ফত্ওয়া জিজ্ঞাসা
তাহারাত—পবিত্রতা
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
১৭২৮. প্রশ্ন : হযরত আমি বালেগ হওয়ার পর থেকেই অসুস্থ। ঘনঘন ইহতেলাম (স্বপ্নদোষ) হয়। কয়েক বছর ধরে পেশাবের রাস্তা দিয়ে হালকা আঠালো পানি সবসময় বের হয়। পরিমাণে খুবই সামান্য, তবে মনে হয় সবসময় বের হয়। কখনো বুঝতে পারি আবার কখনো বুঝতে পারি না। বিশেষ করে নামাযের সময় প্রায় ওয়াক্তেই অনুভব করি। আর আসলেই বের হয়। আমার জানার বিষয় হলো,
ক. আমি কীভাবে নামাযের পবিত্রতা অর্জন করবো?
খ. আমার ইমামতি জায়েয হবে কি না?
সবশেষে দুআর দরখাস্ত।
উত্তর : [ফত্ওয়া নং— ৮২২৫] ক. যদি কোনো এক ওয়াক্ত নামাযের পূর্ণ সময় উক্ত ওজর বিদ্যমান থাকে, মাঝে ওই ওয়াক্তের ফরয নামায পড়া যায় পরিমাণ সময়ও ওজর বন্ধ না হয়, তাহলে আপনি মাজুর সাব্যস্ত হবেন। মাজুর সাব্যস্ত হওয়ার পর পূর্ণ ওয়াক্তে একবারও যদি উক্ত ওজর দেখা দেয় তাহলে মাজুরের বিধান বহাল থাকবে। কোনো ওয়াক্তে যদি একবারও উক্ত ওজর দেখা না দেয় তাহলে মাজুরের বিধান রহিত হয়ে যাবে।
মাজুরের জন্য বিধান হলো, প্রত্যেক ওয়াক্তে নতুন ওযু করা। এক ওয়াক্তের জন্য একবার ওযুই যথেষ্ট হবে। এক ওযু দিয়ে ওয়াক্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত ফরয, ওয়াজিব, নফল সব নামায পড়া যাবে। তবে অন্য কোনো কারণ পাওয়া গেলে ওযু ভেঙে যাবে।
খ. মাজুর (অসুস্থ) ব্যক্তির পিছনে সুস্থ ব্যক্তির ইকতেদা সহীহ হয় না। তাই মাজুরের জন্য ইমামতি করা জায়েয নেই।—ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/৯৫; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাক্বী : ২৮৯; মাজমাউল আনহুর : ১/৮৬; আলবাহরুর রায়েক : ১/৬৩০; ফাতাওয়া মাহমূদিয়া : ১০/২৮৫
নামায
মুহাম্মাদ জুবাইর আরমান
রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ
১৭২৯. প্রশ্ন : যদি কারও জীবনে শুধু ছয় ওয়াক্ত নামায কাযা হয়, আর এই কাযাগুলো আদায় করার পর যদি পরবর্তীতে দুই বা তিন ওয়াক্ত নামায কাযা হয়, তাহলে কি সে পুনরায় সাহেবে তারতীব (صاحب ترتيب) হবে? নাকি সাহেবে তারতীব (صاحب ترتيب) জীবনে একবারই হয়?
উত্তর : [ফত্ওয়া নং— ৮৮২২] এক ব্যক্তি জীবনে বহুবার সাহেবে তারতীব হতে পারে এবং তারতীব রহিতও হতে পারে। যখন জিম্মায় ছয় ওয়াক্ত বা তার চেয়ে বেশি কাযা নামায একত্রিত হবে তখন তারতীব রহিত হয়ে যাবে। আর যখন সব কাযা নামায আদায় করে ফেলবে, কোনো নামাযই বাকি থাকবে না তখন সাহেবে তারতীব হয়ে যাবে।—রদ্দুল মুহতার : ২/৭০; উমদাতুল ফিকহ : ২/২১৬; ফাতাওয়া মাহমূদিয়া : ১১/৪৬১
মুআমালা—লেনদেন
মুহাম্মদ হোসেন
নারিন্দা, ঢাকা
১৭৩০. প্রশ্ন : আমার এক পরিচিত ভাইয়ের সাথে বাড়ি ভাড়া ও লেনদেনের ব্যাপারে একটি চুক্তি করতে চাচ্ছি। চুক্তির ধরণ নিম্নরূপ:
তিনি প্রথমে আমার কাছে টাকা ঋণ চান এ মর্মে যে, আমি তাকে ৫ লক্ষ টাকা ঋণ দিবো তিন বছর বা আরও বেশি সময়ের জন্য। এ কারণে তিনি আমাকে তার বাড়ির একটি ফ্ল্যাট উক্ত সময়ের জন্য মরগেজ হিসেবে প্রদান করবেন। ফ্ল্যাটে আমি চাইলে থাকতে পারবো আবার চাইলে ভাড়া দিতে পারবো। উভয়টিরই সুযোগ আছে। কিন্তু আমি আলেমদের কাছে শুনেছি, এধরণের মরগেজ গ্রহণ জায়েয নেই। তাই তিনি আমাকে তার ফ্ল্যাট ভাড়ার জন্য প্রস্তাব করলে আমি এতে সম্মত হই। আর এতে চুক্তি হয় এভাবে যে, উক্ত ফ্ল্যাটের জন্য অগ্রিম আমি তাকে ৫ লক্ষ টাকা এ্যাডভান্স দিবো। আর এ বাবদে তিনি আমার জন্য বাড়ি ভাড়া কমিয়ে ৫ শত টাকা করে দিবেন। এ ৫ শত টাকা আমি প্রতিমাসে দিবো। আর ৫ লক্ষ টাকার সিকিউরিটি স্বরূপ তিনি আমাকে একটি চেক দিবেন। আমাদের এ চুক্তি একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত বলবত থাকবে। অর্থাৎ পাঁচ বছর বা তিন বছর। মেয়াদ শেষে তার চেক আমি তাকে ফেরত দিবো। আর তিনি আমাকে ৫ লক্ষ টাকা ফেরত দিবেন। তবে আমার যদি কখনো সেই টাকা প্রয়োজন হয় তাহলে আমি তাকে তিন মাস আগে জানাবো। আর তার যদি টাকার ব্যবস্থা হয়ে যায় তাহলে এ চুক্তি ভঙ্গ করার জন্য তিনি তিন মাস আগে আমাকে জানাবে। যাতে কেউই ক্ষতির সম্মুখীন না হয়। হযরতের কাছে এখন জানার বিষয় হলো, আমাদের এ ধরণের চুক্তি শরীয়তসম্মত কি না? যদি শরীয়তসম্মত না হয় তাহলে এর বিকল্প কী হতে পারে?
