ফত্ওয়া জিজ্ঞাসা
বিবাহ—তালাক—ইদ্দত
জনৈক ব্যক্তি
১৬০৩. প্রশ্ন : আমার জানার বিষয় হলো, মোবাইলে ম্যাসেজের মাধ্যমে তিন তালাক দিলে তালাক হবে কি না?
উত্তর : স্ত্রীকে লক্ষ্য করে মোবাইলে ম্যাসেজ লিখে প্রেরণের মাধ্যমে তিন তালাক দিলে তিন তালাক কার্যকর হবে। কেননা লিখে তালাক দিলেও তালাক কার্যকর হয়। তবে যদি লেখাটি মুছে যায়, স্থির না হয়, যেমন : কেউ পানির ওপরে লিখল, তো এভাবে তালাক কার্যকর হবে না।—আদ্দুররুল মুখতার (রদ্দুল মুহতারসহ) : ৩/২৪৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/৪৪৬; ফাতাওয়া দারুল উলূম যাকারিয়া : ৪/১৫৯
জনৈক ব্যক্তি
১৬০৪. প্রশ্ন : এক হিন্দু ছেলে এক মুসলিম মেয়ের সঙ্গে যিনা করেছে। তারা উভয়ে বিবাহিত। মেয়েটি যিনা করার পরও তার স্বামীর সংসার করছে। স্বামী ও সন্তানদের জন্য রান্না—বান্না করছে। আমার জানার বিষয় হলো :
ক. বিবাহিত হিন্দু ছেলে ও বিবাহিত হিন্দু মেয়ের যিনার বিচারে শরীয়তের বিধান কী?
খ. এ মহিলার রান্না করা খাবার তার স্বামী ও সন্তানদের জন্য খাওয়ার হুকুম কী?
আশা করি, শরীয়তের আলোকে বিষয়টি জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর : ক. মুসলমানদের রাষ্ট্রে যদি কারও ব্যাপারে শরীয়তের বিশেষ প্রমাণনীতি অনুযায়ী যিনার অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে তার ওপর যিনার নির্ধারিত হদ (শাস্তি) প্রয়োগ করা শাসকের ওপর ওয়াজিব। যিনার হদ দুই প্রকার : ১. রজম তথা পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা। ২. জাল্দ তথা ১০০ বেত্রাঘাত করা। প্রত্যেকটির জন্য নির্ধারিত ক্ষেত্র রয়েছে। যা প্রয়োগ করা একমাত্র শাসকের কর্তব্য। এ ক্ষেত্রে জনসাধারণের কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ বৈধ নয়।
খ. স্ত্রী অন্যের সাথে যিনা করার দ্বারা স্বামীর জন্য হারাম হয় না। তাই প্রশ্নোল্লিখিত সুরতে উক্ত মহিলার রান্না করা খাবার তার স্বামী ও সন্তানদের জন্য খাওয়া হালাল হবে।—সূরা নূর, ২৪ : ০২; সহীহ মুসলিম : ১৬৯১/৭২১; আদ্দুররুল মুখতার (রদ্দুল মুহতারসহ) : ১২/৫৪; হেদায়া : ৪/৮০—৮১, ৪/৯৪; রদ্দুল মুহতার : ৮/১৬৯; ফাতহুল ক্বদীর : ৪/১৮৮; আলবাহরুর রায়েক : ৪/২৩৫; ফাতাওয়া দারুল উলূম দেওবন্দ : ১২/১৭৯
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
১৬০৫. প্রশ্ন : আমি একটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক করে কাউকে না জানিয়ে কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করেছি। এ সময় আমাদের সাথে আরেক প্রেমিক—প্রেমিকা ছিল। বিয়ের সময় সাক্ষী হিসেবে কেউ কাউকে নিয়ে আসেনি। অর্থাৎ আমরা নিজেরাই সাক্ষী ছিলাম। আমাদের সাথে শুধু কাজিই ছিল। কাজি খুব তাড়াতাড়ি খুতবা পড়ে আমাদের বিয়েটা দিয়ে দেয়। লিখিত আকারে আমার সাথে আরেকজন কাবিননামায় সাক্ষী দেয়।
বিয়ের পর আমরা আলাদাই থাকতাম। কিন্তু তার সাথে আমার ফোনে ঝগড়া হতো। ফোনে অনেকেবার ছেড়ে দেবার হুমকি দিই। তাকে খুব গালাগালি করতাম। একবার তার চালচলনে বিরক্ত হয়ে ‘তোকে ছেড়ে দিলাম’ এ রকম একবার ম্যাসেজ করি। হুমকি দেবার জন্য বলছিলাম; কিন্তু মন থেকে না। এরপর আবার কথা বলি কিন্তু আমার কথা শুনত না। তারপর ফোনে রাগের মাথায় দুই তালাক বলে ফেলি, কিন্তু হুমকি দেওয়ার জন্য বলি। কিন্তু তিন তালাক দিইনি। তারপর তার সাথে আবার ঝগড়া লাগত। কারণ সে ঠিক হতে চাইত না।
একপর্যায়ে সে এমন কিছু বিষয় আমাকে মিথ্যা বানিয়ে বলে, যা শুনে আমি তাকে এক তালাক, দুই তালাক, তিন তালাক দিই।
এরপর সে স্বীকার করে যে সে আমাকে মিথ্যা মিথ্যা বলেছিল। তখন তাকে বললাম, তাহলে এমন কথা কেন বললে। নাহয় আমি তিন তালাক দিতাম না।
এখন আমরা খুবই অনুতপ্ত। সে তার ভুলগুলো বুঝতে পেরেছে। কিন্তু প্রথমবার দুইবার দ্বিতীয়বার তিনবার মোট পাঁচবার তালাক দেওয়া হয়ে গেছে। এখন হুযুরের কাছে চারটি প্রশ্ন :
ক. আমাদের বিয়েটা কি হয়েছিল?
