প্রতিষ্ঠাতা: মুজাহিদে আযম হযরত মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ.

জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলূম ফরিদাবাদ, ঢাকা-এর মুখপত্র

প্রতিষ্ঠাকালঃ ১৯৩৭ ঈসায়ী

রমযানের শিক্ষা ও অভ্যাস যেন স্থায়ী হয় বছরব্যাপী ও জীবনব্যাপী

রমযানের শিক্ষা ও অভ্যাস যেন স্থায়ী হয় বছরব্যাপী ও জীবনব্যাপী

মাওলানা মুহাম্মদ মামুন

 

এ বছরের মাহে রমযান বিদায় নিয়েছে। কিন্তু রমযানের রোযা, তারাবীহ, দুআ—যিকির ইত্যাদি নেক আমল দ্বারা অন্তরে আল্লাহর প্রতি যে মহব্বত ও ভয় সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে এখন মসজিদে উপস্থিত হতে ভালো লাগে, জামাতে নামায আদায় করতে ভালো লাগে, যিকির করতে ভালো লাগে, গোনাহের পরিবেশ খারাপ লাগে, আখেরাতের কথা, হাশরের মাঠে আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর কথা বারবার মনে পড়ে—এ বিষয়গুলো মুমিন বান্দার জন্য অত্যন্ত প্রশংসনীয় বিষয় এবং অনেক বড় নেয়ামত। দীর্ঘদিন বিভিন্ন নেক আমলের সাধনার মাধ্যমে যা অর্জিত হয়েছে। মুমিন বান্দার কর্তব্য এ নেয়ামতের কদর করা। এ নেয়ামত যার ভাগ্যে যতটুকু জুটেছে, তা সংরক্ষণ করা এবং সযত্ন পরিচর্যার মাধ্যমে তা আরও বৃদ্ধি করা জরুরি। রমযানের বিদায়ের সাথে সাথে যেন এ বিষয়গুলোও বিদায় না হয়ে যায়। বরং তা যেন দিন দিন বৃদ্ধি পায় এবং জীবনভর অভ্যাসে পরিণত হয়।

 

তাকওয়া

রমযান মাস এসেছিল তাকওয়ার আহ্বান নিয়ে। মুবারক মাসটি বিদায় নিয়েছে সারা বছরের জন্য তাকওয়ার শিক্ষা রেখে। যার মূল কথা হলো সংযমী হওয়া। আল্লাহর ভয়ে গোনাহ থেকে বিরত থাকা। তাকওয়ার এ মূল বিষয়টি সুন্দর উপমার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন বিখ্যাত সাহাবী হযরত উবাই ইবনে কাব রাযি.। আমীরুল মুমিনীন হযরত ওমর রাযি. একদিন তাঁকে তাকওয়ার অর্থ জিজ্ঞাসা করেছিলেন। তিনি উত্তরে বলেছিলেন, আমীরুল মুমিনীন! আপনি কি কখনো কাঁটাদার ঝোপঝাড়ের মধ্য দিয়ে পথ চলেছেন?

হযরত ওমর রাযি. বললেন, চলেছি।

উবাই ইবনে কাব রাযি. জিজ্ঞাসা করলেন, কীভাবে চলেছেন?

হযরত ওমর রাযি. বললেন, পরনের কাপড় ভালোভাবে গুটিয়ে নিয়েছি, এরপর সাবধানে সেই পথ অতিক্রম করেছি।

হযরত উবাই ইবনে কাব রাযি. বললেন, এরই নাম তাকওয়া।

প্রতিটি মুমিনের অন্তরে সামান্য পরিমাণ হলেও তাকওয়ার আলো থাকে। আর রমযানের রোযার মাধ্যমে অবশ্যই তাতে কিছু—না—কিছু বৃদ্ধি ঘটে থাকে। যে মুমিন রমযানের রোযার হক এবং আদবসমূহ যত বেশি আদায় করেছে তার মধ্যে তাকওয়া তত বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাকওয়ার প্রভাব হলো অন্তরে নেক আমলের আগ্রহ সৃষ্টি হওয়া, গোনাহের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হওয়া এবং তা পরিহার করার তাগাদা উপলব্ধি হওয়া।

