ফত্ওয়া জিজ্ঞাসা
নামায
১৪৫৮. প্রশ্ন : আমরা জানি, ইমামের পেছনে ক্বেরাত পড়া মাকরূহে তাহরীমী। জানার বিষয় হলো, কেউ ইমামের পেছনে ক্বেরাত পড়ে ফেললে তার নামায কি সহীহ হবে?
উত্তর : হঁ্যা, তার নামায সহীহ হয়ে যাবে।—আদ্দুররুল মুখতার : ১/৫৪৪—৫৪৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১৬৭; মাওসূয়া ফিক্বহিয়্যা কুওয়াইতিয়া : ৩৩/৫৩
আজমল খাঁন ও ইব্রাহীম আলী
যাত্রাবাড়ী, ঢাকা
১৪৫৯. প্রশ্ন : আমরা একবার ১৫ দিনের জন্য তাবলীগে বের হয়েছিলাম। একবার আমীর সাহেব নামাযের প্র্যাকটিক্যাল নিয়মনীতি শেখানোর সময় বলেছিলেন, নামাযে যেমন কোরআন শরীফ শুদ্ধ করে না পড়লে নামায নষ্ট হয়ে যায় তেমনইভাবে নামাযের তাকবীরে তাহরীমা ‘আল্লাহু আকবার’ ও অন্যান্য ‘আল্লাহু আকবার’ এর মধ্যেও ভুল করলে নামায নষ্ট হয়ে যায়। এরপর তিনি ‘আল্লাহু আকবার’ উচ্চারণে কোন কোন জায়গায় ভুল করলে নামায নষ্ট হয়ে যায় তা বর্ণনা করেছেন। দুঃখের বিষয় হলো, আমরা সেগুলো ভালোভাবে স্মরণ রাখতে পারিনি। তাই আমরা জানতে চাচ্ছি, নামাযে তাকবীরে তাহরীমা ‘আল্লাহু আকবার’ ও অন্যান্য ‘আল্লাহু আকবার’ এর কোন কোন জায়গায় ভুল করার দ্বারা নামায ভেঙে যায়? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর : নামাযের শুরুতে তাকবীরে তাহরীমা ‘আল্লাহু আকবার’ এর اَللهُ শব্দের ‘হামযাহ’, اَكْـبَر শব্দের ‘হামযাহ’ এবং اَكْـبَر শব্দের ‘বা’ এর মধ্যে মদ (অর্থাৎ লম্বা) করার কারণে নামায শুরুই হয় না। আর তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত নামাযের অন্যান্য ‘আল্লাহু আকবার’ এর اَللهُ শব্দের হামযাহ, اَكْـبَر শব্দের ’হামযাহ’ এবং اَكْـبَر শব্দের ‘বা’ এর মধ্যে মদ (অর্থাৎ লম্বা) করার দ্বারা নামায ভেঙে যায়।—আলবাহরুর রায়েক : ১/৫৪৮; রদ্দুল মুহতার : ২/২১৮; ফাতাওয়া দারুল উলূম দেওবন্দ : ২/২১৯—২২০
আব্দুল মুমিন
কুড়িগ্রাম
১৪৬০. প্রশ্ন : এশার নামাযে ইমাম সাহেব প্রথম রাকাতের উভয় সেজদা করার পর তাকবীর বলে দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়ান। কিন্তু তখন বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় তাকবীরের আওয়াজ ইমাম সাহেবের পেছনের কয়েকজন ব্যতীত অন্যরা শুনতে পাননি। ফলে তারা সিজদা থেকে উঠেননি। এমনকি ইমাম সাহেব যখন দ্বিতীয় রাকাতের রুকুর জন্য তাকবীর বলেন, তখন অন্যান্য মুক্তাদীগণ সেজদা থেকে ওঠার তাকবীর মনে করে দাঁড়িয়ে ইমাম সাহেবকে রুকুতে দেখতে পান। তখন অনেকে রুকুতে শরিক হয়ে যান। অনেকে আবার ইমাম সাহেবকে রুকুতেও পাননি। জানার বিষয় হলো, এসব মুক্তাদীর নামায কি সহীহ হয়েছে? নাকি উক্ত নামায কাযা করতে হবে?
