ফত্ওয়া জিজ্ঞাসা
নামায
আব্দুল মুমিন
গওহরডাঙ্গা, গোপালগঞ্জ
১৪৩৬. প্রশ্ন : ক. কখনো কখনো মাসবুক ব্যক্তি ইমামকে প্রথম বৈঠকে তিন তাসবীহ বা তার চেয়ে কম সময় পরিমাণ পায়। আমার জানার বিষয় হলো, ওই অল্প সময়টুকুতে মাসবুক ব্যক্তি কী করবে বা কী পড়বে? নাকি কোনো কিছুই করতে বা পড়তে হবে না, চুপ থাকবে? সে কি ইমামের অনুসরণ হিসেবে আত্তাহিয়্যাতু পড়বে নাকি পড়বে না? যদি সে ইমামের অনুসরণ হিসেবে আত্তাহিয়্যাতু পড়া শুরু করে আর ইমাম সাহেব তার আত্তাহিয়্যাতু শেষ হওয়ার পূর্বেই তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যায় তাহলে সে কি ওই আত্তাহিয়্যাতু পূর্ণ করে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াবে নাকি ইমামের তৃতীয় রাকাতে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেও আত্তাহিয়্যাতুর বাকি অংশ ছেড়ে দিয়ে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যাবে?
খ. কখনো কখনো মাসবুক ব্যক্তি ইমামকে শেষ বৈঠকে তিন তাসবীহ বা তার চেয়ে কম সময় পরিমাণ পায়। আমার জানার বিষয় হলো, ওই অল্প সময়টুকুতে মাসবুক ব্যক্তি কী করবে বা কী পড়বে? নাকি কোনো কিছুই করতে বা পড়তে হবে না, চুপ করে থাকবে? অতঃপর ইমামের ডানে—বামে সালাম ফেরানোর পর বাকি নামায আদায় করবে। সে কি ইমামের অনুসরণ হিসেবে আত্তাহিয়্যাতু পড়া শুরু করবে? নাকি আত্তাহিয়্যাতু পড়বে না? যদি সে ইমামের অনুসরণ হিসেবে আত্তাহিয়্যাতু পড়া শুরু করে আর ইমাম সাহেব তার আত্তাহিয়্যাতু শেষ হওয়ার পূর্বেই সালাম ফিরিয়ে ফেলে তাহলে সে কি ওই আত্তাহিয়্যাতু পূর্ণ করে বাকি নামায আদায় করতে দাঁড়াবে নাকি ইমামের উভয় দিকে সালাম ফেরানোর পর সেও আত্তাহিয়্যাতুর বাকি অংশ ছেড়ে দিয়ে বাকি নামায আদায়ের জন্য দাঁড়াবে? দয়া করে সহজভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
উত্তর : ক. যদি মাসবুক প্রথম বৈঠকে ইমামের সাথে নামাযে শরিক হয় তাহলে সে আত্তাহিয়্যাতু পড়বে (চাই সময় তিন তাসবীহ সমপরিমাণ বা তার চেয়ে কম হোক)। তার আত্তাহিয়্যাতু শেষ হওয়ার পূর্বেই ইমাম তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে গেলে সে প্রথমে আত্তাহিয়্যাতু পূর্ণ করবে। অতঃপর তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াবে।
খ. যদি মাসবুক শেষ বৈঠকে ইমামের সাথে নামাযে শরিক হয় তাহলে সেও আত্তাহিয়্যাতু পড়বে (চাই সময় তিন তাসবীহ সমপরিমাণ বা তার চেয়ে কম হোক)। তার আত্তাহিয়্যাতু শেষ হওয়ার পূর্বেই ইমাম সালাম ফিরিয়ে ফেললে সে প্রথমে আত্তাহিয়্যাতু পূর্ণ করবে। অতঃপর বাকি নামায আদায়ের জন্য দাঁড়াবে।—ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১৪৭; ফাতাওয়া কাজীখান : ১/৬২; আদ্দুররুল মুখতার (রদ্দুল মুহতারসহ) : ২/২৪৪; ইমদাদুল ফাতাওয়া : ২/৩৯২, ৩৯৩—৩৯৪
মুহাম্মদ আযিয নাঈম
১৪৩৭. প্রশ্ন : আমরা জানি, জুমার নামায সহীহ হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো আমির বা তার প্রতিনিধি উপস্থিত থাকা। বর্তমানে আমির বা সরকার বলতে আমরা শেখ হাসিনাকে বুঝি। আর তার প্রতিনিধি বলতে স্থানীয় চেয়ারম্যান বা মেম্বারকে বুঝে থাকি। অতএব আমার জানার বিষয় হচ্ছে, বর্তমান সরকার বা তার প্রতিনিধির পেছনে আমার জুমার নামায হবে কি না?