উত্তর : [ফত্ওয়া নং— ৮২৯৯] ঋণ দিয়ে সুবিধা গ্রহণ করা সুদের অন্তভুর্ক্ত। তাই ঋণ দিয়ে ঋণগ্রহীতা থেকে সুবিধা নেওয়া জায়েয নয়। প্রশ্নোক্ত সুরতে ঋণদাতার জন্য ঋণের বদলায় কম টাকায় বাড়ি ভাড়া বা অন্য কোনোভাবে উক্ত বাড়ি ব্যবহার করা জায়েয হবে না। উল্লিখিত লেনদেন চুক্তি না করে বিকল্প হিসেবে দীর্ঘ মেয়াদি ইজারা চুক্তি করলে তা জায়েয হবে। যেমন : আপনার উক্ত সাথীর যদি ১ লাখ টাকার প্রয়োজন হয়, তাহলে বছর প্রতি ২ হাজার টাকা নির্ধারণ করে ৫০ বছরের জন্য বাড়ি ভাড়া দিয়ে অগ্রিম ভাড়া ১ লাখ টাকা দিবেন। পরবর্তীতে যদি উভয় পক্ষ ইজারাচুক্তি প্রত্যাহার করতে চায় তাহলে এর অবকাশ আছে। সেক্ষেত্রে যে পরিমাণ ইজারা মেয়াদ অতিবাহিত হয়েছে সে মেয়াদের ভাড়া কর্তন করে বাকি টাকা ভাড়াটিয়াকে ফেরত দিলে লেনদেন জায়েয হবে এবং টাকার প্রয়োজনও পূরণ হবে।—সুনানে কুবরা : ৫/৭৪১; আলমাবসূত লিস সারাখসী : ১৪/৩৫; বাদায়েউস সানায়ে : ৬/৫১৮; ফাতাওয়া দারুল উলূম দেওবন্দ : ১৫/২৬৮
এম আর খান
কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা
১৭৩১. প্রশ্ন : মুহতারাম, আমি স্বল্প মূল্যে দুই রুমের একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিই। ফ্ল্যাটের ফ্লোর, ছাদ এবং দেয়াল ব্যতীত অন্য কিছু ছিলো না। আমি তাতে নিজ খরচে প্লাস্টার, রং, টাইলসসহ বসবাসের উপযুক্ত করার জন্য যে সকল সামানের প্রয়োজন সেগুলোর ব্যবস্থা করি। এখন জানার বিষয় হলো, ইজারা চুক্তির মেয়াদান্তে যখন আমি ফ্ল্যাটের মালিককে ফ্ল্যাটটি ফিরিয়ে দিবো তখন কি আমি প্লাস্টার, রং, টাইলসসহ ফ্ল্যাটটি বসবাসের উপযুক্ত করার জন্য নিজ খরচে যে সকল সামানের যোগান দিয়েছি সেগুলোর মূল্য ফ্ল্যাটের মালিক থেকে উসূল করতে পারবো? শরঈ সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর : [ফত্ওয়া নং— ৮০২৩] আপনি যদি ফ্ল্যাটের মালিকের অনুমতি সাপেক্ষে তাতে কাজ করিয়ে থাকেন তাহলে স্থানান্তর অযোগ্য সামান যেমন : প্লাস্টার, রং, টাইলস ইত্যাদির খরচ ফ্ল্যাটের মালিক থেকে উসূল করা আপনার জন্য জায়েয হবে। স্থানান্তরযোগ্য সামান যেমন : পানির মটর, পাখা, এসি, লাইট ইত্যাদি যদি ফ্ল্যাটের মালিক স্বেচ্ছায় কিনে নিতে চায় তাহলে মালিক থেকে এগুলোর মূল্য উসূল করা জায়েয হবে। যদি সে এগুলোর মূল্য দিতে আগ্রহী না হয় তাহলে আপনি সেগুলো খুলে নিয়ে যেতে পারেন। আর যদি বিনা অনুমতিতে করে থাকেন তাহলে মালিক স্বেচ্ছায় এগুলোর মূল্য দিতে রাজি হলেই কেবল তার থেকে তা গ্রহণ করা জায়েয হবে, অন্যথায় জায়েয হবে না।—আদ্দুররুল মুখতার : ৬/৭৪৭; জামিউল ফুসুলাঈন : ২/১৬০; ফাতাওয়া কাসেমিয়া : ২১/৩৩
মুহাম্মাদ জুবাইর আরমান
রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ
১৭৩২. প্রশ্ন : ক. বর্তমানে অনেকে বিভিন্ন ছবি (সড়ারব) থেকে দুই তিন মিনিটের ভিডিও কেটে তা পেজে আপলোড করে। অথবা ভিডিওর সাথে গান সেভ করে পেজে আপলোড করে। কিন্তু নিজের ছবি দেয় না। আমার জানার বিষয় হলো, এসব পেজ থেকে যে টাকা পাওয়া যায় তা খাওয়ার হুকুম কী? আর যদি নিজের ছবি থাকে তাহলে তার হুকুম কী?