উত্তর : যে সকল মুক্তাদী ইমাম সাহেবকে দ্বিতীয় রাকাতের রুকুতে পেয়ে সেজদা হতে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে এরপর রুকুতে শরিক হয়েছেন তাদের নামায সহীহ হয়েছে। এমনইভাবে যারা ইমাম সাহেবের সাথে রুকুতে শরিক হতে পারেননি, তবে ছুটে যাওয়া কিয়াম ও রুকু নিজে নিজে আদায় করার পর ইমামের সঙ্গে শরিক হয়েছেন তাদের নামায সহীহ হয়েছে। আর যারা রুকু, কিয়াম না করেই ইমামের সঙ্গে শরিক হয়েছেন এবং ইমামের সালাম ফেরানোর পরও ছুটে যাওয়া কিয়াম ও রুকু আদায় করেননি, তাদের নামায সহীহ হয়নি। তাদেরকে উক্ত নামাযের কাযা করতে হবে।—আদ্দুররুল মুখতার : ৩/৬৩৭—৬৩৮; আলবাহ্রুর রায়েক্ব : ১/৬২৩; ফাতাওয়া দারুল উলূম দেওবন্দ : ৩/৪২৯
মুহা. কাউসার মাহমুদ
মুন্সিগঞ্জ
১৪৬১. প্রশ্ন : ইমাম সাহেব মুসল্লীদেরকে নিচে রেখে কতটুকু ওপরে দাঁড়াতে পারবে? উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে নামায পড়ালে সে নামাযের হুকুম কী?
উত্তর : ইমাম সাহেব মুসল্লীদেরকে নিচে রেখে ওজর ব্যতীত এক হাত পরিমাণ উঁচু স্থানে দাঁড়ালে নামায মাকরূহ হবে। তবে ইমাম সাহেব যদি এক হাত পরিমাণ উঁচু স্থানে দাঁড়ান আর তার সাথে কয়েকজন মুক্তাদিও ওপরে থাকে অথবা কোনো ওজরের কারণে ইমাম সাহেব এক হাত পরিমাণ উঁচু স্থানে দাঁড়ান তাহলে নামায মাকরূহ হবে না।—সুনানে আবু দাউদ : ১৯১, হাদীস নং : ৫৯৮; আদ্দুররুল মুখতার : ২/৫০০—৫০১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১৬৭; ফাতাওয়া মাহমূদিয়া : ১১/১৪৯
মুজ্জাম্মিল
মোমেনশাহী
১৪৬২. প্রশ্ন : কাকরাইল মসজিদ থেকে ৪০ দিনের জন্য কোনো জামাত ৪৮ মাইলের বেশি দূরের এলাকায় গেলে তারা কি সেখানে মুসাফির গণ্য হবে, না মুকীম?
