নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর জীবনে উম্মুল মুমিনীনগণ
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সাধারণ নিয়ম এই যে তিনি তাঁর প্রেরিত নবী—রাসূলগণকে স্বাভাবিক জীবন যাপনের হুকুম দিয়েছেন। নবীগণ সকলেই মানুষ এবং মানবসমাজের অংশ ছিলেন। তাঁরা পার্থিব বংশকুলে জন্ম নেওয়া পিতা—মাতার সন্তান (হযরত আদম ও হযরত ঈসা আ. এর ক্ষেত্রে কুদরতি ব্যতিক্রম ছাড়া) এবং মানবীয় নানা সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَقَدْ اَرْسَلْنَا رُسُلًا مِّنْ قَبْلِکَ وَ جَعَلْنَا لَهُمْ اَزْوَاجًا وَّذُرِّیَّۃً.
বস্তুত আপনার আগেও আমি বহু রাসূল পাঠিয়েছি এবং তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তানাদি দিয়েছি।—সূরা রাদ, ১৩ : ৩৮
মানুষ যখন শিরকের দিকে ধাবিত হয় তখন সে যেকোনো বিষয়ে অলৌকিকতা তালাশ করে। পার্থিব এবং স্বাভাবিক কিছুর মাহাত্ম্য তার অন্তরে থাকে না। সে ভাবে, সৃষ্টিকর্তা ও মাবুদ সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয়ই অলৌকিক হতে হবে। যে ধারণা থেকে বিভিন্ন ধর্মে দেব-দেবি ও অবতার ধারণাটি এসেছে। তারাও বড় প্রভু বা উপরওয়ালা একজনকে মানে। আর নিজেদের ব্যাখ্যামতো তাঁর সাথে অনেক শরীক নির্ধারণ করে। এ কাজটির নামই শিরক, যা আল্লাহর নিকট তাওবা ও ঈমান আনা ছাড়া ক্ষমাহীন অপরাধ। যে জন্য আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে মক্কার মুশরিকদের প্রশ্ন ছিল আল্লাহর নবী এতো স্বাভাবিক কেন? তিনি আমাদের মতোই পানাহারকারী ও সমাজে বিচরণকারী হবেন কেন? তাদের ধারণায় আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ হবেন হয় ফেরেশতার মতো, না হয় তাদের কল্পনার কোনো দেবতার মতো। তার ধনসম্পদ প্রাচুর্য ও আধিপত্য হবে অস্বাভাবিক বা অলৌকিক। কোরআন শরীফে তাদের এই ধারণা বর্ণনা করা হয়েছে,
وَقَالُوْا مَالِ هٰذَا الرَّسُوْلِ یَاْكُلُ الطَّعَامَ وَ یَمْشِیْ فِی الْاَسْوَاقِ ؕ لَوْ لَاۤ اُنْزِلَ اِلَیْهِ مَلَكٌ فَیَكُوْنَ مَعَهٗ نَذِیْرًا ۙ﴿۷﴾ اَوْ یُلْقٰۤی اِلَیْهِ کَنْزٌ اَوْ تَكُوْنُ لَهٗ جَنَّۃٌ یَّاْكُلُ مِنْهَا ؕ وَ قَالَ الظّٰلِمُوْنَ اِنْ تَتَّبِعُوْنَ اِلَّا رَجُلًا مَّسْحُوْرًا ﴿۸﴾
তারা বলে, এ কেমন রাসূল, যে খাবার খায় এবং হাটে—বাজারেও চলাফেরা করে? তার কাছে কোনো ফেরেশতা অবতীর্ণ করা হলো না কেন, যে তার সঙ্গে থাকত একজন সতর্ককারীরূপে? অথবা তাকে কোনো ধন—ভান্ডারই দেওয়া হতো কিংবা তার থাকত কোনো বাগান, যা থেকে সে খেতে পারত? জালেমরা (মুসলিমদেরকে) আরও বলে, তোমরা তো একজন যাদুগ্রস্ত ব্যক্তিরই অনুসরণ করছ।—সূরা ফুরকান, ২৫ : ৭—৮
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু ঈমানদার সম্প্রদায়ের জন্য আদর্শস্বরূপ অতএব তাঁর জীবনে চর্চিত নীতি, আদর্শ ও অভ্যাস ঈমানদারদের জন্য বরণীয় সুন্নাহ। তাই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামকে আমরা দেখতে পাই, একজন স্বামী, পিতা, সন্তান, ভ্রাতুষ্পুত্র, শ্বশুর, জামাতা, পিতামহ প্রভৃতিরূপে। এসবের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি অতুলনীয় আদর্শ। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَ اِنَّکَ لَعَلٰی خُلُقٍ عَظِیْمٍ.