খ. যদি এমন কোনো ভিডিও আপলোড করে, যার মধ্যে শুধু দুই হাতের ছবি উঠে। যেমন : কোনো জিনিস বানানো শিখালো অথবা অঁাকা শিখালো তাহলে এখান থেকে যে টাকা পাওয়া যাবে তা খাওয়ার হুকুম কী?
উত্তর : [ফত্ওয়া নং— ৮৯৮২] প্রাণীর ছবি বা নাজায়েয গান—বাজনা সম্বলিত কোনো ভিডিও আপলোড করা জায়েয হবে না। এর মাধ্যমে কোনো কিছু উপার্জন করাও জায়েয হবে না। আর ভিডিও যদি প্রাণীর ছবি সম্বলিত না হয় এবং তাতে নাজায়েয গান—বাজনা না থাকে তাহলে তা আপলোড করা নাজায়েয হবে না। এমনিভাবে কোনো বস্তুর তৈরি বা অংকনে যদি প্রাণীর ছবি অথবা মহিলাদের পর্দাবিহীন অঙ্গ না থাকে তাহলে এমন ভিডিও আপলোড করা নাজায়েয হবে না। তবে এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে হলে যেহেতু এর সঙ্গে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করাতে হয় তাই অর্থ উপার্জন জায়েয হওয়ার জন্য তার সঙ্গে প্রদর্শিত বিজ্ঞাপনও নাজায়েয বিষয়াদি থেকে মুক্ত হতে হবে। বিজ্ঞাপন জায়েয হওয়ার জন্য নিম্নোক্ত শর্তাদি প্রযোজ্য হবে :
১. বিজ্ঞাপনের বিষয়বস্তু জায়েয হওয়া।
২. প্রাণীর ছবি সম্বলিত না হওয়া।
৩. মহিলাদের পর্দাবিহীন অঙ্গ না থাকা।
৪. নাজায়েয গান—বাজনা না থাকা।
বিজ্ঞাপনের ব্যাপারে উল্লিখিত শর্তসমূহ রক্ষা করা সম্ভব না হলে এ পদ্ধতিতে অর্থ উপার্জন থেকে বিরত থাকতে হবে।—আহকামুল কোরআন, মুফতী মুহাম্মদ শফী রহ. : ৩/৭৪; সুনানে তিরমিযী : ১/২৪১; তাকমিলাতু ফাত্হিল মুলহিম : ৪/১৬৪; আদ্দুররুল মুখতার : ৬/৩৬০; রদ্দুল মুহতার : ১/৬৪৭; চান্দ আহাম আস্রী মাসায়েল : ১/২৩৭, ৩৪১; ফাতাওয়া মাহমূদিয়া : ২৯/২৯৯; আপ কে মাসায়েল আওর উন কা হল : ৮/৪৩৫
মো: ফারুক হাওলাদার
পিরোজপুর, বরিশাল
১৭৩৩. প্রশ্ন : আমি একটি জমি ক্রয় করি। আর আমার পিতা তার মালিকানাধীন একটি প্লটের ১০ কাঠা জমি থেকে পাঁচ কাঠা জমি আমাকে দেন। আমি বাড়ি বানানোর সুবিধার্থে নিজের ক্রয়কৃত জমিটি বাবাকে দিয়ে বাবা থেকে প্রাপ্ত জমিটির পার্শ্ববর্তী পাঁচ কাঠা জমি তার থেকে নিয়ে নিই। এখানে আমি বৃক্ষ রোপণ করি। আর আমার দেওয়া জমিটিতে বাবা চাষাবাদ করেন। কিন্তু কেউ নতুন করে নিজের নামে রেজিষ্ট্রি করে নেয়নি। ইতিমধ্যে বাবা ইন্তেকাল করেন। এখন আমি চাচ্ছি আমার পূর্বের জমিটি ফিরিয়ে নিতে। কিন্তু অন্যান্য ওয়ারিসগণ এতে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন। জানার বিষয় হলো, যেহেতু আমার নামে এই জমিটি রেজিষ্ট্রি হয়নি এবং পূর্বের জমিটি এখনো আমার নামে রেজিষ্ট্রিকৃত রয়ে গেছে, তাই শরঈ দৃষ্টিকোণ থেকে আমি কি পূর্বের জমিটি ফিরে পেতে পারি?
