প্রতিষ্ঠাতা: মুজাহিদে আযম হযরত মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ.

জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলূম ফরিদাবাদ, ঢাকা-এর মুখপত্র

প্রতিষ্ঠাকালঃ ১৯৩৭ ঈসায়ী

হাকীমুল উম্মতের মজলিস বয়ান ও আলোচনার নীতিমালা

হাকীমুল উম্মতের মজলিস বয়ান ও আলোচনার নীতিমালা

হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ.


হামদ ও সালাতের পর।

اَلرَّحْمٰنُ ۙ﴿۱﴾  عَلَّمَ الْقُرْاٰنَ ؕ﴿۲﴾  خَلَقَ  الْاِنْسَانَ ۙ﴿۳﴾  عَلَّمَهُ الْبَیَانَ ﴿۴﴾

অর্থ: রহমান কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন। মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তারপর তাকে বলতে শিখিয়েছেন।—সূরা আর—রহমান, ৫৫ : ১—৪

 

اَلرَّحْمٰنُ  عَلَّمَ الْقُرْاٰنَ আয়াতের তাফসীর এবং ওয়াজের উদ্দেশ্য

আল্লাহ পাক এই রুকূ ও সূরাকে স্বীয় বরকতময় নাম আর—রাহমান দিয়ে শুরু করেছেন। এরপর নিজের তিন নেয়ামতের কথা আলোচনা করেছেন—

عَلَّمَ الْقُرْاٰنَ ؕ﴿۲﴾  خَلَقَ  الْاِنْسَانَ ۙ﴿۳﴾  عَلَّمَهُ الْبَیَانَ ﴿۴﴾

এক. কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন।

দুই. মানুষ সৃষ্টি করেছেন।

তিন. তাকে বলতে শিখিয়েছেন।

বর্ণনাশৈলী থেকে বোঝা যায়, এই তিনটি নেয়ামত ও অনুগ্রহ আল্লাহ পাকের রহমত। আর রহমান অতিশয়তা জ্ঞাপক শব্দ। মর্মার্থ এই দাঁড়াল, বড় রহমতওয়ালা সত্তা তাঁর রহমতেরই সুবাদে কোরআন শিখিয়েছেন। রহমতেরই সুবাদে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। রহমতের সুবাদেই তাকে কথা ও বলা শিখিয়েছেন।

বাকশক্তির নেয়ামতের ওপর কোরআনের নেয়ামত ও সৃষ্টির নেয়ামতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কারণ

যদিও এখানে বাকশক্তির নেয়ামতের কথা আলোচনা করা উদ্দেশ্য তবে এই নেয়ামতের আলোচনার পূর্বে মানব সৃষ্টির নেয়ামতের কথা আলোচনা করার কারণ হলো, প্রথমে মানুষের অস্তিত্ব হতে হবে তারপর বাকশক্তির নেয়ামত লাভের যোগ্যতা সৃষ্টি হবে। আর কোরআন শিক্ষার আলোচনা সর্বাগ্রে আনার কারণ হলো, কোরআনে পাক এবং শরীয়তের ইলম ছাড়া কোনো বাকশক্তি ও বক্তৃতা অর্থবহ হতে পারে না।

 

কোরআন শিক্ষার প্রতি অমনোযোগিতার অভিযোগ

ব্যাপকভাবে তালিবে ইলমরা এবং বয়ানকারীরাও নিজের ওয়াজ ও বয়ানে কোরআন শিক্ষার বিষয়টি এড়িয়ে যায়। তারা অনেক বিষয়ে শরীয়তের সীমারেখা লঙ্ঘন করে ফেলে। যেমন কতক নওজোয়ান তালিবে ইলমকেও দেখি, তারা বয়ান—বক্তৃতায় শরীয়ত নির্দেশিত অনেক বিষয় উপেক্ষা করে। মিথ্যা—বানোয়াট কল্প—কাহিনি আলোচনা করে। কোথাও বক্তৃতা ও আলোচনায় ইউরোপীয় পদ্ধতি অবলম্বন করে। পরন্তু গজবের বিষয় হলো, তাদের উস্তাদ ও মুুুুুরব্বিরাও এ ধরনের পদ্ধতি অনুসরণে বাধা দেয় না। বরং বয়ান ও বক্তৃতায় এসব বিষয়কে ভালো ও ওজস্বী মনে করে থাকে।

 

বয়ান—বক্তৃতায় আড়ম্বড়তা ও কৃত্রিমতার কারণ

আলোচনা ও বক্তৃতায় এধরনের নতুন জিনিস এবং কৃত্রিমতার কারণ হলো, একালের বক্তা ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইলমের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কেননা তারা কোরআনের ইলম থেকে একেবারে রিক্তহস্ত। আসল জিনিস ভেতরে নেই, যা আধ্যাত্মিক শক্তিবলে অন্তরে প্রভাব বিস্তার করে—হোক তা যতই সাদামাটা—তাই তারা শব্দের তর্জন গর্জন ও কৃত্রিমতা দিয়েই আলোচনা জোরদার করার চেষ্টা করে। কিন্তু চিন্তা—ভাবনার পর যখন শব্দের তর্জন গর্জনের খোলস সরে যায় তখন শব্দ নিছক শব্দই থেকে যায়। বক্তব্য প্রভাবহীন হয়ে পড়ে। হাফেজ সিরাজী রহ. বলেন,

خوش بود گر محک تجربہ آید بہ میان

تا سیہ  روی شود ہر کہ در و غش باشد

আরও বলেন,

حسد چہ می بری اے ست نظم بر حافظ

قبول خاطر وحسن سخن خدا داد اوست

আরও বলেন,

دل فریباں نباتی ہمہ زیور پسند

دلبر ماست کہ با حسن خداداد اوست

এই তিনো কবিতার সারকথা হলো, যেটা নির্যাস হবে পরীক্ষার সময় সাদামাটা হওয়া সত্ত্বেও, অত্যন্ত উজ্জ্বল ও দ্বীপ্তিময় হয়ে ফুটে উঠবে। এমনকি দ্বীপ্তি ও উজ্জ্বলতা আরও দ্বিগুণ হয়। আর যেটা নকল হবে পরশ পাথরে ঘর্ষণের পর তা মলিন ও কৃষ্ণকায় হয়ে যাবে। আর তার চাকচিক্যের খোলস খসে পড়বে।

 

আল্লাহওয়ালাদের সাদামাটা কথাবার্তা কৃত্রিম বক্তৃতামালার চেয়ে অধিক আকর্ষণীয় ও হৃদয়গাহী হয়ে থাকে

