দাদুর বাসায় যাওয়ার সময়
ফারহা আজ দাদুর বাসায় যাবে। দাদু ফোন করেছে যাওয়ার জন্য। ফারহা অনেক খুশি দাদুর বাসায় যাবে বলে। দাদু ফোন করার পর থেকে বাবাকে সে অস্থির করে ফেলেছে কখন যাবে? কখন যাবে?
আজ বেশ গরম পড়েছে। বেশ কয়েক দিন ধরে খুব গরম। বাবা বলছে, আমরা আসরের পর যাব। গরম আরেকটু কমতে দাও।
ফারহা বলে, আমার যে আর বাসায় ভালো লাগছে না। এক্ষুণি দাদুর বাসায় চলো না।
বাবা বলল, আহ্হা একটু সবর করো না।
এই বলে বাবা নিজের কাজে মন দিল। ফারহা গাল ফুলিয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে রইল। বাবা ওর গাল ফোলানো দেখে আর থাকতে পারল না। ওকে কোলে নিয়ে বলল, ঠিক আছে আমরা জলদি জলদিই যাব।
বাড়ি থেকে বের হয়ে দেখে রাস্তায় কোনো রিকশা নেই। মেঠো পথ ধরে বাবার সঙ্গে হাঁটছে ফারহা। একটু পর পর বাবাকে বলছে, বাবা রিকশা নেই কেন?
বাবা বলল, তুমি যে ভর দুপুরে বের হয়েছ তাই রিকশা নেই। এই সময় তো সবাই বিশ্রাম নেয়।
ফারহা বলল, তাহলে কি আমাদের এখন বের হওয়া ঠিক হয়নি?
বাবা বলল, একদমই না। সব কাজ সময় বুঝে করতে হয়।
ফারহা বলল, তাহলে এখন কি আমরা বাড়ি ফিরে যাব?
বাবা বলল, থাক, বের যেহেতু হয়ে গেছি দাদুর বাসায় চলেই যাই।
ফারহা বলল, ঠিক আছে।
যইনাল মিয়ার দোকান পার হলেই দেখা যায় তাল গাছের সারি। দেখতে বেশ সুন্দর লাগে। মনে হয় যেন গাছগুলো আকাশে উকি দিয়ে আছে।
বাবা ফারহাকে বলল, বলতো মা এটা কী গাছ?
ফারহা বলল, জানি না তো।
বাবা বললেন, এটা তালগাছ। তুমি যে গতকাল তালের শাস খেয়েছ সেটা এগাছেরই ফল। এই গাছে বাবুই পাখি বাসা বাঁধে। বাবুই পাখির বাসা দেখতে খুবই সুন্দর হয়।
এর মধ্যে একটি গাছে অনেকগুলো বাবুই পাখির বাসা দেখা গেল।
বাবা বলল, এই যে দেখ বাবুই পাখির বাসা।
ফারহা তো বাবুই পাখির বাসা দেখে মহা খুশি। বাবাকে বলল, বাবা কত দিন হলো পাখিগুলো এখানে বাসা করেছে?
বাবা বলল, এটা তো জানি না।
ফারহা বলল, দেড় বছর হয়েছে?
বাবা বলল, আসলে কখন বাসা বানিয়েছে তা তো খেয়াল করিনি।
ফারহা বলল, আচ্ছা।
মেঠোপথ দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ করেই ফারহার জামায় কাঁটাযুক্ত একটি ঢাল এসে লাগল। ফারহা তো বাবার দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে বলল, বাবা দেখো জামায় কাঁটা লেগে গেছে। বাবা আস্তে আস্তে জামা থেকে কাঁটাযুক্ত ঢালটি আলাদা করল। তারপর ঢালটি রাস্তা থেকে দূরে সরিয়ে দিল।
ফারহা খুশি হলো। বাবাকে বলল, জাযাকাল্লাহ।
ওর মা ওকে শিখিয়েছেন কেউ উপকার করলে তাকে জাযাকাল্লাহ বলতে হয়।
বাবা বলল, আচ্ছা, তোমার কাপড়ে কাঁটা লাগার কারণে কি তোমার কষ্ট হয়েছে?