উত্তর : [ফত্ওয়া নং— ৮২২৪] আপনি যেহেতু আপনার বাবার সাথে জমি পরিবর্তন করে নিয়েছেন এবং প্রত্যেকে অপরের জমি ভোগ করার পূর্ণ অধিকার লাভ করেছেন তাই পরিবর্তিত নতুন জমিতে প্রত্যেকের মালিকানা সাব্যস্ত হয়ে গেছে। মালিকানা সাব্যস্ত হওয়ার জন্য রেজিষ্ট্রি করা জরুরি নয়। সুতরাং শরঈ দৃষ্টিতে অন্যান্য ওয়ারিসদের সন্তুষ্টি ছাড়া আপনার জন্য পূর্বের জমিটি ফিরে পাওয়ার সুযোগ নেই।—মাজমাউল যাওয়াইদ, হাদীস নং : ৬৮৬৩; ফাতহুল কদীর : ৮/৮৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৩/১৯; কিতাবুন নাওয়াযিল : ১৭/৪৯৬
শরীফুল ইসলাম
ফরিদাবাদ, ঢাকা
১৭৩৪. প্রশ্ন : ব্যবসায়ীরা কোল্ড স্টোরেজে (শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিশাল বড় একটি ঘর) আলু রাখে। কৃষকরা ব্যবসায়ীদের থেকে উদাহরণস্বরূপ ১০০ বস্তা আলুর মূল্য (যেমন : ৪০ হাজার টাকা) ধার নেয়। তারপর কৃষক সেই টাকা দিয়ে ক্ষেতে আলু চাষ করে। পরবর্তী সময়ে যখন আলু গুদামজাত করে তখন কৃষক ব্যবসায়ীকে টাকা না দিয়ে যত বস্তা আলুর টাকা নিয়েছে তত বস্তা আলু দিয়ে দেয়। এখন জানার বিষয় হলো, এটা বাই’য়ে সলম হবে কি না? আর যদি বাই’য়ে সলম না হয় তাহলে এধরনের ব্যবসা জায়েয হবে কি না?
উত্তর : [ফত্ওয়া নং— ৮২২২] অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করে পরবর্তী নির্ধারিত তারিখে পণ্য গ্রহণের চুক্তিকে শরীয়তের পরিভাষায় বাই’য়ে সলম বলা হয়। বাই’য়ে সলম সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত হলো,
১. পণ্য নির্ধারণ করা। যেমন : গম, ধান, আলু ইত্যাদি।
২. উক্ত পণ্যের প্রকার বা ধরণ নির্ধারণ করতে হবে।
৩. মালের গুণাগুণ বর্ণনা করতে হবে। অর্থাৎ উন্নত মানের না মাঝারি ধরণের মাল হবে, শুকনা নাকি শুকানো ছাড়া তার বর্ণনা থাকবে।
৪. পণ্যের পরিমাণ নির্দিষ্ট করতে হবে।
৫. পণ্য হস্তান্তরের সময়কাল নির্ধারণ করতে হবে।
৬. মূল্যের (মোট) পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।
৭. হস্তান্তরের স্থান নির্ধারণ করতে হবে।
৮. পূর্ণ মূল্য অগ্রিম পরিশোধ করতে হবে।
উল্লিখিত শর্তসমূহ পূরণ সাপেক্ষে এধরনের লেনদেন জায়েয হবে। সুতরাং প্রশ্নে বর্ণিত পদ্ধতিতে যদি এসব শর্তসমূহ পাওয়া যায় তাহলে জায়েয হবে। কোনো শর্ত লঙ্ঘন হলে জায়েয হবে না।—সহীহ বুখারী : ২২৪০; হিদায়া : ৫/২২২; বাদায়েউস সানায়ে : ৪/৪৪০; ফাতাওয়া দারুল উলূম দেওবন্দ : ১৪/৪৩৬; কিফায়াতুল মুফতী : ১১/২৮৬
মাওলানা জামশিদ
তেজগাঁও, ঢাকা
১৭৩৫. প্রশ্ন : জনাব, কিছুদিন হলো আমি একটি গাড়ি ক্রয় করেছি। তারপর একজন ড্রাইভারকে এই চুক্তিতে ভাড়া দেই যে, গাড়ি থেকে উপার্জনকৃত টাকা সমানভাবে ভাগ করে নেব এবং গাড়ির যাবতীয় খরচ সমানভাবে বহন করবো। এখন জানার বিষয় হলো, আমাদের এভাবে চুক্তি করা সঠিক হয়েছে কি না? না হলে সঠিক পদ্ধতি কী? জানিয়ে উপকৃত করার জন্য অনুরোধ রইল।
উত্তর : [ফত্ওয়া নং— ৮০৪৬] ইজারা বা ভাড়া চুক্তি সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত হলো, যে বস্তুটি ভাড়া দিবে তার ভাড়ার পরিমাণ নির্ধারিত থাকা এবং তাতে চুক্তিবিরোধী কোনো শর্ত না থাকা। প্রশ্নে বর্ণিত পদ্ধতিতে ভাড়ার পরিমাণ নির্ধারিত করা হয়নি এবং গাড়ির যাবতীয় খরচ বহনে ড্রাইভারকে অংশীদার থাকার শর্ত করা হয়েছে। তাই উল্লিখিত ইজারার পদ্ধতি সহীহ হয়নি। এখানে সঠিক পদ্ধতি হিসাবে নিম্নোক্ত কয়েকটি সুরত হতে পারে :