উত্তর : কোনো জামাত সফর পরিমাণ দূরত্বে কোনো এলাকায় পেঁৗছার পর যদি এক গ্রামে বা এক শহরে ১৫ দিন বা তার বেশি অবস্থানের নিয়ত করে তবে তারা সে শহরে প্রবেশ করামাত্র মুকীম গণ্য হবে এবং পূর্ণ নামায আদায় করবে। আর যদি এক ইউনিয়নের কয়েক গ্রামে বা শহর ও গ্রামে মিলে ১৫ দিন অবস্থানের নিয়ত করে তবে তারা মুসাফির গণ্য হবে। তখন মুসাফির ইমামের পেছনে অথবা একাকী নামায পড়লে চার রাকাতবিশিষ্ট ফরয নামাযসমূহ দুই রাকাত পড়বে। অবশ্য মুকীম ইমামের পেছনে জামাতে আদায় করলে পুরো চার রাকাতই পড়তে হবে।—ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১৪০; আননাহরুল ফায়েক্ব : ১/৩৪৬; বাদায়েউস সানায়ে : ১/২৭০; ফাতাওয়া দারুল উলূম দেওবন্দ : ৪/৪৪৯
যোবায়ের আহমদ
কুমিল্লা
১৪৬৩. প্রশ্ন : ক. যদি কারও নামাযের মধ্যে কষ্টের কথা স্মরণ হওয়ার কারণে মনে মনে আল্লাহর কাছে তা দূর করার জন্য কাকুতি—মিনতি করে এবং তখন তার অন্তর কাঁদে তাহলে কি তার নামাযে কোনো সমস্যা হবে?
খ. যদি মুক্তাদি জানাযার নামাযে নির্দিষ্ট করে পুরুষ বা মহিলার জানাযার নিয়ত না করে; বরং অনির্দিষ্ট মৃত ব্যক্তির জানাযার নিয়ত করে (যেমন ইমাম যার জানাযা পড়াচ্ছেন তার জানাযার নামাযের নিয়ত করছি) তাহলে কি তার নামায সহীহ হবে?
উত্তর : ক. উক্ত ব্যক্তির নামায ফাসেদ হবে না। তবে আখেরাতের চিন্তা ছাড়া অন্য চিন্তায় অন্তর কাঁদলে নামাযের খুশূ—খুযু বিঘ্নিত হবে। আর যদি কেউ এমনভাবে কাঁদে যার দ্বারা শব্দ স্পষ্ট বোঝা যায় এবং তা আখেরাতের চিন্তা ছাড়া অন্য কারণে হয়ে থাকে তাহলে তার নামায ফাসেদ হয়ে যাবে।
খ. উক্ত ব্যক্তির নামায সহীহ হয়ে যাবে। কারণ, জানাযার নামাযে মৃত ব্যক্তি পুরুষ না মহিলা এটা নির্দিষ্ট করা আবশ্যক নয়।—আদ্দুররুল মুখতার (রদ্দুল মুহতারসহ) ১/৬১৯; বাদায়েউস সানায়ে : ১/৫৪০; আদ্দুররুল মুখতার (রদ্দুল মুহতারসহ) : ১/৪২৩
মাজেদুল ইসলাম
নরসিংদী সদর
১৪৬৪. প্রশ্ন : আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব আসর নামাযের প্রথম রাকাতে ভুলে রুকু না করেই সেজদায় চলে যান। পেছন থেকে তাকবীর বললেও তিনি উঠেননি। ফলে সবাই তার সাথে সেজদায় শরিক হয়ে যায়। পরে তিনি দ্বিতীয় রাকাতে দুটি রুকু করেন এবং চতুর্থ রাকাতের পর সাহু সেজদা করে নামায শেষ করেন। জানার বিষয় হলো, আমাদের ওই নামায কি সহীহ হয়েছে?