নিশ্চয়ই আপনি অধিষ্ঠিত আছেন সুমহান চরিত্রে।—সূরা কলাম, ৬৮ : ০৪
অপর আয়াতে বলা হয়েছে,
لَقَدْ کَانَ لَكُمْ فِیْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَۃٌ حَسَنَۃٌ لِّمَنْ کَانَ یَرْجُوا اللهَ وَالْیَوْمَ الْاٰخِرَ وَ ذَکَرَ اللهَ کَثِیْرًا.
বস্তুত রাসূলের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ—এমন ব্যক্তির জন্য, যে আল্লাহ ও আখেরাত দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করে।—সূরা আহযাব, ৩৩ : ২১
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে বলেছেন,
إِنَّمَا بُعِثْتُ لِأتمِّمَ صَالِحَ الْأَخْلَاقِ.
চরিত্র ও নৈতিকতার সেরা আচরণগুলোকে পূর্ণতা প্রদানের জন্য আমি প্রেরিত হয়েছি।—আলআদাবুল মুফরাদ
সততা, সত্যবাদিতা, আমানতদারি ও শ্রেষ্ঠ মানবিকতার জন্য নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর দেশ, জাতি, সমাজ ও সময় তাঁর জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্তই সমভাবে স্বীকৃতি দিয়ে গেছে। তাঁর উচ্চবংশ, নৈতিক শ্রেষ্ঠত্ব ও অনুপম চারিত্রিক গুণাবলির বিষয়ে আদর্শিক বন্ধু বা শত্রু নির্বিশেষে সবাইকে একই রকম স্বাক্ষ্য প্রদান করতে দেখা গেছে। এটি তাঁর একক ও অনন্য মুজিযা। নবীজীবনী বা ইসলামের প্রারম্ভিক ইতিহাস এ কথার প্রমাণ। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার বাস্তবতায় একজন কাক্সিক্ষত তরুণ ছিলেন। সেসময় ইসলাম প্রচার ত্যাগ করার শর্তে মক্কার প্রভাবশালী মহল তাঁকে সর্বোচ্চ নেতৃত্ব, বিপুল ধনৈশ্বর্য এবং আরবের সেরা নারীদের সাথে বিবাহের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু তিনি আল্লাহর রাসূল হিসেবে নিজের মহান দায়িত্ব থেকে সরে যাননি, শ্রেষ্ঠ পয়গম্বর হওয়ার ফলে তিনি এ দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকতে পারতেন না। তিনি চারিত্রিক দৃঢ়তার অতুলনীয় পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেন। তিনি তাঁর রিসালাতের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, আমার এক হাতে যদি সূর্য আরেক হাতে তোমরা চন্দ্র এনে দাও তবুও আমি এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের বাণী প্রচার থেকে নিবৃত্ত হব না।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর বয়স তখন পঞ্চাশ পেরিয়েছে। এর বেশ আগেই তিনি অভিভাবক পর্যায়ের ব্যবস্থাপনায় মক্কার প্রখ্যাত সতী—সাধ্বী, অভিজাত বিবি খাদিজাকে বিবাহ করেন। বিবি খাদিজার সাথে নবীজির এই সংসার ছিল পঁচিশ বছরের। তাঁর চার কন্যা ও বাল্যবয়সেই ওফাতপ্রপ্ত শিশুপুত্ররা বিবি খাদিজার ঘরেই জন্মগ্রহণ করেন। এক শিশুপুত্র জন্ম নিয়েছিলেন রাজা হিরাক্লিয়াসের পক্ষ থেকে নবীজিকে প্রদত্ত মালিকানাধীন নারী মারিয়া কিবতিয়ার ঘরে। এই শিশুটিও শৈশবেই আল্লাহর কাছে চলে যান। নবীজির কোনো জীবিত পুত্রসন্তান ছিলেন না। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,