তাকওয়া শক্তিশালী হলে এর প্রভাবও শক্তিশালী হয়। তাকওয়া দুর্বল হলে এর প্রভাবও দুর্বল হয়। মুমিনের কর্তব্য হলো তাকওয়ার প্রভাবের কদর করা। শোকর আদায় করা। অর্থাৎ কোনো নেক আমলে আগ্রহ সৃষ্টি হলে কালবিলম্ব না করে এই আগ্রহ অনুযায়ী আমল করা। গোনাহের কারণে অন্তরে ঘৃণা সৃষ্টি হলে সাথে সাথে সে গোনাহ পরিত্যাগ করে খাঁটি মনে তওবা করে নেওয়া। তাকওয়ার প্রভাবের কদর না করা মুমিনের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যের বিষয়। কারণ দুর্বল তাকওয়ার প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হয় না। বারবার অবমূল্যায়নের ফলে তা আরও দুর্বল হয়ে যাবে, যা একজন মুমিনের জন্য ক্ষতিকর ও দুর্ভাগ্যজনক।

অতএব রমযানের রোযার মাধ্যমে যার যতটুকু তাকওয়া অর্জিত হয়েছে তা সংরক্ষণ করা এবং সযত্ন পরিচর্যার মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করা, তাকওয়ার প্রভাবের যথাযথ কদর করা, রমযানের নেয়ামতের শোকর আদায় করা এবং রোযার শিক্ষা সারা বছর ধরে রাখার সাধনায় অবতীর্ণ হওয়া উচিত।

 

তাকওয়ার ক্ষেত্র

মানব জীবনের সকল অধ্যায়ই তাকওয়ার ক্ষেত্র। মানুষের সবকিছুই তাকওয়ার ক্ষেত্র। বালেগ হওয়ার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এমনভাবে চলার চেষ্টা করা যাতে শরীয়তের দৃষ্টিতে যা নিষিদ্ধ বা অশোভন তার প্রভাব থেকে আমার কথা, কাজ ও আকীদা—বিশ্বাস মুক্ত থাকে। সুতরাং আল্লাহর ভয়ে গোনাহ ও অশোভন আচরণ থেকে বিরত থেকে জীবনের সকল কাজে শরীয়তের হুকুম—আহকামের অনুগত ব্যক্তিই মুত্তাকী।

 

তাকওয়ার পথে চলার পূর্বশর্ত

সারা বছর বরং সারা জীবন রমযানে অর্জিত তাকওয়ার শিক্ষা অনুসরণ করার জন্য, মুত্তাকী হওয়ার জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন হলো জীবনের সকল কাজে শরীয়তের হুকুম—আহকাম জানা, হালাল—হারাম, বৈধ—অবৈধের বিধান জানা অর্থাৎ দ্বীনি ইলম শিক্ষা করা। সুতরাং তাকওয়ার পথে চলার জন্যে দ্বীনি ইলমের বিকল্প নেই। শরীয়তের হুকুম—আহকামের ইলম হচ্ছে তাকওয়ার পূর্বশর্ত। ইলম অর্জনের নিরাপদ ও স্বাভাবিক পন্থা হচ্ছে বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের কাছ থেকে আদবের সাথে অর্জন করা।

 

তাকওয়া কীভাবে অর্জিত হবে

তাকওয়ার গুণ আপনাতেই অর্জিত হয়ে যায় না; বরং তা অর্জন করতে হয়। চার মাধ্যমে এ গুণ অর্জন করতে হয় :

এক. নিরুপায় ব্যক্তির মতো দিল হাজির রেখে আল্লাহর কাছে দুআ করা।

দুই. হিম্মত ও ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগানো। এটা অনেক বড় এবং শক্তিশালী নেয়ামত। এর সাথে আল্লাহর রহমতের সম্পর্ক খুব বেশি। বান্দার হিম্মতকে আল্লাহ মূল্যায়ন করার ওয়াদা করেছেন এই আয়াতে—

وَ مَنْ اَرَادَ  الْاٰخِرَۃَ وَسَعٰی لَهَا سَعْیَهَا وَ هُوَ مُؤْمِنٌ فَاُولٰٓئِکَ کَانَ سَعْیُھُمْ مَّشْكُوْرًا.