উত্তর : সরকারপ্রধান বা তার প্রতিনিধি ইমাম হওয়ার যোগ্য হলে তার পেছনে নামায সহীহ হবে। ইমাম হওয়ার যোগ্য না হলে তথা ইমাম হওয়ার জন্য যেসব শর্ত রয়েছে সেগুলো না পাওয়া গেলে তার পেছনে নামায হবে না।
উল্লেখ্য, ফিকহের কিতাবে জুমার নামায সহীহ হওয়ার জন্য সুলতান বা তার প্রতিনিধি উপস্থিত থাকার যে শর্ত করা হয়েছে, এর অর্থ এটা নয় যে, তারাই ইমামতি করতে হবে। বরং এর অর্থ হচ্ছে, তাদের অনুমতিতে জুমার জামাত অনুষ্ঠিত হওয়া। আর জুমার নামায সহীহ হওয়ার জন্য সুলতান বা তার প্রতিনিধি উপস্থিত থাকা মৌলিক কোনো শর্ত নয়। বরং জুমার নামাযে মানুষ বেশি হওয়ায় ইমাম নিয়োগের ক্ষেত্রে ঝগড়া—বিবাদ হওয়ার আশঙ্কায় এই শর্ত আরোপ করা হয়েছে। তাই ফুকাহায়ে কেরাম বলেছেন, মুসল্লীগণ একমত হয়ে কোনো ইমাম নিযুক্ত করলে সুলতান বা তার প্রতিনিধির উপস্থিতি ছাড়াই জুমার নামায সহীহ হয়ে যাবে। অতএব বর্তমানে আমাদের দেশে সুলতান বা তার প্রতিনিধি উপস্থিত থাকা জুমার নামায সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত নয়।—ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/২০৬; বাদায়েউস সানায়ে : ১/৫৮৭; ইমদাদুল ফাতাওয়া : ৩/২০; কিফায়াতুল মুফতী : ৫/১১৫
মুহা. মুহিব্বুল্লাহ
পিরোজপুর
১৪৩৮. প্রশ্ন : ক. তোষক বা ফোমজাতীয় বিছানার উপর নামায পড়া ও তার উপর সেজদা করার কী হুকুম?
খ. জনৈক ব্যক্তি ছোট জায়নামায বিছিয়ে নামায পড়েন। স্বাভাবিকভাবে সেজদা করলে কপাল জায়নামাযের বাইরে পড়ে। কপালে যেন দাগ না পড়ে এ উদ্দেশ্যে নিজে একটু সংকুচিত হয়ে জায়নামাযে সেজদা করেন। এভাবে সেজদা করার হুকুম কী? বিস্তারিত জানিয়ে উপকৃত করবেন।
উত্তর : ক. নরম বিছানা যেমন : তোষক, ফোম ইত্যাদির উপর নামায সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত হলো, সেজদার সময় উক্ত বিছানায় এমনভাবে কপাল স্থির হওয়া যে কপাল এর চেয়ে নিচে নেওয়া যায় না। এভাবে কপাল স্থির হলে নামায সহীহ হবে। অন্যথায় সহীহ হবে না।
খ. কপালে দাগ না পড়ার উদ্দেশ্যে নামাযী ব্যক্তি একটু সংকুচিত হয়ে জায়নামাযে সেজদা করলে নামায হয়ে যাবে। এভাবে সেজদা করার দ্বারা যদি সেজদার সব সুন্নত আদায় হয়, তাহলে কোনো সমস্যা হবে না। সব সুন্নত আদায় না হলে সুন্নত ছুটে যাওয়ার কারণে সওয়াব কম হবে।—মাজমাউয যাওয়াইদ : ৪/৪২১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১২৭; তাবয়ীনুল হাক্বায়িক : ১/৩০৫—৩০৬; ফাতাওয়া হাক্কানিয়্যাহ : ৩/২১১
মাওলানা জালালুদ্দীন
মদনপুর, সোনারগাঁও
১৪৩৯. প্রশ্ন : একজন মাসবুক মুসল্লী ভুলবশত ইমামের সাথে সালাম ফিরিয়ে ফেলে। অতঃপর স্মরণ হওয়ামাত্র ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ বলে। জানার বিষয় হলো এমতাবস্থায় তার করণীয় কী?
