প্রতিষ্ঠাতা: মুজাহিদে আযম হযরত মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ.

জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলূম ফরিদাবাদ, ঢাকা-এর মুখপত্র

প্রতিষ্ঠাকালঃ ১৯৩৭ ঈসায়ী

হারামাইনে এ কেমন বেদনাবিধুর পরিবেশ

হারামাইনে এ কেমন বেদনাবিধুর পরিবেশ

মাওলানা হেদায়েতুল হক


মক্কা—মদীনা আমাদের সবচেয়ে কাক্সিক্ষত ও সম্মানিত নগরী। এর সঙ্গে মুসলমানদের হৃদয় ও আত্মার সম্পর্ক। হারামাইন শরীফাইনের সঙ্গে বিশ্ব মুসলিমের আবেগ জড়িত। এখানে ওহী নাযিল হয়েছে। শেষ নবী ও শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের ৬৩টি বছর পার করেছেন এ দুই নগরীতে। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর প্রতি ভালোবাসা ও মহব্বত আমাদের ঈমানের অংশ। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মহব্বত করি বলেই আমরা তাঁর স্মৃতিবিজড়িত মক্কা—মদীনাকে ভালোবাসি। এ ভালোবাসার টানেই প্রতিটি মুসলমান, চাই সে বিশ্বের যে প্রান্তেই অবস্থান করুক, যত দরিদ্রই হোক, নিজ চোখে একবার হলেও মক্কা—মদীনার যিয়ারত করার আকাক্সক্ষা লালন করে জীবন ভর। মক্কা—মদীনার প্রতি ভালোবাসাই আমাদেরকে মক্কা—মদীনার একজন সাধারণ নাগরিকের প্রতিও শ্রদ্ধাবনত করে। সেখানের পাহাড়—পর্বত, ঘর—বাড়ি এমনকি প্রতিটি ধুলিকণার প্রতিও শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জন্ম দেয়। বরং ঈর্ষাকাতর করে তোলে। সে ভালোবাসা, আবেগ ও ঈর্ষাই প্রতিধ্বনিত হয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মুখে :

আমি যদি আরব হতাম—মদীনারই পথ

এই পথে মোর চলে যেতেন নূর নবী হযরত।

পয়জার তাঁর লাগত এসে আমার কঠিন বুকে,

আমি ঝর্ণা হয়ে গলে যেতাম অমনি পরম সুখে।

দিবানিশি করতাম তাঁর কদম জিয়ারত।

এতটা আবেগ ও উচ্ছ্বাস যদি থাকে কেবল সেখানের ধূলিকণার প্রতি তাহলে সেখানের আলেম—ওলামা ও নেতৃস্থানীয়দের প্রতি কতটা শ্রদ্ধা, ভক্তি ও ভালোবাসা থাকবে তা সহজেই অনুমেয়। মক্কা—মদীনার শাসকবর্গের নামের শুরুতে ‘খাদেমুল হারামাইন আশশারীফাইন’ বিশেষণ আমাদেরকে তাদের প্রতি আরও বেশি শ্রদ্ধাবনত করে। যদি তারা প্রকৃত অর্থেই মক্কা—মদীনার খাদেম ও সেবক হয়ে থাকেন। যদিও বর্তমানে শাসকশ্রেণির এমন অনেক কর্মকাণ্ড আমাদের সামনে এসেছে, যা বিশ্ব মুসলিমের হৃদয়ে প্রতিনিয়ত রক্তক্ষরণ করে চলেছে এবং ইসলামের শত্রুদের আনন্দিত ও উৎফুল্ল করছে।

বর্তমানে বিশ^মুসলিম শতধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। ইতিহাসের চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এহেন পরিস্থিতিতে মুসলমানদের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব উসকে দেওয়া কখনোই কাম্য হতে পারে না। মূল ঠিক রেখে শাখাগত ভুল—ত্রুটি ও মতভেদ এড়িয়ে ঐক্যের পথে হাঁটাই সময়ের দাবি। এ দৃষ্টিকোণ থেকে এতদিন বিশ্ব মুসলিম সৌদি শাসকদের নানা আপত্তিকর কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করেও নীরব ছিলেন। তাদের সংশোধনের জন্য আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করছেন। কিন্তু বর্তমানের পরিস্থিতি সব সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে এবং একশ্রেণির মুসলমান মক্কা—মদীনা এবং ওখানকার শাসকবর্গের কর্মকাণ্ডকেই ইসলাম জ্ঞান করে বলে কিছু বিষয় নিবেদন করা জরুরি মনে হচ্ছে।