উত্তর : প্রশ্নে বর্ণিত নামায শুদ্ধ হয়নি। কারণ, প্রত্যেক রাকাতেই রুকু করা ফরয। রুকু না করে সেজদা করলে ওই সেজদা সহীহ হয় না। ফলে উক্ত রাকাত আদায় হবে না। অতএব নামায মূলত তিন রাকাত হয়েছে। আর দ্বিতীয় রাকাতে একটি অতিরিক্ত রুকু করা হলেও তাতে কোনো ফায়দা হয়নি। এক্ষেত্রে ইমাম সাহেব যদি আরও এক রাকাত পড়ে সাহু সেজদার মাধ্যমে নামায শেষ করতেন তাহলে নামায হয়ে যেত। অতএব এখন ইমাম মুক্তাদি সকলকে ওই নামায কাযা করে নিতে হবে। উল্লেখ্য, ইমাম সাহেবের কর্তব্য ছিল মুসল্লিদের লোকমার সময়ই সেজদা থেকে দাঁড়িয়ে রুকু করা এবং পুনরায় সেজদা আদায় করা। এরপর নামায শেষে সাহু সেজদা করে নেওয়া। তাহলে ওই নামায আদায় হয়ে যেত। পুনরায় পড়ার প্রয়োজন হতো না।—রদ্দুল মুহতার : ১/৪৬১; বাদায়েউস সানায়ে : ১/৪১২; হাশিয়াতুত তাহ্তাবী আলাল মারাক্বী : ২৩৩; ফাতাওয়া হাক্কানিয়্যাহ : ৩/৭২
কাউসার মাহমুদ
ফরিদাবাদ মাদরাসা
১৪৬৫. প্রশ্ন : একজন আলেম বলেন, আযানের পর মসজিদে গিয়ে নামায না পড়লে নাকি নামায হবেই না। তার কথা কতটুকু সঠিক?
উত্তর : কথাটি ঠিক নয়। কারণ যদিও হাদীস শরীফে এসেছে,
لا صلاة لجار المسجد إلا فى المسجد.
অর্থাৎ মসজিদের পার্শ্ববর্তী লোকদের জন্য মসজিদে ছাড়া নামায হবে না।—সুনানে বাইহাকী, হাদীস নং : ৪৭২২
তবে এর ব্যাখ্যায় উলামায়ে কেরাম বলেছেন, মসজিদের জামাতবিহীন পুরুষের নামাযে পরিপূর্ণ সওয়াব হয় না। ওয়াক্ত হওয়ার পর যে—কোনো স্থানে নামায পড়লেই ফরয আদায় হয়ে যাবে। তবে মসজিদের জামাতে নামাযের ফযিলত থেকে বঞ্চিত হবে এবং বিনা ওজরে ছাড়লে গোনাহগার হবে।
হযরত ওমরা রাযি. ঘটনাক্রমে একদিন সুলাইমান ইবনে আবি হাসমা রাযি.—কে ফজরের জামাতে পাননি। সকালে হযরত ওমর রাযি. তার খবর নেওয়ার জন্য তার বাড়িতে গেলেন। তার মাকে জিজ্ঞাসা করলেন, সুলাইমান ফজরের জামাতে শরিক হয়নি কেন?
তার মা বললেন, সারা রাত্র সে নফল নামায পড়েছে তাই ঘুমের চাপে চোখ লেগে গিয়েছে।
হযরত ওমর রাযি. বললেন, রাতভর নফল পড়া অপেক্ষা ফজর নামায জামাতে পড়া আমার কাছে বেশি পছন্দনীয়।—ফাতহুল বারী : ১/৫৮৪; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং : ৫৫১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১৭৫; হায়াতুস সাহাবা : ৩/৮০
জানাযা—দাফন—কাফন
মুহা. মোফাজ্জল হোসেন
১৪৬৬. প্রশ্ন : আমাদের বাড়ির এক কোণে আমাদের দাদাকে কবর দেওয়া হয়েছে। সে কবর এখন অনেক পুরোনো হয়ে গেছে। আমরা সে কবরের জায়গায় একটি মসজিদ নির্মাণ করতে চাচ্ছি। জানার বিষয় হলো, উক্ত কবরের ওপর মসজিদ নির্মাণ করা জায়েয হবে কি না?
উত্তর : প্রশ্নোক্ত কবরটি যদি এত পুরোনো হয় যে, তাতে রাখা লাশটি অস্তিত্বহীন হয়ে মাটি হয়ে গেছে বলে প্রবল ধারণা হয় এবং উক্ত কবরের জায়গাটি আপনাদের মালিকানাধীন হয়, তাহলে আপনাদের জন্য উক্ত কবরের স্থানে মসজিদ নির্মাণ করা জায়েয হবে।—আলবাহরুর রায়েক : ২/৩৪২; আদ্দুররুল মুখতার (রদ্দুল দুহতারসহ) : ৩/১৭১; ইমদাদুল ফাতাওয়া : ৩/৩৬৫
মসজিদ—মাদরাসা—ওয়াক্ফ
মুহা. শামসুদ্দিন দেওয়ান
১৪৬৭. প্রশ্ন : আমাদের এলাকায় মাদরাসা, কবরস্থান ও মসজিদের অবস্থান এভাবে যে, পশ্চিমে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, দক্ষিণে মাদরাসা—সংলগ্ন কেন্দ্রীয় কবরস্থান, পূর্ব পাশে মাদরাসা, উত্তর পাশে মসজিদ মার্কেট। মার্কেটের প্রধান গেইট—সংলগ্ন দুটি দোকান হিন্দু লোকের কাছে ভাড়া দেওয়া। তারা সন্ধ্যায় মূর্তিপূজা করে, ধূপ ব্যবহার করে, যার দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। ওরা দোকানে টেলিভিশন ছেড়ে রাখে এবং সব সময় কিছু মূর্তি দোকানের টেবিলের ওপর সাজিয়ে রাখে। এলাকার মানুষ নামাযে যাওয়া—আসার সময় সমালোচনা করে। আমার জানার বিষয় হলো, এ পরিস্থিতিতে হিন্দুদেরকে মসজিদের মার্কেটে দোকান ভাড়া দেওয়া জায়েয হবে কি না?
উত্তর : মসজিদে ইবাদতের পরিবেশ নিশ্চিত করা মসজিদ কতৃর্পক্ষের মৌলিক দায়িত্বের অন্তভুর্ক্ত। প্রয়োজনে মসজিদের আশপাশও তার আওতাভুক্ত হবে। সুতরাং মসজিদের দোকান এমন ব্যক্তির কাছে ভাড়া দেওয়া উত্তম, যারা দোকানে কোনো গোনাহের কাজ করে না। তবে জায়েয কাজের জন্য ভাড়া দেওয়ার পর যদি তাতে কোনো গোনাহের কাজ হয়, তাহলে এর জন্য মসজিদ কমিটি দায়ী হবে না। অতএব, প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী উক্ত হিন্দু লোকের কাছে মসজিদের দোকান ভাড়া দেওয়া হারাম না হলেও তাদেরকে সরিয়ে দিয়ে মসজিদের আশপাশ শিরকমুক্ত করা এবং ইবাদত—বন্দেগীর সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা উচিত হবে।—ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৪/৪৮৬; আদ্দুররুল মুখতার : ৬/৩৯২; জাওয়াহিরুল ফিকহ্ : ৫/৩৫৫
আশরাফুজ্জামান
ফরিদাবাদ মাদরাসা
১৪৬৮. প্রশ্ন : ক. মাদরাসার ওয়াক্ফকৃত জমিনে কাউকে দাফন করার ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কী?
খ. মাদরাসার নিজস্ব অর্থায়নে জমি কেনার পর কেউ উক্ত জমিতে কাউকে দাফন করলে শরয়ী দৃষ্টিতে জায়েয আছে কি না?
উত্তর : মাদরাসার জন্য ওয়াক্ফকৃত জমিতে বা মাদরাসার মালিকানাধীন জমিতে মাদরাসার জন্য কল্যাণকর বা উপকারী কাজ ব্যতীত অন্য কোনো ধরনের কাজ করা জায়েয নেই। সুতরাং মাদরাসার জন্য ওয়াক্ফকৃত বা মাদরাসার নিজস্ব অর্থায়নে কেনা জমিতে মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা জায়েয হয়নি।
এখন চাইলে মাদরাসা কতৃর্পক্ষ উক্ত কবর স্থানান্তর করতে পারবে অথবা কবর পুরোনো হওয়ার পর মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে তার ওপর মাদরাসার প্রয়োজনীয় কাজকর্ম করতে পারবে। তবে যে জমি মাদরাসার অর্থ দিয়ে কেনা হয়েছে, কিন্তু মাদরাসা কতৃর্পক্ষ এখনো তা মাদরাসার জন্য ওয়াক্ফ করেনি, সেখানে যদি কাউকে দাফন করা হয়ে থাকে আর তার ওয়ারিশগণ কবরের জমিটুকু কিনতে চায়, তাহলে মাদরাসা কতৃর্পক্ষ চাইলে ন্যায্যমূল্য দিয়ে তা বিক্রি করে কবর আপন অবস্থায় বহাল রাখতে পারবে। তবে মনে রাখতে হবে, এই পদ্ধতি শুধু তখনই সহীহ হবে যখন সে জমি মাদরাসার জন্য ওয়াক্ফ করা না হয়ে থাকে। আর ভবিষ্যতে কেউ যেন মাদরাসায় দাফন করতে না পারে সেজন্য কতৃর্পক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।—ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ২/৪১৭, ৩৮৫; আলবাহরুর রায়েক : ৫/৩৪৬; কিফায়াতুল মুফতী : ৯/৪২৪; কিতাবুন নাওয়াযিল : ১৪/৫৫
বিবাহ—তালাক—ইদ্দত
আবু বকর সিদ্দিক
ঢাকা
১৪৬৯. প্রশ্ন : কোনো ব্যক্তি দ্বিতীয় বিয়ে করতে চাইলে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নেওয়া লাগবে কি না?
উত্তর : দ্বিতীয় বিয়ে জায়েয হওয়ার শর্ত হলো উভয় স্ত্রীর হক সমানভাবে শরীয়তমতো আদায় করতে সক্ষম হওয়া। এর জন্য প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নেওয়া শর্ত নয়। তবে বুঝিয়ে সন্তুষ্ট করে দ্বিতীয় বিয়ে করা ভালো।—সূরা নিসা, ৪:৩; হেদায়া : ২/৩১১; ফাতাওয়া দারুল উলূম দেওবন্দ : ৭/২২৫
নূরুল আলম
ফরিদাবাদ, ঢাকা
১৪৭০. প্রশ্ন : মুসলিম নারী জিনকে বিবাহ করা যাবে কি না? জায়েয হলে তার পদ্ধতি কী জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর : মানুষের জন্য কোনো জিনকে বিবাহ করা জায়েয নেই।—শরহুল আশবাহ্ ওয়ান নাযাইর : ৩/৯৪; ফাতাওয়া সিরাজীয়্যাহ : ১৯৩
আনোয়ার হুসাইন
ঢাকা
১৪৭১. প্রশ্ন : আমি একজন প্রবাসী। ফোনে আমার সাথে স্ত্রীর কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আমি তাকে বলেছি, ‘আমি তোমাকে তালাক দেব’। এরপর পাঁচ—ছয় মাস অতিবাহিত হয়। এই সময়ে স্বাভাবিকভাবে আমাদের মাঝে কথাবার্তা চলতে থাকে। দ্বিতীয়বার স্ত্রীর সাথে কথা কাটাকাটি হয়, এবার আমি একপর্যায়ে তাকে বলেছি যে, ‘আমি তোমাকে তালাক দেব’। এরপর পাঁচ ছয় মাস অতিবাহিত হয় এবং স্বাভাবিকভাবে আমাদের মাঝে কথাবার্তা হয়। তৃতীয়বার আবার স্ত্রীর সাথে আমার কথা কাটাকাটি হয়, সে আমার কথা না শুনায় তখন আমি তাকে বলি, ‘তোমাকে এক তালক দিলাম’। এরপর পাঁচ ছয় মাস অতিবাহিত হয়। স্বাভাবিকভাবে আমাদের মাঝে কথাবার্তা হয়। প্রশ্ন হলো, উক্ত তিন কথা বলার কারণে আমাদের বিবাহবন্ধন কি বাকি আছে? দ্রুত সমাধান জানিয়ে উপকৃত করার আবেদন জানাচ্ছি।
উত্তর : প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী আপনি প্রথম যে দুবার বলেছেন, ‘আমি তোমাকে তালাক দেব’ এর কারণে আপনার স্ত্রীর প্রতি কোনো তালাক হয়নি। তৃতীয়বারের কথা ‘তোমাকে এক তালাক দিলাম’ এর দ্বারা আপনার স্ত্রীর প্রতি এক তালাকে রজঈ পড়েছে। এরপর আপনি স্ত্রীকে তার ইদ্দত (তথা তিন হায়েয) শেষ হওয়ার আগে মৌখিকভাবে স্ত্রী হিসেবে ফিরিয়ে নিলে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক পূর্বের মতোই বহাল হয়ে যাবে। ফিরিয়ে না নিয়ে থাকলে উক্ত তালাক ‘তালাকে বায়েন’ হয়ে গেছে। এখন তাকে আবার স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে চাইলে নতুন মহর ধার্য করে যথানিয়মে নতুনভাবে বিবাহ করতে পারবেন। তবে সর্বাবস্থায় আপনি ভবিষ্যতে মাত্র দুই তালাকের মালিক থাকবেন। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।—বাদায়েউস সানায়ে : ৩/২৮৩, ২৯৫; আদ্দুররুল মুখতার : ৪/৪৪৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/৪৫২; কিতাবুল নাওয়াযিল : ৯/১৬৩
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
১৪৭২. প্রশ্ন : স্বামীর সাথে বনিবনা না হওয়ায়, নিকাহ্নামার ১৮নং ধারায় স্বামী কতৃর্ক স্ত্রীকে তালাকের অনুমতির জায়গায় হঁ্যাসূচক শব্দের মাধ্যমে স্বামী আমাকে তালাক প্রদানের যে অনুমতি প্রদান করেছেন তার ওপর ভিত্তি করে বিবাহ—বিচ্ছেদের জন্য কোর্ট থেকে আমি তাকে ডিভোর্স লেটার পাঠাই। জানার বিষয় হলো, শরঈ ইদ্দত পালনের পরে আমি অন্যত্র বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারব কি না? এ বিষয়ের শরঈ সমাধান প্রদানে আপনার সুমর্জি কামনা করছি।
উত্তর : প্রশ্নের সাথে সংযুক্ত কাবিননামার বিবরণ অনুযায়ী স্বামী কতৃর্ক স্ত্রীকে তালাকের অধিকার কোনো সময়ের উল্লেখ ছাড়া দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের অধিকার অর্পণ স্ত্রীর অবগত হওয়ার বৈঠকে সীমাবদ্ধ থাকে। অর্থাৎ যে বৈঠকে স্ত্রী স্বামীর পক্ষ থেকে তালাকের অধিকার পাওয়ার বিষয়টা জেনেছে, স্ত্রী সে বৈঠক ত্যাগ করার আগে নিজেকে তালাক না দিলে তালাকের অধিকার শেষ হয়ে যায়। সুতরাং স্ত্রী প্রথমে যে বৈঠকে তালাকের অধিকার পাওয়ার বিষয়টা জেনেছে সে বৈঠকে নিজেকে তালাক না দিয়ে থাকলে পরবর্তীতে স্ত্রীর তালাক বা ডিভোর্স নেওয়া বা গ্রহণ করা কার্যকর হবে না।—আদ্দুররুল মুখতার : ৩/৩১৫; আলবাহরুর রায়েক : ৩/৫৩৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/৪৫৫
জহিরুল ইসলাম
ঢাকা
১৪৭৩. প্রশ্ন : ক. এক ছেলে তার বাবাকে বলে, অমুক তারিখের মধ্যে অমুক মেয়ের সাথে আমাকে বিয়ে করিয়ে দেবেন। এর মধ্যে বিয়ে না করিয়ে দিলে এরপর যে মেয়েকে আমি নিজে বিয়ে করব বা আপনি করাবেন, সব মেয়ে তালাক হয়ে যাবে। জানার বিষয় হলো, এ ছেলের বিয়ে করার উপায় কী?
