বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র—ছাত্রীদের বলছি
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক
তোমাদের গার্ডিয়ানরা তোমাদেরকে এখানে পাঠিয়েছে। তোমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছো, পড়াশোনার উদ্দেশ্যে। তোমাদের নিজস্ব ক্যাপাসিটিতে তোমরা এখানে আসোনি। তোমাদেরকে মেধাবী ও যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তোমাদের গার্ডিয়ানদের কী পরিমাণ ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে, তা তোমরা ভালো জানো। তোমাদের অনেকের দৃষ্টিতে ‘পশ্চাৎপদ বা সেকেলে ধ্যানধারনার’ সেই গার্ডিয়ানরাই তোমাদেরকে সামাজিক দিক থেকে ও আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।
ইউরোপ আমেরিকার মতো তোমরা নিজেদের পড়ালেখার খরচ নিজেরা জোগাড় করোনি। এমনকি তোমাদের মধ্যে যারা নিজ খরচে পড়ছো তারাও, অভিজ্ঞতায় দেখেছি, নিজে খরচ না করে কষ্ট করে হলেও কিছু টাকা বাড়িতে পাঠানোর চেষ্টা করো। কেন তোমরা এটি করো? কারণ তোমরা আমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া আমরা প্রায়—সবাই নিম্ন অথবা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র—ছাত্রী মাত্রই সম্ভাব্য সব উপায়ে নিজ নিজ ফেমেলির সাথে এটাচড। যত দূরে থাকো না কেন, তুমি তোমার পরিবারের একজন সদস্য। ১৮ বছরের পরে পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন স্বাধীন ব্যক্তিমানুষ নও। ফেমিলি বন্ডিং কার কতোটুকু স্ট্রং বা উইক, সেটা ভিন্ন বিষয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর থেকে ক্যাম্পাসে তোমাদের এই স্বাধীন চলাফেরা, দিনের পর দিন পড়ালেখার ধারেকাছেও না যাওয়া, হাল্কাপাতলা নেশা করা, অবাধে ‘সম্পর্কচর্চা’ করা, হুক—আপ ব্রেক—আপের নানা কিসিমে কেজুয়াল সেক্স লাইফ মেনটেইন করা, তোমাদের এমন লাইফস্টাইলের কথা কি তোমাদের পরিবারের লোকজন, তোমাদের অভিভাবকেরা জানে? জানলে তারা কি তোমাদের এসব কাজকর্ম সমর্থন করতো? অথবা করবেন?
জানি, অধিকাংশ স্টুডেন্ট এমন নয়। এই কথাগুলো তাদের জন্য প্রযোজ্য যারা মনে করে, বিশ্ববিদ্যালয় মানে বল্গাহীন জীবনযাপনের অবারিত সুযোগ। এ কথাগুলো তাদের জন্যও প্রযোজ্য যারা বলে, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ধারণা অনুসারে একটা বিশ্ববিদ্যালয় তার শিক্ষার্থীদের চলাচলের ওপর কোনো ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে না। কে কোথায়, কিভাবে যাবে, কার সাথে যাবে, সেটার উপর কোনো রেস্টি্রকশন জারি রাখা তো দূরে থাক, বরং রাষ্ট্র বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেখানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাধ্য।’
‘এই বিশ্ববিদ্যালয় গরীব জনগণের ট্যাক্সে চলে’ এমন কথা আমাকে তোমরা স্মরণ করিয়ে দিয়েছো। ভালো কথা। বেতনের খোঁচা দিয়ে বলছো, ‘আপনাদের বেতন তো তারাই দেন।’ কথা সঠিক। তোমাদের সতীর্থদের একটি অংশের চলাফেরায় ‘আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের’ যে নমুনা রাস্তাঘাটে হরহামেশা দেখতে হচ্ছে, পাহাড়ের চিপায়—চাপায় বনেজঙ্গলে দিনেরাতে তোমাদের স্বাধীনতাচর্চার যেসব নমুনার কথা নিয়মিতভাবে শুনতে হচ্ছে, দেশের এই ‘গরীব জনগণের’ মূল্যবোধের সাথে তা কি সামঞ্জস্যশীল?
