রাজার বুদ্ধিমত্তা
প্রাচীনকালে এক লোক অনেক দিনার—দিরহামের মালিক ছিল। একবার লোকটির দূর দেশে যাওয়ার প্রয়োজন হলো। তাই লোকটি তার দিনারগুলো একটি থলেতে রেখে শহরের কাজির কাছে আমানত রাখল—যিনি আমানতদারিতে প্রসিদ্ধ ছিলেন। বিশ^স্ত লোকের কাছে সম্পদ আমানত রেখে লোকটি নিশ্চিন্তে সফরে বেরিয়ে পড়ল। দিন যায় মাস যায়। এভাবে তিন বছর পার হয়ে গেল। তিন বছর পর লোকটি বাড়ি ফিরে এলো। ফিরে এসে কাজির সঙ্গে সাক্ষাৎ করল। তাকে দেখে কাজি খুব আনন্দ প্রকাশ করল। সহীহ—সুস্থভাবে ফিরে আসতে পারায় আল্লাহ পাকের শোকর আদায় করল। তারপর আমানতের থলেটি তাকে ফিরিয়ে দিয়ে বলল, এই নাও তোমার আমানত। তোমাকে তোমার আমানত বুঝিয়ে দিলাম।
লোকটি থলে হাতে নিয়ে ভালোভাবে দেখল, থলের মোহর যেমন ছিল তেমনই অক্ষত আছে। তাই সে কাজির শোকর আদায় করল এবং বাড়ি ফিরে এলো। বাড়ি এসে থলে খুলতেই তার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। স্বর্ণের দিনারের পরিবর্তে তাতে রুপার দিরহাম রাখা। এই দৃশ্য দেখে দুঃখ—ভারাক্রান্ত মনে সে চিৎকার করে কাঁদতে লাগল। আফসোসে বুক চাপড়াতে লাগল। হায়! আমার দিনার চুরি হয়ে গেছে! আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে। কান্নাকাটি করে লোকটি যখন কিছুটা স্বাভাবিক হলো তখন সে কাজির কাছে ছুটে গেল। মৃদু কণ্ঠে তাকে বলল, আমার থলেতে ছিল সোনার দিনার, এখন দেখি রুপার দিরহাম। এ নিশ্চয়ই তোমার কারসাজি। হে বিশ^াসঘাতক কাজি! ভালোয় ভালোয় আমার দিনার আমাকে ফিরিয়ে দাও; নতুবা আমি রাজার কাছে বিচার চাইতে যাব।
কাজি শান্ত কণ্ঠে বলল, এই মিয়াঁ! তোমার থলে যেমন ছিল তেমনই আমি তোমাকে ফিরিয়ে দিয়েছি। তাতে কী ছিল, আমি কি জানি?
এ—কান ও—কান হয়ে বিষয়টি রাজার কানে গেল। রাজা ভেবে—চিন্তে দেখলেন নিশ্চই এতে কোনো রহস্য আছে। রহস্য উদঘাটনে রাজা একটি কৌশলের আশ্রয় নিলেন। কী সেই কৌশল শুনবে?
শোনো তাহলে। রাজা তার তোষকটি এক টানে ছিঁড়ে ফেললেন। তারপর দক্ষ রিফুকার খুঁজে আনতে নির্দেশ দিলেন। নিখুঁতভাবে যে রিফু করতে পারবে তার জন্য বড় পুরস্কার ঘোষণা করলেন।
পুরস্কারের ঘোষণা শুনে রাজদরবারে অনেক রিফুকারী এসে ভিড় করল। তাদের থেকে বাছাই করে কয়েক জনকে রিফু করতে বললেন। বাছাইকৃতদের মধ্যে একজনের রিফু খুব নিখুঁত হলো। রাজা তার রিফু ওই লোকটির থলের রিফুর সঙ্গে মিলিয়ে দেখেন। এই রিফু আর থলের রিফু হুবহু একই। তখন রাজা রিফুকারীকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি কোনো থলে রিফু করেছিলে?
সে উত্তর দিল, জি জাহাঁপনা। তিন বছর পূর্বে আমি কাজি সাহেবের একটি থলে রিফু করেছিলাম। বিনিময়ে তিনি আমাকে দশ দিরহাম দিয়েছিলেন।
রিফুকারীর উত্তর শুনে রাজার কাছে পুরো বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে গেল। তিনি কাজিকে হাজির করার নির্দেশ দিলেন। কাজি হাজির হয়ে যখন রাজার সামনে রিফুকারীকে দেখতে পেল তখন সে বুঝতে পারল সব রহস্য ফাঁস হয়ে গেছে। এখন মিথ্যা বলে আর কোনো লাভ হবে না। তাই নিজের অপরাধ স্বীকার করে লোকটিকে তার দিনার ফিরিয়ে দিল। লোকটি শোকর আদায় করতে করতে বাড়ি ফিরে গেল।
—মুহাম্মদুল্লাহ বিন আতাউল্লাহ
MASHALLAH