এজন্য দেখা যায় বান্দা যখন তার সর্বোচ্চ হিম্মত কাজে লাগায় তখন সে সফল হয়।

তিন. মুত্তাকীদের হাকীকী সোহবত লাভ করা। অর্থাৎ আল্লাহর মুত্তাকী বান্দাদের সঙ্গে এমন সম্পর্ক গড়া, যার কারণে ভেতর—বাহির পরিবর্তন হয় এবং রুচি ও দৃষ্টিভঙ্গি গঠিত হয়।

চার. যেসকল আমল দ্বারা আল্লাহর মহব্বত বৃদ্ধি পায় সে আমলগুলো করা। যেমন : আল্লাহর নেয়ামতের কথা স্মরণ করা। বেশি বেশি যিকির করা। কোরআন তিলাওয়াত করা। যাদের ভেতর আল্লাহর মহব্বত আছে তাদের কাছে বেশি বেশি যাতায়াত করা ইত্যাদি।

 

সবর ও সংযম

মাসব্যাপী রমযানের রোযা রাখার দ্বারা মুমিন বান্দা সবরের অনুশীলন করেছে। এক মাস রোযা রাখতে গিয়ে বান্দা ধৈর্যের অনুশীলন করেছে। রোযা—পরিপন্থি কাজগুলো থেকে বিরত থেকে ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। এমনইভাবে প্রচণ্ড গরমে ক্ষুধা ও পিপাসায় ধৈর্যধারণ করেছে। সারা দিনের ক্লান্তির পর তারাবীহ নামাযে দাঁড়িয়ে থেকেও ধৈর্য ও সবরের পরিচয় দিয়েছে। ধৈর্য ও সবরের এ বিধান শুধু রমযান মাসের জন্য নয়। বরং সারা বছর ও সারা জীবনের জন্য। অতএব রমযানের সবর ও সংযমের অভ্যাস জীবনব্যাপী ধারণ করার নিয়ত করতে হবে।

 

সততা ও স্বচ্ছতা

একজন মুমিন বান্দা রমযান মাসে রোযার ক্ষেত্রে শতভাগ সততার পরিচয় দিয়ে থাকে। রিয়া অর্থাৎ লৌকিকতা থেকে মুক্ত থাকে। সততার অর্থ হলো ভেতর ও বাহির এক হওয়া। মুনাফেকী ও রিয়ামুক্ত খাঁটি রোযার ইবাদত দ্বারা বান্দা এতটাই আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভ করে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

لَخُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ تَعَالَى مِنْ رِيحِ الْمِسْكِ.

রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশকের চেয়েও উত্তম।—সহীহ বুখারী, হাদীস নং : ১৮৯৪

এক হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

كل عمل ابن آدم له إلا الصيام فإنه لي وأنا أجزي به.

আদম সন্তানের প্রতিটি আমল তার নিজের জন্য। তবে রোযা ছাড়া, কেননা তা শুধু আমার জন্য আর আমি নিজে সরাসরি তার প্রতিদান দেব।—সহীহ বুখারী, হাদীস নং : ১৯০৪

সততার পরিচয় দেওয়া, নেফাক ও রিয়া থেকে মুক্ত থাকা শুধু রমযানের আমল নয়; বরং এ বিধানগুলো সকল ইবাদত ও নেক আমলের ক্ষেত্রে অপরিহার্য। সকল কথা ও কাজের ক্ষেত্রে জরুরি। সুতরাং রমযান বিদায় নেবে কিন্তু রমযানের সাথে মুমিনের জীবন থেকে এ বৈশিষ্ট্যগুলো বিদায় নেবে না।

 

নফল রোযার প্রতি যত্নবান হওয়া

রমযানের প্রধানতম আমল ছিল রোযা। রমযানের রোযা রাখা ফরয। রমযান ছাড়া অন্য মাসে রোযা রাখা ফরয না হলেও নফল রোযার বিধান পুরো বছরই আছে। অতএব রমযান চলে গেলেও আমরা যেন পুরো বছর নফল রোযার আমল জারি রাখি। নিম্নে হাদীসে বর্ণিত কিছু নফল রোযার ফযীলত ও বিধান আলোচনা করা হলো।

 

শাওয়ালের ছয় রোযা

রমযানের পরই আসে শাওয়াল মাস। শাওয়াল মাসে বিশেষ কিছু রোযার কথা হাদীসে এসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

من صام رمضان ثم أتبعه ستًا من شوال كان كصيام الدهر.

