তোমাদের লেখা
কচি হাতে ভিক্ষার থলে
খেতে বসলাম দুপুরের খাবার। কয়েক লোকমা খেয়েছি। এমন সময় রুমে ঢুকল একটি ছোট্ট মেয়ে। বোরকা পরা। হাত—পা ঢাকা। আট—নয় বছর বয়স হবে হয়তো। হাতে একটা শপিং ব্যাগ আর প্রেসক্রিপশন। ডান হাতটা পেতে দিল। মুখে কিছু বলল না। বলতে পারল না। মা হাসপাতালে। কিডনিতে সমস্যা। বাবা নেই। দুই বোন মাদরাসায় পড়ে। মায়ের চিকিৎসা করতে অনেক টাকা লাগবে। তাই নিজের কচি হাতেই ভিক্ষার থলেটা নিল। নিতে বাধ্য হলো।
একে তো ছোট্ট মেয়ে তার উপর মাদরাসায় পড়ে। লজ্জায় কাঁদো কাঁদো ভাব। রুমের অনেকেই অনেক কিছু জিজ্ঞেস করল। কিন্তু আমি কিছুই জিজ্ঞেস করিনি। করতে পারিনি। শুধু নির্বাক তাকিয়ে থাকলাম মেয়েটির দিকে। ভাবলাম, হায়রে সমাজ, এতটুকুন মেয়ের হাতে ভিক্ষার থলে! আমরা কি এমনই দেউলিয়া হয়ে গেছি? এতই দীনতার শিকার আমাদের সমাজ! একটি বাচ্চা মেয়ে মায়ের চিকিৎসা—ভার বহন করতে ভিক্ষা করবে? মানুষের কাছে হাত পাতবে? আমরা কিছুই করতে পারব না? ভাবতেই ভেতরটা ভার হয়ে গেল। খাবারগুলো আর পেটে যেতে চাইল না। সবাই মিলে কিছু টাকা তুলে মেয়েটাকে দিলাম। ও অনেক খুশি হলো। আমরাও খুশি হলাম।
—মিসবাহ
ফরিদাবাদ মাদরাসা
ভোর কুয়াশায়
সকাল এখন আনুমানিক ছয়টা। সাতসকাল না হলেও বেশ সকাল। অন্যদিনের চেয়ে একটু বেশিই শীত পড়েছে আজ। দূরের গাছপালা, ঘর—দুয়ার, জানালা—সবকিছু ঝাপসা ঝাপসা দেখাচ্ছে এই ভোর কুয়াশায়। গায়ে পাতলা সুয়েটার জড়িয়ে হাসিমুখে বের হলাম প্রাতভ্রমণে। আমার চারপাশে নেই কোনো কোলাহল। ধীর প্রশান্ত সতেজ পরিবেশ। সবখানে ভেজা ভেজা মৃদু হাওয়া বইছে। আনমনে ঘুরে বেড়াচ্ছি মেঠোপথে। দু—পাশে সবুজে ঢাকা ফসলের মাঠ। সারি সারি শ্যামলিমায় ভরপুর। শিশির বিন্দুরা ছোট ছোট ঘাসের বুকে কেমন ঝিলমিল করছে সকালের সোনারোদে!
বিচিত্র সুরে পাখিদের কলতান ভেসে ভেসে আসছে আশপাশের বৃক্ষরাজি থেকে। দোয়েল, শালিক, বুলবুলিরা উড়ে বেড়াচ্ছে পাতায় পাতায়, ডালে ডালে। মনের আনন্দে পাখিরা গান গাইছে নতুন দিনের জাগরণে। আর চনমনে হাওয়ায় মিটি মিটি হাসছে তাজা তাজা ফুলকলিরা। আমি মুগ্ধচোখে সব দেখছি। দারুণ ভালো লাগছে। আমার আকাশে—বাতাসে, ভাবে—অনুভবে প্রভাত মাহফিল আজ সুরে সুরে মুখরিত!
সুবহানাল্লাহ! কী সজীব প্রাণবন্ত আল্লাহর দান! আমার আজকের নবজাগরণ তাই শুভ হলো, সার্থক হলো জীবনের উচ্ছ্বাসে। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বড় চমৎকার বলেছেন, ‘গ্রামীণ পরিবেশ প্রকৃতি সরস প্রাণের জীবন্ত উৎস’। তারই প্রাণচঞ্চল দুরন্তচিত্র আমি উপভোগ করছি আজ ভোর কুয়াশায়। সবুজ বাংলার অপরূপ সৌন্দর্যের পরশে। আমার হৃদয় আজ আলোয় আলোয় সিক্ত। যেন সমগ্র চিত্তে জান্নাতী প্রতিদানে আমি পুলকিত শিহরিত হচ্ছি বারেবার। আলহামদুলিল্লাহ!
কত সুন্দর সাজে মহান আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন এই মহাপৃথিবী, এই ভরাপ্রকৃতি। মানুষকে ভালোবেসে জীবনের জন্য কত রঙিন রূপ—রস—ছন্দ; কত মধুর ফুল—ফল—সৌরভ ছড়িয়ে রেখেছেন ত্রিভুবনের পরতে পরতে, নিবিড় মায়ায়। যাঁর সৃষ্টি এত বিমুগ্ধ চমৎকার, না জানি তিনি কত সুন্দর, আল্লাহু আকবার! হৃদয়ের গভীর থেকে তাই উচ্ছ্বাসভরে গেয়ে ওঠি কবির কণ্ঠে,
‘এত সুন্দর সৃষ্টি তোমার, কত সুন্দর তুমি?!’