খ. আমাদের বিয়ের সম্পর্ক শেষ হয়ে গেল কি না?
গ. যদি বিয়ে বা তালাক না হয় তাহলে আবার পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে বিয়ে করা যাবে কি না?
ঘ. যদি তালাক হয়ে যায় তাহলে আমরা আবার বিয়ে করতে পারব কি না? কারণ, এখন সে আর আমি সব ভুল বুঝতে পারছি।
উত্তর : ক. প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনাদের বিবাহ সহীহ হয়েছে। তবে বিয়ের এ পদ্ধতি সঠিক নয়। মেয়েদের জন্য অভিভাবকের সম্মতি ছাড়া বিয়ে করা নিষেধ। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। তা ছাড়া বিবাহপূর্ব প্রেম সম্পূর্ণ হারাম ও অত্যন্ত ঘৃণিত ও নির্লজ্জ কাজ। এতৎসত্ত্বেও বিবাহের সকল শর্ত বিদ্যমান থাকায় আপনাদের বিবাহ সংঘটিত হয়ে গেছে।
খ. প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী আপনাদের বিবাহ সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ম্যাসেজে ‘তোকে ছেড়ে দিলাম’ লেখার দ্বারা প্রথমে এক তালাক এরপর মুখে দুই তালাক দেওয়ার দ্বারা মোট তিন তালাক আপনার স্ত্রীর ওপর কার্যকর হয়েছে এবং আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে গেছে। এরপর আপনার জন্য উক্ত স্ত্রীর সাথে দেখা করা, স্ত্রীসুলভ আচরণ করা, একসাথে ঘর—সংসার করা হারাম হয়ে গেছে। এসব কাজ করে থাকলে খালেস দিলে আল্লাহর কাছে তওবা—ইস্তেগফার করতে হবে।
উল্লেখ্য যে, তালাকের সংখ্যা যখন তিনটি পূর্ণ হয়েছে তখন থেকে আপনার স্ত্রীর জন্য ইদ্দত পালন করা ওয়াজিব হয়েছে। এবং তিন তালাকের পর যদি হালাল মনে সহবাস করা হয় তাহলে যতবার তার সাথে সহবাস করেছেন ততবারের জন্য তার ওপর একটি করে ইদ্দত ওয়াজিব হয়েছে। এই ইদ্দতগুলোর প্রতিটাই যথানিয়মে শুরু হয়ে নির্ধারিত সময় পূর্ণ হওয়ার পর সমাপ্ত হয়ে যাবে। এখন আপনার স্ত্রীর জন্য আবশ্যক হলো, সর্বশেষ স্বামী—সহবাসের পর থেকে পূর্ণ একটি ইদ্দত পালন করা।
গ. ঘ. যেহেতু তিন তালাকের মাধ্যমে আপনাদের বিবাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে তাই তাকে সরাসরি পুনঃবিবাহ করার সুযোগ নেই। তবে ইদ্দত অতিবাহিত হওয়ার পর যদি উক্ত মহিলা অন্য কোনো বালেগ পুরুষের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং তাদের মাঝে স্বামী—স্ত্রীসুলভ আচরণ (সহবাস) হয়, এরপর ঐ স্বামী যদি তাকে তালাক দেয় কিংবা মারা যায়, তাহলে পুনরায় ইদ্দত পালন শেষে আপনার জন্য তাকে পুনরায় বিবাহ করা জায়েয হবে।
বি. দ্র. (ক) তালাকের ইদ্দত হলো, গর্ভবতী হলে গর্ভ খালাস হওয়া। আর গর্ভবতী না হলে পূর্ণ তিনটি মাসিক অতিবাহিত হওয়া।
বি. দ্র. (খ) মৃত্যুর ইদ্দত হলো, গর্ভবতী হলে গর্ভ খালাস হওয়া। আর গর্ভবতী না হলে চার মাস দশ দিন অতিবাহিত হওয়া।—সূরা বাক্বারা, ০২ : ২২৯—২৩০; সহীহ বুখারী : ২/৩৬৩—৩৬৪, হাদীস নং ৫২৬০; আদ্দুররুল মুখতার (রদ্দুল মুহতারসহ) : ৩/২১—২২, ২৪৬; বাদায়েউস সানায়ে : ৩/২৯৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/৪৪৬; কিফায়াতুল মুফতী : ৮/১৮৪; ফাতাওয়া মাহমূদিয়া : ১৮/২৭৯
মুআমালা—লেনদেন
ইবনে জাহাঙ্গীর
উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ
১৬০৬. প্রশ্ন : এক ভাই ওয়াইড ফটোগ্রাফির কাজ করেন। এর কাজ দুইটি :