যে ব্যক্তি রমযান মাসের রোযা রাখল অতঃপর শাওয়াল মাসে ছয় রোযা রাখল, সে যেন সারা বছর রোযা রাখল।—সহীহ মুসলিম, হাদীস নং : ১১৬৪

এ রোযা ঈদুল ফিতরের দিন ব্যতীত শাওয়াল মাসের যেকোনো ছয় দিন রাখা যায়। একসঙ্গেও রাখা যায় আবার পৃথক পৃথকভাবেও রাখা যায়। তবে ঈদের পরপর রেখে নেওয়াই উত্তম। হাদীসের কোনো কোনো ভাষ্য থেকে এমনটিই বুঝে আসে। ইমাম নববী রহ. বলেন,

والأفضل أن تصام الستة متوالية عقب يوم الفطر فان فرقها أو أخرها عن أوائل شوال الى اواخره حصلت فضيلة المتابعة لأنه يصدق أنه أتبعه ستا من شوال.

অর্থাৎ উত্তম হলো ঈদুল ফিতরের পর ধারাবাহিক ছয় দিন রোযা রাখা। তবে যদি পৃথক পৃথকভাবে রাখে বা বিলম্ব করে মাসের শেষের দিকেও রাখে তাতেও ফযীলত পাবে। কেননা সব পদ্ধতিতেই বলা যায় যে রমযানের পর শাওয়ালের ছয় রোযা রেখেছে।—শরহে মুসলিম : ৪/১৮৬

 

যিলহজের নয় তারিখে রোযা রাখা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ إِنِّي أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِي بَعْدَهُ. ‏

আরাফার দিনের অর্থাৎ যিলহজের নয় তারিখের রোযার বিষয়ে আমি আল্লাহর নিকট আশা করি যে, (এর দ্বারা) বিগত বছরের এবং পরবর্তী বছরের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।—সহীহ মুসলিম, হাদীস নং : ১১৬২

 

নয় বা এগারো তারিখসহ আশুরার রোযা রাখা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

صِيَامُ يَوْمِ عاشوراء أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ.

আশুরার রোযার বিষয়ে আমি আল্লাহর নিকট আশাবাদী যে, এর দ্বারা তিনি বিগত বছরের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন।—সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১৬২

অপর হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

صوموا يوم ‏عاشوراء وخالفوا فيه اليهود صوموا قبله يوماً، وبعده يوماً.

তোমরা আশুরার রোযা রাখো এবং ইহুদীদের সাদৃশ্য পরিহার করো। আশুরার পূর্বে বা পরে আরও একদিন রোযা রাখো।—মুসনাদে আহমাদ : ১/২৪১

 

শাবান মাসে বেশি বেশি রোযা রাখা

হযরত আয়েশা রাযি. বলেন,

ولم أره صائما من شهر قط أكثر من صيامه من شعبان كان يصوم شعبان كله—كان يصوم شعبان إلا قليلا.

আমি তাঁকে (অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে) শাবান মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে এত অধিক নফল রোযা রাখতে দেখিনি। তিনি (যেন) গোটা শাবান মাসই রোযা রাখতেন। তিনি (শেষের দিকে) সামান্য কয়েকদিন ব্যতীত পুরো শাবান মাসে রোযা রাখতেন।—সহীহ মুসলিম, হাদীস নং : ৭৮১

 

প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

ثلاث من كل شهر ورمضان إلى رمضان فهذا صيام الدهر كله.

প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখা এবং রমযান মাসের রোযা সারা বছর রোযা রাখার সমতুল্য।—সহীহ মুসলিম, হাদীস নং : ১১৬২

এ রোযাগুলো প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রাখা উত্তম।

হাদীস শরীফে এসেছে, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আবু যর গিফারী রাযি.—কে লক্ষ্য করে বলেছেন,

يا ابا ذر إِذا صُمْتَ مِنَ الشَّهْرِ ثَلاثًا، فَصُمْ ثَلاثَ عَشْرَةَ، وَأَرْبعَ عَشْرَةَ، وخَمْسَ عَشْرَةَ.