مَا کَانَ مُحَمَّدٌ اَبَاۤ اَحَدٍ مِّنْ رِّجَالِكُمْ وَلٰکِنْ رَّسُوْلَ اللهِ وَ خَاتَمَ النَّبِیّٖنَ ؕ وَ کَانَ اللهُ بِكُلِّ شَیْءٍ عَلِیْمًا.
মুহাম্মাদ তোমাদের কোনো পুরুষের পিতা নন, কিন্তু তিনি আল্লাহর রাসূল এবং নবীদের মধ্যে সর্বশেষ। আল্লাহ সর্ববিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞাত।—সূরা আহযাব, ৩৩ : ৪০
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সে তাঁর দীর্ঘকালীন অভিভাবক চাচা আবু তালেব এবং পঁচিশ বছরের একমাত্র জীবন সঙ্গিনী হযরত খাদিজা একই বছরে ইন্তেকাল করেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর ৫৩ বছর বয়সে তাঁকে মক্কা ছেড়ে মদীনায় হিজরত করতে হয়। তখন ইসলামের বিস্তার ও প্রতিষ্ঠার নতুন পর্যায় আসে। মুসলমানদের ওপর নতুন অনেক বিধি—বিধান, অনুশাসন আল্লাহ নাযিল করেন। সে সময়কার সমাজ বাস্তবতায় যুদ্ধ—বিগ্রহ ও আর্থ—সামাজিক কারণে পুরুষেরা অপরিমেয় অধিক বিবাহ করতো। তখনকার জানা পৃথিবী আফ্রিকা, এশিয়া ও দূরপ্রাচ্যের সব সমাজে বহু বিবাহ প্রচলিত ছিল। ইতিহাস ও পৌরাণিক কাহিনীতে বহু সহস্র, শত, শতাধিক স্ত্রী গ্রহণের কথাও পাঠক দেখতে পাবেন। আরব ভূমিতেও মুসলিম অমুসলিম নির্বিশেষে সমাজ বাস্তবতার ফলে পুরুষ একাধিক বিয়ে করতো। এটি কোনো নিন্দনীয় বা অনৈতিক বিষয় ছিল না। ইসলাম তার অনুসারীদের ক্ষেত্রে পালনযোগ্য কিছু শর্তসাপেক্ষে একাধিক বিয়ের বিধান রেখেছে। তবে এটি একই সময় চারের অধিক নয়। অথচ এর আগে আট, দশ, পনেরো, বিশ জন স্ত্রী একই সাথে নিজ বিবাহে রাখার প্রচলন ছিল ব্যাপক। ইসলামের বিধান জারির পর চারের অধিক স্ত্রী রাখার বৈধতা শেষ হয়ে যায়।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন এই সাধারণ বিধানের ব্যতিক্রম। তাঁকে আল্লাহ তাআলা নিজের রিসালাত ও নবুওয়তের প্রয়োজনে প্রথমত যত জন ইচ্ছা স্ত্রী গ্রহণের অনুমতি দিয়েছিলেন। ইসলামী জীবন বিধান বাস্তবায়িত ও ফলিত আকারে কেয়ামত পর্যন্ত মানবজাতির সামনে সুরক্ষিত রেখে যাওয়ার কাজে যেখানে হাজার হাজার পুরুষ সাহাবী, বর্ণনাকারী এবং লাখো অনুসারী ছিলেন সেখানে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর ব্যক্তিগত ঘরোয়া একান্ত ও পারিবারিক জীবনের প্রতিটি আদর্শকে উম্মাহর জন্য কেয়ামত পর্যন্ত সুরক্ষিত রাখার প্রয়োজনেই বহুসংখ্যক নারী সাহাবী তাঁর স্ত্রী হিসেবে থাকা আবশ্যক ছিল। কেননা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবনে কখনো বেগানা নারীর হাত স্পর্শ করেননি। নিজ বিবিগণ ছাড়া তিনি আর কোনো মহিলার সাথে খোলামেলা উঠাবসা, বৈঠক, চলাফেরা বা একসাথে কাজকর্ম করেননি। এই নীতি ও পরিচ্ছন্নতা তিনি উম্মাহর নারী—পুরুষকেও শিখিয়ে গেছেন। অথচ পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এই অধিকার দিয়েছিলেন যে তিনি মুমিন নারীদের মধ্য থেকে যতজনকে প্রয়োজন বিবাহ করে নিজের পরিবারে রাখতে পারতেন। এরপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর এখতিয়ারকে আল্লাহ নিজের নির্দেশনা দ্বারা পূর্ণতা দান করে দেন।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর সাথে এগারো জন উম্মুল মুমিনীনের সংসার হয়। তাঁর ওফাতের সময় তাঁর গৃহে ছিলেন নয়জন। এর মধ্যে নতুন দ্বীন, নতুন সমাজ, নতুন সভ্যতা গড়ে তোলার বহুবিধ কারণের মধ্য দিয়ে জীবনের শেষবেলা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এই কয়েকটি বিয়ে করতে হয়। তাঁদের কারও বিবাহ বড় কোনো শক্তি বা গোত্রের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে দিয়েছে, কারোটা হয়তো একটি পরাজিত শক্তিকে চিরদিনের জন্য বন্ধুতে পরিণত করেছে। কারও বিয়ে হয়তো নতুন কোনো সম্প্রদায়কে সর্বোচ্চ সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। কারও বিয়ে সমাজে প্রচলিত কোনো ককুসংস্কারকে চিরতরে নির্মূল করার জন্য সংঘটিত হয়েছে। এঁদের মধ্যে একজন মাত্র বিবি ছাড়া বাকি সবাই ছিলেন অসহায়, বিধবা, তালাকপ্রাপ্তা বা আশ্রয়হীনা। দুটি বিবাহ হয়েছে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর সর্বাপেক্ষা নিকটজন ও উত্তরসূরি দুজন ব্যক্তিকে চির কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করার জন্য। এর মধ্যে একজন হযরত উমর রাযি. এর কন্যা হযরত হাফসা রাযি.। অপরজন হযরত আবূ বকর রাযি. এর কন্যা হযরত আয়েশা রাযি.।
হযরত আয়েশা রাযি. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর দৃষ্টিতে বিবি খাদিজার পর দ্বিতীয় পছন্দের মানুষ। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে হযরত আয়েশা রাযি.এর মুগ্ধতা, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সবকটি বর্ণনা, কথা, কবিতা ও অনুভূতি কোনো পাঠক দেখলে সে একথা স্বীকার করতে বাধ্য হবে যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর প্রতি হযরত আয়েশার প্রেম, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও সন্তুষ্টি দুনিয়াতে নজীরবিহীন। তাদের দাম্পত্য জীবন পৃথিবীর মানুষের জন্য ঈর্ষণীয় ও অনুসরণীয় মধুরিমায় পূর্ণ। তাছাড়া আম্মাজান আয়েশা রাযি. ও নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর সাংসারিক জীবন দুনিয়াবাসীর জন্য নিঃসন্দেহে একটি সেরা আদর্শ সাংসারিক জীবন। ইসলামী জীবন ব্যবস্থায়, কোরআনের জ্ঞান চর্চায়, সুন্নাহর অমূল্য ভান্ডার প্রাপ্ত হওয়ার ক্ষেত্রে আম্মাজান আয়েশার বুদ্ধিমত্তা, আল্লাহপ্রদত্ত মেধা, আল্লাহর রাসূলের প্রতি গভীর টান ও অভিনিবেশের কোনো তুলনা হয় না। যদি আল্লাহর হুকুমে হযরত সিদ্দীকে আকবর রাযি. এর এই কন্যা উম্মুল মুমিনীনের অন্তভুর্ক্ত না হতেন তাহলে তাঁর এই অতুলনীয় ভূমিকা ও মহামূল্যবান অবদান থেকে মুসলিম জাতি বঞ্চিত হতো। তাঁর এই অমূল্য অংশগ্রহণ ছাড়া ইসলামী জীবন বিধানের কল্পনাও মারাত্মক অসম্পূর্ণ থেকে যায়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর ওফাতের পর হযরত আয়েশা রাযি. এর ওফাত পর্যন্ত প্রায় ৫০ বছর ইসলামের প্রথম কাতারের পথ—নির্দেশকগণের একজন হয়ে তিনি ইসলামজগতের যে সুমহান খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন তার কোনো তুলনা হয় না।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর জীবনে মুসলিম জাতির মাতা উম্মুল মুমিনীনগণের প্রত্যেককে ঘিরে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনে এমন এমন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, আচরণ, আদর্শ, বিধান ইত্যাদি রয়েছে, যা এই উম্মুল মুমিনীন না থাকলে উম্মত জানতে পারতো না। এতে শরীয়তের জ্ঞান পূর্ণতা লাভ করতো না। ইতিহাস ও সীরাতের পাঠকমাত্রই স্বীকার করতে বাধ্য হবেন যে, হযরত সাফিয়্যা, জুওয়াইরিয়া, সাওদা, যয়নাব, উম্মে সালমা, উম্মে হাবীবা ও হাফসা রাযি. প্রমুখ উম্মুল মুমিনীনগণের সাথে যুক্ত ইসলামী আদর্শ, জীবনাচার এবং প্রজ্ঞার হীরে মোতি পান্নাতুল্য যেসব অনন্য ঘটনা নবীজীবনে পাওয়া যায়, নবীগৃহে এসব অসাধারণ সৌভাগ্যবতী বিবিগণের উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ ছাড়া উম্মত কী করে এসব শিক্ষা ও বিধিবিধান প্রাপ্ত হতো? বিশেষত আম্মাজান হযরত আয়েশা রাযি. এর সংস্রব, সমর্থন, খেদমত ও অংশগ্রহণ ইসলামের সৌন্দর্য ও শ্রেষ্ঠত্বকেই পূর্ণতা প্রদান করেছে। তিনি মহানবীর জীবনের শেষবেলায় সেরা জীবনসঙ্গিনীরূপে পূর্ণ সফল এবং অভাবনীয় শুভ পরিণতির অধিকারিনী পরম ভাগ্যবতী অর্ধাঙ্গিনী, যার কোলের ওপর আল্লাহর শেষ ও শ্রেষ্ঠনবী ওফাতপ্রাপ্ত হন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত এধরনের শত সহস্র সৌভাগ্য স্মৃতি নিয়ে আম্মাজান আয়েশা বিনতে সিদ্দীক রাযি. ইসলামজগতের নববী সুহবতের আলোর মশাল হয়ে উম্মতের জ্ঞান—গৌরবের বরকতের উৎসরূপে পরিগণিত এবং সমাদৃত ছিলেন। রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহা।
—মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী