ফত্ওয়া জিজ্ঞাসা
তাহারাত—পবিত্রতা
ফরিদ হোসেন
কালিয়াকৈর, গাজীপুর
১৫৯২. প্রশ্ন : ঢাকার বাসা—বাড়িগুলোতে মটরের সাহায্যে ট্যাংকে পানি জমিয়ে ব্যবহারের পানি সরবরাহ করা হয়। কখনো কখনো ড্রেনের পানি ওয়াসার পানির সাথে মিশ্রনের ফলে টয়লেটের কলের পানিতে গন্ধ হয়। মাঝে মাঝে রংও পরিবর্তন হয়ে যায়। আবার কখনো ট্যাংকে তেলাপোকা, মশা—মাছি কিংবা ইঁদুর, চড়–ই জাতীয় বড় প্রাণী মারা যাওয়ার ফলেও গন্ধ হয়।
জানার বিষয় হলো, এমন পানি দিয়ে ওযু—গোসল বা কাপড় ধুয়ে ফেললে করণীয় কী? এমন ট্যাংক পবিত্র করার পদ্ধতি কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর : ট্যাংকে পানি যদি একদিক থেকে প্রবেশ করে আরেকদিক দিয়ে বের হয়ে যায় তাহলে তা প্রবাহিত পানির হুকুমে। এমতাবস্থায় ট্যাংকে নাপাকী পতিত হলেও পানি নাপাক হবে না। তবে পানির গুণাগুণের (রং, স্বাদ, গন্ধ) কোনো একটি পরিবর্তন হলে যতটুকু পানিতে তা প্রকাশ পাবে ততটুকু পানিই কেবল নাপাক বলে গণ্য হবে।
আর যদি পানি একদিক থেকে প্রবেশ করে অন্যদিক দিয়ে প্রবাহিত না হয়, কিংবা এমন হয় যে পানি প্রবাহিত হচ্ছে তবে প্রবেশ করছে না অথবা কোনোটিই না হয় তাহলে তাতে আবদ্ধ পানির বিধান প্রযোজ্য হবে। এমতাবস্থায় ট্যাংকে নাপাকি পতিত হলে সাথে সাথে সমস্ত পানি নাপাক হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, যদি ট্যাংক বা হাউজে তেলাপোকা বা মশা—মাছি জাতীয় এমন প্রাণী পাওয়া যায় যে সমস্ত প্রাণীর প্রবাহিত রক্ত নেই তাহলে ট্যাংক বা হাউজ নাপাক হবে না। তবে যদি এত বেশি পাওয়া যায় যার ফলে পানির স্বাভাবিক অবস্থা তথা রং, স্বাদ, গন্ধের কোনো একটি পরিবর্তন হয়ে যায় তাহলে পানি নাপাক হয়ে যাবে।
ট্যাংক, পাইপ ও হাউজ পবিত্র করার পদ্ধতি
এমতাবস্থায় ট্যাংকসহ যাবতীয় কিছু পবিত্রকরণের দুটি পদ্ধতি :
এক. সমস্ত পানি বের করে ফেলে দিবে।
দুই. পানিকে প্রবাহিত করে দিবে। অর্থাৎ মোটরের মাধ্যমে ট্যাংকে পানি প্রবেশ করিয়ে অপর দিক দিয়ে পানি ফেলে দেবে।
উভয় অবস্থায়ই কোনো দেহবিশিষ্ট নাপাকী (যেমন, ইঁদুর, চড়–ই ইত্যাদি) থাকলে প্রথমে তা উঠিয়ে নিবে।
ওযু, গোসল বা কাপড় ধুয়ে থাকলে করণীয়
যদি ট্যাংক বা হাউজে কখন নাপাকি পতিত হয়েছে তা জানা যায়, তাহলে সে সময়ের নামাযগুলো পুনরায় আদায় করে নেবে এবং কাপড় ধৌত করে থাকলে পুনরায় তা ধুয়ে নেবে।—শরহে মুনইয়াতুল মুসল্লী : ১০১; রদ্দুল মুহতার : ১/১৯০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ১/৩০৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/৬৮; জাদীদ ফিকহী মাসায়েল : ১/৭৭; জাওয়াহিরুল ফিকহ : ৭/৪৭২—৪৭৭; হেদায়া : ১/৪৩, ১/৩৭
নামায
রাকিবুল হাসান
রমনা, ঢাকা
১৫৯৩. প্রশ্ন : সুন্নত নামাযে সূরা ফাতেহার পর অন্য সূরা মিলাতে ভুলে গেলে কী করবে?