হে আবু যর, তুমি যদি মাসে তিন দিন রোযা রাখো তবে তেরো, চৌদ্দ ও পনেরো তারিখে রাখো।—জামে তিরমিযী, হাদীস নং : ৭৬১

 

প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ও সোমবার রোযা রাখা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

تعرض الأعمال يوم الاثنين والخميس فأحب أن يعرض عملي وأنا صائم.

সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমলসমূহ আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। তাই আমি পছন্দ করি যে, আমি রোযাদার অবস্থায় আমার আমল পেশ করা হোক।—জামে তিরমিযী, হাদীস নং : ৭৪৭

 

জামাতের সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা

ফরয নামাযের ক্ষেত্রে পুরুষের জন্য শরীয়তের বিধান হচ্ছে, পাঁচ ওয়াক্ত নামায মসজিদে জামাতের সাথে আদায় করা ওয়াজিব। শরীয়তসম্মত কোনো ওযর ব্যতীত মসজিদের জামাতে অংশগ্রহণ না করা জায়েয নেই। কাছাকাছি কোনো মসজিদ না থাকলে চেষ্টা করবে যেন একাকী নামায আদায় করতে না হয়, বরং দু—চার জন মিলে করে নেবে। পুরো রমযান মাসে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সময় মসজিদের জামাতে মুসল্লীদের অংশগ্রহণের দৃশ্য ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রতি ওয়াক্তে মসজিদ থাকত মুসল্লীদের দ্বারা ভরপুর। রমযান বিদায়ের সাথে সাথে মুসল্লীদের সংখ্যাও কমতে শুরু করে। ফজরের নামাযের সময় মসজিদগুলোতে মুসল্লীদের উপস্থিতির পরিমাণ দুঃখজনক। অন্যান্য ওয়াক্তেও রমযানের দৃশ্য দেখা যায় না। অথচ মসজিদে জামাতের সাথে নামায আদায় করার বিধান বারো মাস একই। রমযান আর বাকি এগারো মাসের মধ্যে বিধানের দিক থেকে বিন্দু পরিমাণ কোনো পার্থক্য নেই। শরীয়তসম্মত ওযর ব্যতীত জামাতে উপস্থিত না হওয়া অনেক বড় অপরাধ ও গোনাহের কাজ। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. থেকে বর্ণিত,

مَن سرَّهُ أن يلقَى اللَّهَ غدًا مُسلِمًا، فليحافِظ على هؤلاءِ الصَّلواتِ حَيثُ يُنادى بِهِنَّ، فإنَّ اللَّهَ شرعَ لنبيِّكُم صلَّى اللَّهُ عليهِ وسلَّمَ سُننَ الهدَى، وإنَّهنَّ مِن سُننَ الهُدَى، ولو أنَّكم صلَّيتُمْ في بيوتِكُم كَما يصلِّي هذا المتخلِّفُ في بَيتِهِ، لترَكْتُمْ سنَّةَ نبيِّكُم، ولو ترَكْتُمْ سنَّةَ نبيِّكم لضَللتُمْ.

যে ব্যক্তি কাল (হাশরের মাঠে) মুসলিম অবস্থায় আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে চায় তার উচিত এই নামাযগুলো মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে আদায় করা। কেননা আল্লাহ তোমাদের নবীর জন্য হেদায়েতের পথ সুনির্ধারিত করে দিয়েছেন। আর এই নামাযগুলো মসজিদে জামাতের সাথে আদায় করা এই হেদায়েতের পথসমূহের অন্তভুর্ক্ত। যদি তোমরা ঘরে নামায পড়তে থাকো যেভাবে পিছিয়ে থাকা লোক (মুনাফিক) ঘরে নামায আদায় করে তাহলে তোমরা তোমাদের নবীর পথ ছেড়ে দিলে। তোমরা তোমাদের নবীর পথ ছেড়ে দিলে গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে।—সহীহ মুসলিম, হাদীস নং : ১৪৮৬

হাদীস শরীফ থেকে বোঝা গেল, পুরুষদের জন্য জামাতের সাথে নামায আদায় করার বিধান শুধু রমযান মাসের সাথে সীমাবদ্ধ নয়। বরং এ বিধান বছরব্যাপী ও জীবনব্যাপী।

 

