প্রতিষ্ঠাতা: মুজাহিদে আযম হযরত মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ.

জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলূম ফরিদাবাদ, ঢাকা-এর মুখপত্র

প্রতিষ্ঠাকালঃ ১৯৩৭ ঈসায়ী

তোমাদের লেখা

তোমাদের লেখা

ভালোবাসার গাছ

শনিবার, ৫ জুন ২০২১

তুমি ছিলে ক্ষুদ্র একটি বীজ। তোমার অস্তিত্ব সম্পর্কে কেউ জানত না। তোমার অস্তিত্ব ছিল ছোট্ট একটি খোসার ভেতর। কে কখন কীভাবে কোন উদ্দেশ্যে তোমাকে এখানে বপন করেছে। নাকি তুমি পাখির ডানায় ভর করে দূর নীলিমা থেকে স্থানান্তরিত হয়েছ, তা সবারই অজানা। তুমি অন্য কোনো বৃক্ষের মতো সযত্নে লালিত হওনি! তোমাকে চরম সংগ্রাম করতে হয়েছে। পড়ে থাকা খোসার ভেতর থেকেই অঙ্কুরিত হওয়ার পূর্বে শক্ত মাটির বুক চিরে সূর্যালোকে বের হওয়ার জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে। সূর্য দেখার আগেই শিখতে হয়েছে কীভাবে তোমাকে বৃষ্টিবিন্দু আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে হবে! যখন পাপড়ির মতো মোলায়েম তোমার দুদিকে দুটি ডানা গজিয়েছে তখন তোমার উপর নেমে এসেছে পাহাড়সম বিপদ, সীমাহীন অসহায়ত্ব! এই বুঝি কেউ উপড়ে ফেলল। এই বুঝি নির্দয় কাঁচির ধারালো দাঁতে হারালো তোমার অস্তিত্ব! কখন জানি হুমড়ি খেয়ে পড়ে গবাদি পশুর পাল। কোনোভাবে নিজেকে লুকিয়ে পার করেছ তোমার শিশুকাল। যখন শুরু হলো শৈশবকাল, তখন তোমার উপর নেমে এলো আরও মহাদুর্যোগ। প্রচণ্ড ঝড়—তুফান। শিলা বৃষ্টির মতো মৃত্যুঘাতী আপদ! এসবের কাছেও তুমি হার মানোনি। অপরাজেয় থেকেছ শির উঁচু করে! এত ভয়—ভীতি, ঝড়—তুফান আর সমূহ আশঙ্কার মাঝেও হীনবল হওনি। সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত এভাবেই তুমি সংগ্রাম করেছ বহু দিন, বহু কাল।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই শুরু হয়েছে প্রভুর দরবারে আহাজারি, রোনাজারি আর তাসবিহ—তাহলিল। চেয়ে নিয়েছ প্রভুর কাছ থেকে তার অতি যত্নে গড়া সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের খেদমত। দয়াময় প্রভু তোমাকে কবুল করে নিলেন। আজ তুমি বিশাল বৃক্ষ, তোমার পরশে পুরো ভূমি আজ আলোকিত, আশেপাশে তোমার সমকক্ষ নেই কেউ। ডালপালাগুলো ছড়িয়ে আছে বৃহৎ আকারে। প্রচণ্ড গরমে মানুষ তোমার নিচে আশ্রয় খেঁাজে। কত কবি তোমার ছায়ায় বসে গল্প সাজায়। কত দার্শনিক তোমাকে দেখে মহান প্রভুর মহত্ত্বের বর্ণনা লেখে। বিষণ্ণ সূর্য পড়ন্ত বিকেলে যখন পশ্চিম দিগন্তে হেলে পড়ে তখন তোমার ছায়ায় দেখা মেলে কত পাঠকের! এক অন্তহীন সুখের অনুভূতি নিয়ে তারা পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা গুনতে থাকে!

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত্রি গভীর হওয়ার সাথে সাথে দেখা মেলে এক অনন্য বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্যের মেলা। জোছনা মাখা এই রাতে পুরো বিস্তৃত প্রান্তর জুড়ে খেলা করে জোনাকি পোকার দল। হাতের আঙুলে জোনাকি পোকার স্পর্শ মনে এনে দেয় আকাশের সমুজ্জ্বল তারকা স্পর্শ করার অপার আনন্দ! তোমার আঙিনায় জ্যোৎস্না রাতে, ঝিঁঝিঁ পোকার ঝিঁঝিঁ শব্দে, শীতল হাওয়ার কোমল স্পর্শে অনুভূত হয় অপার শান্তি। এভাবেই তুমি শান্তির পরশ বুলিয়ে যাচ্ছ দিনের পর দিন, বছরের পর বছর, যুগ যুগ ধরে! আজ তোমার মৃতপ্রায় ডালপালাগুলো কেমন শুষ্ক শুষ্ক হয়ে আছে। কে তোমার যত্ন নেবে? এভাবেই কি হারিয়ে যাবে তোমার অনন্য সুখের পরশ?

সত্যি করে বলি, আমাদের জীবনও ছোট্ট বীজ থেকে বেড়ে উঠা বৃক্ষের মতোই। বহু সংগ্রাম ও সাধনা করেই বড় হতে হয়। আল্লাহর দরবারে দুআ—রোনাজারি করতে হয়। যে জীবনে আল্লাহর রহমত নেই, সংগ্রাম ও সাধনা নেই সে জীবন কখনোই আদর্শ জীবন হতে পারে না। অতএব যারা বড় হতে চায়, আদর্শ হতে চায়, স্বপ্ন দেখে জাতির ক্রান্তিলগ্নে ছায়াদার বৃক্ষের ভূমিকা পালন করবে তাদের অবশ্যই আল্লাহর রহমতের ভিখারী হতে হবে। সংগ্রাম ও সাধনা করে যেতে হবে।

—আব্দুল্লাহ আল—মামুন

মুক্তাগাছা, মোমেনশাহী

 

করোনাকালের বন্ধু

কখনো মন খারাপ হয় ভীষণভাবে। আবার কখনো মন ভেঙেও যায়। যার দরুন মন—কুঠুরিতে বিষাদ—ভরা গল্প জমা হয়। যা কাউকে বলতে না পেরে ক্ষণে ক্ষণে চোখ দিয়ে ঝরঝর করে অশ্রম্ন ঝরে। তখন বড্ড ইচ্ছে করে, কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে মনখারাপের গল্পগুলো শোনাতে। গল্পগুলো শুনিয়ে হৃদয়—উঠোনের মেঘ হয়ে জমে থাকা সব দুঃখ—কষ্টগুলো ঝেড়ে ফেলতে। কথা হলো, কাকে বন্ধু বানাব। রক্ত মাংসের মানুষকে বন্ধু বানাতে মন সায় দেয় না। খুব ভয় লাগে। কারণ তাদের বন্ধুত্ব শত্রুতায় বদলে যেতে এক মুহূর্ত সময় নেয় না। ভুল হলে শুধরে না দিয়ে উল্টো রাগ করে বসে। আজেবাজে কথা শোনায়। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বের শুরুটা তো বেশ আনন্দের সঙ্গেই হয়। তবে শেষটা বড় বেদনাবিধুর হয়। যা কলমের আঁচড়ে মুখের ভাষায় ব্যক্ত করা যায় না। পরে শুধু আফসোসই থেকে যায়। বন্ধুর দেওয়া কষ্ট মনে পড়লে ভেতরটা জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যায়। ভালো—মন্দ স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ভেসে বেড়ায়। তাই এ প্রজাতির মানুষ বাদ দিয়ে একটা লাল নোটবুককে বন্ধু বানালাম। এর সাথেই ভাগাভাগি করব করোনাকালের দুঃখ—কষ্টগুলো। জীবনের না বলা গল্পগুলো। এর মাঝে লিখে রাখব করোনাকালে মানুষের উপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে, যে অত্যাচারের স্টিম রোলার অসহায় মানুষের উপর দিয়ে চলছে। অব্যক্ত আরও অনেক কিছু!

—আহনাফ শরঈ

দিলু রোড মাদরাসা, ঢাকা

 

রোযনামচা

১৩ মে ২০২১

আজ রমযানের শেষ দিন। খুব খারাপ লাগছে যে, রমযান মাস চলে যাচ্ছে। গুনাহ মাফের মাস চলে যাচ্ছে। এই এক মাস তো শয়তান বাঁধা ছিল। এ কারণে বেশি গুনাহ হয়নি। এখন তো শয়তান ছাড়া পাবে। এজন্য আগে থেকেই ভয় লাগছে, না জানি কি গুনাহ হয়ে যায়।

হে আল্লাহ, তুমি সব সময় সব রকম গুনাহ থেকে আমাকে হেফাজত করো। আমীন।

৮ জুন ২০২১

আজ আমার জন্মদিন। জীবন থেকে একটি বছর চলে গেল। আমরা কখনো জন্মদিন পালন করি না। কারণ জন্মদিন পালন করা জায়েয নেই। অনেককে দেখি এই দিন কত আনন্দ—ফুর্তি করে! এই দিন মূলত আনন্দ—ফুর্তির দিন নয়; বরং এ দিন হচ্ছে কান্নার। এজন্য যে ‘আমার জীবন থেকে একটি বছর হারিয়ে গেল’!