যাদের টাকায় তোমরা পড়ো তারা কি এমন বিশ্ববিদ্যালয় চায়?
প্রসঙ্গত তোমাদেরকে হিলারী ক্লিনটনের একটা গল্প বলি। হাই স্কুল, আমাদের হিসেবে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পরে উনার বাবা উনার পড়ার খরচ বহন করার জন্য শর্ত দিয়েছিলো হিপ্পিদের উপস্থিতি আছে এমন কলেজে (মানে, বিশ্ববিদ্যালয়ে) হিলারী ভর্তি হতে পারবে না। হিলারী ক্লিনটন শেষ পর্যন্ত নিরাপদ মনে করে একটা মহিলা কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। হিলারী ক্লিনটনের আত্মজীবনী গ্রন্থ ‘লিভিং হিস্ট্রি’র বাংলা অনুবাদে (পৃষ্ঠা ২৫) এই কাহিনীটা সবিস্তারে পড়ে নিতে পারো।
তোমরা যারা গার্ডিয়ানদের ডার্কে (অন্ধকারে) রেখে এখানে স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে চাও তোমাদের এই পজিশনটা যে হিপোক্রেটিক তথা নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য, তা তোমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য এটি বললাম। সত্য কথা অনেক সময়ে তিক্ত হয়।
দেখো, বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ড্রেসকোড নাই। তৎসত্বেও একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় শালীন পোশাক পরে প্রত্যেকে এখানে ক্লাস নিতে বা করতে আসে। এরকম আরো বহু উদাহরণকে সামনে রেখে আমরা সহজেই বুঝতে পারি, এখানে আমরা দেশজ ঐতিহ্য, মূল্যবোধ, পারিবারিক ও সামাজিক সংস্কৃতিকে এখনো অনেক ক্ষেত্রেই মেনে চলি।
অথচ, প্রগতিশীলতার নামধারী একটি পক্ষ দেশের আমজনতার এই রক্ষণশীল মূল্যবোধব্যবস্থাকে ফ্রি সেক্সের কনসেন্ট—বেইজড পাশ্চাত্য মূল্যবোধ দিয়ে রিপ্লেস করতে চাচ্ছে। এই কাজে তারা ইতোমধ্যে অনেকখানি সফলও হয়েছে।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি জীবনের ৪০টা বছর কাটিয়েছি। মাঝে মাঝে মনে হয়, এ যেন অপরিচিত কোনো জায়গা। এক একটা বিশ্ববিদ্যালয় যেন আজ দেশের ভিতরে ভিন দেশের এক একটা ছিটমহল।
রক্ষণশীল মূল্যবোধে বিশ্বাস করে এমন স্টুডেন্টদের জন্য আবাসন ও যাতায়াতের পৃথক ব্যবস্থা দাবী করে আমি সম্প্রতি যে লেখা লিখেছি সেইটার বিরোধিতা করে যারা লিখেছে, তাদের মন্তব্যগুলো আমার বক্তব্যকেই বরং (নেগেটিভলি পজিটিভ অর্থে) অথেনটিকেইট করে।
এক সিপাহী তার কমান্ডিং এক হাবিলদারের বিরুদ্ধে অফিসারের কাছে গালাগালির অভিযোগ দেয়ার পরে অফিসার উক্ত হাবিলদারকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো, ‘শুনলাম তুমি নাকি গালাগালি করো। এটা কি ঠিক?’