নফল নামাযের প্রতি যত্নবান হওয়া

ফরয নামাযের পর বান্দা আল্লাহর অধিক নৈকট্য লাভ করে সুন্নত ও নফল নামাযের মাধ্যমে। এজন্য বারো মাসের প্রতিদিন বিভিন্ন সুন্নত ও নফল নামাযের আমল রাখা হয়েছে। কিন্তু আমরা এই আমলগুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ করি না। ফলে নিয়মিত বেশি পরিমাণে নফল আদায়ের অভ্যাস গড়ে ওঠে না। কিন্তু রমযানে নিয়মিত দীর্ঘ ও অনেক রাকাতবিশিষ্ট তারাবীর নামায আদায় করা হয়েছে। সেহরীর জন্য শেষ রাতে উঠা হয়েছে বলে কিছু তাহাজ্জুদ নামাযেরও আমল হয়েছে। এ অভ্যাস বছরব্যাপী জারি রাখার জন্য প্রতিদিন হাদীসে বর্ণিত সুন্নত ও নফল নামাযগুলো আদায় করা যেতে পারে। নিম্নে প্রতিদিনের সুন্নত ও নফল আমলগুলো তুলে ধরা হলো :

 

তাহাজ্জুদ নামায

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

أفضل الصلاة بعد الفريضة صلاة الليل.

ফরয নামাযের পর সর্বোত্তম (নফল) নামায হলো রাতের নামায অর্থাৎ তাহাজ্জুদ নামায।—সহীহ মুসলিম, হাদীস নং : ১১৬৩

শেষ রাতে ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বে দু—চার রাকাত নফল নামায আদায় করার চেষ্টা করব। শেষ রাতের এ নামাযই তাহাজ্জুদের নামায। এর জন্য বিশেষ কোনো নিয়ত বা নিয়ম নেই। সাধারণ নফল নামায যেভাবে পড়তে হয় সেভাবেই পড়ে নেব।

 

ইশরাকের নামায

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

يا ابن آدم اركع لي أربع ركعات من أول النهار أكفك آخره.

হে আদম সন্তান, তুমি দিনের শুরুতে আমার জন্য চার রাকাত আদায় করো, আমি পুরো দিন তোমার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাব।—জামে তিরমিযী, হাদীস নং : ৪৭৫

সূর্যোদয়ের সময় থেকে ১৫ মিনিট পর ইশরাকের সময় শুরু হয়। সূর্য ঠিক মধ্য—আকাশে আসার আগ পর্যন্ত ইশরাকের সময় থাকে। তবে ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পড়ে নেওয়া উত্তম। এক হাদীসে এসেছে,

مَن صَلَّى الفَجرَ في جَماعةٍ، ثمَّ قعَدَ يَذكُرُ اللهَ تَعالى حتى تَطلُعَ الشَّمسُ، ثمَّ صَلَّى رَكعَتينِ، كانتْ له كأجْرِ حَجَّةٍ وعُمرةٍ.

যে ব্যক্তি ফজর নামায জামাতে আদায় করল। এরপর সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত বসে বসে আল্লাহর যিকিরে মগ্ন থাকল। এরপর (ইশরাকের ওয়াক্ত হলে) দুই রাকাত নামায পড়ল। সে এক হজ ও ওমরার সওয়াব লাভ করল।—জামে তিরমিযী : ৫৮৬

ইশরাকের নামায দুই রাকাতও পড়া যায়, চার রাকাতও পড়া যায়।

 

চাশতের নামায

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

من صلَّى الضُّحى ثنتي عشرةَ ركعةً بنى اللهُ له قصرًا في الجنَّةِ من ذهبٍ.

যে ব্যক্তি চাশতের বার রাকাত নামায আদায় করে আল্লাহ পাক জান্নাতে তার জন্য স্বর্ণের একটি ঘর নির্মাণ করেন।—জামে তিরমিযী, হাদীস নং : ৪৮৩

চাশতের নামায ন্যূনতম দুই রাকাত এবং অনুর্ধ্ব বারো রাকাত আদায় করা যায়।

অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

يُصْبِحُ عَلَى كُلِّ سُلاَمَى مِنْ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ فَكُلُّ تَسْبِيحَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَحْمِيدَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَهْلِيلَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَكْبِيرَةٍ صَدَقَةٌ وَأَمْرٌ بِالْمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ وَنَهْىٌ عَنِ الْمُنْكَرِ صَدَقَةٌ وَيُجْزِئُ مِنْ ذَلِكَ رَكْعَتَانِ يَرْكَعُهُمَا مِنَ الضُّحَى.