উত্তর : ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ বলার দ্বারা তার নামায ভেঙে যায়নি। স্মরণ হওয়ামাত্র দাঁড়িয়ে বাকি নামায পড়ে নেবে এবং শেষে সাহু সেজদা করবে।—রদ্দুল মুহতার : ২/৪৫৫, ৪২২; আলবাহরুর রায়েক : ২/১৭৬; ফাতাওয়া দারুল উলূম দেওবন্দ : ৩/৪৪১
জানাযা—দাফন—কাফন
মুহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক
গেন্ডারিয়া, ঢাকা
১৪৪০. প্রশ্ন : আমাদের সমাজে বিভিন্ন ব্যক্তির, বিশেষ করে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের একাধিক জানাযা হতে দেখা যায়। বিষয়টি শরীয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু গ্রহণযোগ্য, জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর : মৃত ব্যক্তির অভিভাবক জানাযা পড়ে ফেললে বা তার সম্মতিতে একবার জানাযার নামায অনুষ্ঠিত হয়ে গেলে পরবর্তী সময়ে কারও জন্য পুনরায় এই মাইয়্যেতের জানাযার নামায পড়া জায়েয নেই। এজন্যেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দেহ মোবারক রওজায়ে আতহারে অক্ষত থাকা সত্ত্বেও সেখানে জানাযা পড়ার প্রচলন নেই। অথচ তা শরীয়তসম্মত হলে সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীনসহ সর্বযুগের মানুষ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জানাযার নামায পড়ার সৌভাগ্য অর্জন করতো। এমনিভাবে খোলাফায়ে রাশেদীনসহ বড় বড় সাহাবায়ে কেরামের ইন্তেকালের পর একাধিক জানাযা অনুষ্ঠিত হয়নি। এর কারণ হলো, শরীয়তে যে বিধান যেভাবে বিধিবদ্ধ হয়েছে সেভাবেই তা পালন করা আবশ্যক। তাতে সংযোজন—বিয়োজন করার অবকাশ নেই। জানাযার নামায ফরজে কেফায়া হিসেবে বিধিবদ্ধ। মৃত ব্যক্তির অভিভাবকের উপস্থিতিতে জানাযার নামায পড়া হলে ফরয আদায় হয়ে যায়। এরপর পুনরায় পড়া হলে তা নফল হবে। অথচ নফল হিসেবে জানাযার নামায পড়া শরীয়তে জায়েয নেই।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. জানাযার নামায শেষ হয়ে যাওয়ার পর উপস্থিত হলে দুআ করে চলে যেতেন, দ্বিতীয় বার জানাযার নামায পড়তেন না।—মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস নং : ৬৫৪৫
হযরত হাসান বসরী রহ. সম্পর্কেও অনুরূপ বর্ণিত আছে। মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং : ১২০৭১
বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত ইবরাহীম নাখায়ী রহ. বলেন, মৃত ব্যক্তির জানাযা দু—বার পড়া যায় না।—মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস নং : ৬৫৪৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং : ১২০৭০
তা ছাড়া হাদীস শরীফে মৃত ব্যক্তিকে তাড়াতাড়ি দাফন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একাধিক জানাযার কারণে সে নির্দেশ লঙ্ঘিত হয়।
তবে যদি অভিভাবকের অনুপস্থিতিতে কিংবা তার অসম্মতিতে কেউ জানাযা পড়ে ফেলে তাহলে অভিভাবকের জন্য পুনরায় জানাযার নামায পড়া জায়েয আছে।
—কিতাবুল আসল : ১/৩৫২; মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মাদ : ১৭১; আততাজরীদ : ৩/১১২০; শরহে মুখতাছারুত তহাভী : ২/২১৮; আলহিদায়া : ১/১৮০; বাদায়েউস সানায়ে : ২/৪৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/২২৫; ইমদাদুল আহকাম : ১/৮২৭; ফাতাওয়া দারুল উলূম দেওবন্দ : ৫/২৮৯
ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল আলীম
সিরাজগঞ্জ
১৪৪১. প্রশ্ন : জনাব আমাদের এলাকায় একটি বড় কবরস্থান আছে। সেই কবরস্থানটি ঘাস ও গাছপালা দিয়ে ভরপুর। এই ঘাস ও গাছপালা যদি একজন লোক দ্বারা পরিষ্কার করি, এতে অনেক টাকা খরচ হয়। তাই কবরস্থান কমিটি চাচ্ছে, ঔষধ দ্বারা এই ঘাস ও গাছপালা পরিষ্কার করতে। এখন জানার বিষয় হলো, ঔষধ দ্বারা এই ঘাস ও গাছপালা পরিষ্কার করা জায়েয আছে কি না?
উত্তর : কবরস্থ মৃত ব্যক্তিদের শরীর মাটিতে মিশে যাওয়ার আগে কবরের উপরের অংশের ও তার আশপাশের তাজা ঘাস ও গাছপালা কেটে ফেলা মাকরুহ। এ ছাড়া বাকি ঘাস ও গাছপালা কেটে ফেলা বা ঔষধ দ্বারা পরিষ্কার করা জায়েয আছে।—রদ্দুল মুহতার : ২/২৪৫, ২৩৩; তাহতাভী আলাল মারাকী : ৬২৩; কিতাবুন নাওয়াযিল : ১৪/২৯৯
যাকাত
হাফেজ আশীকুর রহমান
১৪৪২. প্রশ্ন : আমার দুই বোন আর্থিকভাবে অনেক দুর্বল। তাই আমি ও আমার দুই ভাই মিলে আমাদের যাকাতের টাকা থেকে বেশ কিছু টাকা আমার নিকট রেখে দেই, যাতে বিপদাপদে বোনদের প্রয়োজন পূরণ হয়। উল্লেখ্য, বোনদের জানানো হয়েছে যে, তোমাদের কিছু টাকা আমার কাছে রয়েছে। এখন আমার জানার বিষয় হলো, আমাদের কাজটি ঠিক হয়েছে কি না? এ পদ্ধতি অবলম্বনের কারণে আমাদের যাকাত আদায়ে কোনো সমস্যা হবে কি না?