আমরা আল্লাহওয়ালাদের দেখেছি—তাদের সাদামাটা কথা ও শব্দ এমন সুন্দর ও হৃদয়গ্রাহী হয় যে, বড় বড়  কৃত্রিম ও চটকদার শব্দও তেমন সুন্দর ও হৃদয়গ্রাহী হয় না। চটকদার ও চাতুর্যপূর্ণ যত বক্তৃতা হয় তার সৌন্দর্য প্রথম শোনা পর্যন্ত হয়ে থাকে। গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যায়, তা একেবারে অন্তঃসারশূন্য ও বুলি সর্বস্ব। কেননা, তাতে ইলমের পুঁজি থাকে না। পক্ষান্তরে আল্লাহওয়ালাদের সাদামাটা কথাবার্তার অবস্থা এমন হয়ে থাকে যে, চিন্তা—ভাবনা যতদূর গভীর হতে থাকবে তার শোভা ও সৌন্দর্য ততই বৃদ্ধি পেতে থাকবে।

ডাক বিভাগের এক পরিদর্শক আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি সত্য সন্ধানী ছিলেন। সত্য সন্ধানের বৈশিষ্ট্য হলো, সত্য সন্ধানীর সামনে হাকীকত ও বাস্তবতা পরিষ্কার হয়ে যায়। তিনি বলেন, জনাব, মিডিয়া জগতে যারা খুব বিখ্যাত তাদের সঙ্গে উঠা—বসা, চলাফেরা ও তাদের ভাষণ—বক্তৃতা শোনার সুযোগ আমার হয়েছে। তাদের ভাষণ শুনে আমি মনে করতাম তাদের মতো গবেষক বুঝি আর দুনিয়াতে কেউ নেই। কিন্তু যখন থেকে আল্লাহওয়ালাদের ওয়াজ ও বক্তৃতা শুনতে শুরু করেছি—যারা না লেকচার দিতে পারে, না বড় বড় কথা বলে—তখন থেকে বুঝতে পেরেছি প্রকৃত ইলম কী জিনিস।

 

আল্লাহওয়ালাদের বয়ান ও আধুনিক তরজের বক্তৃতার পার্থক্য

আরও বলতেন, আল্লাহওয়ালা এবং আধুনিক লোকদের বক্তৃতার মধ্যে আমি যে পার্থক্য উপলব্ধি করেছি তা এই, আধুনিক লোকদের বক্তৃতা প্রাথমিক দৃষ্টিতে বড় চিত্তাকর্ষক ও জোরালো আবেদনপূর্ণ মনে হয় এবং সত্য এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ মনে হয়। কিন্তু যখন তা নিয়ে গভীর চিন্তা করা হয় তখন এর স্বরূপ প্রকাশ পেয়ে যায়। আর তা অসার, দুর্বল, অবাস্তব ও কৃত্রিম মনে হয়। প্রাথমিক দৃষ্টিতে আল্লাহওয়ালাদের বয়ান নিরস ও ফাঁকা মনে হয় কিন্তু তাতে যতই গভীরভাবে চিন্তা করা হয় ততই গভীর আবেদনপূর্ণ ও পুরোপুরি বাস্তবসম্মত মনে হয়। হৃদয়ে গভীরভাবে রেখাপাত করে। ওসবের চোখ ধাঁধানো বৈচিত্র্য হৃদয় থেকে ধুয়ে মুছে ছাফ হয়ে যায়।

 

আলেমরা লেকচার দিতে পারে না এই অভিযোগের উত্তর

এখান থেকে আলেমদের ব্যাপারে উত্থাপিত একটি অভিযোগের জবাবও বেরিয়ে এসেছে যে, তারা লেকচার দিতে পারে না।

জবাব হলো, আমাদের নিকট যখন কোরআন—হাদীসের শিক্ষা—দীক্ষা রয়েছে তখন বাহ্যিক তর্জন গর্জন কী দরকার?

ز عشق  ناتمام  ما جمال یار مستغنی  است/

بآب و رنگ و خال و خط  چہ  حاجت روئے زیبا را

প্রিয়তমের অপরূপ রূপ—লাবণ্যের সামনে অপরিণত ইশক নি®প্রয়োজন / অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী প্রিয়তমের আলতা স্নো ও পাউডারের কী দরকার?

আমাদের লেকচার শেখার প্রয়োজন নেই। আমি তো পরিষ্কার বলি, যে ব্যক্তি বক্তৃতা বা আলোচনায় লেকচারের পদ্ধতি গ্রহণ করে সে প্রথম দিন থেকেই আমাদের হৃদয়ে অপছন্দের বীজ রোপণ করে দিয়েছে।

 

‘আমরা উম্মী জাতি’ হাদীসের অর্থ

আমাদের তো ওই পদ্ধতিই প্রিয় যার দিকে ‘আমরা উম্মী জাতি’ হাদীসের ইশারা রয়েছে। أمية শব্দের অর্থ, সহজ সরল সাদামাটা। প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর আন্তরিক চাওয়া হলো, তাঁর উম্মত সাদাসিধা থাকুক। তাই তিনি نحن—আমরা শব্দ ব্যবহার করে পুরো উম্মতকে অন্তভুর্ক্ত করে নিয়েছেন। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর অনুসরণের মর্ম এটাই যে প্রতিটি বিষয় যেন একেবারে সাদামাটা হয়। উম্মিয়্যাহ উম্মুন শব্দের সঙ্গে সম্পৃক্ত। উম্মুন মাকে বলে। মর্মার্থ এই, মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর যেমন শিশু একেবারে সাদামাটা ও অকৃত্রিম থাকে। এ অকৃত্রিমতার সুবাদে প্রতিটি মানুষ তাকে ভালোবাসে। নতুবা বাচ্চাদের গায়ে যে ময়লা ও নাপাকির স্তুপ থাকে তাতে তো তাদের প্রতি ঘৃণা লাগার কথা ছিল। এমনকি এই সরলতা ও অকৃত্রিমতা যেসব বৃদ্ধ মানুষের মধ্যে থাকে তাদের মধ্যেও এমন সৌন্দর্যের আকর্ষণ ও সম্মোহন থাকে যে, বড় বড় সুন্দর—সুন্দরীরাও তাদের জন্য জীবন উৎসর্গ করে।

সুতরাং উম্মীয়্যাতুন এর আসল অর্থ হলো, সরলতা সহজতা ও অকৃত্রিমতা। যা সর্বপ্রকার কৃত্রিমতা ও লৌকিকতা থেকে মুক্ত। উম্মীয়্যাতুন এর যে প্রসিদ্ধ অর্থ তথা লেখা—পড়া না জানা এটিও এই সহজতার একটি শাখা। সুতরাং বয়ান ও বক্তৃতায়ও কোনো ধরনের লৌকিকতা ও কৃত্রিমতা থাকা উচিত নয়। পুরোপুরি ধোকা ও কৃত্রিমতা মুক্ত থাকা উচিত। অবশ্য সহজতা ও সরলতার পাশাপাশি পরিষ্কার—পরিচ্ছন্ন থাকা উচিত কিন্তু এ জিনিস এখন একেবারে নেই বললেই চলে।

 