এক. বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি তোলা ও সংরক্ষণ করা।
দুই. বিভিন্ন জীব—জন্তু ও পাখির ছবি তোলা ও সংরক্ষণ করা।
এই ছবিগুলো বিভিন্ন ম্যাগাজিনে ছাপা হয়। আমার জানার বিষয় হলো, এ কাজ করা কি জায়েয, না নাজায়েয? এবং এর দ্বারা উপার্জিত টাকা হালাল হবে কি না?
উল্লেখ্য কিছু কিছু ছবি একদম দুষ্প্রাপ্য, খুব কম পাওয়া যায়। কোনো কোনো সময় তা গবেষণার কাজে লাগে।
উত্তর : কোনো জীব—জন্তু, পশুপাখির ছবি তোলা ও সংরক্ষণ করা হারাম। ফটোর নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে হাদীস শরীফে কঠোর হুঁশিয়ারি এসেছে। যেমন : বুখারী শরীফে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় কেয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ভয়ানক শাস্তির পাত্র হলো ছবি অঙ্কনকারীরা।’ যেহেতু জীব—জন্তুর ছবি তোলা হারাম, তাই এ কাজকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করাও হারাম। এর দ্বারা উপার্জিত টাকাও হালাল হবে না। তবে যদি বিশেষ কোনো প্রয়োজন দেখা দেয়, যেমন : আইডি কার্ড বা পাসপোর্ট ইত্যাদির জন্য ছবি তোলা হয়, তাহলে হারাম হবে না। আর জীব—জন্তুবিহীন কোনো প্রাকৃতিক দৃশ্য বা গাছপালার ছবি তোলা এবং এগুলো সংরক্ষণ করা জায়েয আছে। তাই এটাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা এবং এর মাধ্যমে উপার্জন করা জায়েয আছে।—সহীহ বুখারী : ১/২৯৬; শরহুন নববী আলা মুসলিম : ২/১৯৯; তাকমিলাতু ফাত্হিল মুলহিম : ৪/১৬৪; রদ্দুল মুহতার : ১/৬৫০
জনৈক ব্যক্তি
১৬০৭. প্রশ্ন : আমাদের পরিবার যৌথ পরিবার। আমার এক ভাই ডিশ—লাইন পরিচালনা করে টাকা উপার্জন করে। আমার জানার বিষয় হলো :
ক. এ পদ্ধতিতে টাকা উপার্জন করার হুকুম কী?
খ. পরিবারের অন্য সদস্যরা এ উপার্জনের খানা খেতে পারবে কি না?
উওর : ক. প্রচলিত ডিশ—লাইন পরিচালনা করে টাকা উপার্জন করা মাকরুহে তাহরীমী। কেননা, ডিশ—লাইন পরিচালনা করার মাধ্যমে গোনাহের কাজে সহায়তা করা হয়। গোনাহের কাজে সহায়তা করতে কোরআন ও হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে। তাই এই ধরনের উপার্জন করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
খ. পরিবারের সদস্যরা অন্য কোনো উপায় না থাকলে এরূপ উপার্জন খেতে পারবে। তবে তাকে এরূপ উপার্জন থেকে নিষেধ করবে।—ফাতহুল ক্বদীর : ৯/১০০; ফাতাওয়া কাসেমিয়া : ২১/৭৩৬—৭৩৭; কিতাবুন নাওয়াযিল : ১২/৪৮৮; জাওয়াহিরুল ফিক্হ : ৭/৫১০; রদ্দুল মুহতার : ৪/১৯১, ৬/৩৮৬
আ: আজিজ
কুড়িগ্রাম
১৬০৮. প্রশ্ন : আমি একজন ছাত্র। বাড়ি কুড়িগ্রাম। পড়াশোনা করি ঢাকায়। বাসযোগে ঢাকায় যাতায়াত করতাম। কিন্তু বাসে যাতায়াত করা আমার জন্য খুবই কষ্টকর হয়। তাই একদিন আমি ট্রেনযোগে ঢাকায় আসার জন্য স্টেশনে উপস্থিত হই, কিন্তু ট্রেনের টিকেট পাইনি। নিরুপায় হয়ে আমি টিকেট মাস্টারের সাথে টিকেটের ব্যাপারে আলোচনা করি। সে বলল, ট্রেনের ভেতরে আসেন সমস্যা নেই। আমি ভেতরে যাওয়ার পর সে আমাকে একটি সিটে বসিয়ে দেয় এবং আমার কাছ থেকে পূর্ণ টিকেটের ভাড়া আদায় করে। অথচ সে আমাকে কোনো ধরনের টিকেট দেয়নি। আমার মনে হয় এই টাকা সরকার পায়নি। এখন আমার জানার বিষয় হলো, এই অবস্থায় আমার করণীয় কী?