উত্তর : যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে মূল বিধান হলো, যে পরিমাণ যাকাত ওয়াজিব হয়েছে বছরান্তে তা আদায়ে করে দেবে। কিন্তু কেউ যদি বিশেষ কোনো কারণে বিলম্ব করে তাহলে তারও অবকাশ আছে। সুতরাং প্রশ্নে বর্ণিত বিবরণ অনুযায়ী অসহায় বোনদের প্রয়োজন পূরণার্থে আপনাদের পক্ষ থেকে ধার্যকৃত যাকাতের টাকা আপনার কাছে রেখে দেওয়ার অবকাশ আছে। তবে আপনাদের যাকাত তখনই আদায় হবে যখন উক্ত টাকা যথাযথভাবে বোনদের আদায় করে দেবেন।—বাদায়েউস সানায়ে : ২/৭৭; আলমুহীতুল বুরহানী : ৩/২১৪; কিতাবুন নাওয়াযিল : ৬/৫৭৪
সালমান সাদী
ঢাকা
১৪৪৩. প্রশ্ন : আমার এক পরিচিত ব্যক্তি গত বছরের যাকাত আদায় করেনি। এ বছর একসঙ্গে দুই বছরের যাকাত আদায় করবে। ইতোমধ্যে যাকাতযোগ্য সম্পদের দাম কমে গেছে। জানার বিষয় হচ্ছে, সে গত বছরের মূল্যে যাকাত আদায় করবে নাকি বর্তমান মূল্যে?
উত্তর : যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে ধর্তব্য হলো, আদায়ের সময়ের মূল্য। তাই প্রশ্নোক্ত অবস্থায় বর্তমান মূল্যে যাকাত আদায় করতে হবে।—আদ্দুররুল মুখতার (রদ্দুল মুহতারসহ) : ৩/২৫০—২৫১; বাদায়েউস সানায়ে : ২/১১১; ফাতাওয়া দারুল উলূম দেওবন্দ : ৬/১৪১; ফাতাওয়া মুফতী মাহমুদ : ৩/২৩৮
১৪৪৪. প্রশ্ন : কোনো মাকতাবার মালিক যদি নিজের যাকাত এভাবে আদায় করে, যে ব্যক্তি তার কাছ থেকে কিতাব কিনছে, তার অবস্থা বুঝে যাকাত আদায়ের নিয়তে তার কাছ থেকে ক্রয়কৃত কিতাবের মূল্য থেকে কিছু টাকা কম রাখে, তাহলে কি তার যাকাত আদায় হবে?
উত্তর : প্রশ্নোক্ত বিবরণে কিতাব বিক্রেতা যাকাতের নিয়তে ক্রেতা থেকে কিতাবের মূল্য কম রাখার মাধ্যমে যাকাত আদায়ের যে পন্থাটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, উক্ত পন্থায় যাকাত দিলে তা যাকাত আদায় হবে না।
তবে কোনো মাকতাবার মালিক চাইলে এভাবে যাকাত দিতে পারেন, তিনি যদি কোনো ক্রেতা সম্পর্কে নিশ্চিত হন যে সে যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত, তাহলে তিনি যাকাতের নিয়তে তাকে কিছু টাকা দিয়ে দেবেন, যা দিয়ে সে কিতাবের মূল্য পরিশোধ করতে পারে। অথবা এভাবেও দিতে পারেন যে, তিনি উক্ত ক্রেতা থেকে কিতাবের যথাযথ মূল্য নিয়ে নেবেন, অতঃপর যাকাতের নিয়তে তাকে কিছু টাকা ফিরিয়ে দেবেন।—ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৬/৩৯৪; আদ্দুররুল মুখতার (রদ্দুল মুহতারসহ) : ৩/২২৬; ফাতাওয়া মাহমূদিয়া : ১৪/১৬৯
হজ
মোসা. পারভীন সুলতানা
মিরপুর, ঢাকা
১৪৪৫. প্রশ্ন : হজ করতে গিয়ে যদি কোনো মহিলার মাসিক হয়ে যায় তাহলে তার করণীয় কী? সে কীভাবে হজ করবে?
উত্তর : হজ করতে গিয়ে হজের দিনগুলোতে যদি কোনো মহিলার মাসিক হয়ে যায় তাহলে সে তাওয়াফ ব্যতীত হজের অন্যান্য আমল এ অবস্থায়ই আদায় করবে। পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাওয়াফ থেকে এবং মসজিদে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকবে। পবিত্র হওয়ার পর তাওয়াফে যিয়ারত করে নেবে। এই বিলম্ব হওয়ার কারণে কোনো দম তথা ক্ষতিপূরণমূলক কুরবানী ওয়াজিব হবে না।—মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা : ৮/৪৪০, হাদীস নং: ১৪৫৭৪; আদ্দুররুল মুখতার (রদ্দুল মুহতারসহ) : ২/৫২৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/৩১০; ফাতাওয়া উসমানী : ২/২২৩
জনৈক আল্লাহর বান্দা
১৪৪৬. প্রশ্ন : মাযুর অর্থাৎ যার সর্বদাই ফোঁটা ফোঁটা পেশাব আসে অথবা ক্ষতস্থান থেকে অনবরত রক্ত ঝরে বা খুব ঘনঘন বায়ু বের হয়, এমন ব্যক্তি তাওয়াফ কীভাবে করবে?
