকে নেক হায়াত ও উচ্চ মাকাম দান করুন। আমীন।

 

স্রষ্টার সান্নিধ্য

চারপাশের দৃশ্যগুলো দাঁড়িয়ে আছে অপূর্ব চিত্র এঁকে। গাছ—পালা, ফুল—ফল, পাখ—পাখালি, দূর্বাদল, মাঠ—ঘাট, খাল—বিল, সাগর—নদী, ঝরনা—পাহাড়, আকাশ—বাতাস, চন্দ্র—সূর্য, গ্রহ—তারা—চমৎকার এক দৃশ্য।

সূর্যমামা সকালবেলা আলোক ছড়ায়, দিগ—দিগন্ত বিস্তার করে সোনালি রোদ। চাঁদমামা রাতে উদার জোছনা ঝরায়। যেন গায়ে হাত বুলিয়ে দেয়, শীতল ছায়ায় জড়িয়ে নেয়। গাল ল্যাপটা হাসির মতো ফুল পাপড়ি মেলে হাসে, হাসায় চারপাশ। দেয় প্রেমের হাতছানি, ছড়ায় সুবাস। দিন শেষে ফড়িংয়ের ছুটোছুটি পাখপাখালির সুখ। বুলবুলির বু—বু আর ময়নার মায়াবী সুর সত্যি আমার ভাবতে অবাক লাগে! কে দিল প্রেমময় এ সুর! যার গান ধরে গেয়ে যাই, মনের অজান্তেই হারিয়ে যাই। প্রজাপতির নূপুর—নাচন আর মৌমাছির গুঞ্জরণ হৃদয় করে উতলা, মনের গলায় পরায় ওরা প্রেমের মালা।

বন্ধু, তুমি কি মনে করো তোমার চারপাশের মানুষ তোমার আপন?

তোমার আত্মীয়—স্বজন কিংবা বন্ধু—বান্ধব তোমার আপন? তুমি কি কখনো ভেবেছ কতটুকু তারা তোমার আপন? স্বার্থের ওপর একটু আঘাত আসলেই তো আপন মানুষ পর হয়ে যায়। মনের মিল না হলেই কথার ধরন পাল্টে যায়। পৃথিবীতে সবচেয়ে আপন হলো ‘মা’। মায়ের মতো আপন এ ধরণিতে কেউ নেই। তিনি আমাদের ভালোবাসেন, হৃদয়ে আগলে রাখেন। শত অপরাধের পরও কাছে টেনে নেন, মায়ার বাঁধনে বেঁধে নেন। সময়ে তিনিও ছাড় দেবেন না, সামনে এসে দাঁড়াবেন, স্বার্থের লাগাম টেনে ধরবেন। আসল কথা হলো, পৃথিবীতে যে যতই আপন হয় শুধু ক্ষণিকের জন্য। এ আপনত্ব একদিন থাকবে না। আদরের দুলাল বলে ডাকবে না। তুমি আমার একমাত্র ধন। প্রাণের স্পন্দন কেউ বলবে না। কারণ, প্রেমের তুলি একেবারে সংকীর্ণ। মায়ার বাঁধন খুবই দুর্বল। যে কারণে বাঁধনের সুতাটি অতি সহজেই ছিঁড়ে যায়। বলতে পার তাহলে আমাদের সবচেয়ে আপন কে? বুকের শীতল ছায়ায় কে আমাদের টেনে নেবে, ছন্দময় বাণী শোনাবে, চিরশান্তির কথা বলবে, যা বাস্তবে পরিণত হবে। সেই প্রাণের প্রিয়জন কে? যাকে পাব এপারে—ওপারে, এ ভুবনে ও ভুবনে। তাহলে শোনো, যিনি দিলেন ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য, হৃদয়হারী সৌরভ, পাখির সুখমাখা গুঞ্জন। বসন্তের শান্ত হাওয়া। সরিষার বাহারি দুল। তিনিই সে প্রাণের প্রিয়জন, সবচেয়ে আপনজন, তিনি হলেন আমাদের স্রষ্টা। তিনি আল্লাহ। তিনি মহান। তিনিই মহীয়ান। যদি তাঁকে জানতে চাও, তাঁর পরিচয় পেতে চাও তাহলে তাঁর নিদর্শন দেখো, তাঁর সৃষ্টি নিয়ে ভাবো। তাঁর পরিচয় পেয়ে যাবে, তাঁকে চিনতে পারবে। তিনি অত্যন্ত দয়ালু ও শ্রেষ্ঠ মেহেরবান। যদি তাঁর দিকে এক হাত আগানো যায় তিনি দুই হাত এগিয়ে আসেন, যদি হেঁটে যাওয়া যায় তাহলে দৌড়ে আসেন। প্রেমের এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে কি? আদৌ নয়!

মুস্তাফিজুর রহমান

হবিগঞ্জ

লেখক সম্পর্কে
Avatar

editor

একটি কমেন্ট করুন