উত্তর : প্রশ্নের বিবরণ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আপনি যে টাকা টিকেট মাস্টারকে দিয়েছেন সে টাকা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছেনি। ট্রেন দুই ধরনের হয় : ১. সরকারি, ২. বেসরকারি। আপনি যদি সরকারি ট্রেনে এসে থাকেন, তাহলে কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত সেই ট্রেনের আসনবিহীন টিকেট বা এই পরিমাণ টাকার অন্য গাড়ির আসনবিহীন টিকেট যেকোনো সরকারি কাউন্টার থেকে ক্রয় করে ছিঁড়ে ফেললে বা ব্যবহার না করলে নিশ্চিতভাবে দায়মুক্ত হবেন। অর্থাৎ টিকেটের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হবে। আর আপনি যদি বেসরকারি ট্রেনে এসে থাকেন, তাহলে কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত সেই ট্রেনের আসনবিহীন টিকেট বা এই পরিমাণ টাকায় সেই কোম্পানির অন্য গাড়ির আসনবিহীন টিকেট উক্ত কোম্পানির যেকোনো কাউন্টার থেকে ক্রয় করে ছিঁড়ে ফেললে বা ব্যবহার না করলে নিশ্চিতভাবে দায়মুক্ত হবেন। অর্থাৎ টিকেটের টাকা উক্ত কোম্পানির কোষাগারে জমা হবে।—আদ্দুররুল মুখতার (রদ্দুল মুহতারসহ) : ৯/১২৮; মাজমাউল আনহুর : ৪/৯২; ফাতাওয়া মাহমূদিয়া : ২৬/৬৩; ইমদাদুল ফাতাওয়া : ৭/৫৬৭; ফাতাওয়া দারুল উলূম দেওবন্দ : ১৫/৩৪৫
মাহফুজুর রহমান
মোহাম্মদপুর, ঢাকা
১৬০৯. প্রশ্ন : ঢাকা শহরের ফ্ল্যাট—বাসাগুলি ভাড়া নেওয়ার সময় বাড়িওয়ালারা সাধারণত ফ্ল্যাটের যাবতীয় ত্রুটি—সমস্যাগুলি ঠিক করে দেয়। পাশাপাশি নতুন করে রং—ও করে দেয়। এ ক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়ম হলো, ভাড়াটিয়ারা কয়েক মাসের এডভান্স (অগ্রিম) ভাড়া পরিশোধ করে ফ্ল্যাটে ওঠে। সাধারণত ভাড়াটিয়ারা যেহেতু একই ফ্ল্যাটে অনেক বছর ভাড়া থাকে, তাই স্বাভাবিকভাবেই ভাড়া থাকাকালীন সে ফ্ল্যাটের অনেক কিছু নষ্ট ও ব্যবহার—অযোগ্য হয়ে যায়। আবার অনেক সময় দেখা যায় ভাড়া বৃদ্ধির ফলে কিংবা বিভিন্ন সমস্যার কারণে কোনো কোনো ভাড়াটিয়া অন্য আরেকজনকে সাবলেট ভাড়া দেয়। কখনো বাড়ি মালিকের অনুমতিসাপেক্ষে হয় আবার কখনো গোপনেও হয়ে থাকে। জনাবের কাছে উপরোক্ত বিষয়ের ওপর কয়েকটি প্রশ্ন :
ক. বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে এডভান্স কয়েক মাসের ভাড়া নেওয়া জায়েয হবে কি না?
খ. ভাড়াটিয়া কতৃর্ক ইচ্ছায় বা গাফলতির কারণে যে সমস্ত জিনিস নষ্ট হয়ে যায় সেগুলো ঠিক করার দায়ভার কার ওপর?
গ. বর্ণিত ক্ষেত্রে বাড়িওয়ালার অনুমতিতে কিংবা অগোচরে সাবলেট ভাড়া দেওয়া জায়েয হবে কি?