আলেমদের কথাবার্তায় বিজাতীয় ভাষার বাকভঙ্গি এসে যায় যা আমাদের মাতৃভাষার বৈশিষ্ট্য—বিরুদ্ধ

আমরা দেখতে পাই, আলেমদের কথাবার্তায়ও ইংরেজি মিশ্রিত উর্দু বাকশৈলী এসে যায়। শরীয়তের শিক্ষার কথা না হয় বাদই রইল তবুও এ দিকটি লক্ষ রাখা উচিত যে, উর্দু আমাদের মাতৃভাষা। আর প্রতিটি ভাষারই নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। এই নতুন বাকশৈলী গ্রহণ করে ইংরেজি ভাষার বৈশিষ্ট্যকে উর্দু ভাষার অন্তভুর্ক্ত করে নেওয়া হয়েছে। এটা দিন দিন বেড়েই চলছে, ইংরেজির বৈশিষ্ট্য উদুর্তে খাপ খায় না। এর দ্বারা ভাষা অসুন্দর ও খারাপ হয়ে যায়। এরা নিজেদেরকে উর্দু ভাষার রক্ষক মনে করে। অথচ গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে, এরা উর্দু ভাষার সর্বনাশকারী। কেননা, প্রতিটি ভাষার একটি মাদ্দা তথা মূলধাতু এবং একটি আকৃতি তথা বাহ্যরূপ থাকে। এতদুভয়ের সমন্বয়ে ভাষা গঠিত হয়। তো যখন উর্দুভাষার বাহ্যরূপ ঠিক না থাকবে তখন তা কিসের উর্দু থাকবে।

 

উর্দুভাষার সংরক্ষকদের কর্তব্য হলো এর বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণে গুরুত্ব দেওয়া

সুতরাং আমরা উর্দু ভাষার সংরক্ষক হওয়ার দাবিদার হয়ে থাকলে আমাদের কর্তব্য হলো, এর বৈশিষ্ট্যসমূহ অক্ষুণ্ণ রাখা। আমাদের কথাবার্তা অপরিচিত কেউ শুনলে যেন মনে করে আমরা এক বর্ণও ইংরেজি জানি না। আর না ইংরেজি মিশ্রিত উর্দুর সঙ্গে আমাদের কোনো পরিচয় আছে।

 

আমাদের আসল ভাষা আরবী

আশ্চর্যের বিষয় হলো, আজকাল আরবী পড়–য়া ছেলেদের বক্তৃতায়ও অধিকহারে ইংরেজি শব্দ আসতে থাকে। তাদের বয়ান—বক্তৃতায় আরবী শব্দ এলে আশ্চর্যের কিছু ছিল না। কেননা, প্রথমত তারা আরবী পড়েছে। দ্বিতীয়ত আরবী আমাদের ধর্মীয় ভাষা। এজন্যও আমাদের প্রাচীন মূল মাতৃভাষা আরবী ভাষাই। আমাদের পূর্বপুরুষরা আরব দেশ থেকেই এখানে এসেছিলেন। হিন্দুস্থানে স্থায়ীভাবে বসবাসের পর খুব অল্প দিন হলো উর্দু আমাদের মাতৃভাষা হয়েছে।

 

আরবীভাষা সংরক্ষণ না করায় আফসোস

অনেক সময় আমার খুব আফসোস হয়ে থাকে, আমাদের পূর্বপুরুষরা হিন্দুস্তানে আমাদের নসবনামা—বংশধারা পর্যন্ত সযত্নে সংরক্ষণ করেছেন। কিন্তু ভাষা সংরক্ষণ করেননি। অথচ তা তাদের জন্য কঠিন কিছু ছিল না। যেমন সাহাবায়ে কেরাম যে সব দেশ জয় করেছেন সেখানে নিজেদের ভাষা বাদ দিয়ে দেননি। ফলে সে সব দেশের সাধারণ জনগণ তাদের ভাষা গ্রহণ করে নিয়েছে। আজ পর্যন্ত সে সব দেশে ওই ভাষাই প্রচলিত ভাষা। উদাহরণত মিশরের কথাই ধরুন। সাহাবায়ে কেরামের সুবাদে গোটা মিশরের ভাষা আরবী। অথচ গোটা মিশরের ধর্ম ইসলাম নয়। যাই হোক, অ—সাহাবীদের মধ্যে সাহাবীদের মতো বরকত না থাকায় তাদের বিজীত অঞ্চলের জাতিবর্গ যদি তাঁদের ভাষা গ্রহণ না করে থাকে তাহলে অন্তত তাঁরা নিজেরা নিজেদের ভাষা সংরক্ষণ করতেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো, হিন্দুস্তানে এসে আমাদের পূর্বপুরুষগণ শুধু নিজেদের ভাষাই সংরক্ষণ করেননি, এমন নয়। বরং নিজেদের ভাষাও স্থানীয় ভাষা দ্বারা বদলে দিয়েছেন।

 

ভাষা পরিবর্তনের আসল কারণ

গভীরভাবে চিন্তা করলে বোঝা যায় এর কারণ হলো, আমাদের পূর্বপুরুষরা এদেশে একাকী এসেছিলেন। সঙ্গে করে পরিবার নিয়ে আসেননি। এখানে এসে নওমুসলিম নারীদের বিয়ে করে নিয়েছিলেন। তাই মায়ের প্রভাবে সন্তানদের ভাষা বদলে গেছে। মায়ের জীবনাচারের প্রভাবেই মুসলমানদের মধ্যে আজ পর্যন্ত মাসের তৃতীয় তারিখ উদ্যাপন ইত্যাদির মতো অনৈসলামী প্রথা রয়ে গেছে। ভারতীয় মহিলারা যেহেতু আপন খানদানের রসম—রেওয়াজ জানত তাই ওইসব প্রথা পালনের দিবস উপস্থিত হলে তারা হয়তো বলে থাকবে, আমরা এ ধরনের সময়ে এমন এমন করতাম। তো ওই মনীষীগণ এতে খারাপ কিছু না দেখলে নিছক মনোরঞ্জনের জন্য সামান্য পরিবর্তন করে যথা হিন্দি শ্লোকের পরিবর্তে সূরা ফাতেহা পড়ার কথা বাতলে দিয়ে অনুমতি দিয়ে থাকবেন। তখন তো তা সাময়িক মনোরঞ্জনের জন্য ছিল। এখন লোকজন তা ফরযে আইন মনে করতে শুরু করছে। আলেমরা তা করতে নিষেধ করছেন। কেননা, জায়েয কাজকে জরুরি ও আবশ্যক মনে করে নেওয়া বিদআত। ফলে তাঁদের (আলেমদের) ওয়াহাবী ইত্যাদি আরও কীসব অকথ্য কথা বলতে শুরু করেছে।