ফারহা বলল, হঁ্যা কষ্ট হয়েছে। আমার কি সুন্দর জামাটা ছিদ্র হয়ে গেছে।
বাবা বলল, এজন্য রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দিলে অনেক সওয়াব হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘একটি গাছের ঢাল রাস্তায় পড়ে ছিল। এক লোক ঢালটি রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। এজন্য আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাত দান করেন।’ ‘আরেক লোক পথ ধরে চলছিল, এমন সময় দেখে একটি কাঁটা পড়ে আছে। লোকটি রাস্তা থেকে কাঁটাটি সরিয়ে দেয়। এতে আল্লাহ খুশি হয়ে তার সব গোনাহ ক্ষমা করে দেন।’
ফারহা তো হাদীস শুনে অনেক খুশি। বাবাকে বলল, তাহলে অনেক সহজে জান্নাতে যাওয়া যায়।
ফারহা আইসক্রিম অনেক পছন্দ করে। বাবা সবসময় আইসক্রিম খেতে দেয় না, ঠাণ্ডা লাগবে বলে। ও বাবাকে বলে, বাবা জান্নাতে তো আইসক্রিম আছে তাই না? সেখানে তো কেউ আইসক্রিম খেতে নিষেধ করবে না?
বাবা বলল, না জান্নাতে তো যা ইচ্ছা যতো ইচ্ছা খেতে পারবে। ওখানে কারও অসুখ হবে না। তাই আইসক্রিম খেলে সমস্যা হবে না। এই যে আমরা যে পথ দিয়ে হাঁটছি, দেখো এ পথ থেকে আরও দুটি পথ বের হয়েছে। এ দুটি পথকে শাখা পথ বলে। তেমনিভাবে ঈমানেরও অনেকগুলো শাখা আছে। সেই শাখাগুলোর মধ্যে একটি হলো, ‘রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেওয়া।’
ফারহা বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হলো, শাখা, পথ, ঈমান―এসব এখনো সে বুঝে উঠেনি। বাবা বলল, এসব শুনে রাখ। বড় হলে বুঝে আসবে।
নবীজি বলেন, ‘একবার আমার সামনে আমার উম্মতের ভালো আমল ও খারাপ আমল পেশ করা হলো। দেখলাম আমার উম্মতের ভালো আমলের মধ্যে আছে, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেওয়া।’ একবার এক লোক নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, ‘আমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দেন যার দ্বারা উপকৃত হতে পারি।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি মুসলমানদের পথ থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দাও।’
ফারহা নবীজির হাদীসগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনল। ফারহা বাবাকে জিজ্ঞেস করল, রিকশা কখন আসবে? বাবা বলল, তোমার কষ্ট হলে আমার কোলে উঠো। ফারহা বলল, থাক তোমার কষ্ট হবে। বাবা জোর করে কোলে নিতেই ফারহা একটু জোর করে নেমে গেল। বাবা বলল, সূরা কুরাইশ পড়ো। দেখবে আমরা দ্রুত রিকশা পেয়ে যাব। ফারহা সূরা কুরাইশ পড়ল। এর মধ্যে একটি রিকশা হাজির। ফারহা অনেক খুশি হলো। রিকশায় উঠে বাবা দুআ পড়তে ভুলে গেল। ফারহা বাবাকে বলল, বাবা বলো, সুবহানাল্লাযি…। বাবা তখন দুআ পড়ল,
سُبْحٰنَ الَّذِیْ سَخَّرَ لَنَا هٰذَا وَمَا كُنَّا لَهٗ مُقْرِنِیْنَ، وَ اِنَّاۤ اِلٰی رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُوْنَ.
এরপর ফারহা দ্রুতই তার দাদু বাসাই পৌঁছে গেল।