তোমাদের প্রতিটি অঙ্গের জোড়ার উপর সদকা আবশ্যক। সুবহানাল্লাহ বলা একটি সদকা, আলহামদুলিল্লাহ বলা একটি সদকা, আল্লাহ আকবার বলা একটি সদকা, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা একটি সদকা। সৎকাজের আদেশ করা একটি সদকা এবং অসৎকাজে বাধা প্রদান করাও একটি সদকা। অবশ্য চাশতের দুই রাকাত উল্লিখিত সকল কিছুর সমপরিমাণ সদকা।—সহীহ মুসলিম : ১/১৫০

 

তাহিয়্যাতুল অযু

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

من توضأ نحو وضوئي هذا ثم صلى ركعتين لا يحدث فيهما نفسه غفر له ما تقدم من ذنبه.

যে ব্যক্তি আমার অযুর মতো অযু করবে তারপর দুই রাকাত নামায আদায় করবে যাতে দুনিয়ার কোনো খেয়াল করবে না, তার পেছনের সকল (সগীরা) গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।—সহীহ বুখারী, হাদীস নং : ১৫৯

 

তাহিয়্যাতুল মসজিদ/দুখুলুল মসজিদ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

إذا دخل أحدكم المسجد فليركع ركعتين قبل أن يجلس.

তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করে, সে যেন বসার পূর্বে দুই রাকাত নামায আদায় করে নেয়।—সহীহ বুখারী, হাদীস : ৪৪৪

 

১২ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

مَن صلَّى اثنتَي عشرةَ ركعةً في يومٍ وليلةٍ بُنِي له بهن بيتٌ في الجنة.

যে ব্যক্তি দিবারাত্রিতে ১২ রাকাত নামায আদায় করবে। বিনিময়ে তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করা হবে।—সহীহ মুসলিম, হাদীস নং : ৭২৮

অপর হাদীসে এসেছে,

من ثابر على ثنتي عشرة ركعة من السنة بني الله له بيتا في الجنة أربع ركعات قبل الظهر وركعتين بعدها وركعتين بعد المغرب وركعتين بعد العشاء وركعتين قبل الفجر.

যে ব্যক্তি নিয়মিত দৈনিক ১২ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ আদায় করবে তার জন্য আল্লাহ তাআলা জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। ১২ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ হলো যোহরের আগে চার রাকাত, পরে দু—রাকাত, মাগরিবের পরে দু—রাকাত, এশার পরে দু—রাকাত এবং ফজরের আগে দু—রাকাত।-জামে তিরমিযী : ৪১৪

 

কোরআনের সঙ্গে অটুট বন্ধন

রমযান মাসের সঙ্গে কোরআনের গভীর ঊর্ধ্বজাগতিক সম্পর্ক রয়েছে। এজন্যই রমযানে কোরআন নাযিল করা হয়েছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে কোরআন তিলাওয়াতের প্রতি খুব যত্নবান হতেন। এই মাহে রমযানে আমাদেরও কোরআনের সাথে কিছু সম্পর্ক হয়েছিল বিভিন্নভাবে। নিজে কোরআন তেলাওয়াত করেছি, তারাবীতে হাফেয সাহেবদের তেলাওয়াত শুনেছি, কোরআন শিক্ষার মজলিসে অংশগ্রহণ করেছি, তাফসীর শুনেছি। এভাবে যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তা শুধু রমযান মাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। রমযান চলে যাওয়ার সাথে সাথে কোরআনের সঙ্গে সম্পর্কও শেষ হয়ে যাবে এটা কখনই কাম্য হতে পারে না। বরং কোরআনের সঙ্গে বিভিন্নভাবে সম্পর্ক থাকবে সারা বছর এবং সারা জীবন।

কোরআন তেলাওয়াতের আমল আর অন্যান্য নেক আমলের মধ্যে একটি পার্থক্য হলো, অন্যান্য আমলের ক্ষেত্রে পুরো আমলকে একটি আমল গণ্য করা হয়। কিন্তু কোরআন তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে সেরূপ নয়; বরং এখানে প্রতিটি হরফকে একটি নেক আমল গণ্য করা হয়। বিষয়টি নিম্নের হাদীস শরীফ থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ ، وَالحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا، لَا أَقُولُ الم حَرْفٌ، وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلَامٌ حَرْفٌ وَمِيمٌ حَرْفٌ.