উত্তর : যদি মাযুর হওয়ার শর্তসমূহ ওই ব্যক্তির মধ্যে পাওয়া যায়, তাহলে যে সমস্যার কারণে লোকটি মাযুর সাব্যস্ত হয়েছে ওই সমস্যার দরুন তার অযু ভাঙবে না। সে যেভাবে এ সমস্যা নিয়ে নামায পড়তে পারে, তেমনইভাবে তাওয়াফও করতে পারবে। তবে যে নামাযের ওয়াক্তে সে অযু করেছে ওই ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাওয়া যেহেতু তার জন্য অযু ভাঙার একটি কারণ, তো তাওয়াফ অবস্থায় চার চক্করের পর যদি ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায় তাহলে অযু করে বাকি তাওয়াফ পূর্ণ করে নেবে। আর যদি চার চক্করের আগেই ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায়, তাহলেও পুনরায় অযু করে তাওয়াফ পূর্ণ করতে পারবে, তবে এ অবস্থায় উত্তম হলো তাওয়াফ পুনরায় শুরু থেকে করা।—গুনয়াতুন নাসিক : ১২৭; ফাতাওয়া রহীমিয়া : ৮/৮৯; উমদাতুল ফিকহ : ৪/২০০
ইনামুল মুনতাহা
সিদ্ধেশ্বরী
১৪৪৭. প্রশ্ন : আমাদের মহল্লার একজন মহিলা মাহরাম ছাড়া উমরা পালন করেছেন। জানার বিষয় হলো, মাহরাম ছাড়া উমরা বা হজ পালন করার বিধান কী? এভাবে উমরা বা হজ পালন করলে আল্লাহর দরবারে কবুল হবে কি না?
উত্তর : মহিলাদের জন্য মাহরাম ছাড়া উমরা বা হজ পালন করা জায়েয নেই। যদি কেউ করে তাহলে মাকরুহে তাহরীমির সাথে আদায় হয়ে যাবে।—সহীহ বুখারী : ৩১৯; আদ্দুররুল মুখতার : ২/৪৬৪; আল—মুহীতুল বুরহানী : ৩/৩৯৪; ফাতাওয়া মাহমূদিয়া : ১৫/৩৯৯
মাহদী হাসান
ঢাকা
১৪৪৮. প্রশ্ন : যদি কোনো ব্যক্তির এ পরিমাণ সম্পদ থাকে যে, এতটুকু সম্পদ দিয়ে হজ করে ফিরে আসতে পারবে। কিন্তু ফিরে আসার পর তার কোনো সম্পদ থাকবে না। এমন ব্যক্তির উপর কি হজ ফরজ হবে?
উত্তর : হজ ফরজ হওয়ার জন্য শর্ত হলো, কোনো ব্যক্তির حوائج اصلية তথা মৌলিক প্রয়োজন যেমন : বাসস্থান, ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র, যে পেশার লোক সে পেশার মূল সম্পদ, ব্যবসায় হলে ব্যবসার মূলধন, দোকান ইত্যাদি ব্যতীত এ পরিমাণ সম্পদ থাকা যে, ওই ব্যক্তির জন্য হজের যাতায়াত—খরচ এবং তার ফিরে আসা পর্যন্ত পরিবারের যাবতীয় খরচের জন্য যথেষ্ট হবে।
সুতরাং হজের ব্যয় নির্বাহের পর যদি উল্লিখিত প্রয়োজনের অতিরিক্ত অন্য কোনো সম্পদ নাও থাকে তবুও হজ ফরয হবে।—লুবাবুল মানাসিক : ৬৩; আলবাহরুর রায়েক : ২/৫৪৯—৫৫০; আল—মাওসুআতুল ফিকহিয়্যাহ : ১৭/৩১—৩২; গুনয়াতুন নাসিক : ১৯; মাজমাউল আনহুর : ১/৩৮২—৩৮৬
মসজিদ—মাদরাসা—ওয়াকফ
মাও. ইসমত আলী
দক্ষিণখান, ঢাকা
১৪৪৯. প্রশ্ন : ১৯৭৪ সাল থেকে আমরা মসজিদের নিচতলায় জুমআসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে আসছি। এখন মসজিদ কমিটির ইচ্ছা হলো, চার তলা মসজিদ নির্মাণ করে নিচতলায় মার্কেট আর দ্বিতীয় তলা থেকে জুমআসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা হবে এবং মার্কেটের আয়ের টাকা উক্ত মসজিদের কাজে ব্যয় করা হবে। এখন জানার বিষয় হলো, উল্লিখিত বর্ণনা অনুযায়ী মসজিদ কমিটির কাজ করা সঠিক হবে কি না?