হাবিলদার উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করে উঠলো, ‘কোন শালারপুতে বলেছে? অমুকের বাচ্চারে এখনি আমার সামনে আনেন।’ গল্পটা কেন বললাম তা নিশ্চয় বুঝে ফেলেছো এতক্ষণে।
প্রগতিশীলতার নামে যৌনসংস্কৃতির বিষবাষ্প হতে প্রজন্মকে রক্ষা করার কথা বলাতে কেউ কেউ আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, আমি ‘সামাজিক আন্দোলনের নামে ব্যক্তিগত দর্শন প্রচার করছি।’ প্রকৃতপক্ষে পাশ্চাত্য জগতে প্রচলিত কলেজ ক্যাম্পাসের হুক—আপ কালচারকে যারা এখানে আমদানি করতে চায়, তারাই বরং নিজেদের ভোগবাদী ‘ব্যক্তিগত দর্শন’কে সমাজের ঘাড়ে চাপাতে চাচ্ছেন।
দেশের ট্যাক্স পেয়ার বৃহত্তর জনগণের আশা, আকাংক্ষা, ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের সাথে এগুলো কোনোমতেই যায় না। স্পষ্টত এটি জাতির সাথে সুস্পষ্ট বিশ্বাসঘাতকতা বৈ আর কিছু নয়।
পাশ্চাত্যের আদলে যারা এখানে যৌন স্বাধীনতার দাবী তুলছে, তারা পাশ্চাত্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে আচরিত সামাজিক মূল্যবোধ ও শিক্ষা—নৈতিকতাকে এখানে প্রতিষ্ঠা করার কথা খুব একটা বলে না। কেন বলে না?
লন্ডনের এক ইউনিভার্সিটিতে পড়ছিলেন আমাদের এক সিনিয়র সহকর্মী। উনার এক রুমমেটকে এক কোর্স টিচার কিছু মেটেরিয়াল দিয়ে বলেছিলেন, ‘তুমি এগুলো এক সপ্তাহ পড়বে। এরপর সপ্তাহান্তে এই খামটা খুলে এখান হতে প্রশ্নটা বের করে একঘণ্টা উত্তর লিখবে। এরপর উত্তরপত্রটা আমার কাছে ফেরত দিবে।’ সেই ছাত্রটি ঠিক তাই করেছিল।
তোমরা হলে কী করতে?
আমাদের এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওভারঅল গুণগত অবনতির জন্য, স্বীকার করছি, শিক্ষকদের দায় সবচেয়ে বেশি। তারা এক নম্বরে দায়ী। তাতে করে তোমরা কি বলতে চাইবে, শিক্ষকরা ঠিক হয়ে গেলে পর আমরা ঠিক হওয়ার চেষ্টা করবো?
শোনো, সামাজিক উন্নয়ন বা অবনতির কোনোটাই একটামাত্র কারণে ঘটে না। সামাজিক উন্নয়ন বা অবনতি একটা কন্টিনিউয়াস এন্ড কোলাবোরেটিভ প্রসেস। একটা পক্ষ সংশোধন হলে পর অন্যপক্ষ(সমূহ) সংশোধন হওয়া শুরু করবে, এটি সামাজিক উন্নয়নের কোনো বাস্তবসম্মত পদ্ধতি নয়। সব পক্ষ একসাথে রিয়েলাইজ করবে, একসাথে সেলফ—কারেকশানের কাজ শুরু করবে, এটাও সোশ্যাল ডেভেলপমেন্টের কোনো ফাংশানাল ওয়ে নয়।
বরং প্রত্যেক ব্যক্তি ও পক্ষ নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজ সাধ্য মোতাবেক সম্মুখযাত্রা শুরু করবে, কেউ না করুক অন্তত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নিজে নিজের ও পরিবেশের উন্নয়নে যথাসম্ভব ভূমিকা পালন করবে, এটাই হলো সামষ্টিক উন্নয়নের একমাত্র কার্যকর পদ্ধতি। দেয়ার ইজ নো মোরাল হলিডে (ফর এনি বডি এলস)।