মোটকথা, এ মাতৃকেন্দ্রিক প্রভাবের ফলে হিন্দুস্তানে আরবী ভাষার প্রচলন ঘটেনি। আব্বাজান হয়তো আরবীই বলে থাকবেন, কিন্তু আম্মাজান যেহেতু হিন্দি আর বাচ্চা বেশিরভাগ মায়ের কাছেই থাকে; তাই কিছু আরবী আর কিছু হিন্দি মিলে একটি সমষ্টিগত রূপ দাঁড়িয়ে গেছে। যদি ঘরে আরবী ভাষা চলতো আর বাইরে এসে লোকদের মুখে হিন্দি শুনতো তাহলে উভয় ভাষায়ই অক্ষত থাকত। যেমন আমরা বাঙ্গালিদের এবং ইংরেজদের দেখি তারা নিজের ভাষাও বলে আবার উদুর্ও বলে। কারণ এটাই, তাদের ঘরে সেই বাংলা এবং ইংরেজী কথা হয়। আমাদের পূর্বপুরুষরা হয়তো এ ব্যাপারে গুরুত্ব দেননি, কিংবা গুরুত্ব দেওয়ার সুযোগ হয়নি। তাই আমাদের ভাষা যৌগিক ভাষায় পরিণত হয়েছে। কিছু আরবী কিছু হিন্দি। যৌগিকতার কথা আসাতে প্রসঙ্গক্রমে একটি ঘটনা মনে পড়ল। হযরত মাওলানা ইয়াকুব নানুতুবি রহ. বলতেন, মক্কায় আমি আরবী হিন্দি বাচ্চাকে এ বলে কাঁদতে দেখেছি,

انا بازار جاوں

আমি বাজারে যাব।

মোটকথা, মায়ের হিন্দিত্ব ভাষার আরবীত্বকে বিনাশ করে দিয়েছে। ফলে মূলভাষা বরবাদ হয়ে গেছে। কেউ হয়তো বলতে পারে, আমরা তো মাতৃভাষাকে আসল মনে করি। এর জবাবে আমি বলব, বংশধারা যখন বাবাকে দিয়ে তখন বাবার ভাষাকে কেন আসল ভাষা আখ্যায়িত করা হচ্ছে না।

 

উর্দু ভাষার কোন রূপটি গ্রহণযোগ্য

আমাদের আসল যেহেতু আরবী সেহেতু উর্দুতে যদি মিশ্রণ ঘটাতে হয় তাহলে বড় জোর এটুকু করতে পারতাম যে, আরবীকে উর্দু অনুগামী করে দিতাম। ইংরেজির অনুগামী করে দেওয়ায় এবং তার অবাধ মিশ্রণের ফলে উর্দু ভাষা অনেকটাই আপন চেহারা হারিয়ে ফেলেছে। আসল উদুর্ভাষা তা যা চাহার দরবেশ কিংবা কবি গালিবের উদুর্য়ে মুআল্লা। আর এতে মিশ্রণ ঘটাতে হলে আরবীর মিশ্রণ ঘটানো উচিত। কেননা, আরবী ভাষার মিশ্রণ লুতফ ও স্বাদকে দ্বিগুণ করে দেয়। দেখুন ফার্সিতে যদি কোথাও একটি আরবী বাক্য এসে যায় তাহলে মনে হয় যেন ফুল ঝরছে।

আমাদের ভাষায় ইংরেজী মিশ্রণের ফলে যে নতুনত্ব সৃষ্টি হয়েছে তা অবশ্য পরিত্যাজ্য। বিশেষত এ কারণেও যে এতে একটি শরঈ দিকও রয়েছে। তা হলো এই, ইংরেজী গ্রহণ করা মানে এক ফাসেক জাতির সাদৃশ্য গ্রহণ করা। আর খোদ এই সাদৃশ্য হারাম। হাদীস শরীফে আছে,

من تشبه بقوم فهو منهم

(যে অন্য জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে সে তাদেরই একজন বলে গণ্য হয়।) কেননা সাদৃশ্যের মধ্যে লেবাস—পোশাক—জীবন—যাপন পদ্ধতি সবই অন্তভুর্ক্ত। এই দলীল বর্ণনার কারণে কেউ হয়তো আলেমদের সাম্প্রদায়িক আখ্যায়িত করতে পারে। তবে আমাদের এর কোনো পরোয়া নেই। কেননা, আমরা নিজেদের অবস্থান পাকা ও মজবুত দলীল—প্রমাণ দিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছি। এই হাদীস নিজের অনুসারীদের জন্য পড়ে দিয়েছি। নতুবা মাসআলা আপন স্থানে সবার বিরুদ্ধেই হুজ্জত তথা ভিন জাতির সাদৃশ্য কোনো ক্ষেত্রেই জায়েয নয়।

দেখুন, কোনো পুরুষ নারীদের পোশাক পরে পুরুষদের মাঝে এসে বসে গেলে খারাপ মনে করা হয় কেন? সে সাদৃশ্য অবলম্বন ছাড়া আর কী কাজ করেছে? মোটকথা, এ কালের ভাষণ—বক্তৃতায় এসব অনাচারে ভরে গেছে। সুতরাং, যে সকল বয়ান—বক্তৃতায় শরঈ নীতিমালা লঙ্ঘন করা হয় সেসব বয়ান—বক্তৃতা হওয়া না—হওয়া সমান। আর প্রমাণিত হয়ে গেল, বয়ান ও বক্তৃতার শিক্ষা মানুষের বাহ্যিক অস্তিত্বের ওপর নির্ভরশীল অর্থাৎ আগে মানুষ অস্তিত্ব লাভ করে পরে বয়ান—বক্তৃতা শিখে।

তাই আয়াতে প্রথমে মানব সৃষ্টি কোরআন শিক্ষার রহমত হওয়ার বিষয়টি আলোচনা করেছেন। কেননা এই দুই রহমতের পরেই কথন ও বলনের শিক্ষা আস্থাযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য পন্থায় পাওয়া যেতে পারে। কেননা, বয়ানের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য আমল আর আমলের ক্ষেত্রে ওই আমলই গ্রহণযোগ্য যা কোরআনে পাকের শিক্ষা মুতাবেক, যাতে হাদীস এবং ফিক্হও অন্তভুর্ক্ত। কেননা, কোরআন শরীফ মতন ও মূলপাঠ পর্যায়ের আর সকল শরঈ ইলম তার ব্যাখ্যা। কোনো হুকুম সরাসরি কোরআন শরীফের শব্দমালা থেকেই বুঝে আসে, আর কিছু হুকুম গভীর চিন্তা—ভাবনার পর বুঝে আসে।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. এর কাছে এক মহিলা এসে আরজ করল, আমি শুনেছি, (কপাল চওড়া দেখানোর জন্য) লোম উৎপাটনকারীণিকে আপনি অভিশাপ দেন?