১. গাড়ি ও গাড়ির উপার্জনকৃত টাকা সম্পূর্ণ মালিকের থাকবে, আর ড্রাইভারকে প্রতিমাসে বেতন হিসাবে নির্ধারিত পরিমাণ টাকা দিবে।
২. ড্রাইভারের কাছে দিন অথবা মাস হিসাবে নির্ধারিত টাকায় গাড়ি ভাড়া দেওয়া হবে এবং গাড়ি থেকে উপার্জনকৃত টাকা সম্পূর্ণরূপে ড্রাইভারের থাকবে।
৩. ড্রাইভারকে গাড়ির মালিকানায় অংশীদার করে নিবে। এবং গাড়ির যাবতীয় খরচ ও তা থেকে উপার্জনকৃত টাকা দুজনের মাঝে আনুপাতিক হারে বন্টন করে নিবে।—ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৪/৪৪১, ৪/৪৭৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৪/৪৮১; আদ্দুররুল মুখতার : ৯/৯; হিদায়া : ২/৬২৯; ফাতাওয়া কাসেমিয়া : ২১/৬১৪
আবু সালেহ ত্বহা
কেরাণীগঞ্জ, ঢাকা
১৭৩৬. প্রশ্ন : হযরত কেউ যদি কারো কাছ থেকে ২ লাখ বা তার চেয়ে বেশি টাকা ধার নেয় এ শর্তে যে, তার অমুক বাড়িটি ঋণদাতার কাছে বন্ধক হিসেবে থাকবে। বাড়ি থেকে যে ভাড়া আসবে তা ঋণদাতা পাবে। যতক্ষণ ঋণ পরিশোধ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত উক্ত বাড়িটি ঋণদাতার কব্জায় থাকবে। আমার জানার বিষয় হলো, উক্ত পদ্ধতিতে ঋণ আদান—প্রদান জায়েয হবে কি না? যদি জায়েয না হয় এর বিকল্প কী সুরত হতে পারে? দলীলসহ জানালে উপকৃত হবো।
উত্তর : [ফত্ওয়া নং— ৮১১৫] ঋণ দিয়ে সুবিধা নেওয়া সুদের অন্তভুর্ক্ত। তাই ঋণ দিয়ে ঋণগ্রহীতা থেকে সুবিধা নেওয়া জায়েয নয়। তাই ঋণদাতার জন্য উক্ত বন্ধকি বাড়ি ভাড়া দিয়ে ভাড়ার টাকা নেওয়া বা অন্য কোনোভাবে এই বাড়ি ব্যবহার করা জায়েয হবে না। উল্লিখিত লেনদেন বন্ধকি চুক্তি না করে বিকল্প হিসেবে দীর্ঘ মেয়াদি ইজারা চুক্তি করলে তা জায়েয হবে। এভাবে যে, তারা অগ্রীম ভাড়ার শর্তে দীর্ঘ মেয়াদী ইজারা (ভাড়া) চুক্তি করবে। যেমন: কারও যদি ১ লাখ টাকার প্রয়োজন হয়, তাহলে বছর প্রতি ২ হাজার টাকা নির্ধারণ করে ৫০ বছরের জন্য বাড়ি ভাড়া দিয়ে অগ্রিম ভাড়া ১ লাখ টাকা নিয়ে নিবে। পরবর্তীতে যদি উভয় পক্ষ ইজারা চুক্তি প্রত্যাহার করতে চায় তাহলে এর অবকাশ আছে। সেক্ষেত্রে যে পরিমাণ ইজারা মেয়াদ অতিবাহিত হয়েছে সে মেয়াদের ভাড়া কর্তন করে বাকি টাকা ভাড়াটিয়াকে ফেরত দিলে লেনদেন জায়েয হবে এবং টাকার প্রয়োজনও পূরণ হবে।—সুনানে কুবরা : ৫/৭৪১; আল—মাবসূত : ১৪/৩৫; বাদায়েউস সানায়ে : ৬/৫১৮; আদ্দুররুল মুখতার (রদ্দুল মুহতারসহ) : ১০/৮৫—৮৬; ফাতাওয়া মাহমূদিয়া : ২৫/১১২; ফাতাওয়া হাক্কানিয়্যাহ : ৬/২৩৪
মসজিদ—মাদরাসা—ওয়াকফ
মুহাম্মাদ আসআদ আলী
বাংলাবাজার, ঢাকা
১৭৩৭. প্রশ্ন : আমাদের এলাকায় একটি মসজিদ ভাঙা হয়েছে নতুন করে নির্মাণ করার জন্য। বর্তমানে মুসল্লীগণ অন্য একটি স্থানে জুমা ও ওয়াক্তিয়া নমাযগুলো আদায় করছেন। এখন জানার বিষয় হলো, জুমার নামায সহীহ হচ্ছে কি না? এবং সমস্যা হবে কি না? বর্তমানে যেখানে জুমাসহ অন্যান্য নামায আদায় করা হচ্ছে পরে সেখানে বসবাস করতে শরঈ দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো সমস্যা হবে কি না?