শিক্ষা, গবেষণা ও জ্ঞানচর্চার যে মূল উদ্দেশ্যে আমরা এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লাটফর্মে একত্রিত হয়েছি। এই মূল উদ্দেশ্যটাই এখানকার সোশিও—একাডেমিক এনভাইরনমেন্টে সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত। যেকোনো অজুহাতে সবার আগে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে যা বাদ যায় তা হলো ক্লাস। এখানে ক্লাসরুম পারফরমেন্স হলো সবচেয়ে উপেক্ষিত বিষয়। অথচ, এইটার জন্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা।
শিক্ষকদের মান না থাকা বা তাদের অবহেলার কারণে মানসম্পন্ন ক্লাস হয় না। এ কারণে ছাত্র—ছাত্রীরা ক্লাসমুখী হয় না। কথাটা সত্য। বিষয়টাকে উল্টো করে বলা যায়, quality audience makes a quality speaker। ব্যাপারটা যা—ই হোক না কেন, সমস্যাটাকে আমরা যে দিক থেকেই দেখি না কেন, এ এক দুষ্ট চক্র।
আমার সন্তানতুল্য ছাত্র—ছাত্রীরা, শোনো, এই দুষ্ট চক্রের ভিকটিম হওয়া থেকে আত্মরক্ষা করার একমাত্র পদ্ধতি হলো লেখাপড়া, যার জন্য তোমাদের এখানে আসা, সেটাকে মুখ্য বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে সবকিছু করা।
মানলাম এখানকার সিস্টেমটা খারাপ। একটা খারাপ সিস্টেমকে ভাঙার জন্য সেই সিস্টেমকে সিস্টেমেটিকেলি exhaust করে তোমাদেরকে উঠে আসতে হবে। ফ্রম উইদিন এ ধরনের স্ট্রং বাট ভিশাচ সার্কেলকে ভাঙতে হয়। একটা বাজে এনভাইরনমেন্টের ভিতরে থেকে নিজেকে সেইভ করার উপায় হলো সেই সিস্টেমের সদর্থক সুযোগ বা ভালো দিকগুলোকে পূর্ণমাত্রায় কাজে লাগানো।
স্রোতের টানে গা ভাসিয়ে দিয়ে তুমি এখানে সহজেই গোল্লায় যেতে পারো। আবার চাইলে নিজেকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার এই সুযোগকে তুমি কাজে লাগাতে পারো। এখানে তুমি রেড—পিল ব্লুপিল দু’টাই পাবে। কোনটা গ্রহণ করবে তা তোমার ব্যাপার।
তোমার বিবেচনাবোধের ওপর আস্থা রেখে গার্ডিয়ানরা তোমাকে হলে বা বাসায় রেখে গেছে। মাসে মাসে টাকা পাঠায়। প্রতিদিন ফোন করে। তোমার বিবেকবুদ্ধি বিসর্জন দিবে না এই সরল বিশ্বাসে তোমার গার্ডিয়ান হাত খরচ দিয়ে তোমাকে প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও লেখাপড়া করার জন্য পাঠায়।
৫টা বছর কষ্ট করো। ৫০ বছর তুমি এর সুফল পাবে। অথবা, এই ৫ বছর মৌজ—মাস্তি—ফূর্তি করো। পরবর্তী ৫০ বছর সোশ্যাল আপওয়ার্ড মোবিলিটির দৌড়ে তুমি অনেকের চেয়ে পিছিয়ে থাকবে। তুমি যে পথে যেতে চাও সে পথের বিপরীত দিকে যাওয়ার হাতছানি উপেক্ষা করে তোমাকে চেষ্টা করতে হবে টু বি দ্যা বেস্ট অব ইউ।