গোড়ার কথা বলতে গেলে, বর্তমান সৌদি শাসকদের ইতিহাস খুব উজ্জ্বল নয়। উসমানী সালতানাত তথা তৎকালীন ইসলামী খেলাফতের বিরুদ্ধে গিয়েই তারা ক্ষমতা লাভ করেছে। পৃথিবীতে আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত খেলাফতব্যবস্থা ধ্বংসে তারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ভারতবর্ষে যখন আমাদের আকাবির ওলামায়ে কেরাম খেলাফত রক্ষায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ বিসর্জন দিচ্ছিলেন ঠিক তখনই সৌদি শাসকরা ইসলামের শত্রু বৃটেনের সঙ্গে হাত মেলায়। তাদের পাতা ফাঁদে পা দেয়। তাদের ইঙ্গিতে আরব জাতীয়তাবাদের বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেয়। আরব জাতিকে তুর্কিদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলে। অবশেষে ক্ষমতার মসনদে সমাসীন হয়।

খেলাফত ধ্বংসের পর সৌদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও অর্থনৈতিকভাবে তারা সমৃদ্ধ ছিল না। তেল ও স্বর্ণের খনি তখনও তাদের হস্তগত হয়নি। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হজ ও ওমরা করতে আসা মুসলমানদের কাছে প্রয়োজনীয় মালামাল বিক্রি করে তারা জীবিকা নির্বাহ করত। তখন তারা বহু মানবিক গুণে গুণান্বিত ছিল। নম্র, ভদ্র ও বিনয়ী ছিল।

১৯৩৩ সালে মরুভূমিতে তেলের অনুসন্ধান শুরু হয়। একসময় তারা এই অনুর্বর বালির নিচে স্বর্ণ ও তেলের খনির সন্ধান পায়। অর্থ—সম্পদে সমৃদ্ধ হয়ে উঠে।  ধীরে ধীরে তাদের বিনয় অহংকারে পরিণত হয়। শাসকদের দম্ভ বৃদ্ধি পেতে থাকে। আরব জাতির বিলাসিতা উপমাতুল্য হয়ে উঠে। সম্পদের ফিতনা আরব জাতিকে দিশেহারা করে তোলে। যুবরাজ বিন সালমানের যুগে এসে সৌদি প্রশাসন সকল সীমা অতিক্রম করে। ভিশন ২০৩০ (সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি) নামের মরীচিকার পেছনে আজ সৌদি আরব উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে চলেছে।

অনাকাক্সিক্ষত অনেক ঘটনা সেখানে ঘটছে। অনভিপ্রেত অনেক দৃশ্য সেখানে চোখে পড়ছে। পর্দার আড়ালে দুঃখজনক কর্মকাণ্ড আরও অনেক আছে। মক্কা—মদীনার আদব রক্ষার্থে সেসব নিয়ে দীর্ঘদিন ওলামায়ে কেরাম মুখ খুলেননি। কেউ মুখ খুললে তাকে থামিয়ে দিয়েছেন। তাদের কর্মকাণ্ডের ব্যাখ্যা করেছেন। সাধারণ মুসলমানের আস্থা নষ্ট হতে দেননি। কিন্তু বাস্তবতা কতদিন আড়াল করে রাখা যায়! মক্কা—মদীনা গেলে যে কারও সমস্যাগুলো চোখে পড়ে। সাধারণ মুসলমানের ভেতরে জমে থাকা চলমান পরিস্থিতিতে ওলামায়ে কেরামও আর নীরব থাকতে পারেননি। চোখে দেখা বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা এমনই কিছু বিষয় এই লেখায় তুলে ধরছি।

 

হারামাইন শরীফাইনে ১০ রাকাত তারাবী

আল্লাহ তাআলার অশেষ মেহেরবানীতে গত ১৪ রমযান ১৪৪৪ হি. বুধবার সকালে হারামে পেঁৗছি। সন্ধ্যায় হারামের দস্তরখানে ইফতার করলাম। দীর্ঘদিন পর হারামে তারাবী আদায় করার প্রস্তুতি নিলাম। হারামাইনে তারাবী পড়তে অনেক ভালো লাগে। কোরআন মাজীদ নাযিলের ভূমিতে কোরআন পড়া ও শোনার স্বাদ অন্যরকম। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। কোরআন মাজীদের এই স্বাদ নিতে বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষ শত কষ্ট ও বিড়ম্বনা সহ্য করে হারামাইনে উপস্থিত হয়েছে। বিশ্বের অনেক মসজিদে সুন্দর তিলাওয়াত হয়, তবে এই নূর কেবল হারামেই অনুভব করা যায়। এশার নামাযের পর তারাবী শুরু হলো। কোরআন মাজীদের তেলাওয়াতে হারামের চত্বর মুখরিত হয়ে উঠল। কানের পর্দা ভেদ করে হৃদয়ের দরজায় গিয়ে স্পর্শ করল। ছয় রাকাত তারাবীর পর ইমাম পরিবর্তন হলো। ১০ রাকাত তারাবী শেষ করে শায়েখ সুদাইস বিতির শুরু করলেন।