তিনি উত্তর দিলেন, যাকে কোরআন অভিশাপ দেয় আমি কেন তাকে অভিশাপ দেব না।

মহিলা বলল, আমি তো পুরো কোরআন শরীফ পড়েছি, কোথাও এ কথা পাইনি।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. বললেন,

لو قرأتيه لوجدتيه

অর্থাৎ, যদি তুমি পড়তে তাহলে তাতে এ মাসআলা পেয়ে যেতে।

কেননা এসব কাজ থেকে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। আর কোরআন শরীফের ইরশাদ হলো, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের যা হুকুম করেন তা কবুল করো। এভাবে এ হুকুমও কোরআনে পাকের হুকুম বলে গণ্য হয়ে গেছে।

যেভাবে হযরত ইবনে মাসউদ রাযি. হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর হুকুমকে কোরআনী হুকুম আখ্যায়িত করেছেন। আর খোদ কোরআন শরীফেও আছে,

فَاِذَا قَرَاْنٰهُ  فَاتَّبِعْ  قُرْاٰنَهٗ ﴿ۚ۱۸﴾  ثُمَّ  اِنَّ عَلَیْنَا بَیَانَهٗ ﴿ؕ۱۹﴾.

অর্থাৎ যখন আমি ফেরেশতার যবানে কোরআন পড়ি তখন তাঁর কেরাতের অনুসরণ করুন। অর্থাৎ নীরবে শুনুন। তারপর তার বয়ানের দায়িত্ব আমার। আমি তার মর্মার্থ আপনাকে বুঝিয়ে দেবো।

যেমন হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরআন শরীফের সংক্ষিপ্ত বিষয় ব্যাখ্যা করে স্পষ্ট করেছেন তথা জটিল বিষয়াবলি বুঝিয়ে দিয়েছেন। হাদীসের কোথাও জটিল ও অস্পষ্টতা থাকলে তা মুজতাহিদগণ পরিষ্কার করে দিয়েছেন। এভাবে اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ (তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করে দিয়েছি) এর পূর্ণ বাস্তবায়ন ঘটেছে। এরপর আর কোনো ইজতেহাদের প্রয়োজন রয়নি। তাই চতুর্থ শতাব্দীতে ইজতেহাদী যোগ্যতার সমাপ্তি ঘটে। কেননা, তখন আর তার প্রয়োজন রয়নি।

 

যে জিনিসের যতক্ষণ প্রয়োজন আল্লাহ পাক সে জিনিস ততক্ষণ পর্যন্ত সৃষ্টি করতে থাকেন

আল্লাহ পাকের আজব কুদরত, প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে কোনো জিনিস সৃষ্টি করে থাকেন। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে ওই ধারা বন্ধ হয়ে যায়। যখন আদম আ.কে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন তার সৃষ্টির কাজ সমাপনের পর তাঁর পাঁজরের হাড় থেকে হযরত হাওয়া আ.কে সৃষ্টি করেছেন। এক জোড়া যখন প্রস্তুত হয়ে গেল তখন মাটি আর পাঁজর থেকে সৃষ্টির ধারা বন্ধ করে দিয়েছেন। তারপর নারী—পুরুষের মিলন থেকে সকল মানুষ জন্ম লাভ করতে শুরু করে। ঈসা আ. এর পিতাবিহীন জন্মগ্রহণের প্রশ্নের জবাব হলো, এটা ছিল মু’জেযাস্বরূপ। অন্যান্য সৃষ্টিজীবের ক্ষেত্রেও আল্লাহপাকের নীতি একই।

আমি এক চিকিৎসকের মন্তব্য পড়েছি। তিনি লিখেছেন, বৃক্ষ নিধনের ফলে বৃষ্টি কমে গেছে। বৃষ্টি বেশি চাইলে যেসব জায়গায় বৃক্ষ কম সেসব স্থানে ব্যাপকহারে বৃক্ষ রোপণ করতে হবে।

আল্লাহ জানেন এই চিকিৎসক বৃষ্টি কমে যাওয়ার কারণ কী বুঝেছে! তবে এতে আসল রহস্য এই, বৃক্ষরাজি যখন কমে গেছে তখন আর বৃষ্টির বেশি একটা প্রয়োজন রয়নি। আর যেসব স্থানে বৃক্ষরাজি বেশি সেসব স্থানে বৃষ্টির প্রয়োজনও বেশি হয়। রইল চাষাবাদের প্রয়োজন। এ প্রয়োজন নদী—নালা দিয়ে সমাধান হতে থেকেছে। এর ফলে এর সঙ্গেও বৃষ্টির সম্পর্ক কমে গেছে।

মোটকথা, আমরা তো বিজ্ঞান মানিই, আর দর্শনও বিজ্ঞান মানে; তথা আল্লাহপাক প্রতিটি জিনিস প্রয়োজনের সময় সৃষ্টি করেন। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে, সময় পার হয়ে গেলে আর সৃষ্টি করেন না। আর وَاٰتٰىكُمْ مِّنْ كُلِّ مَا سَاَلْتُمُوْهُ (তোমরা যা কিছু প্রার্থনা করেছো তার সবই আমি তোমাদের দিয়েছি) আয়াতের মর্মার্থ এটাই। অর্থাৎ, তোমাদের প্রয়োজন আল্লাহপাক পূর্ণ করেন, চাই তোমরা সেটা কামনা করো কিংবা তোমাদের অবস্থার দাবি হয়ে থাকে। এ নীতি অনুসারেই যতদিন পর্যন্ত ইজতেহাদের প্রয়োজন ছিল ততো দিন ইজতেহাদের যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ জন্মগ্রহণ করতে থাকে। যখন সমস্ত বিধান সুবিন্যস্তরূপে সংকলিত হয়ে গেছে তখন এ ধরনের যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষের জন্মও বন্ধ হয়ে গেছে।

অসাধারণ স্মৃতিশক্তির বিষয়টিও একই রকম। তথা যতদিন প্রয়োজন ছিল ততদিন এমন অসাধারণ স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন মানুষ জন্মগ্রহণ করতে থাকে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. এর শত শত পঙ্ক্তির বড় বড় কাব্য ও মহাকাব্য এক বারের শোনাতেই মুখস্থ হয়ে যেত। ইমাম তিরমিযী রহ. যখন অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন তখন একবার সফরে বের হওয়ার প্রয়োজন হলো। সফরে কোনো এক জায়গায় পেঁৗছার পর উটে বসে থেকেই মাথা ঝুঁকিয়ে দিলেন।

উটচালক এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, এখানে একটি বৃক্ষ আছে যা মাথায় লেগে যায়।

উটচালক বলল, এখানে তো কোনো বৃক্ষই নেই।

ইমাম বললেন, উট থামাও।

উট থামিয়ে তিনি মন্তব্য করলেন, আমার স্মৃতিশক্তি এতোটাই দুর্বল হয়ে গিয়ে      থাকলে আজ থেকে হাদীস বর্ণনা বন্ধ করে দেব।