একটি বছর চলে যাওয়া মানে একটি বছরের হায়াত কমে আসা। একটি বছর যাওয়া মানে জীবন থেকে একটি বছর হারিয়ে যাওয়া। একটি বছর চলে যাওয়া মানে মৃত্যু এক বছর এগিয়ে আসা।

যাব তো একদিন আল্লাহর কাছে, কিন্তু কী নিয়ে যাব! আমার তো নেওয়ার মতো কিছু নেই। হে আল্লাহ! তোমার রহমতের দিকে তাকিয়ে আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমীন।

—আয়েশা

মোমেনশাহী

 

রোযনামচা

৩০.০৬.২০২১  বুধবার

আমার নাম আফিয়া। আমি আজ থেকে রোযনামচা লিখছি। আমি খালামণির কাছে পড়ি। আমার খুব ভালো লাগে।

 

০৭.০৭.২০২১

আমি আজ দেরিতে ঘুম থেকে উঠেছি। কিন্তু খালামণি আগে আগে উঠতে বলেছিলেন পড়তে বসার জন্য। আমি উঠতে পারিনি। তাই আমার খুব খারাপ লাগছে।

—আফিয়া সাফফানা

ঢাকা

 

একটু ভাবুন

প্রায় সময়ই মসজিদে এলান করা হয়, ‘বাকি নামাযের পর জানাযা আছে’। কখনো বিভিন্ন মসজিদের মাইকে এলান হচ্ছে, ‘অমুকের পিতা অমুক ইন্তেকাল করেছে’। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। এভাবেই প্রতিদিন হাজারো মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। কেউ স্বাভাবিকভাবে আবার কেউ বিভিন্ন দুর্ঘটনা বা অসুস্থতায় মৃত্যুবরণ করছে। আমরা তাদের জানাযায় শরীক হই, তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি। কিন্তু ভাবনার বিষয় হলো, আমরা কি তাদের দেখে কিছু শিখেছি? আমাদের জীবনের ে¯্রাতধারাও তো বয়ে চলেছে আপন গতিতে। হঠাৎ একদিন ঘোষণা করা হবে আমার নাম। তা কি কখনো ভেবে দেখেছি?

‘সময় কারও জন্য অপেক্ষা করে না’ এ কথা আমরা সকলেই জানি। তবুও কেন এত অবহেলা! মৃত্যু সকলেরই হবে। কেউই এই নশ্বর পৃথিবীতে চিরকাল থাকবে না। এটাও সবাই জানি। তাহলে কেন ক্ষণিকের ভালোবাসায় মত্ত হয়ে চিরস্থায়ী সুখের ঠিকানা জান্নাতকে দূরে ঠেলে দিচ্ছি। সত্যিই বিস্ময়কর আমাদের চিন্তাধারা।

একটি উপমা দিই, যখন কারও চাকরি থেকে অবসরের সময় ঘনিয়ে আসে তখন সে চিন্তা করে, বাকি জীবন যেহেতু বাড়িতে বসেই কাটাতে হবে, সুতরাং অবসরের যে ক’দিন বাকি আছে তার মধ্যেই বাড়ি—ঘর ঠিক করে নিই। যেন জীবনের বাকি সময়টা সুখ—স্বাচ্ছন্দ্যে কাটাতে পারি। এবার একটু চিন্তা করে দেখি, ক্ষণিকের এ দুনিয়ার জন্য এত কিছু করতে পারলে চিরস্থায়ী আখিরাতের জন্য আমাদের কী করা উচিত?

সত্যিই আশ্চর্য! আমরা দুনিয়ার এই মুসাফিরখানা সু—সজ্জিত করছি। আর ভুলে গিয়েছি আমাদের আসল বাড়ি আখিরাতের কথা। যেখানে চিরজীবন থাকতে হবে। যে জীবনে কোনো মৃত্যু নেই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।

—ইয়াসীন আরাফাত

শরহে জামী, ফরিদাবাদ মাদরাসা

 

 

লেখক সম্পর্কে
Avatar

editor

একটি কমেন্ট করুন