উত্তর : [ফত্ওয়া নং— ৮১৪০] জুমার নামায সহীহ হওয়ার জন্য মসজিদ শর্ত নয়। বরং জুমার শর্তগুলো পাওয়া গেলে যেকোনো জায়গায় জুমার নামায সহীহ হবে। সুতরাং অস্থায়ী মসজিদেও জুমার নামায সহীহ হবে। বর্তমানে যেখানে নামায আদায় করা হচ্ছে সে জায়গার মালিক যদি তা মসজিদের জন্য ওয়াকফ না করে থাকে তাহলে তা ‘শরঈ মসজিদ’ গণ্য হবে না এবং শরঈ মসজিদের বিধিবিধানও এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। এ জায়গা সাধারণ ভূমি, বাগান ইত্যাদির মতোই। সুতরাং পরবর্তীতে উক্ত স্থান যেকোনো কাজে ব্যবহার করতে শরঈ দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো সমস্যা নেই।—রদ্দুল মুহতার (আদ্দুররুল মুখতারসহ) : ২/১৪৪, ৪/৩৫৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ২/৫৪৮; তাবয়ীনুল হাকায়িক : ১/৫২৫; ফাতাওয়া মাহমূদিয়া : ১২/৩২৫; ফাতাওয়া মাহমূদিয়া : ২১/২৫০
ইতেকাফ
মাও. রহমতুল্লাহ
কুমিল্লা
১৭৩৮. প্রশ্ন : রমযানের শেষ ১০ দিনের কোনো এক দিনের ইতেকাফ যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে পরে কাযা করতে হবে কি না? এবং কোনো এক দিনের ইতেকাফ নষ্ট হয়ে গেলে রমযানের শেষ দশকের সুন্নতে মুয়াক্কাদা আদায় হবে কি না?
উত্তর : [ফত্ওয়া নং— ৮২২৮] রমযানের শেষ ১০ দিনের কোনো এক দিনের ইতেকাফ নষ্ট হয়ে গেলে পরে ঐ দিনের ইতেকাফ রোযাসহ কাযা করে নিতে হবে। যেহেতু পূর্ণ ১০ দিন ইতেকাফ করা সুন্নত, তাই কোনো দিনের ইতেকাফ নষ্ট হয়ে গেলে এতে রমযানের শেষ দশকের সুন্নতে মুয়াক্কাদা আদায় হবে না, তবে নফল ইতেকাফ বলে গণ্য হবে।—রদ্দুল মুহতার : ২/৪৪৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ৩/৪৪৭; ইমদাদুল ফাতাওয়া : ৪/৩০৫; ফাতাওয়া মাহমূদিয়া : ১৫/২৫৮; ফাতাওয়া রহীমিয়া : ৭/২৭৫
জানাযা—কাফন—দাফন
মুহাম্মদ রাহাত
যাত্রাবাড়ী, ঢাকা
১৭৩৯. প্রশ্ন : আমাদের এলাকায় মৃত ব্যক্তির জানাযার নামাযের পর তাকে জানাযার স্থান থেকে চারজন খাটের চার মাথায় ধরে গুণে গুণে ৪০ কদম নিয়ে যায়। প্রতি ১০ কদম পর হাত পরিবর্তন করে, এভাবে ৪০ কদম পুরা করে। এরপর স্বাভাবিকভাবে নিয়ে যায়। আবার অনেক সময় দেখা যায় যে, পরিবর্তন করা ব্যতীত চারজন খাটের চার মাথায় ধরে লাগাতার ৪০ কদম নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে শরীয়তের সঠিক সমাধান জানালে উপকৃত হব।
উত্তর : [ফত্ওয়া নং— ৮২২৭] জানাযার খাটিয়া বহন করার সময় ৪০ কদম চলা মুস্তাহাব এবং ফযীলতের কাজ। হাদীস শরীফে আছে, যে ব্যক্তি ৪০ কদম জানাযার খাটিয়া বহন করবে তার ৪০ টি কবীরা গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। ফিকহের কিতাবে বর্ণিত খাটিয়া বহন করার পদ্ধতি নিম্নরূপ :
বহনকারী ব্যক্তি প্রথমে মৃত ব্যক্তির সামনের ডান দিকটি নিজের ডান কাঁধে রেখে ১০ কদম চলবে। ফলে বহনকারীর ডান দিক মৃত ব্যক্তিরও ডান দিক হবে। অতঃপর পিছনের ডান দিকটি নিজের ডান কাধে নিয়ে ১০ কদম চলবে। অতঃপর মৃত ব্যক্তির সামনের বাম দিকটি বহনকারী নিজের বাম কাঁধে রেখে ১০ কদম চলবে। অতঃপর পিছনের বাম দিকটি নিজের বাম কাঁধের উপর রেখে ১০ কদম চলবে। এভাবে ৪০ কদম পূর্ণ করবে। উল্লেখ্য, এই পদ্ধতিতে ৪০ কদম চলা শুধুমাত্র একজনের জন্য মুস্তহাব হবে। চার জন ব্যক্তি প্রত্যেকে খাটিয়ার চার পা ধরে লাগাতার ৪০ কদম চললেও ক্ষতি নেই। মুস্তাহাব বিষয়কে জরুরি মনে করা ঠিক নয়।—কানযুল উম্মাল : ১৫/২৫৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/২২৩; রদ্দুল মুহতার : ২/২৩০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ৩/৩৪; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাক্বী : ৬০৪; ইমদাদুল ফাতাওয়া : ৩/৩৪৫; ফাতাওয়া দারুল উলূম দেওবন্দ : ৫/২৭৫
জায়েয—নাজায়েয
মো: নোমান
খুলনা
১৭৪০. প্রশ্ন : আমাদের এলাকায় এক লোক সৎ শাশুড়িকে বিয়ে করে। লোকেরা একে খারাপ ভাবতে লাগল এবং বলাবলি করতে থাকে, এই বিয়ে হয়নি। মুফতী সাহেবের নিকট আমার জানার বিষয় হলো, সৎ শাশুড়িকে বা সৎ শাশুড়ির মাকে বিয়ে করা জায়েয আছে কি না?