তারপর তিনি লোক পাঠিয়ে এলাকাবাসীর নিকট বিষয়টি যাচাই করালেন। বেশির ভাগ মানুষ এখানে বৃক্ষ থাকার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু কিছু প্রবীণ মানুষ বৃক্ষ থাকার বিষয়টি সত্যায়ন করেন। প্রায় বারো বছর পূর্বে এখানে বৃক্ষ ছিল। পরে তা কেটে ফেলা হয়। তাঁর স্মৃতিশক্তির যথার্থতা প্রমাণিত হলে তিনি পুনরায় যাত্রা শুরু করেন।

 

ইমাম আবু দাউদ রহ. বর্ণিত এক বেদুঈনের অসাধারণ স্মৃতিশক্তির ঘটনা

তদ্রƒপ আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত আছে, এক রাবি বর্ণনা করেন, আমি এক গেঁয়ো লোক থেকে হাদীস শুনেছিলাম। দীর্ঘদিন পর মনে হলো, তার স্মৃতিশক্তির পরীক্ষা নেওয়া দরকার। তাই রাবী তার নিকট গেল। গিয়ে ওই হাদীস পুনরায় জানতে চাইল। সে ওই হাদীস শুনিয়ে মন্তব্য করল, বুঝেছি তুমি আমার স্মৃতিশক্তির পরীক্ষা নিতে এসেছ! শোনো আমার স্মৃতিশক্তি এখনো এতটাই প্রখর যে, আমি সত্তরবার হজ করেছি। প্রতিবার নতুন উটে চড়ে হজে করেছি। অথচ আমার পরিষ্কার মনে আছে, কোন বছর কোন রঙের উটে চড়ে হজ করেছিলাম।

 

ইমাম বুখারী রহ. এর অসাধারণ স্মৃতিশক্তির ঘটনা

ইমাম বুখারী রহ. যখন বাগদাদ শুভাগমন করলেন তখন স্থানীয় আলেমরা তাঁর স্মৃতিশক্তির পরীক্ষা নেওয়ার কৌশল বের করলেন। প্রায় এক শ হাদীসের সনদ ও মতন উলট—পালট করে তাঁর সামনে পড়লেন। তিনি প্রতিটি হাদীসের ক্ষেত্রেই মন্তব্য করে দেন,

لا أعرف

আমি এ হাদীস সম্পর্কে জানি না।

তারা যখন নিজেদের কাজ শেষ করল। তখন তিনি সেসব হাদীস ঠিক সেভাবেই বলতে থাকেন যেভাবে তারা তাকে শুনিয়েছিল এবং সেসবের ভুলগুলো চিহ্নিত করে সংশোধন করে দিতে থাকেন এভাবে—

أما الأول فهو كذا، وأما الثاني فهو كذا

অর্থাৎ প্রথম হাদীসের সহীহরূপ এমন। দ্বিতীয় হাদীসের সহীহরূপ এমন।

তারপর সমস্ত হাদীস যখন কিতাবাদীতে সংকলিত হয়ে গেছে তখন আর এমন অসাধারণ স্মৃতিশক্তির প্রয়োজন রয়নি। ফলে স্মৃতিশক্তিতে ভাটা পড়তে শুরু করে। সুতরাং দীন কামেল ও মুকাম্মাল তথা পূর্ণাঙ্গ হওয়ার পরে ইজতেহাদ হয়েছে। তাদের এই ইজতেহাদ কোরআন—হাদীসের হুকুম প্রকাশ—স্পষ্টায়নের জন্য হয়েছে। তাই মুকাল্লিদের জন্য তাদের অনুসরণ—অনুকরণ অপরিহার্য।

সুতরাং ইলমুল কোরআন দ্বারা শরীয়তের প্রতিটি হুকুম উদ্দেশ্য। হোক সেটা প্রত্যক্ষভাবে প্রমাণিত কিংবা পরোক্ষভাবে। এ বিষয়টি সামনে বর্ণিত এই হাদীসের আলোকে একেবারে পরিষ্কার হয়ে যায়। একবার এক মামলার বিচার প্রসঙ্গে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

أقضي بينكما بكتاب الله

অর্থাৎ আমি তোমাদের মাঝে কিতাবুল্লাহর আলোকে ফায়সালা করব।

এরপরে তিনি যে ফায়সালা করেছিলেন তা হাদীস মুতাবেক ছিল। কোরআন শরীফে সরাসরি তার উল্লেখ ছিল না। এতে বোঝা গেল, যে হুকুম হাদীসের আলোকে প্রমাণিত হবে তা কোরআনেরই হুকুম বলে গণ্য হবে। কেননা, হাদীস কোরআন শরীফের বয়ান ও ব্যাখ্যা।

 

বক্তৃতা ও উপস্থাপনার যোগ্যতা বিরাট এক নেয়ামত

মানুষ ইলমের সুবাদে মকবুল বান্দাদের অন্তভুর্ক্ত হতে পারে। আর ইলমে বয়ান ও উপস্থাপনাশক্তির নেয়ামতের মাধ্যমেই হাসিল হয়ে থাকে। আমাদের পূর্বসূরী মহামনীষীগণ জ্ঞান ও ইলমের ভান্ডার বয়ান করে সংকলন না করে যেতেন তাহলে আমরা ইলমের নাম—গন্ধও পেতাম না। তদ্রূপ আমরা যদি অন্যদের ফায়দার জন্য রচনা ও বক্তৃতায় পূর্ণ দক্ষতা অর্জন করি তবেই আমরা অন্যদের পর্যন্ত ইলম পৌঁছাতে পারব। পরন্তু যাদের রচনা ও বক্তৃতার যোগ্যতা নেই তাদের দ্বারা মানুষের খুব কম উপকার হয়। তারপর রচনার তুলনায় বক্তৃতায় দক্ষতা অর্জন জরুরি। কারণ, রচনা দ্বারা কেবল পড়ালেখা জানা লোকদের উপকার হয় আর বক্তৃতা ও বয়ান দ্বারা সকলে উপকৃত হয়। আর বয়ান দ্বারা উপকারের দুটি দিক রয়েছে:

এক. পঠন—পাঠন তথা পড়া—পড়ানো। এর দ্বারা শুধু তালিবে ইলমদের ফায়দা হয়।

দুই. ওয়াজ—নসীহত যা দ্বারা জনতা ও শিক্ষার্থী সবাই উপকৃত হয়। আর এই উপকার যথেষ্ট পরিমাণ বক্তৃতা যোগ্যতার উপর নির্ভরশীল। তাই আমাদের শিক্ষার্থীদের পঠন—পাঠন ও ওয়াজ—নসীহত উভয় ক্ষেত্রেই পর্যাপ্ত অনুশীলন ও পূর্ণ যোগ্যতা অর্জন অপরিহার্য।

 