উত্তর : যে জায়গায় একবার শরঈ মসজিদ হয়ে গেছে পরবর্তী সময়ে তার উপরে বা নিচে মার্কেট বা অন্য কিছু নির্মাণ করা জায়েয নেই। সুতরাং প্রশ্নের বিবরণ অনুয়ায়ী উক্ত মসজিদের নিচতলায় মার্কেট নির্মাণ করার সুযোগ নেই।—আদ্দুররুল মুখতার (রদ্দুল মুহতারসহ) : ৬/৫৪৮—৫৪৯; হাশিয়াতু চিলপি আলা তাবয়ীনিল হাক্বায়িক্ব : ৪/২৭১; ইমদাদুল ফাতাওয়া : ৬/১৮৯; আহসানুল ফাতাওয়া : ৬/৪৪৪
মোবারক হুসাইন
কাগজিটোলা জামে মসজিদ, সূত্রাপুর, ঢাকা
১৪৫০. প্রশ্ন : আমাদের মহল্লার মসজিদটি রাস্তার পূর্ব পাশে। মসজিদটি ছোট তাই মুসল্লীদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় তারা স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে নামায আদায় করতে পারছে না। আর ইমাম সাহেবের জন্য কামরার প্রয়োজন কিন্তু জায়গার সংকীর্ণতার কারণে তা নির্মাণ করা যাচ্ছে না। এই মসজিদের নামে ওয়াকফকৃত অন্য স্থানে জায়গা রয়েছে। এখন সার্বিক বিবেচনায় মসজিদ কমিটি এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যে, বর্তমান অবস্থিত মসজিদের পাশেই অর্থাৎ রাস্তার পশ্চিম পার্শ্বে একটি নতুন করে বড় আকারে মসজিদ নির্মাণ করবে। যাতে বেশি মুসল্লী একসঙ্গে নামায আদায় করতে পারে। ইমাম সাহেবের জন্য একটি হুজরা থাকবে। আরও অন্যান্য প্রয়োজনীয় আসবাব নির্মাণ করা হবে।
এখন মুফতী সাহেবের কাছে আমার জানার বিষয় হলো :
১. এভাবে মসজিদ থাকাবস্থায় আরেকটি মসজিদ নির্মাণ করা যাবে কি না?
২. নতুন মসজিদ নির্মাণ করে পুরাতন মসজিদকে মক্তব বা মাদরাসা করা যাবে কি না?
৩. পুরাতন মসজিদের নামে ওয়াকফকৃত জায়গাটুকু নতুন মসজিদের নির্মাণ বা উন্নয়নে বিক্রি করা যাবে কি না? যদি না যায় তাহলে সে জায়গাটুকু কীভাবে হেফাযত করতে হবে বা সেই জায়গাটুকুর ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কী?
৪. পুরাতন মসজিদকে বাউন্ডারি দিয়ে সংরক্ষণ করা এবং সেখানে জানাযা ও ওয়াজ মাহফিল করা যাবে কি না?
দলীলের আলোকে বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবো।
উত্তর : প্রশ্নে বর্ণিত সমস্যার সমাধান যদি অন্য কোনো পন্থায় করা যায়, যেমন: মসজিদকে বহুতলবিশিষ্ট বানিয়ে এবং ইমাম সাহেবের হুজরার ব্যবস্থা ভিন্ন কোনো স্থানে করে, তাহলে সে পন্থা অবলম্বন করে নতুন মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত পরিহার করা উচিত। কেননা নতুন মসজিদ নির্মাণের কারণে পুরাতন মসজিদ অনাবাদ হয়ে পড়লে নতুন মসজিদ নির্মাণ সঙ্গত হবে না। তারপরেও যদি সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে সঙ্গত দূরত্ব বজায় রেখে নতুন মসজিদ নির্মাণ করা যেতে পারে, যাতে পুরাতন মসজিদে এর প্রভাব না পড়ে।
আর দূরে অবস্থিত মসজিদের নামে ওয়াকফকৃত জায়গাটি নির্দিষ্ট মসজিদের জন্যই ওয়াকফ হিসেবে বহাল থাকবে। নতুন মসজিদের নির্মাণ বা উন্নয়নে বিক্রি করতে পারবে না।—রুহুল মাআনী : ৬/৩১; আল—জামে’ লি আহকামিল কুরআন, ইমাম কুরতবী : ৪/১৪৩; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া : ৩/১৫২; আলবাহরুর রায়েক : ৫/২৫১; ফাতাওয়া মাহমূদিয়া : ২১/৩২০, ৩৫১
বিবাহ—তালাক—ইদ্দত
১৪৫১. প্রশ্ন : স্বামী যদি কাবিননামার ১৮ নম্বর ধারায় স্ত্রীকে তালাকের ক্ষমতা প্রদান করে, তারপর স্ত্রী নিজেকে এক তালাকের অধিক তালাক দেয়, তাহলে তা কার্যকর হবে কি না? আর তিন তালাকের কম দিলে তালাক কি বায়েন না রজঈ হবে?