উত্তর : [ফত্ওয়া নং— ৮২৬৯] সৎ শাশুড়ি বা সৎ শাশুড়ির মাকে বিয়ে করা জায়েয আছে। কেননা, সৎ শাশুড়ি বা সৎ শাশুড়ির মা মাহরাম নয়।—সহীহ বুখারী : ২/৩৩৩; আদ্দুররুল মুখতার : ৪/১২৩; মাজমাউল আনহুর : ১/৪৭৯; ফাতাওয়া দারুল উলূম দেওবন্দ : ৭/৪৪০; ফাতাওয়া মাহমূদিয়া : ১৬/৩৯৯
১৭৪১. প্রশ্ন : ক্রিকেট ও ফুটবল খেলার শরঈ বিধান কী?
উত্তর : [ফত্ওয়া নং— ৮০২৩] খেলাধুলা জায়েয—নাজায়েয হওয়ার ব্যাপারে কিছু মূলনীতি এবং শর্ত নিম্নে হুকুমসহ উল্লেখ করা হলো:
০১. যে সকল খেলাধুলার ব্যাপারে হাদীস এবং আছারে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা এসেছে সে সকল খেলাধুলা হারাম এবং নাজায়েয।
০২. যে সকল খেলাধুলায় গোনাহের সংমিশ্রণ কিংবা শরীয়ত বহিভূর্ত কোনো কাজ বা বিষয় পাওয়া যায়, সে সকল খেলাধুলাও নাজায়েয। যেমন: খেলার সময় সতরের কোনো অংশ খোলা রাখা, অথবা খেলার মধ্যে জুয়া বা বাজি ধরা কিংবা খেলার মধ্যে গান—বাজনার আয়োজন করা, পুরুষ—মহিলার একসাথে সংমিশ্রণ হওয়া, খেলার মধ্যে কাফের—মুশরিকদের কোনো সংস্কৃতির অনুসরণ করা ইত্যাদি ইত্যাদি।
০৩. যে সকল খেলা শরীয়তের কোনো ফরয বা ওয়াজিব বিধান কিংবা কোনো ওয়াজিব হক আদায় করা থেকে উদাসীন করে দেয়, সে সকল খেলাও নাজায়েয।
০৪. যে সকল খেলাধুলা নিজের কিংবা অন্যের কষ্টের কারণ হয়, অথবা তাতে শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে, সে সকল খেলাধুলাও নাজায়েয।
০৫. পুরুষের জন্য মহিলা স্টাইলের খেলা এবং মহিলার জন্য পুরুষ স্টাইলের খেলা মাকরুহ।
০৬. কিছু খেলা আছে যেগুলো হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এবং হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেগুলোর প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছেন। এ ধরনের খেলাধুলা মুস্তাহাব। যেমন: দৌড় খেলা, তীর ছোড়া এবং ঘোড়া দৌড়ানো ইত্যাদি ।
সুতরাং যে সকল খেলাধুলায় উল্লিখিত মন্দ বা নিষিদ্ধ বিষয়গুলো না থাকে এবং সেগুলোতে শরীর চর্চা ও ব্যায়াম হয় এবং শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য তা উপকারী হয়, সে সকল খেলাধুলা জায়েয, কোনো কোনো সময় তা মুস্তাহাবও হয়। অতএব উল্লিখিত শর্তগুলোকে পরিপূর্ণভাবে রক্ষা করে শরীর চর্চা কিংবা মনের অবসাদ দূর করার উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগত পর্যায়ে বাজি ছাড়া ক্রিকেট বা ফুটবল খেলা জায়েয হবে।—ফায়যুল ক্বাদীর : ৪/৫৩—৫৪; তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম : ৪/৪৩৪—৪৩৬; ফাতাওয়া মাহমূদিয়া : ১৯/৫৩৩; ফাতাওয়া দারুল উলূম দেওবন্দ : ১৬/২৮৮; কিফায়াতুল মুফতী : ১৩/১০৩
মুহা. ইয়াসিন আহমদ
নবাবগঞ্জ, ঢাকা
১৭৪২. প্রশ্ন : আমি একবার কবরস্থানে গিয়ে কোরআন শরীফ দেখে দেখে তেলাওয়াত করছিলাম তখন একজন আহলে হাদীস আলেম বললেন, কবরস্থানে দেখে দেখে কোরআন পড়া কোথায় পেয়েছ? এটা জায়েয নেই। মুহতারাম মুফতী সাহেবের কাছে আমার জানার বিষয় হলো, কবরস্থানে গিয়ে দেখে বা মুখস্থ কোরআন তিলাওয়াত করা জায়েয আছে কি না?
