প্রতিষ্ঠাতা: মুজাহিদে আযম হযরত মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ.

জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলূম ফরিদাবাদ, ঢাকা-এর মুখপত্র

প্রতিষ্ঠাকালঃ ১৯৩৭ ঈসায়ী

মহৎ কৃষক

মহৎ কৃষক

হাজার বছর আগে হিন্দুস্তানের এক দেশে একজন মহৎ কৃষক বাস করত। তার এক খণ্ড জমি ছিল। সে তাতে চাষাবাদ করত। সবজি ও ফল—ফসল ফলাত। ফসল কাটার পর কৃষক ফসলগুলো জমা করে গাধার পিঠে করে পাশের শহরের বাজারে নিয়ে যেত। সেখানে তা বিক্রি করত। এর মাধ্যমে তার সংসার চলত। জমির পাশে তার একটি ছোট্ট ঘর ছিল। সে ঘরে পরিবার নিয়ে বাস করত। কৃষক খুশি ছিল এ সাধারণ জীবন নিয়ে।

কৃষক একদিন তার ছোট্ট জমিতে কাজ করছিল। এমন সময় এক লোক ঘোড়ায় চড়ে এল। ক্ষেতের পাশে দাঁড়াল। তাকে ডেকে বলল, হে ভাই!

ডাক শুনে কৃষক দ্রুত এগিয়ে এল। বলল, জি জনাব!

লোকটি বলল, আমি এখানে ভিনদেশি। আমি কি তোমার কাছে পানি এবং রোদ থেকে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করার জন্য ছায়াদার জায়গা পাব।

কৃষক বলল, আসুন জনাব আসুন।

ভিনদেশি লোকটি তার ঘোড়ার উপর থেকে নামল। কৃষক তাকে একটি ছায়াদার গাছের নিচে বসাল। কাছের কূপ থেকে পানি এনে মেহমানের দিকে এগিয়ে দিল। লোকটি পানি পান করে তৃপ্ত হলো। তারপর ঘোড়াকে পানি পান করাল।

কৃষক কিছু সুস্বাদু ফল ধুয়ে তার দিকে এগিয়ে দিল। তার ঘোড়াটিকে কিছু ঘাস দিল।

সাধারণ একজন কৃষকের এমন দিলখোলা

আপ্যায়নে মেহমান অভিভূত হলো। ফিরে যাওয়ার সময় কৃষককে কিছু টাকা দিতে চাইল। কৃষক প্রত্যাখ্যান করল। লোকটিকে বলল, তুমি আমার মেহমান। মেহমান থেকে কিছু গ্রহণ করা মহৎ ব্যক্তিদের পক্ষে মানায় না।

এতে মেহমানের বিস্ময় আরও বেড়ে গেল। এরপর মেহমান যখন ঘোড়ায় চেপে বসল তখন কৃষক ছোট একটি মশকে পানি ভরে মেহমানের দিকে এগিয়ে দিল। আর কিছু ফলমূল দিয়ে বলল, এই খাবার ও পানি পথে আপনার কাজে আসবে।

অনেক দিন চলে গেল। কৃষক এই ঘটনা ভুলে গেল। কেননা সে মহৎ ও ভালো মনের মানুষ ছিল। সে অনেক ভালো ভালো কাজ করত। তারপর এ নিয়ে কারও সঙ্গে আলোচনা করত না। একদিন গরিব কৃষক তার ছোট্ট জমিতে যাচ্ছিল। সে দেখতে পেল, একদল ঘোড়সওয়ার তার দিকে এগিয়ে আসছে। তাদের প্রধান ঘোড়া থেকে নেমে কৃষককে বলল, তুমি কি হাসানের চাচা?

হাসানের চাচা বলল, হঁ্যা আমি হাসানের চাচা।

—তুমি কোথায় যাচ্ছ?

—আমি আমার ছোট্ট জমিতে কাজে যাচ্ছি।

লোকটি তাকে একটি ছোট্ট কৌটা দিয়ে বলল, এই কৌটাটি গ্রহণ করো; যা তোমার জন্য আমার সরদার যিয়াদ পাঠিয়েছেন―যিনি বাগদাদের বৃদ্ধ ব্যবসায়ী।

হাসানের চাচা বলল, কিন্তু আমি এই নামে কাউকে চিনি না―তাহলে আমি কীভাবে এই কৌটা গ্রহণ করব?

অপর দিকে আরেক জন লোক তার ঘোড়া থেকে নামল। সে হাসানের চাচাকে জড়িয়ে ধরে বলল, আমি সেই ভিনদেশি লোক যে তোমার কাছে এসেছিল। তুমি ক্ষেতে কাজ করছিলে। তুমি তাকে সম্মান করেছিলে। আমি হলাম যিয়াদ। আমাকে কি মনে পড়ছে না?

হাসানের চাচা তার দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, আমি আপনাকে চিনতে পেরেছি। আপনি সেই ভিনদেশি মুসাফির।

লোকটি বলল, আমি আশা করি তুমি আমার পক্ষ থেকে এই সামান্য হাদিয়া কবুল করবে। আমি তোমার থেকে উদারতার শিক্ষা পেয়েছিলাম, যা আমার অনেক উপকার করেছে। আমাকে গণমানুষের ভালোবাসা এনে দিয়েছে। এমনকি আমি ধনবানে পরিণত হয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ।

মহৎ কৃষক তখন বুঝতে পেরেছে, নিশ্চয়ই তা আল্লাহর পক্ষ থেকে। তাই হাদিয়া গ্রহণ করল। আল্লাহর শোকর আদায় করল।

 

—মুহাম্মাদুল্লাহ বিন আতাউল্লাহ

লেখক সম্পর্কে
Avatar

editor

একটি কমেন্ট করুন