উত্তর : ক. বাড়ির মালিকের জন্যে ফ্ল্যাট—বাসা ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে চুক্তি করে এডভান্স (অগ্রিম) কয়েক মাসের ভাড়া গ্রহণ করা জায়েয হবে।—আদ্দুররুল মুখতার (রদ্দুল মুহতারসহ) : ৬/১০; আল—মুহীতুল বুরহানী : ১১/২৮
খ. যদি ভাড়াটিয়ার অনিচ্ছায় ফ্ল্যাটের এমন কোনো কিছু নষ্ট বা ত্রুটিযুক্ত হয়, যার ফলে উক্ত ফ্ল্যাটে বসবাস করতে সমস্যা হয়, তাহলে সেগুলো ঠিক করে দেওয়ার দায়ভার বাড়িওয়ালার ওপর বর্তাবে। যেমন : দেয়াল ধসে পড়া, ছাদের প্লাস্টার তথা আস্তর খসে পড়া, পানি বা ময়লার নালা জমে যাওয়া (যদিও তা ভাড়াটিয়ার কর্মের মাধ্যমে হয়) ইত্যাদি।
আর যদি ভাড়াটিয়ার ইচ্ছাকৃত কাজের মাধ্যমে কিছু নষ্ট হয় তাহলে তার ক্ষতিপূরণ ভাড়াটিয়াকেই দিতে হবে।—আদ্দুররুল মুখতার (রদ্দুল মুহতারসহ) : ৬/৮০; বাদায়েউস সানায়ে : ৪/৭২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৪/৪৯২; আল—মুহীতুল বুরহানী : ১১/৩৬৪
গ. প্রশ্নোক্ত বর্ণনানুযায়ী ভাড়াটিয়ার জন্যে বাসা ভাড়া নিয়ে সাবলেট ভাড়া দেওয়া জায়েয আছে। তবে এ ক্ষেত্রে শরীয়ত নির্ধারিত তিনটি শর্ত বিদ্যমান থাকা আবশ্যক :
১. যে ধরনের ব্যবহারের শর্তে বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়েছে ওই একই ধরনের ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভাড়াটিয়া সাবলেট ভাড়া দিতে পারবে। অর্থাৎ ভাড়াটিয়া যে উদ্দেশ্যে বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল মালিকের অনুমতি ব্যতীত তা ভিন্ন অন্য কোনো উদ্দেশ্যে সাবলেট ভাড়া দিতে পারবে না। যেমন : বসবাসের কথা বলে ভাড়া নেয়ার পরে কারখানা ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
২. ফ্ল্যাট বাসার কয়েক রুম সাবলেট ভাড়া দেওয়ার ২য় শর্ত হলো পূর্ব থেকে ১ম ভাড়াটিয়ার দখলে তা থাকা।
৩. ৩য় শর্ত হলো ভাড়াটিয়া যে মূল্যে ফ্ল্যাট ভাড়া নেবে হিসেব করে সে মূল্যে সাবলেট ভাড়া দিতে পারবে। তার জন্যে অতিরিক্ত বা বেশি মূল্য বা ভাড়া গ্রহণ করা জায়েয হবে না।
তবে অতিরিক্ত ভাড়া গ্রহণ তখনই জায়েয হবে, যদি ভাড়াটিয়া ফ্ল্যাটটিতে কোনো সংস্কার বা সংযোজনমূলক কাজ করেন কিংবা ফ্ল্যাটের কোনো কিছুতে মেরামত করে থাকেন। যেমন : দরজা—জানালা লাগানো, দেয়ালের রং করে দেওয়া বা ডেকোরেশন ইত্যাদি।
মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবায় (হাদীস নং ২৩৭৫৪) বিখ্যাত তাবেয়ী ইবরাহীম নাখাঈ রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত আছে, যে মূল্যে ভাড়া নেওয়া হয়েছে তার চেয়ে অতিরিক্ত গ্রহণ করা সুদ।—মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা : ২৩৭৫২— ২৩৭৫৪, ২৩৭৬৮; আল—মুহীতুল বুরহানী : ১১/২৬৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৪/৪৫৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ১৫/৫১
মুহা. মুস্তফা কামাল
গাজীপুর
১৬১০. প্রশ্ন : কোনো এক মুদি দোকানে আমি এক লাখ টাকা দিই। উদ্দেশ্য হলো, ওই মুদি দোকানের সাথে আমার এই এক লাখ টাকা যৌথভাবে ব্যবসায় খাটানো হবে। এই টাকা ব্যবসায় খাটানোর পর থেকে প্রতি মাসে আমি এক বস্তা করে চাল পাই। প্রতি মাসেই নির্ধারিতভাবে এক বস্তা করে চাল পাওয়া শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয আছে কি না? যদি জায়েয না হয় তাহলে জায়েয হওয়ার সুরত কী?