যে ব্যক্তি কোরআনের একটি হরফ পাঠ করল, তার বিনিময়ে সে একটি নেকী লাভ করল। উক্ত একটি নেকী দশটি নেকীর সমতুল্য গণ্য করা হবে। আমি বলছি না যে, আলিফ—লাম—মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ (অর্থাৎ শুধু আলিফ—লাম—মীম এতটুকু পাঠ করার দ্বারা তার ত্রিশটি নেকীর সমতুল্য সওয়াব লাভ করবে।)।—জামে তিরমিযী, হাদীস নং : ২৯১০

 

দানসদকা করা

রমযানে অন্যান্য ইবাদতের পাশাপাশি দান—সদকার প্রতিও মুসলমানরা বেশ আগ্রহী হয়ে ওঠে। প্রত্যেকেই নিজ নিজ সাধ্যমতো দান করে। যাকাতদাতাদের অধিকাংশই রমযানে যাকাত আদায় করে থাকে। ঈদুল ফিতরে আছে সদকায়ে ফিতর আদায়ের বিধান। বিভিন্ন দ্বীনি কাজে আর্থিকভাবে অংশগ্রহণ করা নিয়ে ছিল অনেকের মাঝে প্রতিযোগিতা। এর মাধ্যমে গরিব—দুঃখীর প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ পেয়েছে। সম্পদের হক ও দ্বীনের নুসরতের সাধারণ কর্তব্য আদায় হয়েছে। কিন্তু গরিব—দুঃখীর প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করা, সম্পদের হক আদায় করা ও দ্বীনের সাহায্য করা শুধু রমযানের আমল নয়। বরং এটি বছরব্যাপী ও জীবনব্যাপী আমল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

مَا مِنْ يَوْمٍ يُصبِحُ العِبادُ فِيهِ إِلَّا مَلَكَانِ يَنْزِلانِ، فَيَقُولُ أَحَدُهُمَا: اللَّهُمَّ أَعْطِ مُنْفِقًا خَلَفًا، وَيَقُولُ الآخَرُ: اللَّهُمَّ أَعْطِ مُمْسِكًا تَلَفًا

প্রতিদিন সকালে দুজন ফেরেশতা আসমান থেকে নেমে আসেন। তাদের একজন বলেন, হে আল্লাহ, দানকারীকে তার বদলা দান করুন (অর্থাৎ আরও সম্পদ দান করুন)। অপরজন বলে, হে আল্লাহ, যে (দান না করে) সম্পদ আটকে রাখে তার সম্পদ ধ্বংস করে দিন।—সহীহ বুখারী, হাদীস নং : ১৪৪২

অতএব দান—সদকার আমল বছরজুড়ে জারি রাখতে হবে।

 

আল্লাহর দরবারে দুআ ও রোনাজারি

বরকতময় মাহে রমযানের একটি পুণ্য স্মৃতি মনের পাতায় বারবার ভেসে ওঠে। আল্লাহর বান্দারা আল্লাহর দরবারে দুআ করছেন, রোনাজারি করছেন, কাকুতি—মিনতি করছেন। এ দৃশ্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে মসজিদগুলোতে দেখা যেত। প্রতিটি মুসলিম পরিবারে দেখা যেত। বিশেষ করে শেষ রাতে ও ইফতারের পূর্ব—মুহূর্তে। রমযানের দুআ—মুনাজাতের সে পুণ্যময় দৃশ্য যেন এখন কেবল স্মৃতি হয়ে না থাকে। কারণ দুআ—মুনাজাত শুধু মাহে রমযানের আমল নয়। বরং এ আমল প্রতি দিনের, সারা বছরের, সমগ্র জীবনের।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সহীহভাবে বোঝার ও আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

 

লেখক সম্পর্কে
Avatar

editor

একটি কমেন্ট করুন