ওয়াজ, বক্তৃতা ও পাঠদানের আদব ও নীতিমালা

অর্থাৎ যখন ওয়াজ করতে বসবে তখন খুব সহজবোধ্য ও সরলভাবে উপস্থাপন করতে হবে। যেন জনসাধারণ বিষয়টি পুরোপুরি হৃদয়ঙ্গম করতে পারে। আর সবক পড়াতে বসলে এমনভাবে বুঝাতে হবে যেন তালিবে ইলম বিষয়টি খুব ভালোভাবে বুঝে নেয়। যেসব কিতাব পাঠদান করা হয় তন্মধ্যে কিছু তো নাহব, সরফ, মানতেক, অলংকারশাস্ত্র ইত্যাদি বিদ্যার কিতাব হয়ে থাকে, যেগুলো মূখ্য ইলম নয় তবে মূখ্য ও মূল ইলমের সহায়ক। এসব কিতাবের পাঠদানের ক্ষেত্রে আলোচনা ও উপস্থাপনা এভাবে করবেন যে, কিতাবের এবারত পড়াবেন এবং ইলমের বিষয়বস্তু খোলাসা করে দেবেন। লম্বা—চওড়া আলোচনা করবেন না। এতে উপস্থাপনা ও আলোচনার ফায়দা ছাড়াও আরেকটি ফায়দা এই হবে যে তাদের পাঠদান পদ্ধতিও শেখা হয়ে যাবে।

আমাদের বড়দের পাঠদান পদ্ধতি এমনই ছিল। তাঁরা শুধু কিতাব হল করে বুঝিয়ে দিতেন। এর বেশি কিছু আলোচনা করতেন না। অবশ্য বিশেষ কোনো আলোচনার বিষয় থাকলে তা অবশ্যই আলোচনা করতেন। আর পাঠদানকালে কোনো বিষয় যদি তাদের নিকট দুর্বোধ্য মনে হতো তখন পরিষ্কার করে বলে দিতেন, এই জায়গা আমার বুঝে আসেনি।

হযরত মাওলানা মামলুক আলী থেকে এই পাঠদান রীতিই চলে আসছে। এতে একটি লাভ এই হয়, শিক্ষকের ওপর তালিবে ইলমের সদা এই আস্থা থাকে, আমাকে যা পড়ানো হচ্ছে সঠিক পড়ানো হচ্ছে। নতুবা শিক্ষকের প্রতি তালিবে ইলমের হঠকারিতার সংশয় থাকে। এতে দরসে টক—ঝকে সময়ও নষ্ট হয়। আর তালিবে ইলম অসদাচারণ শিখে।

কতক লোক বলে থাকে, নিজের অজ্ঞতা স্বীকার করার ফলে তালিবে ইলম বিগড়ে যায়। এটা একেবারে অহেতুক কথা। বরং তারা আরও সুশৃঙ্খল হয় এবং অসদাচরণ থেকে মুক্ত থাকে, যেমনটা ওপরে উল্লেখ হয়েছে। মোটকথা পাঠদান ও তাকরিরের সময় মূল মর্মার্থ তুলে ধরুন, বাড়তি তাহকিকাত সম্পূর্ণ পরিহার করুন। কেননা এসব তাকরির—আলোচনা করা কিতাব পাঠদানের তরিকা নির্দেশের জন্য; তবিয়ত—স্বভাবের ক্ষিপ্রতা ও চাঞ্চল্য প্রদর্শনের জন্য নয়। পরন্তু দরসের সময় যেসব বাড়তি—অহেতুক বিষয় আলোচনা করা হয় সেসব মনেও থাকে না। শুধু শুধু সময় নষ্ট হয়।

 

মরহুম মাওলানা সিদ্দিক সাহেবের ঘটনা

মাওলানা সিদ্দিক সাহেব বলতেন, আমি যখন শিক্ষক হিসেবে দিল্লীর এক মাদরাসায় যোগ দেই তখন বিলেতি তথা আফগান ও তার পাশ^র্বর্তী অঞ্চলের তালিবে ইলমদের পড়ানোর দায়িত্ব আমার কাঁধে ন্যস্ত হলো। যুক্তিবিদ্যার সুল্লাম কিতাব যখন শুরু করতে গেলাম তখন তাদের জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা কি তাহকিকের সাথে পড়বে, না সাদা—সিধা পড়বে?

তারা উত্তর দিল, তাহকিকের সাথে পড়ব।

তাদের কথামতো আমি রাত জেগে বহু কিতাবাদি অধ্যয়ন করে পাঠদান প্রস্তুতি গ্রহণ করলাম। সকালে নেহায়েত তাহকিকের সাথে তাদের পড়ালাম। পরদিন তাদের আমি একই প্রশ্ন করলাম। তারা উত্তর দিল, আমরা তাহকিকের সাথে পড়ব।

আমি বললাম, যদি তাহকিকের সাথে পড়তে চাও তাহলে গতকাল আমি যা কিছু বলেছিলাম তা শোনাও যেন আমি আন্দাজ করতে পারি যে তোমরা তাহকিকসহ পড়ার যোগ্য কি না?

এ কথা শুনে সবাই আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইল। একজনও বলতে পারল না।

তখন তিনি তাদের লক্ষ করে বললেন, এ পাঠে তোমরা আমার তাকরির শোনা সত্ত্বেও পুনরায় বলতে পারনি। অথচ এ পাঠে আমার উস্তাদ কোনো তাকরির না করা সত্ত্বেও আমি তোমাদের সামনে সমস্ত তাহকিকাত ও বিশ্লেষণ তুলে ধরেছি। আখের এর কারণ কী?

বোঝা গেল, আসল বিষয় হলো, যোগ্যতা সৃষ্টি হওয়া, যা কিতাব বুঝে নেওয়ার দ্বারা সৃষ্টি হয়। এসব তাকরির ও আলোচনা দ্বারা যোগ্যতা সৃষ্টি হয় না। তাই কিতাব ও পাঠের মূল মর্মার্থ ভালোভাবে বুঝা দরকার। এরপর থেকে তিনি কিতাব বুঝিয়ে দেওয়া পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকতেন। মোটকথা, শিক্ষকের জন্য লেকচারের পদ্ধতি অত্যন্ত ক্ষতিকর।

আমি এক তালিবে ইলমকে দেখলাম, সে এক প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীকে মিযান পড়াচ্ছে। খুতবায় আলিফ লামের প্রকার আলোচনা শুরু করেছে। আমি বললাম, মৌলবি সাহেব, এই বেচারার ইলমের পথ কেন বন্ধ করতে চাচ্ছ? এ তো এসব বিষয়কে মিযানের বিষয়বস্তুর অংশ মনে করবে আর কঠিন মনে করে মিযান পড়াই বাদ দিয়ে দিবে। খোদ আমি নিজেও সদা এই পদ্ধতিই অনুসরণ করেছি যে, কিতাব হল করে বুঝিয়ে দিয়েছি। কখনো বাড়তি আলোচনা করিনি। এভাবে বড় জটিল জটিল স্থানও তালিবে ইলমের নিকট কঠিন মনে হয়নি।