উত্তর : এক পক্ষের পুঁজি অপর পক্ষের শ্রম দিয়ে যে চুক্তি হয় শরীয়তের পরিভাষায় তাকে মুদারাবা চুক্তি বলে। মুদারাবা চুক্তি শুদ্ধ হওয়ার জন্য শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত কিছু শর্ত রয়েছে। যেগুলো না থাকলে মুদারাবা সহীহ হয় না। ওই শর্তগুলোর মধ্যে একটি শর্ত হলো, ব্যবসায় যা লাভ হবে তা পুঁজিদাতা এবং মুদারিব উভয়ে যৌথভাবে শতকরা হারে ভাগ করে নেওয়া। লভ্যাংশ থেকে নির্ধারিত অঙ্ক মুনাফা নেওয়া কারও জন্যই জায়েয নেই। সে হিসেবে প্রতি মাসে নির্ধারিতভাবে এক বস্তা করে চাল পাওয়া আপনার জন্য জায়েয নেই। তা ছাড়া মুদারাবা চুক্তির মধ্যে আরেকটি শর্ত হলো, মুদারিব কতটুকু মুনাফা পাবে তা উল্লেখ থাকা। অথচ এখানে তার মুনাফা কতটুকু তা উল্লেখ নেই। সুতরাং আপনাদের এই চুক্তিটি শরীয়তের দৃষ্টিতে সহীহ হয়নি। এখন আপনাদের জন্য কর্তব্য হলো, নির্ধারিতভাবে এক বস্তা করে চাল পাওয়া বাদ দিয়ে এভাবে চুক্তি করবেন যে, উক্ত ব্যবসায় যা লাভ হবে তা উভয়ে যৌথভাবে পার্সেন্ট হিসেবে ভাগ করে নেবেন এবং মুদারিবের অংশ কতটুকু হবে তা স্পষ্ট করে নেবেন।—আদ্দুররুল মুখতার : ৮/৫০১; আলমুহীতুল বারহানী : ১৮/১২৬; মুলতাকাল আবহুর (মাজমাউল আনহুরসহ) : ৩/৪৪৬; ফাতাওয়া দারুল উলূম দেওবন্দ : ১৩/৯৭
মসজিদ—মাদরাসা—ওয়াক্ফ
মুহা. ইয়াসিন
নবাবগঞ্জ, ঢাকা
১৬১১. প্রশ্ন : অনেক মসজিদে লেখা থাকে যে, ‘মসজিদে দুনিয়াবি কথা বলা হারাম/নিষেধ।’ অথচ আমরা হযরত ওলামায়ে কেরামের জবানে শুনেছি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিচারকার্য, বিবাহ—শাদি, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন কাজই মসজিদে সম্পাদন করতেন। যেখানে দুনিয়াবি কথাও অন্তভুর্ক্ত ছিল। এখন আমার জানার বিষয় হলো, মসজিদে দুনিয়াবি কথা বলা হারাম—এই কথার কোনো সহীহ দলীল আছে কি? বিস্তারিতভাবে জানালে আমরা উপকৃত হব।
উত্তর : মসজিদ কেবল ইবাদত ও দ্বীনি কাজের জন্য নির্মিত ও নির্ধারিত। প্রশ্নে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর যেসব কাজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো দ্বীনেরই অংশ। কেননা সমাজে ইসলামী শাসন ও ন্যায়—ইনসাফ প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করা, সুন্নত মোতাবেক বিয়ে করা̶এগুলো দ্বীনেরই অংশ। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর কাজসমূহের কারণে মসজিদে দুনিয়াবি কাজকর্ম ও কথাবার্তায় শর্তহীন বৈধতা সাব্যস্ত হয় না।
ফুকাহায়ে কেরাম বলেছেন, কেউ যদি কোনো দ্বীনি কাজের উদ্দেশ্যে মসজিদে যাওয়ার পর প্রসঙ্গক্রমে দুনিয়াবি কোনো কথা এমনভাবে বলে, যার কারণে কারও ইবাদতে বিঘ্নতা ঘটে না, তাহলে এর কারণে গোনাহ হবে না। তবে শুধু দুনিয়াবি কথা বলার উদ্দেশ্যে মসজিদে যাওয়া, কিংবা অন্যের ইবাদতে বিঘ্নতা ঘটিয়ে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা অথবা মসজিদে দীর্ঘক্ষণ দুনিয়াবি কথাবার্তায় মশগুল থাকা জায়েয নেই।—সুনানে তিরমিযী : ১০৮৯; হাশিয়াতু ইবনে আবিদীন : ১/৬৬০, ১/৬৬৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৫/৩৭২; আলবাহরুর রায়েক : ২/৬৩; ইমদাদুল ফাতাওয়া : ৬/১০৬—১০৭
জায়েয—নাজায়েয
১৬১২. প্রশ্ন : বেপর্দা মেয়ে বা মহিলাদের জামা, যেমন : হাফ হাতা জামা, টাইট জামা—পাজামা ইত্যাদি বানিয়ে টাকা নিলে সেই টাকা কি হালাল হবে? এটা কি তাদের বেপর্দায় সহযোগিতা বা আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ হবে না? জানালে উপকৃত হব? জাযাকাল্লাহু খায়ের।
উত্তর : বেপর্দা মেয়ে বা মহিলাদের জামা, যেমন : হাফ হাতা জামা, টাইট জামা—পাজামা ইত্যাদি বানানোর দ্বারা গোনাহ তথা বেপর্দায় সহযোগিতা করা হয়। তাই এ কাজ মাকরূহ ও আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টির কারণ হবে এবং এ কাজের দ্বারা অর্জিত উপার্জন মাকরূহ হবে।—সূরা মায়েদা, ৫ : ২; মাজমাউল আনহুর : ৪/১৮৮; আলমুহীতুল বুরহানী : ৮/৬২—৬৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ১৫/১৩১; রদ্দুল মুহতার : ৯/৫৬২; আদ্দুরুল মুখতার : ৯/৫১৮—৫১৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৪/৪৮৬; ফাতাওয়া মাহমূদিয়া : ২৮/৩৬২; কিতাবুন নাওয়াযিল : ১৬/১৭০
শহীদুজ্জামান
ঢাকা
১৬১৬. প্রশ্ন : হযরত আমার চলার পথে মনে হচ্ছে কেউ যেন যাদুটোনা, কুফুরী কালাম, তাবিজ—কবজ করছে। আমার ও আমার আত্মীয়ের অনেকেই শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় পড়ে আছে। আমাদের কাজকর্মে কোনো অগ্রগতি নেই। কোনো বিষয়ের সমাধান করতে গেলে সামনে এমন বিপদ এসে পড়ে, যার ফলে সেই বিষয়ে সমাধান করতে পারি না। বিশেষ করে আমার আম্মা তার পিতা থেকে ওয়ারিশসূত্রে বহু সম্পদের অধিকারী হন। তিনি মারা গিয়েছেন। তার জীবদ্দশায় মামাদের থেকে তার সম্পদ চাইলে গেলে তারা দিতে অস্বীকার করে। আর আমার এক আত্মীয় ফকিরের কাছে বিভিন্ন তদবিরের জন্য যায়। এখন যখন আমরা আমাদের ন্যায্য সম্পদ গ্রহণের জন্য চেষ্টা করছি, আমাদের সামনে বিভিন্ন বাধা এসে পড়ছে। এমনকি আমাদের ব্যক্তিগত কাজেও। তাই আমাদের মনে হচ্ছে তারা আমাদের কোনো যাদু করে রাখছে।
অতএব, হুযুরের কাছে জানার বিষয় হলো, এখন আমরা এইসব অপশক্তির বাধা কাটাবার জন্য সম্পূর্ণ আল্লাহর ওপর ভরসা করে কোনো হুযুরের মাধ্যমে জিনের সাহায্য নিতে পারবে কি না?
উত্তর : মনের দিক দিয়ে মানুষকে শক্ত—সবল হতে হয়। মুমিনকে ঈমান ও ইয়াকিনের সাথে দৃঢ় থাকতে হয়। কোনো ধরনের সন্দেহ ও ধারণাপ্রসূত বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া উচিত নয়। কেননা এগুলো তার ঈমান ও আকিদাকে দুর্বল করে দেয়। সুতরাং তার জন্য কর্তব্য হলো, সব ধরনের সন্দেহ ও ধারণাপ্রসূত বিষয় থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা। কিন্তু যদি বাস্তবেই কেউ যাদুটোনায় আক্রান্ত হয়ে থাকে, তাহলে এর থেকে বাঁচার সর্বোত্তম উপায় হলো নববী সুন্নাহ গ্রহণ করা। ইহুদীরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মারাত্মক যাদু করেছিল। আল্লাহ তাআলা তা থেকে বাঁচার জন্য তাঁকে সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস পড়ার আদেশ করেছেন।
হযরত কাব আহবার রহ. বলেন, আমি যদি এই কালিমাগুলো না পড়তাম তাহলে ইহুদীরা আমাকে গাধা বানিয়ে ফেলত। লোকেরা বলল, সেগুলো কী? তিনি বলেন :
اَعُوْذُ بِوَجْهِ اللهِ الْعَظِيْمِ الَّذِيْ لَيْسَ شَيْءٌ اَعْظَمُ مِنْهُ، وَبِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ الَّتِيْ لَا يُجَاوِزُهُنَّ بَرٌّ وَ لَا فَاجِرٌ، وَ بِاَسْمَاءِ اللهِ الْحُسْنٰى كُـلِّهُا مَا عَلِمْتُ مِنْهُا وَ مَا لَمْ اَعْلَمْ، وَ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ وَ ذَرَأَ وَ بَرَأَ.
তবে যদি কেউ যাদুটোনা কাটাবার জন্য এমন কোনো ব্যক্তির কাছে যায়, যে কুফুরী, শিরকী বা শরীয়তবিরোধী কোনো কিছুর আশ্রয় না নিয়ে তদবির করে তাহলে তা জায়েয হবে। যদি এতে কুফুরী শিরকী বা শরীয়তবিরোধী কোনো কাজ করা হয় তাহলে তা জায়েয হবে না।—মুওয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদীস নং ১৭০৭; আহকামুল কোরআন, থানভী : ১/৩৯; রদ্দুল মুহতার : ৪/২৪১; মাআরেফুল কোরআন : ১/২৭৮; ফাতাওয়া দারুল উলূম যাকারিয়া : ৮/৬৯
বিবিধ
আব্দুল হান্নান
সদর দক্ষিণ, কুমিল্লা
১৬১৩. প্রশ্ন : আমি প্রত্যেক ফরয নামাযের পর পর সুন্নতের আগে নিম্নোক্ত আমলগুলো করে থাকি :
১. একবার আল্লাহু আকবার।
২. তিনবার আস্তাগফিরুল্লাহ।
৩. একবার আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম তাবারাকতা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম।
৪. বেশিরভাগ সময় এক—দেড় মিনিট দীর্ঘ মোনাজাত করি।
৫. ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ ৩৪ বার আল্লাহু আকবার।
৬. একবার আয়াতুল কুরসী।
৭. একবার করে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস।
৮. একবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।
৯. একবার আল্লাহুম্মা লা মানিয়া লিমা আতাইতা ওয়ালা মুতিয়া লিমা মানাতা ওয়ালা ইয়ান ফায়ু যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।
১০. একবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির। লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়ালা নাবুদু ইল্লা ইয়্যাহু, লাহুন নিমাতু ওয়ালাহুল ফাদলু ওয়ালাহুস সানাউল হাসানু, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুখলিসিনা লাহুদ্দিন।
আমার জানার বিষয় হলো, আমার আমলগুলো ঠিক হচ্ছে কি না? সেদিন একজনকে বলতে শুনেছি, যে সকল ফরযের পর সুন্নত রয়েছে ওই সকল ফরযের পর পর এই আমলগুলো করা যাবে না; বরং সুন্নতের পরে করতে হবে। আবার অন্য একজনকে বলতে শুনেছি, ফরযের পর পর সুন্নতের আগেও পড়া যাবে। সঠিকটা জানিয়ে কৃতার্থ করবেন। জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।
উত্তর : হাদীস শরীফে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ফরয নামাযের পর অনেক দুআ বর্ণিত আছে। তবে তিনি প্রত্যেক ফরয নামাযের পর সবগুলো দুআ একসঙ্গে পড়তেন বলে প্রমাণ নেই। বরং বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দুআ পড়তেন। কেউ চাইলে একসঙ্গে সবগুলো দুআও পড়তে পারে। এতে অসুবিধা নেই; বরং সওয়াব হবে। তবে যে ফরয নামাযের পর সুন্নতে মুয়াক্কাদা আছে তাতে ফরয নামাযের পর সুন্নত পড়ার পূর্বে বেশি বিলম্ব না করা উত্তম।
হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাম ফেরাতেন তখন اَللّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَ مِنْكَ السَّلَامُ تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإكْرَامِ এই দুআ পড়া যায় পরিমাণ বসতেন। এরপর দাঁড়িয়ে যেতেন। তাই উত্তম পদ্ধতি হলো, যে ফরয নামাযের পর সুন্নত রয়েছে (যেমন : যোহর, মাগরিব, এশা) তাতে ফরয নামায থেকে ফারেগ হওয়ার পর সংক্ষিপ্ত মাসনূন দুআ পড়ে নেবে। সুন্নত থেকে ফারেগ হওয়ার পর অবশিষ্ট মাসনূন দুআ পড়বে। ইচ্ছে হলে দীর্ঘ মোনাজাত করবে।—সহীহ মুসলিম : ২৬৪/১৩৩৫; মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক : ২/২৪৫; আদ্দুররুল মুখতার : ৩/৪২৪; রদ্দুল মুহতার : ৩/৪২৪; হালবাতুল মুজাল্লা ওয়া বুগয়াতুল মুহতাদী : ২/২২৫; হাশিয়াতুত তাহতাভী : ৩১১; মাআরিফুস সুনান : ৩/১২৭; ফাতাওয়া মাহমূদিয়া : ১২/৩০