আমি তোমার সাথে বাজি ধরতে পারি, পরিণত বয়সে তুমি দেখতে পাবে, পাশ্চাত্য আদলে ব্যক্তিকেন্দ্রিক সমাজ ব্যবস্থা এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়নি; বৈবাহিক ব্যবস্থার পরিবর্তে লিভটুগেদার ব্যবস্থা এই দেশে সমাজের মূলধারা হয়ে উঠেনি। অপরিণামদর্শী স্বাধীনতা চর্চার পরিণামে শেষ পর্যন্ত তুমি ‘না ঘরকা, না ঘাটকা’ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারো, আমার আশঙ্কা।
চাইলে যেমন তুমি ফিজিক্সের নিয়মকে বদলে দিতে পারো না, তেমনি করে মানব সভ্যতার শত—সহস্র বছরের ইতিহাসের ভিত্তিতে গড়ে উঠা relational physics কেও চাইলে তুমি অস্বীকার করতে পারো না। প্রকৃতিবিরুদ্ধ জীবনে কেউ আলটিমেইটলি সুখী হতে পারেনি, এটি বলাই বাহুল্য।
যত তাড়াতাড়ি বুঝবে—দায়িত্ব (responsibility) ছাড়া স্বাধীনতা (autonomy) অর্থবহ হয় না—তত তোমার জন্য মঙ্গল।
আমি ধর্মের দোহাই দিয়ে তোমাকে কোনো কথা বলি নাই। আমি যুক্তির মানুষ। বিশ্বাস করি, যুক্তির বাইরে কিছু নাই। সেন্সিবল লোকের লিভড এক্সপেরিয়েন্স থেকে বেশি সত্য আর কিছু হতে পারে না।
তোমাদের ব্যাপারে বাবা—মা—অভিভাবকরা যা চান তা তোমাদের ভালোর জন্যই চান; যা তারা তোমাদের জন্য সঠিক মনে করেন না, তা তোমাদের ভালোর জন্য আসলেই ভালো নয়।
দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী, যারা তোমাদের বাবা—মা কিম্বা অভিভাবক, তারা তোমাদের মতো ফিজিক্স, কেমিস্টি্র, বায়োলজি, একাউন্টিং, ম্যানেজমেন্ট, সোসিওলজি, পল সায়েন্স, ফিলসফি, লিটরেচার ইত্যকার কঠিন কঠিন সাবজেক্টের নাড়ি নক্ষত্রের খবর না রাখলেও জীবন ও জগতের বাস্তবতা সম্পর্কে, বিশেষ করে তোমাদের ভালো—মন্দ সম্বন্ধে অনেক ভালো জ্ঞান রাখেন।
তাই, বাবা—মা ও অভিভাবকদেরকে বেকুব মনে করার এই প্রিভেইলিং ক্যাম্পাস কালচার, এটি খুব খারাপ জিনিস।
ইউনিভার্সিটি জীবনে এই যে যাচ্ছেতাই করার স্বাধীনতা, এইটা যে একটা সময়ের ফাঁদ, পরবর্তী জীবনে তোমরা এটি আরো বেশি করে হৃদয়ঙ্গম করতে পারবে। আবারো বলছি, দায়—দায়িত্বহীন স্বাধীনতা উচ্ছৃংখলতার নামান্তর। পাশ্চাত্যের সামাজিক বাস্তবতায় তাদের জন্য যা উপযোগী, আমাদের জন্য তার সবকিছু ততটুকু উপযোগী হবে এমন কোনো কথা নাই।
অবশ্য পাশ্চাত্যের জন্য যা উপযোগী বলা হচ্ছে তা আসলে কতটুকু উপযোগী, তা নিয়ে ওখানকার এক্সপার্টরা ঝেড়েকেশে কথা বলা শুরু করেছেন। সেসব খবর চাইলে তোমরা সহজেই নিতে পারো।
শেষ কথা হলো, শস্য আবাদ করতে হয়, জঙ্গল গড়ে উঠে।
শুভ কামনা রইল তোমাদের জন্য।
আর হ্যাঁ, আমার ইন্টিগ্রিটি নিয়ে জানতে চাও? চবি ফিলসফি ডিপার্টেমেন্টের স্টুডেন্টদের জিজ্ঞাসা করো।
ভালো থাকো।
—লেখক
সহযোগী অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়