হে আমার আল্লাহ!
—আমীন মুহাম্মাদ
শিক্ষার্থী, জামিয়াতুল আশরাফ ঢাকা নয়ানগর
কাজলা যাত্রাবাড়ি, ঢাকা—১২০৪
২৬/০৯/২০২০ ইং
সময়ের আবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয় মানুষের জীবন। বদলে যায় চারদিক। কারও উন্নতি, কারও অবনতি। সুখ বদলে যায় দুঃখে। আবার কখনো হাসি ফোটে মলিন মুখে। কেন সবার অবস্থা একরকম হয় না। কেনই—বা সুখের দিনগুলো স্থায়ী না? এ ধরনের হাজারো প্রশ্ন উঁকি দেয় আমাদের মনে।
সবার অবস্থা কখনোই একরকম নয়। এটা কখনো সম্ভবও নয়। আল্লাহ তাআলার নীতিও এটাই। সুতরাং ধৈর্যের বিপরীতে নৈরাশ্য বেছে নেওয়া কখনোই বিবেকবানের কাজ নয়। যখন আমাদের উপর কোনো বিপদ আসে, তখন চারদিক অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আসে বলে মনে হয়। ভাবতে থাকি, আমার থেকে দুঃখী হয়তো কেউ নেই। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছি, ওই অসহায় দুঃখীর কথা, যার দুনিয়াতে কেউ নেই। নেই মাথা গেঁাজার সামান্য ঠাঁই! অথচ আমি সামান্য বিপদে নিজেকে সবচেয়ে অসহায় মনে করছি! এটা কি কোনো বুদ্ধিমানের পরিচয়?
আবার মা—বাবা সবাই আছে। কষ্টের মুখোমুখি হলে হয়তো সামান্য সময় কষ্টে কাটাতে হবে। কিন্তু ওই ব্যক্তির কী অবস্থা, যার মা—বাবা নেই! আমাকে বিপদে সান্ত্বনা দেওয়ার মানুষ আছে। কিন্তু যার কেউই নেই, যে দিন শেষে বাবা বলে কাছে টেনে নেবে। শত চিন্তার মাঝেও মাথায় হাত বুলিয়ে বলবে, ‘চিন্তা করিস না। এগুলো কিছুই না। আল্লাহ তাআলা সবকিছু ঠিক করে দেবেন।’
এদের দিকে লক্ষ করলে নিজেকে মনে হবে সবচেয়ে সুখী। মনে হবে, এ বালা—মুসিবত কিছুই না। কেননা বাবা—মার মতো নেয়ামত যার আছে, তার সামনে দুনিয়ার এ সামান্য বিপদ কিছুই না। অতএব, নৈরাশ্য নয় ধৈর্যকে বেছে নেওয়াই কাম্য।
—ইয়াসীন আরাফাত
শরহে বেকায়া, ফরিদাবাদ মাদরাসা
রোযনামচা
০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, রবিবার
এই দুই দিন আগে বাবা আমাকে একটি রুটিন করে দিয়েছেন। রুটিনটা কেমন বলছি। সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা। আটটার ভেতরে নাস্তা শেষ করা। তারপর তিন ঘণ্টা পড়া। পড়া শেষে গোসল করা। তারপর দুপুরের খাবার খাওয়া। খেয়ে একটু শুয়ে যাওয়া। শোয়া থেকে ওঠে খেলাধুলা করা একেবারে মাগরিব পর্যন্ত। মাগরিবের পর পড়া একেবারে নয়টা পর্যন্ত। নয়টার পর রাতের খাবার খাওয়া। খাবারের পর এশার নামায পড়া। দশটার ভেতর ঘুমাতে যাওয়া।
০৩ অক্টোবর ২০২০, শনিবার
গতকাল তোমরা সবাই রাজা বইটি শেষ করেছি। এত সুন্দর যে পড়ার সময় আমার অন্য কিছুই খেয়াল ছিল না। মনে হচ্ছিল আমি যেন গল্পগুলোর ভেতরে ঢুকে গিয়েছিলাম। বইটি শেষ করেও মনে হচ্ছিল শেষ হয়নি। আমার মতো যারা ছোট তোমরা সবাই এই বইটা পড়বে।
১০ অক্টোবর ২০২০, শনিবার
আমি আজকে আরবীতে আমার আব্বু—আম্মুর নাম লেখা শিখেছি। আব্বু আমার নাম আরও আগেই শিখিয়ে দিয়েছেন। আমার আরবী শিখতে খুব ভালো লাগে। আব্বু—আম্মুকে বলেছি আমাকে যেন আরবী কথা শিখিয়ে দেন।
১৫ অক্টোবর ২০২০, বৃহস্পতিবার
আমি এখন থেকে প্রতিদিন সকালে উঠে আম্মুর কাজে সাহায্য করি। বিছানা গোছাই, ঘর ঝাড়– দিই, মাঝে মাঝে প্লেট—বাটি ধুয়ে দিই। তারপর নাস্তা শেষে ওযু করে পড়তে বসি। আম্মু খুশি হয়ে আজকে আমাকে পুরস্কার দিয়েছেন। খুব সুন্দর একটি জামা বানিয়ে দিয়েছেন। আমিও খুশি হয়ে আম্মুকে বলেছি, জাযাকিল্লাহ।
—আফিফা সিদ্দীকা
বি—বাড়িয়া