খ. বাবা ওই মেয়ে ছাড়া অন্য এক মেয়েকে বিয়ে করিয়েছে। ছেলে ওই বিয়ে মেনে নিয়েছে। এ বিয়ের হুকুম কী?
উত্তর : প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী পিতা যে মেয়েকে বিয়ে করিয়েছে, বিয়ের পর সাথে সাথে উক্ত মেয়ের ওপর এক তালাকে বায়েন পতিত হয়ে গেছে। এরপর যথানিয়মে নতুনভাবে ছেলে ওই মেয়েকে বিয়ে করলে বা পিতা বিয়ে করালে তার প্রতি উক্ত কসমের কারণে দ্বিতীয়বার তালাক পতিত হবে না। তবে ছেলে ভবিষ্যতে মাত্র দুই তালাকের মালিক থাকবে। কিন্তু ওই মেয়ে ছাড়া অন্য যে—কোনো মেয়েকে বিয়ে করলে তার প্রতি এক তালাকে বায়েন পতিত হবে।—রদ্দুল মুহতার : ৪/৫৮৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/৪৮৩, ৪৮৮
মুআমালা—লেনদেন
আব্দুল্লাহ আল মামুন
চাঁদপুর
১৪৭৪. প্রশ্ন : একদিন আমি চকবাজার আসা—যাওয়ার জন্য একটি রিকশা ভাড়া করি। চকবাজার গিয়ে কেনাকাটার জন্য মার্কেটে ঢুকি। বেরিয়ে এসে দেখি রিকশাওয়ালা রিকশা নিয়ে চলে গেছে। বহু খেঁাজাখেঁাজির পরও তাকে পাইনি। পরে ঋণ থেকে মুক্তির জন্য রিকশা ভাড়া পরিমাণ টাকা রিকশাওয়ালার নামে সদকাহ করে দিই। জানার বিষয় হলো, রিকশা ভাড়া পরিমাণ টাকা সদকাহ করার মাধ্যমে আমি কি ঋণ থেকে মুক্ত হতে পেরেছি?
উত্তর : অজ্ঞাত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধের নিয়ম হলো, তার পাওনা পরিমাণ টাকা তার নামে সদকাহ করে দেওয়া। তবে পরবর্তী সময়ে কখনো তার সন্ধান পাওয়া গেলে তাকে সদকাহর বিষয়ে অবহিত করবে। সে সদকাহর বিষয়ে সম্মতি জ্ঞাপন করলে সদকাহ তার পক্ষ থেকে হবে। আর পাওনা টাকা দাবি করলে তার পাওনা পরিশোধ করতে হবে। প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী রিকশা ভাড়া পরিমাণ টাকা রিকশাওয়ালার নামে দান করে দেওয়ার মাধ্যমে আপনার জিম্মাদারি আদায় হয়ে গেছে। তবে পরবর্তী সময়ে কখনো সে রিকশাওয়ালার খেঁাজ পাওয়া গেলে তাকে সদকাহর বিষয়ে অবহিত করতে হবে। সে সদকাহর বিষয়ে সম্মতি জ্ঞাপন করলে সদকাহ তার পক্ষ থেকে হবে। আর পাওনা টাকা দাবি করলে তার পাওনা পরিশোধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সদকাহর সওয়াব আপনি পাবেন।—আদ্দুররুল মুখতার : ৬/৪৩৪; আলবাহ্রুর রায়েক্ব : ৫/২৫৪—২৫৮; ফাতাওয়া মাহমূদিয়া : ২৩/৩৭৪