উত্তর : [ফত্ওয়া নং— ৮০৯১] কবরস্থানে দেখে বা মুখস্থ উভয় পদ্ধতিতে কোরআন তিলাওয়াত জায়েয আছে। তবে কোরআন শরীফ না নিয়ে মুখস্থ তিলাওয়াত করা উত্তম। হ্যাঁ, যদি সেখানে বসার জন্য বা নামাযের জন্য আলাদা কোনো জায়গা থাকে তাহলে সেখানে বসে দেখে দেখে তিলাওয়াত করবে, যাতে কোরআনের পূর্ণ আদব রক্ষা হয়।—মিশকাতুল মাসাবীহ : ১৪৯; শারহুস সুদুর : ৩৮৩; মারাকিউল ফালাহ : ৬২২; আল—ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু : ২/৫৪২; ফাতাওয়া মাহমূদিয়া : ১৩/৩৭০, ৪০২
মুহাম্মদ তরিকুল ইসলাম
ফরিদাবাদ, ঢাকা
১৭৪৩. প্রশ্ন : কারও মুখে যদি দাড়ি কম থাকে অর্থাৎ থুতনিতে দাড়ি আছে কিন্তু চোয়ালে দাড়ি খুবই কম (এক দুইটা)। এ ক্ষেত্রে চোয়ালের দাড়ি সেভ করা জায়েয আছে কি?
উত্তর : [ফত্ওয়া নং— ৮১০৫] দাড়ি উঠানোর জন্য কোনো কৃত্রিম উপায় অবলম্বনের প্রয়োজন নেই। এতদসত্ত্বেও কারও গালে যদি একেবারেই দাড়ি না থাকে কিংবা কোনো স্থানে থাকে আর কোনো স্থান সম্পূর্ণ খালি থাকে তাহলে খালি জায়গায় দাড়ি উঠানোর জন্য খুর ইত্যাদি ব্যবহার করাতে গোনাহ হবে না। তবে গালের যে অংশে সামান্য পরিমাণে হলেও দাড়ি উঠেছে তাতে দাড়ি বাড়ানোর জন্য সেভ করা কোনোভাবেই জায়েয হবে না।—সহীহ বুখারী : ৫৮৯২; আদ্দুররুল মুখতার (রদ্দুল মুহতারসহ) ৬/৪০৭, ২/২১৮; ফাতাওয়া রহীমিয়া : ১০/১১৬; ফাতাওয়া মাহমূদিয়া : ২৭/৪৯৯
বিবিধ
শরীফুল ইসলাম
ফরিদাবাদ, ঢাকা
১৭৪৪. প্রশ্ন : আমরা তিন ভাই। এক ভাই মারা গেছেন। আমার পিতা আমাদের দুই ভাইয়ের আকীকা দিতে পারেননি। আমার জানার বিষয় হলো :
ক. এখন যদি আমাদের আকীকা দেয় তাহলে হবে কি না?
খ. মৃত ভাইয়ের আকিকা দিতে হবে কি না?
উত্তর : [ফত্ওয়া নং— ৮২২১] ক. জন্মের সপ্তম দিন আকীকা করা উত্তম। যদি সপ্তম দিনে না করতে পারে তাহলে চৌদ্দতম দিনে, না হয় একুশতম দিনে, অর্থাৎ সপ্তাহের যেই দিনে জন্মগ্রহণ করেছে তার আগের দিনে আকীকা করবে। শিশু অবস্থায় কারও আকীকা না দেওয়া হলে, বড় হওয়ার পরেও আকীকা দেওয়ার অবকাশ আছে। অতএব, এখন আপনাদের আকীকা দিলে আদায় হবে।—সুনানে তিরমিযী : ১/২৭৮; রদ্দুল মুহতার : ৯/৪৮৫; ফাতাওয়া মাহমূদিয়া : ২৬/৪১৮; ফাতাওয়া দারুল উলূম দেওবন্দ : ১৫/৬০৭; আহসানুল ফাতাওয়া : ৭/৫৩৬
খ. সন্তান জীবিত থাকাবস্থায় আকীকা করা মুস্তাহাব। সন্তানের মৃত্যুর পর আকীকা করা শরীয়তে প্রমাণিত নয়।—ফায়যুল বারী : ৫/৬৪৮; ফাতাওয়া দারুল উলূম যাকারিয়া : ৬/৪৮৭; আহসানুল ফাতাওয়া : ৭/৫৩৬