উত্তর : যদি স্বামী স্ত্রীকে মুতলাকভাবে তালাকের ক্ষমতা দেয় (রজঈ, বায়েনের নিয়ত ছাড়া ও তালাকের সংখ্যা নির্দিষ্ট করা ছাড়া) তাহলে স্ত্রী নিজের উপর একাধিক তালাক দিতে পারবে না। বরং এক তালাক দিতে পারবে। আর তা রজঈ বলে গণ্য হবে। স্বামী যদি নির্দিষ্টভাবে তালাকে বায়েন বা রজঈ যা—ই দেয়, স্বামী যে তালাকের অধিকার দিয়েছে তা—ই কার্যকর হয়ে যাবে। স্বামী যদি তিন তালাকের নিয়ত করে থাকে অথবা তিন তালাকের অধিকার দিয়ে থাকে তাহলে স্ত্রী নিজের উপর এক তালাক থেকে তিন তালাক পর্যন্ত যতটা তালাক দেবে স্ত্রীর তালাক কার্যকর হয়ে যাবে।—ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/৪৫৭, ৪৭১; আদ্দুররুল মুখতার : ৩/৩৩১; আদ্দুররুল মুখতার (রদ্দুল মুহতারসহ) : ৩/৩৩৩
মুহা. মুয্যাম্মিলুল হক
১৪৫২. প্রশ্ন : আমার স্ত্রী আমার কথা শোনে না। সে দ্বীন ঠিকমতো মানে না। আমি বোঝালেও শোনে না। সে আমার ও আমার মা—বাবার সাথে ঝগড়া করে এবং আমার মা—বাবাকে মারার জন্য উদ্যত হয়। এমতাবস্থায় আমার জন্য করণীয় কী? আমি কি তাকে তালাক দিতে পারব? তালাক দিতে পারলে শরীয়তে তালাক দেওয়ার সঠিক ও সুন্দর পদ্ধতি কী?
উত্তর : যখন স্বামী—স্ত্রীর মাঝে বনিবনা না হয় এবং স্ত্রী কথা না শোনে, অবাধ্য হয় ও বিভিন্ন কারণে উভয়ে একসঙ্গে থাকা কষ্টসাধ্য হয়ে যায় এবং বিচ্ছেদ ছাড়া অন্য কোনো সমাধান না থাকে, তখন শরীয়ত স্বামীকে কিছু নিয়ম—কানুন মেনে তালাক প্রদান করার অধিকার দিয়েছে। সুতরাং অবাধ্য স্ত্রীকে সর্বপ্রথম ভালোভাবে চলার উপদেশ দিতে হবে। এরপরেও সংশোধন না হলে বিছানা ভিন্ন করা ও সামান্য প্রহার করে সংশোধনের চেষ্টা করার অনুমতি রয়েছে। তারপরেও যদি কোনো সমাধান না হয় তাহলে উভয়ে নিজ নিজ আত্মীয়দের মধ্য ধেকে শুভাকাক্সক্ষী ব্যক্তিকে সালিশ বানাবে। তারা উভয়কে বুঝিয়ে—শুনিয়ে সুন্দরভাবে সংসার করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করবে। এরপরেও সমাধান না হলে স্বামী চাইলে স্ত্রীকে শরীয়ত মোতাবেক তালাক দিতে পারবে। তালাক দেওয়ার সর্বোত্তম পদ্ধতি হলো, স্ত্রী হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার পর তার সাথে শারীরিক সম্পর্কবিহীন পবিত্র অবস্থায় এক তালাক দেবে। এই তালাক প্রদানের পর স্ত্রী তিন হায়েযের মাধ্যমে তালাকের ইদ্দত পালন করবে।—সূরা নিসা, আয়াত : ৩৩—৩৪; ফাতহুল ক্বদীর : ৩/৪৪৩
আল্লাহর এক বান্দা
১৪৫৩. প্রশ্ন : আমি আমার স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করে তাকে বলেছি, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমি তোমার হাতের রান্না—বান্না কিছুই খাব না। তোমার মা—বাবার কসম, তুমি আমার সাথে ঝগড়া করবে না। মুফতী সাহেবের কাছে আমার জানার বিষয় হলো, এখন এই কসমের কাফফারা কী এবং এই কসমের কারণে কি দুজনের উপর কাফফারা আবশ্যক হবে?
উত্তর : প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী উক্ত কথার দ্বারা কসম সংঘটিত হয়নি। তাই আপনার উপর কসমের কাফফারা আবশ্যক হবে না। তবে গায়রুল্লাহর নামে কসম করার কারণে গোনাহ হয়েছে। সেজন্য তওবা করা আবশ্যক।—সহীহ মুসলিম, হাদীস নং : ২/১৬৪৬; হেদায়া : ২/৪৭৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ৬/৫; আহসানুল ফাতাওয়া : ৫/১৬৬
মুআমালা—লেনদেন
১৪৫৪. প্রশ্ন : ফিলিং স্টেশন থেকে পেট্রোল নেওয়ার সময় পাম্পে কোনো কোনো সময় দীর্ঘ লাইন পড়ে। এতে গাড়ির ড্রাইভার ও যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। এ কারণে স্টেশন মালিকগণ বিশেষ কার্ডের ব্যবস্থা করেন যা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে ইস্যু করতে হয়। যারা এই কার্ডধারী হবে তাদেরকে পেট্রোল নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে না। সরাসরি এসে পেট্রোল গ্রহণ করতে পারবে। এখন জানার বিষয় হলো, এই সুবিধা দেওয়ার জন্য টাকার বিনিময়ে এ কার্ড বিক্রি করা জায়েয হবে কি না?
উল্লেখ্য, এ কার্ডের মূল্য গাড়িভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
উত্তর : বর্ণিত লেনদেনে অগ্রাধিকারের সুবিধা দিয়ে যে কার্ড বিক্রি হচ্ছে তা শরীয়তের দৃষ্টিতে বিক্রয় চুক্তির অন্তভুর্ক্ত নয়। কারণ ক্রয়—বিক্রয় হওয়ার জন্য শর্ত হলো শরীয়তের দৃষ্টিতে পণ্য বা সম্পদ হওয়া। কিন্তু অগ্রাধিকারের সুবিধা শরীয়তের দৃষ্টিতে বিক্রয়যোগ্য কোনো পণ্য নয়। বরং তা একপ্রকারের الحق المجرد (বস্তু—সংশ্লিষ্টতামুক্ত অধিকার) যা বিক্রি করা জায়েয নেই। তা ছাড়া বর্ণিত পদ্ধতিতে লেনদেনটি অন্যের হক নষ্ট করার শামিল। কেননা যে ব্যক্তি তেল নেওয়ার জন্য আগে লাইনে দাঁড়িয়েছে সেই আগে পাওয়ার হকদার। সুতরাং টাকার বিনিময়ে তার উপর অন্যকে প্রাধান্য দেওয়া মানে তার হক নষ্ট করা।
তবে ফিলিং স্টেশন কতৃর্পক্ষ যদি এই কার্ডধারী ব্যক্তিদের তেল নেওয়ার জন্য আলাদা লেন ও আলাদা স্টেশনের ব্যবস্থা করেন, আর এই আলাদা ব্যবস্থাপনা ও উন্নত সুবিধা দেওয়া বাবদ যা খরচ হবে তা তেলের মূল্যের সাথে সংযুক্ত করে দেন (অর্থাৎ স্টেশন কতৃর্পক্ষ কার্ড বিক্রি করে যে টাকা নেন তা যদি আলাদা ব্যবস্থাপনার খরচ ধরে তেলের মূল্য হিসেবে বিবেচনা করেন) তাহলে তা জায়েয হবে।—রদ্দুল মুহতার : ৪/৫১৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৩/১৫৮; ফিক্হুল বুয়ু : ১/২৭০
রাফিদ ইকবাল
ফরিদাবাদ, ঢাকা
১৪৫৫. প্রশ্ন : কিস্তিতে কোনো কিছু ক্রয় করা জায়েয আছে কি না? জায়েয হলে তা কীভাবে করতে হয়? এ ব্যাপারে শরীয়তের বিশ্লেষণ কী?
উত্তর : কিস্তিতে পণ্য ক্রয়—বিক্রয় জায়েয আছে। তবে শর্ত হলো :
১. কিস্তিতে যে পণ্য ক্রয় করবে তার মূল্য নির্ধারণ করে নিতে হবে।
২. কিস্তিতে মূল্য পরিশোধের ‘সময়’ নির্ধারণ করতে হবে।
উক্ত দুটি শর্ত পাওয়া গেলে কিস্তিতে পণ্য ক্রয়—বিক্রয় জায়েয আছে।—আলবাহরুর রায়েক : ৫/৪৬৮; শরহুল মাজাল্লাহ : ২/১৬৬—১৬৭; জাদীদ ফিকহী মাসায়েল : ৪/২৫৬
নুরুল আলম
সোনাগাজী, ফেনী
১৪৫৬. প্রশ্ন : তিন ব্যক্তি যৌথ কারবার করে। এই যৌথ কারবার থেকে অন্য ব্যক্তি বাকিতে পণ্য ক্রয় করে ঋণী হয়। তিন ব্যক্তির এই যৌথ কারবার থেকে একজন শরিক তার অংশ সেই ঋণী ব্যক্তিকে হেবা করতে পারবে কি না?
উত্তর : প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী যৌথ কারবারের কোনো শরিক তার অংশ সেই ঋণী ব্যক্তিকে হেবা করতে পারবে।—আল—মুহীতুল বুরহানী : ৯/১৮৩; বাদায়েউস সানায়ে : ৫/১৬৯
মুহিব্বুল্লাহ
পিরোজপুর
১৪৫৭. প্রশ্ন : আমার পিতা সেনাবাহিনীতে চাকুরি করতেন। চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণের পর প্রত্যেক মাসে যে টাকা পেনশন হিসেবে দেওয়া হয় তা কি নেওয়া বৈধ হবে?
উত্তর : আপনার পিতাকে প্রত্যেক মাসে যে টাকা ‘পেনশন’ দেওয়া হয় তা গ্রহণ করা বৈধ হবে।—ফাতাওয়া দারুল উলূম দেওবন্দ : ১৫/২৯২; জাদীদ মাআশী নেযাম মে ইসলামী কানূনে ইজারাহ : ২০৮