উত্তর : ফরয নামাযের ১ম দুই রাকাতে এবং সুন্নত ও নফলের সকল রাকাতে সূরা ফাতেহার পর অন্য কোনো সূরা মিলানো ওয়াজিব। নিয়ম হচ্ছে, কেউ যদি ভুলে নামাযের কোনো ওয়াজিব ছেড়ে দেয় তাহলে তার ওপর সিজদায়ে সাহু আবশ্যক। সুতরাং সুন্নত নামাযে সূরা ফাতেহার পর অন্য সূরা মিলাতে ভুলে গেলে সিজদায়ে সাহুর মাধ্যমে নামায পূর্ণ হয়ে যাবে। কোনো ওযর ছাড়াই সিজদায়ে সাহু ছেড়ে দিলে ওয়াক্তের মধ্যে নামাযটি পুনরায় পড়া আবশ্যক, অন্যথায় গোনাহগার হবে।—সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং : ১০৩৮; মারাকিউল ফালাহ : ২৪৮; মারাকিউল ফালাহ (হাশীয়াতুত তাহতাবীসহ) : ২৪৭—২৪৮; আদ্দুররুল মুখতার : ২/৭৮; আল—মুহীতুল বুরহানী : ২/৩০৯; আলবাহরুর রায়েক : ১/৫১০, ৫১৬
মুহা. খালেদ সাইফুল্লাহ
চাঁদপুর
১৫৯৪. প্রশ্ন : আমাদের মসজিদের সম্মানিত ইমাম সাহেব মাওলানা ও মুফতী। তবে তার তিলাওয়াতে সর্বদা লাহনে খফী হয়, মাঝে মাঝে লাহনে জলীও হয়। তার মুক্তাদীদের মধ্যে যেমনিভাবে সাধারণ মানুষ রয়েছেন তেমনিভাবে অনেক হাফেয, আলেমও রয়েছেন। তারা তাকে বহুবার তার ক্বিরাআতের ভুলের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন এবং কোনো ক্বারী সাহেবের কাছে মশক করার মাধ্যমে ক্বিরাআত বিশুদ্ধ করার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু তিনি কারও কথায় কর্ণপাত করেননি।
এখন জানার বিষয় হলো,
ক. কোনো ইমাম যদি তার নামাযের মধ্যে সর্বদা লাহনে খফী করে এবং কখনো কখনো লাহলে জলী করে তাহলে তার পেছনে সাধারণ মানুষ ও আলেমগণ ইক্তিদা করলে নামায সহীহ হবে কি না?
খ. বিজ্ঞ আলেম, হাফেয ও ক্বারী সাহেবদের উপস্থিতিতে এমন ব্যক্তির জন্য ইমামতি করার বিধান কী?
উত্তর : ক. ভুল ক্বিরাআত পড়ার দ্বারা যদি আয়াতের অর্থ বিকৃত হয়ে যায় তাহলে সর্বাবস্থায় সকলের নামায ফাসেদ হয়ে যাবে। আর যদি অর্থ বিকৃত না হয় তাহলে সকলের নামাযই মাকরুহে তাহরীমির সাথে আদায় হবে।
খ. শুদ্ধ ক্বিরাআত পাঠকারীর উপস্থিতিতে এমন ব্যক্তির জন্য নামাযের ইমামতি করা মাকরুহে তাহরীমি ও নাজায়েয।
পরামর্শ
এক. ইমাম সাহেবের জন্য উচিত হলো, ভালো তিলাওয়াত করতে পারে এমন কারও কাছে মশক করার মাধ্যমে নিজের তিলাওয়াত সহীহ করে নেয়া এবং তিলাওয়াত সহীহ হওয়ার আগ পর্যন্ত শুদ্ধ ক্বিরাআত পাঠকারীর উপস্থিতিতে ইমামতি না করা।
দুই. মুসল্লীদের জন্য উচিত হলো এমন কাউকে ইমাম নিয়োগ দেয়া যিনি সহীহভাবে তিলাওয়াত করতে পারেন।
তিন. আর শুদ্ধ ক্বিরাআত পাঠকারীর জন্য এমন ব্যক্তির পেছনে ইক্তিদা না করাই ভালো।—ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ১৮১১; আদ্দুররুল মুখতার : ৩/৫২৭; রদ্দুল মুহতার : ৪/১০৪; ফাতাওয়া কাযীখান : ১/৮৭; ইমদাদুল ফাতাওয়া : ২/২০০; ফাতাওয়া মাহমূদিয়া : ১০/৩২৯, ১০/৩৩৩
মুহা. খালেদ সাইফুল্লাহ
চাঁদপুর
১৫৯৫. প্রশ্ন : লাহনে জলী ও লাহনে খফীর পরিচয় হুকুমসহ বিস্তারিত আলোকপাত করার অনুরোধ রইল।
উত্তর : ভুল পড়াকে লাহান বলে। লাহান দুই প্রকার : ১. লাহনে জলী, ২. লাহনে খফী।
লাহনে জলীর পরিচয় : এমন প্রকাশ্য ভুল যা সর্বসাধারণ অবগত থাকে, প্রসিদ্ধ ক্বেরাতের বিপরীত হয়, শব্দের রূপ পরিবর্তন করে দেয়, এর দ্বারা কখনো অর্থ বিকৃত হয়, কখনো হয় না।
লাহনে জলী পাঁচ ধরনের হতে পারে। যথা :
১. হরফ পরিবর্তন করা, অর্থাৎ এক হরফের স্থলে অন্য হরফ পড়া।
২. শব্দের মধ্যে কোনো হরফ বাড়ানো কিংবা কমানো।
৩. হরকত পরিবর্তন করা, অর্থাৎ এক হরকতের স্থলে অন্য হরকত পড়া।
৪. হরকতের স্থলে সাকিন কিংবা সাকিনের স্থলে হরকত পড়া।
৫. তাশদীদযুক্ত হরফকে বিনা তাশদীদে পড়া। ইত্যাদি।
লাহনে জলীর হুকুম : যে ব্যক্তি সহীহভাবে তিলাওয়াত করতে সক্ষম তার জন্য লাহনে জলী পড়া হারাম। চাই অর্থ বিকৃত হোক বা না হোক। অনেক সময় এর দ্বারা নামায ফাসেদ হয়ে যায়।
লাহনে খফীর পরিচয় : এমন সূক্ষ্ম ভুল যা সম্পর্কে সর্বসাধারণ অবগত নয়। যার দ্বারা শব্দের রূপ পরিবর্তন হয় না, অর্থও বিকৃত হয় না, তবে হরফের সৌন্দর্য বর্ধনের নিয়ম—নীতির বিপরীত পড়ার কারণে হরফের সৌন্দর্য নষ্ট হয়। লাহনে খফী সাধারণত সিফাতে আরেযার মধ্যে হয়। যেমন, যেখানে মোটা করে পড়ার নিয়ম সেখানে পাতলা করে পড়া, টেনে পড়ার স্থানে না টেনে পড়া ইত্যাদি।
লাহনে খফীর হুকুম : লাহনে খফী পড়া মাকরুহ বা অপছন্দনীয়। এর দ্বারা অর্থ বিকৃত হয় না তাই নামাযও ফাসেদ হয় না। এধরনের লাহন থেকে বেঁচে থাকা মুস্তাহাব ও প্রশংসনীয়। বরং ক্বেরাতের সৌন্দর্যের জন্য তা থেকে বেঁচে থাকাও জরুরি।—আল—জাওয়াহিরুল মুদিয়্যাহ আলাল মুকাদ্দামাতিল জাযারিয়্যাহ : ১৫৩; মাওসুআতু কাশশাফী ইসতিলাহাতিল ফুনুনী ওয়াল উলূম : ১৪০২; আল—মাওসুআতুল ফিকহিয়্যাতিল কুওয়াইতিয়্যাহ : ১০/১৮১, ৩৩/৫১; জামালুল কোরআন : ৯; কামালুল কোরআন শরহে জামালুল কোরআন : ১৫; মুআল্লিমুত তাজবীদ : ১৮১
১৫৯৬. প্রশ্ন : ক. দুই ঈদের নামাযে কয়েক তাকবীর ছুটে গেলে অথবা ঈদের নামাযে ইমামকে ১ম বা ২য় রাকাতের রুকুতে পেলে সে নামায পূর্ণ করার সঠিক পদ্ধতি কী?
খ. জানাযায় কয়েক তাকবীর ছুটে গেলে তা আদায়ের নিয়ম কী?
গ. আমাদের গ্রামে কয়েক মহল্লা মিলে একটি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এমতাবস্থায় কোনো কারণে কেউ ঈদের জামাতে শরীক হতে না পারলে করণীয় কী?
উত্তর : ক. ঈদের নামাযে মাসবুক হলে তার নামায পূর্ণ করার পদ্ধতি হলো :
এক. যদি কেউ প্রথম রাকাতের অতিরিক্ত তাকবীরের পর ইমামের ইক্তিদা করে, তাহলে সে প্রথম তাকবীরে তাহরীমা বলে অতিরিক্ত তাকবীর তিনটি বলবে। যদিও ইমাম ক্বিরাআত আরম্ভ করে দিয়ে থাকে।
দুই. আর যদি কেউ ইমামকে প্রথম রাকাতের রুকু অবস্থায় পায়, তাহলে সে ব্যক্তি তাকবীরে তাহরীমার পরে অতিরিক্ত তাকবীরগুলো বলে তারপর রুকুতে যাবে। আর যদি তার আশঙ্কা হয় যে, অতিরিক্ত তাকবীরগুলো বলতে গেলে ইমামকে রুকুর হালতে পাবে না, তাহলে সে প্রথমে রুকুতে যাবে। রুকুতে থাকা অবস্থায় অতিরিক্ত তাকবীরগুলো হাত ওঠানো ব্যতীতই আদায় করবে এবং রুকুর মধ্যে অতিরিক্ত তাকবীর ও রুকুর তাসবীহ উভয়টি আদায় করা সম্ভব হলে উভয়টি আদায় করবে। অন্যথায় তাসবীহ ছেড়ে দিয়ে শুধু অতিরিক্ত তাকবীরগুলো আদায় করবে। আর যদি তাকবীরগুলো শেষ করার পূর্বেই ইমাম রুকু থেকে উঠে যায়, তাহলে অতিরিক্ত তাকবীরগুলো তার জন্যে মাফ হয়ে যাবে।
তিন. আর যদি সে ২য় রাকাতে শরীক হয়ে ২য় রাকাতের অতিরিক্ত তাকবীরগুলো বলতে পারে, তাহলে সে ইমামের দুই দিকে সালাম ফিরানোর পর উঠে দাঁড়াবে এবং ক্বিরাআত শেষ করে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে অতিরিক্ত তাকবীরগুলো আদায় করে রুকুর তাকবীর বলে রুকুতে যাবে।
চার. আর কেউ যদি ইমামের ২য় রাকাতের রুকুতে শরীক হয়, তাহলে প্রথম রাকাতের রুকুতে মাসবুক হলে যেভাবে নামায আদায় করে সেভাবেই নামায আদায় করবে। অর্থাৎ রুকুতে যাওয়ার পূর্বে তাকবীরগুলো বলে তারপর রুকুতে যাবে। আর যদি তাতে রুকু না পাওয়ার আশঙ্কা হয়, তাহলে রুকুর মধ্যে অতিরিক্ত তাকবীরগুলো আদায় করে নিবে। আর যদি শেষ করার পূর্বেই ইমাম রুকু থেকে উঠে যায়, তবে বাকী তাকবীরগুলো মাফ হয়ে যাবে।
পাঁচ. আর যদি কেউ ইমামের সাথে ২য় রাকাতের রুকু শেষ হওয়ার পর সালামের আগ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে শরীক হয়, তাহলে ইমামের সালাম ফেরানোর পর দাঁড়িয়ে যাবে এবং ইমামের সাথে যেভাবে নামায আদায় করা হয় ঠিক সেভাবেই পূর্ণ নামায আদায় করবে।—মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা : ৪/২৩৭; আদ্দুররুল মুখতার (রদ্দুল মুহতারসহ) : ২/১৭৪; বাদায়েউস সানায়ে : ১/৬২২—৬২৩; খোলাসাতুল ফাতাওয়া : ১/২১৫
খ. জানাযার নামাযে মাসবুক ব্যক্তির নামায পূর্ণ করার পদ্ধতি :
যদি কোনো ব্যক্তি ইমামের কয়েক তাকবীর শেষ হওয়ার পরে জানাযার নামাযে ইক্তিদা করে তাহলে তার পক্ষে জানাযার খাটিয়া ওঠানোর পূর্বে নির্ধারিত দুআসহ ছুটে যাওয়া তাকবীরগুলো আদায় করা সম্ভব হলে দুআসহ আদায় করবে; অন্যথায় কেবল তাকবীরগুলো আদায় করে নেবে।—মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা : ৭/২৭৫, হাদীস নং—১১৬০১; তাবয়ীনুল হাকায়েক : ১/৫৭৮; হাশিয়াতুত তাহ্তাবী আলাল মারাক্বী : ৫৯৪; মাজমাউল আনহুর : ১/২৭২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ৩/৫১
গ. কোনো ব্যক্তির ঈদের নামায ছুটে গেলে তার জন্যে একাকী ঈদের নামায আদায় করার সুযোগ নেই। বরং তার জন্যে চাশতের ন্যায় চার রাকাত নামায আদায় করে নেওয়া মুস্তাহাব।—মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা : ৪/২৩৫; আদ্দুররুল মুখতার (রদ্দুল মুহতারসহ) : ২/১৭৬; বাদায়েউস সানায়ে : ১/৬২৪
ক্বারী জাফর আহমাদ
সাভার, ঢাকা
১৫৯৭. প্রশ্ন : সোজা কেবলার দিক জানা থাকা সত্ত্বেও যদি কোনো ব্যক্তি বরাবর কেবলা থেকে ডান দিক বা বাম দিক একটু বাঁকা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে তার নামায সহীহ হবে কি?
উত্তর : যদি কোনো ব্যক্তির কেবলার দিক জানা থাকা সত্ত্বেও বরাবর কেবলার দিক থেকে সামান্য একটু বাঁকা হয়ে নামাযে দাঁড়ায় তাহলে কোনো সমস্যা নেই, তার নামায সহীহ হয়ে যাবে। আর সামান্য একটু বাঁকা হওয়ার অর্থ হলো শুধু এই পরিমাণ বাঁকা হয়ে দাঁড়ানো যে, মুসল্লীর কপালের কোনো না কোনো অংশ বরাবর কেবলার দিক অবশিষ্ট থাকবে। যার পরিমাণ ফুকাহায়ে কেরাম ডান—বাম উভয়দিকে ৪৫ ডিগ্রী করে নির্ধারণ করেছেন। এই হুকুম মক্কা নগরীর বাইরে যেকোনো জায়গায় হতে পারে। মক্কা নগরীর ভেতরে কাবা দেখা অবস্থায় সরাসরি কাবার দিকে ফিরে নামায পড়া শর্ত।
খ
ছ চ
ঘ গ
ক
উল্লিখিত নকশায় ‘ক’ হলো মুসল্লির দাঁড়ানোর স্থান, ‘খ’ হলো তার বরাবর কেবলা। আর ‘খ’ থেকে ডান দিকে ‘চ’ পর্যন্ত আর বা দিকে ‘ছ’ পর্যন্ত ৪৫ ডিগ্রি এবং ডান দিকে ‘গ’ পর্যন্ত আর বা দিকে ‘ঘ’ পর্যন্ত ৯০ ডিগ্রি।
সুতরাং উল্লিখিত নকশা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি যদি ‘ক’ এর স্থানে দাঁড়ায় এবং বরাবর ‘খ’ এর দিকে মুখ করে নামাযে দাঁড়ায় তাহলে সে বরাবর কেবলার দিকে আছে। আর যদি বরাবর ‘খ’ এর দিকে মুখ না করে একটু ডান অথবা বাম দিকে ঘুরে দাঁড়ায় তাহলে যতক্ষণ সে ‘খ—চ’ অথবা ‘খ—ছ’ এর মধ্যে থাকবে ততক্ষণ সে কেবলার দিকে আছে বলে গণ্য হবে। আর যখন ডান দিকে ‘চ’ কে অথবা বাম দিকে ‘ছ’ কে অতিক্রম করে ফেলবে তখন সে আর কেবলার দিক বাকি রইল না, বরং কেবলা থেকে একেবারেই ঘুরে গেল, তাই তার নামায সহীহ হবে না।—রদ্দুল মুহতার : ১/৪২৮; আলবাহরুর রায়েক : ১/৪৯৫; জাওয়াহিরুল ফিকহ : ২/৩৫৬; কিতাবুন নাওয়াযিল : ৩/৪৩৭
বিবাহ—তালাক—ইদ্দত
জনৈকা মহিলা
১৫৯৮. প্রশ্ন : এক মেয়ের বিবাহ হওয়ার পর এক বছর যেতে না যেতেই সে তার এক বন্ধুর সঙ্গে পালিয়ে যায়। এক মাস তার সঙ্গে থাকে। এর মধ্যে তার স্বামী তাকে তালাক দিয়ে দেয়। পরে মেয়েটি ফিরে এসে তালাকের কথা জানতে পেরে তার পালিয়ে যাওয়া বন্ধুটির সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এখন আমার জানার বিষয় হলো, এই মেয়েটির বিবাহ শুদ্ধ হয়েছে কি না? যদি শুদ্ধ না হয়ে থাকে তাহলে করণীয় কী?
উত্তর : যদি স্বামী তালাক দেওয়ার পর ইদ্দত পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই উক্ত মেয়ে তার বন্ধুর সঙ্গে বিবাহে আবদ্ধ হয়ে থাকে তাহলে এই বিবাহ শুদ্ধ হয়নি। বরং তালাকের সময় থেকে ইদ্দত পালন করে পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। আর ইদ্দত হলো, গর্ভবতী হলে সন্তান প্রসব অন্যথায় পরিপূর্ণ তিনটি হায়েয অতিবাহিত হওয়া।—সূরা বাক্বারা : ২২৮, ২৩৫; তানবীরুল আবসার (রদ্দুল মুহতারসহ) : ৩/৫১৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/৫৭৯, ১/৩৪৬; ফাতাওয়া দারুল উলূম দেওবন্দ : ১১/২৮৪
মুআমালা—লেনদেন
মুহা. সাইফুদ্দীন সাইম
বাড্ডা লিংক রোড, ঢাকা
১৫৯৯. প্রশ্ন : আমি একটি ব্যবসা সম্পর্কে শরঈ বিধান জানতে চাচ্ছি। ব্যবসার পদ্ধতি নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
আমি ১০ লক্ষ অথবা ২০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে একটি কাপড়ের ব্যবসা দিতে চাই এবং এই ব্যবসাটিতে অন্যান্য লোক ব্যবসা করবে মূলধন ছাড়া অর্থাৎ সম্পূর্ণ বিনিয়োগ আমার পক্ষ থেকে করা হবে। এই ব্যবসাটি পরিচালনা করার জন্যে আমি একটি ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ খুলব। যারা আমার প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যবসা করবে তাদের প্রত্যেককে এই ম্যাসেঞ্জার গ্রুপের সদস্য হতে হবে এবং উক্ত ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে সদস্য হতে হলে প্রত্যেককে (সার্ভিস চার্জ বাবদ) ২ শত টাকা প্রদান করতে হবে।
এখন উক্ত সদস্যের দুইটি কাজ—
১. কাপড় বিক্রি করা। অর্থাৎ পণ্য আমার শো—রুমে থাকবে। সদস্য ক্রেতার কাছে ইনফরমেশন দিবে। ক্রেতাকে খুচরা মূল্য বলে সরাসরি তাকে কোম্পানীর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিবে। কোম্পানি ক্রেতার কাছে খুচরা মূল্যে বিক্রি করে টাকা গ্রহণ করে প্রাইকারি মূল্য রেখে গ্রুপ সদস্যকে বাকি টাকা কমিশন বাবদ দিয়ে দেবে।
২. ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে নতুন সদস্য যোগ করা। নতুন সদস্য অন্তভুর্ক্ত করার ফি বাবদ ২ শত টাকা আমার বিকাশে প্রদান করতে হবে। তার মধ্যে ১ শত টাকা সে পাবে। উল্লেখ্য, নতুন সদস্য যদি আবার নতুন সদস্য ২ শত টাকা দিয়ে যোগ করে তাহলে সেও ১ শত টাকা পাবে। কিন্তু পুরোনো সদস্য এর থেকে কোনো লভ্যাংশ পাবে না।
আমার জানার বিষয় হচ্ছে, আমার উপরোক্ত কারবারটি শরীয়তসম্মত হবে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর : প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী উক্ত কোম্পানীর ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে নতুন সদস্য বানিয়ে এবং কোম্পানীর পণ্যের প্রচার প্রসার করে ক্রেতাদেরকে উক্ত কোম্পানী থেকে পণ্য ক্রয় করানোর মাধ্যমে কোম্পানী থেকে কমিশন বাবদ টাকা নেওয়া বৈধ। তবে উক্ত কোম্পানীর ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে সদস্য হওয়ার জন্য যে ২ শত টাকা ফি বাবদ গ্রহণ করা হবে তা জায়েয হবে না। কেননা শরীয়তের দৃষ্টিতে ইজারা চুক্তির জন্য শ্রমিক পক্ষ থেকে মালিক পক্ষকে আলাদা কোনো অর্থ প্রদানের ভিত্তি নেই। কিন্তু এখানে তা দিতে হচ্ছে। তাই যে ২ শত টাকা ফি বাবদ গ্রহণ করা হবে তা ঘুষ বলে বিবেচিত হবে। শরীয়তের দৃষ্টিতে ঘুষ হলো, যে কাজের বিনিময় গ্রহণ করা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয় তার বিনিময় গ্রহণ করা।—মাআলিমুত তানযিল : ১/১৪২—১৪৩; সহীহ বুখারী : ১/৩০৩; রদ্দুল মুহতার : ৪/৬১, ৬/৪৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ১৫/১৩৭; রদ্দুল মুহতার : ৬/৪৮; তাফসীরে মাআরিফুল কোরআন : ৩/১৫১; আপ কে মাসায়েল আউর উন কা হল : ৭/৩৯১; ফাতাওয়া কাসেমিয়া : ২০/১৮৪; কিতাবুন নাওয়াযিল : ১১/১৩৫
মসজিদ—মাদরাসা—ওয়াক্ফ
আনিসুল হক নাহিদ
ফরিদাবাদ, ঢাকা
১৬০০. প্রশ্ন : এক ব্যক্তি রমযানে তিলাওয়াত করার জন্য মহল্লার মসজিদ থেকে দুই খানা কোরআন শরীফ বাসায় আনেন। কিছু দিন পর এর মূল্য বাবদ কিছু টাকা মসজিদের দানবাক্সে দিয়ে দেন। বিষয়টি মসজিদের ইমাম সাহেবকে অবগত করলে তিনি কোনো প্রকার সমস্যা নেই বলে উত্তর দেন। (উল্লেখ্য, ইমাম সাহেব আলেম নন।) আর কোরআন শরীফের একটি নতুন আর অপর আরেকটি ছিল পুরোনো, ব্যবহৃত। যা দেখে ওয়াক্ফের বলে মনে হয় না। আশা করি মুফতী সাহেব হুযুর এর একটি সমাধান দিয়ে দিবেন।
উত্তর : মসজিদে যেসব কোরআন শরীফ থাকে সাধারণত সেগুলো স্থায়ীভাবে মসজিদে রেখে তিলাওয়াত করার জন্য মানুষ দান বা ওয়াক্ফ করে থাকে। তাই এমন কোরআন শরীফকে বিনিময় দিয়ে হোক বা বিনিময় ছাড়া হোক কারও জন্য বাসায় নিয়ে যাওয়া জায়েয় হবে না। অতএব প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী ওই ব্যক্তির জন্য মসজিদ থেকে কোরআন শরীফ নেওয়া জায়েয হয়নি। তাই এখন কোরআন শরীফ দুটি মসজিদে রেখে আসা আবশ্যক। সঙ্গে তওবা—ইস্তেগফার করা উচিত।—আদ্দুররুল মুখতার (রদ্দুল মুহতারসহ) : ৪/৩৬৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ২/৩৪৬, ৫/১৩৯; আলবাহরুর রায়েক : ৮/১৯৮; ফাতাওয়া মাহমূদিয়া : ২৬/৪৩; ফাতাওয়া মাহমূদিয়া : ২১/৩০১
ইয়াহইয়া ফরহাদ
রায়েরবাগ, ঢাকা
১৬০১. প্রশ্ন : ক. আমাদের মসজিদ ও মাদরাসার জায়গা ভিন্ন ভিন্ন। ওয়াক্ফ একই দাতার। তবে পাশাপাশি হওয়ায় একই ছাদের নিচে ২টি প্রতিষ্ঠান পাঁচতলা পর্যন্ত উঠেছে। ১ম তলার মাঝখানে পার্টিশান আছে, ২য় তলায় নেই এবং পরবর্তী সমস্ত তলায় পার্টিশান আছে।
জুমার দিন মসজিদ—মাদরাসা কানায় কানায় ভরে যায়। অন্যান্য দিন সাধারণত মাগরিবে মসজিদের ১ম তলা ভরে। মাদরাসায় অনেকেই জামাতে শরীক হয়। অলসতার কারণে হয়তোবা মসজিদের ২য় তলায় উঠে না। এতে করে যারা মসজিদের ২য় তলা খালি থাকা সত্ত্বেও মাদরাসার নিচ তলায় দাঁড়ায় তাদের নামাযে কোনো সমস্যা হবে কি না? বা পুণ্যে তারতম্য হবে কি না?
খ. মসজিদের কমিটি ১ম তলার পার্টিশন ভেঙে নামাযের সুবিধার্থে একাকার করে ফেলতে চাচ্ছে। শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ হবে কি না? অবশ্য এতে মাদরাসার কার্যক্রমে কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না।
উত্তর : ক. প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী যেহেতু মসজিদ ও মাদরাসা ভিন্ন ভিন্ন; মাদরাসা মসজিদের অন্তর্গত নয়, তাই কাতারের সংযোগ রক্ষা করে মাদরাসায় জামাতে শরীক হলে নামায সহীহ হবে এবং জামাতে নামায আদায়ের সওয়াবও অর্জিত হবে। তবে মসজিদে নামায আদায়ের সওয়াব অর্জিত হবে না। তাই অলসতা বা তড়িঘড়ি না করে মসজিদের নিচতলা পূর্ণ হয়ে গেলে ২য় তলায় কাতারবদ্ধ হওয়া উচিত।—মিশকাতুল মাসাবীহ : ৭২; গুনইয়াতুল মুতামাল্লী : ৪০২; ফাতাওয়া দারুল উলূম দেওবন্দ : ৩/১৪৮; ইমদাদুল আহকাম : ১/৪৪৭; কিতাবুন নাওয়াযিল : ৪/৪৫২
খ. মাদরাসার ছাত্র—শিক্ষকগণের মসজিদে জামাতে নামায আদায়ের সুবিধার্থে প্রয়োজন হলে মাদরাসার কিছু অংশে মসজিদ নির্মাণ করা জায়েয আছে। প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী বোঝা যাচ্ছে, বিভিন্ন সময়ে বর্তমান মসজিদ মহল্লাবাসীর জন্যই যথেষ্ট হয় না। তাছাড়া মাদরাসার ছাত্র—শিক্ষকগণের নামায আদায়ের সুবিধার্থেও মসজিদটি সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। তাই মাদরাসা কতৃর্পক্ষ মাদরাসার সার্বিক বিষয় ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা মাথায় রেখে চাইলে নিচ তলাকে মসজিদের জন্যে ওয়াক্ফ করে বিদ্যমান মসজিদের সঙ্গে মিলিয়ে দিতে পারে। তখন তা শরঈ মসজিদ হিসেবে বিবেচিত হবে। আর মাদরাসার ওপরের তলাগুলো মাদরাসা হিসাবেই বহাল থাকবে। উল্লেখ্য, এভাবে শরঈ মসজিদ হয়ে যাওয়ার ফলে নিচতলাকে মাদরাসার ছাত্রদের নিয়মিত আবাস, মাদরাসার অফিসকক্ষ কিংবা যাওয়া—আসার পথ ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
আর মাদরাসার কতৃর্পক্ষ শরঈ মসজিদের জন্যে নিচতলাকে ওয়াক্ফ না করলে বর্তমান অবস্থার ন্যায় পার্টিশান না ভেঙে নামাযের ব্যবস্থা করাই সমীচিন হবে।
মসজিদ ও মাদরাসার নিচতলাকে এক করে ফেললে মেহরাবকেও সম্প্রসারিত মসজিদের মাঝ বরাবর নিয়ে আসতে হবে। কেননা মেহরাব মসজিদের মাঝ বরাবর হওয়া সুন্নত। তাই যথাসম্ভব মসজিদের মাঝখানে মেহরাব বানানোর চেষ্টা করবে।—খোলাসাতুল ফাতাওয়া : ৪/৪২১; আলবাহরুর রায়েক : ৫/৪২৮; আদ্দুররুল মুখতার (রদ্দুল মুহতারসহ) : ৪/৩৬৭—৩৬৮; ফাতাওয়া মাহমূদিয়া : ২৩/১০৩, ১০৯; বাযলুল মাজহুদ : ৩/৬৩১, হাদীস নং—৬৮০; ফাতাওয়া দারুল উলূম দেওবন্দ : ১৪/৮০; ইমদাদুল আহকাম : ৩/২৬০; রদ্দুল মুহতার : ১/৬৪৬
মরহুম আব্দুল মজিদ মাস্টার বাড়ী কবরস্থান কতৃর্পক্ষ
ত্রিশাল, ময়মনসিংহ
১৬০২. প্রশ্ন : মুহতারাম মুফতী সাহেব! আমাদের পূর্বপুরুষকতৃর্ক প্রায় সাড়ে তিন কাঠা জমি কবরস্থানের জন্য ওয়াক্ফ করা হয়। যুগ যুগ ধরে সেখানে নিয়মতান্ত্রিকভাবে মৃতদেহ দাফন করা হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হয়ে যাওয়ায় কবরস্থানের মাটি সমতল হয়ে চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। নতুন কবর ছাড়া পুরোনো কবরের কোনো নিশানা অবশিষ্ট নেই। কবরস্থানের চতুর্পাশ্বের কোনো বাউন্ডারির ব্যবস্থা নেই। তবে ব্যক্তি মালিকানায় ফলমূলসহ অন্যান্য গাছ—গাছালি লাগানো হয়েছে। যার কারণে কবরস্থানে মানুষ গরু—ছাগল চরাতে নিয়ে আসে এবং নারী—পুরুষ সকলেই কবরস্থানকে চলাচলের রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করে। মানুষের আনাগোনা কম থাকার সময় প্রস্রাব—পায়খানাও করে। গ্রীষ্মকালে মানুষ গাছের ছায়ায় বসে দুনিয়াবী গল্প—গুজব করে এবং শুয়ে ঘুমায়। এখন জানার বিষয় হলো,
ক. কবরস্থানে গবাদি পশু চরানোর হুকুম কী?
খ. কবরস্থানকে চলাচলের রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করার হুকুম কী?
গ. কবরস্থানে প্রস্রাব—পায়খানা করার হুকুম কী?
ঘ. কবরস্থানে বসে দুনিয়াবী গল্প—গুজব করার হুকুম কী?
ঙ. ওয়াক্ফকৃত কবরস্থানে ব্যক্তি মালিকানায় গাছ—গাছালি লাগানোর হুকুম কী?
চ. এমতাবস্থায় কবরস্থান কতৃর্পক্ষের করণীয় কী?
উত্তর : ক. খ. গ. ও ঘ. কবরস্থানে বসে দুনিয়াবী গল্প—গুজব করা, ঘুমানো, প্রস্রাব—পায়খানা করা, গবাদী পশু চরানো ও কবরস্থানকে চলাচলের রাস্তাস্বরূপ ব্যবহার করা শরীয়তের দৃষ্টিতে নাজায়েয এবং কঠিন গোনাহের কারণ। কেননা এসকল কাজের কারণে কবরস্থানের সম্মানহানী হয়। তাই এ সকল কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। উল্লেখ্য, কবরস্থানে যদি অনেক ঘাস উদ্গত হয় তাহলে তা কেটে নিয়ে গবাদী পশুকে খাওয়ানো যেতে পারে।
ঙ. কবরস্থানে কোনো লোক যদি ব্যক্তি মালিকানায় ওয়াক্ফের নিয়তে গাছ—গাছালি লাগায় তাহলে তার ব্যয়ের খাত উক্ত কবরস্থানই হবে। যদি নিজে মালিক হওয়ার নিয়তে লাগায় তাহলে সে নিজেই তার মালিক হবে অন্যদের জন্য অনুমতি ছাড়া সেগুলো দ্বারা কোনো ধরনের উপকৃত হওয়া বা ভোগ করা জায়েয হবে না। তবে এক্ষেত্রে কবরস্থান কতৃর্পক্ষের এ অধিকার রয়েছে যে, তারা তাকে গাছ—গাছালি কেটে কবরস্থান খালি করতে বাধ্য করতে পারবে।
চ. এমতাবস্থায় কবরস্থান কতৃর্পক্ষের জন্য কর্তব্য হলো, তাদের সাধ্যানুযায়ী জনসাধারণদেরকে এ জাতীয় কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখা। চাই তা মৌখিক নিষেধ করার মাধ্যমে হোক বা কবরস্থানের বাউন্ডারি নির্মাণের মাধ্যমে।
কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি কোনো অন্যায় কাজ সংঘটিত হতে দেখে সে যেন নিজ হাতে তা প্রতিহত করে। যদি নিজ হাতে তা প্রতিহত করার সাধ্য না থাকে তাহলে কথা বলার মাধ্যমে। যদি কথা বলার মাধ্যমে প্রতিহত করার সাধ্য না থাকে তাহলে সে যেন অন্তর দিয়ে হলেও তা ঘৃণা করে। আর এটা ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর। (সুনানে কুবরা লিল বায়হাকী : ৬/১৭৬, হাদীস নং—১১৫১৩)
—সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং : ১০৭৪, ১০৭১; বাদায়েউস সানায়ে : ২/৬৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/২২৭, ২/৪২৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ৮/১৮৯—১৯০; আলবাহরুর রায়েক : ৫/৩৪১; আদ্দুররুল মুখতার : ৬/২০০; ইমদাদুল ফাতাওয়া : ৬/৫৮—৫৯; কিফায়াতুল মুফতী : ১০/৫১৭; কাসেমিয়া : ১৮/৬৮২; কিতাবুন নাওয়াযিল : ১৪/৩৩০
Thanks