সদরা দর্শন শাস্ত্রের একটি গ্রন্থ। তাতে مثناه بالتكرير এর আলোচনা খুব প্রসিদ্ধ। কানপুরে মৌলবি ফযলে হক নামক এক তালিবে ইলম আমার কাছে সদরা পড়ত। যেদিন উল্লিখিত স্থানটি আসে তখন আমি সাদামাটা তাকরির করেছিলাম। যখন সে তা পুরোপুরি বুঝতে পেরেছে বলে মনে হলো তখন আমি তাকে বললাম, এটা ওই স্থান যা مثناه بالتكرير নামে প্রসিদ্ধ। এতে সে খুব তাজ্জববোধ করে বলল, এটা তো জটিল কোনো বিষয় নয়। তো বড় চেষ্টা এই হওয়া উচিত, যেন কিতাব পানির মতো সহজ হয়ে যায়।

এতো গেল সহায়ক বিদ্যা ও শাস্ত্র পড়ানোর পদ্ধতির আলোচনা যা মূখ্য উদ্দেশ্য নয়, নিছক সহায়কমাত্র। এখন রইল, সেসব ইলম যা মূখ্য উদ্দেশ্য, তথা দ্বীনি ইলম, তাফসীর, হাদীস, ফিক্হের শিক্ষাদান পদ্ধতি। এতে উভয় তরিকায় পাঠদানের মশক ও অনুশীলন হওয়া উচিত। কখনো শুধু মর্মার্থ বুঝানো পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকা, কখনো সাধারণ পদ্ধতির মুতাবেক খুব বিশদ তাকরির ও আলোচনা করা, যেন বিষয়বস্তুর প্রতিটি দিক চোখের সামনে ফুটে উঠে।

বয়ান ও তাকরিরে ইসলামের শিক্ষা এবং আধুনিক লেকচার পদ্ধতি বর্জনের পরামর্শ

এখন এ বিষয়টি পরিষ্কার করে দেওয়া যথার্থ মনে হচ্ছে যে, ওয়াজ ও বয়ানের উদ্দেশ্য যা শরীয়তের হুকুম—আহকামের তাবলীগ। কেননা, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

من تعلم صرف الكلام ليصرف به قلوب الناس لم يقبل منه صرفا ولا عدلا

অর্থ: যে ব্যক্তি বাক চাতুর্য ও কথার হেরফের এ উদ্দেশ্যে শিখেছে যেন তা দ্বারা মানুষের হৃদয় হাতের মুঠোয় নিয়ে নিতে পারে, তাহলে আল্লাহ পাক তার কোনো নফল কিংবা ফরজ আমল কবুল করবেন না।

দেখুন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর যুগে বয়ান—বক্তৃতা শেখানোর কোনো মজলিস কিংবা সংগঠন ছিল না। অথচ এ ব্যাপারেও তিনি নির্দেশনা দিয়ে গেছেন।

এ হাদীসে আজও বয়ানের অসদুদ্দেশ্যের ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্কবাণী ও ইঙ্গিত রয়েছে। এখন কোরআন শরীফে ইলমুল কোরআনকে ইলমুল বয়ানের উপর অগ্রাধিকার প্রদানের উদ্দেশ্য আরও পরিষ্কার হয়ে গেছে। তথা বয়ান তখনই যথার্থ ও সঠিক হতে পারে (যদি ওয়াজকারীর) ইলমে কোরআন থাকে, যাতে ইসলাম ও স্বার্থপরতার মধ্যে পার্থক্য হয়। আমি তালিবে ইলমদের সতর্ক করতে চাই, একালে বয়ান—বক্তৃতায় আধুনিক আঙ্গিকের যে প্রচলন ঘটেছে তার বড় উদ্দেশ্য হলো, খ্যাতি, মর্যাদা ও ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা লাভ করা, আর বড় চেষ্টা থাকে যেন তাতে শব্দের চমক থাকে, বাক্যের গঠন চাতুর্যপূর্ণ হয়। এতে ফায়দাও হয় না। যেমন, প্রসিদ্ধ আছে, এক চুড়ি বিক্রেতা চুড়ির বোঝা নিয়ে যাচ্ছিল। এক গেঁয়ো তাতে লাঠি দিয়ে আঘাত করে জিজ্ঞেস করল, এতে কী?

সে উত্তর দিল, আরেকটি মার, তাতে কিছুই নেই (কারণ, যা ছিল তা তো শেষই)।

পক্ষান্তরে পুরনো ধাঁচের বয়ান ও বক্তৃতার গায়ে হাজারো আঘাত করুন তার প্রভাব প্রতিক্রিয়া বিন্দুমাত্র খর্ব হবে না।

হাদীস শরীফ থেকে জানা যায়, একেবারে বেপরোয়া ও লাগামহীন বয়ান—বক্তৃতা করাও পছন্দনীয় নয়। যেমন,

الحياء والعي شعبتان من الإيمان، والبذاء والبيان شعبتان من النفاق

অর্থ: লাজুকতা ও কমকথা ঈমানের দুটি শাখা, আর নির্লজ্জতা ও বাচালতা নেফাক বা কপটতার শাখা।

এ হাদীসে حياء লাজুকতাকে بذاء নির্লজ্জতার বিপরীতে আর عي কম কথাকে بيان বাচালতার বিপরীতে আনা হয়েছে। আর লাজুকতা এবং কম কথাকে ঈমানের শাখা এবং নির্লজ্জতা ও বাচালতাকে নেফাকের শাখা আখ্যায়িত করা হয়েছে। লজ্জা কখনো সৃষ্টির সঙ্গে হয়, কখনো স্রষ্টার সঙ্গে। এখানে স্রষ্টার সঙ্গে লজ্জাশীলতা উদ্দেশ্য। এর মর্মার্থ এই দাঁড়াল, বয়ান—বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রতিটি শব্দে শব্দে এ চিন্তা করবে, আমার কোন কথা না জানি শরীয়ত বিরুদ্ধ হয়ে যায়। এমনটা হলেই তা যথার্থ ইলমুল বয়ান বক্তৃতা—বিদ্যা গণ্য হবে। কেননা, এখানে ইলমুল বয়ান—বক্তৃতা বিদ্যাকে রহমত ও নেয়ামত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তো সে বয়ানই রহমত ও নেয়ামত হতে পারে যা পুরোপুরি শরীয়ত মুতাবেক। পক্ষান্তরে যে বয়ান শরীয়ত পরিপন্থী তা নেয়ামত নয়। তাই তা থেকে বেঁচে থাকা উচিত। তদ্রুপ এমন ওয়াজই পছন্দ করা উচিত যাতে বাচালতার পরিবর্তে সহজতা ও খোদাভীতির ছাপ থাকে।

আল্লাহ পাকের কাছে দুআ করুন, তিনি যেন প্রতিটি বিষয়ে আমাদের শরীয়তের অনুসরণের তাওফীক দান করেন। আমীন।

الحمد لله الذي بنعمته تتم الصالحات

লেখক সম্পর্কে
Avatar

zobayer

একটি কমেন্ট করুন