২০১৮ সালে এই হারামেই ২০ রাকাত তারাবী আদায় করেছি। ২০ রাকাত তারাবী সুন্নতে মুআক্কাদা। ২০ রাকাত তারাবী সুন্নত হওয়ার ব্যাপারে চার মাযহাবে কারও কোনো দ্বিমত নেই। যুগ যুগ ধরে হারামাইন শরীফাইনেও ২০ রাকাত তারাবী আদায় করা হচ্ছে। হাম্বলী মাযহাবের অনুসরণ করেই মক্কা—মদীনায় ২০ রাকাত তারাবী আদায় করা হতো। করোনাকালে কারও মতামতের তোয়াক্কা না করেই হারামাইনে তারাবীর নামায সংক্ষিপ্ত করা হয়। সৌদি সরকারের একক সিদ্ধান্তে সীমিত মুসল্লী নিয়ে মক্কা—মদীনায় ১০ রাকাত তারাবী আদায় করা হয়। এই ধারা এখনও চলমান!

 

এ কেমন সতর্কতা!

মহামারির কারণে বিশ্ববাসীকে অনেক সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়েছে। সতর্কতা গ্রহণে ইসলাম বাধা দেয় না। কিন্তু ২০ রাকাত তারাবীকে ১০ রাকাত করার মতো সতর্কতা আমাদের বোধগম্য নয়। মুসল্লী সংখ্যা সীমিত করার পরও নামাযের রাকাত সংখ্যা কমানোর কী প্রয়োজন ছিল, তার কোনো সদুত্তর নেই। যে সমাগম ও আয়োজনে ১০ রাকাত তারাবী আদায় করা গেল সেখানে কোন ভাইরাসের ভয়ে বাকি ১০ রাকাত আদায়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলো, আল্লাহ মালুম। এই স্বেচ্ছাচারিতার উপর সারা বিশ্বের ওলামায়ে কেরাম আপত্তি করেছেন। দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে এই মর্মে সরাসরি সৌদি সরকারকে বার্তা পাঠানো হয়েছে। বিশ্ব মুসলিমের আবেগ—অনুভূতির কোনো মূল্যায়ন সৌদি সরকার করেনি।

আলহামদুলিল্লাহ, বিশ্ব এখন করোনার প্রভাব থেকে প্রায় মুক্ত হয়েছে। সকল নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। সকল প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক গতিতে আবারও কর্মতৎপর হয়েছে। হাট—বাজার আগের মতো সরব হয়েছে। হারামের অন্যান্য বিধি—নিষেধও উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম এখন হারামে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০ টায় হোটেল থেকে জুমার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেও মসজিদ থেকে অন্তত এক কিলোমিটার দূরে নামায আদায় করতে হয়েছে। মক্কার প্রতিটি অলিগলি লোকে লোকারণ্য। এবারের রমযানে হারামাইনে যে পরিমাণ লোক সমাগম হয়েছে ইতিহাসে তা নজিরবিহীন। এসব কিছু সত্ত্বেও তারাবীর নামায সংক্ষিপ্ত করণের অযৌক্তিক সরকারি ফরমান এখনও বহাল রয়েছে।

 

১০ রাকাত তারাবীর ভিত্তি কী?

আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহ. (মৃত্যু : ৭২৮ হি.) বলেছেন, কত রাকাত তারাবীর নামায পড়া উত্তম, তা মুসল্লীদের অবস্থার উপর নির্ভর করে। যদি দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে নামায আদায়ে তারা সক্ষম হয় তাহলে দীর্ঘ কেরাতে ১০ রাকাত তারাবী এবং তারপর তিন রাকাত বিতির আদায় করা উত্তম। যেমন : নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান ও রমযানের বাইরে একাকী এভাবে নামায আদায় করেছেন। যদি এমন দীর্ঘ কেরাতে ধৈর্যধারণ করতে মুসল্লীদের কষ্ট হয় তাহলে (একটু সংক্ষিপ্ত কেরাতে) ২০ রাকাত তারাবী পড়া উত্তম। অধিকাংশ মুসলমান এভাবেই আমল করে আসছে। কারণ, ১০ রাকাত ও ৪০ রাকাতের মধ্যে ২০ রাকাত হলো মধ্যমপন্থা। আর যদি কেউ ৪০ রাকাত বা ৩৬ রাকাত আদায় করে তাও জায়েয। কোনোটিই মাকরূহ হবে না। ইমাম আহমদ রহ. (মৃত্যু : ২৪১ হি.) সহ অনেকেই স্পষ্টভাবে এই মত পোষণ করেছেন। যে ব্যক্তি মনে করে, তারাবীর ব্যাপারে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো একটি রাকাত সংখ্যা বর্ণিত আছে, তাতে কমবেশি করার কোনো সুযোগ নেই, সে ভুল বুঝেছে।—মাজমূউল ফাতাওয়া, ইবনে তাইমিয়া : ২২/২৭২ মাজমাউল মালিক ফাহাদ; আল ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, যুহাইলী : ২/১০৮৯—১০৯০ দারুল ফিকির দামেশক; আল মাউসুআতুল ফিকহিয়্যাহ আল কুআইতিয়্যাহ : ২৭/১৪৪ ওয়াযারতুল আওকাফ কুয়েত

আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহ. নিজেই বলেছেন, ২০ রাকাতের মতটি উম্মতের অধিকাংশ মানুষের আমল। এটি মধ্যপন্থা। অপরদিকে ১০ রাকাত তারাবী উম্মতের অধিকাংশ মানুষের আমল নয়। তাহলে কী কারণে হারামাইনে যুগ যুগ ধরে চলে আসা, মধ্যপন্থা ও উম্মতের অধিকাংশ মানুষের আমলটি পরিবর্তন করা হলো? মক্কা—মদীনা সকল মুসলমানের প্রাণকেন্দ্র। ভাষা, বর্ণ, গোত্রের ভিন্নতা সত্ত্বেও মক্কা—মদীনা সবাইকে এক সুতোয় গেঁথে রাখে। মক্কা—মদীনায় চলমান যে আমলটির ব্যাপারে বিশ্ব মুসলিমের ঐকমত্য ছিল সে আমলটি হঠাৎ কার ইঙ্গিতে পরিবর্তন করা হলো? পর্দার আড়ালে মুসলমানের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির কোনো দুরভিসন্ধি এখানে কাজ করছে না তো?

আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান ও রমযানের বাইরে একাকী এভাবে দীর্ঘ ১০ রাকাত নামায আদায় করেছেন।’ ফুকাহায়ে কেরামের মতে, সেটি তাহাজ্জুদের নামায ছিল। তাহাজ্জুদ ও তারাবী এক নয়। যদি এক হতো তাহলে ইমাম বুখারী রহ. সহীহ বুখারীতে ‘আবওয়াবুত তাহাজ্জুদ’ নামে স্বতন্ত্র অধ্যায় এবং ‘কিতাবু সালাতিত তারাবীহ’ নামে স্বতন্ত্র অধ্যায় উল্লেখ করতেন না। দুটি ভিন্ন শিরোনাম প্রমাণ করে, ইমাম বুখারী রহ. এর মতেও তারাবী ও তাহাজ্জুদ এক নয়। তাহাজ্জুদ সারা বছরের আমল। তারাবী রমযান মাসের বিশেষ আমল।

১০ রাকাত তারাবী কোনো মাযহাবের গ্রহণযোগ্য মত নয়। আল্লামা ইবনে কুদামা হাম্বলী রহ. (মৃত্যু : ৬২০ হি.) বলেছেন,

والمختار عند أبي عبد الله رحمه الله ‌فيها ‌عشرون ‌ركعة وبهذا قال الثوري وأبو حنيفة والشافعي

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. এর নিকট পছন্দনীয় অভিমত হলো তারাবীর রাকাত সংখ্যা ২০। ইমাম সাওরী, আবু হানিফা ও শাফেয়ী রহ. এই মতই পোষণ করেছেন।—আল মুগনী, ইবনে কুদামা : ২/১২৩ মাকতাবাতুল কাহেরা

আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহ. এর এ মতের বিপরীতে বহু হাদীস ও আছার দ্বারা প্রমাণিত যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরে সাহাবায়ে কেরাম রমযানে ২০ রাকাত তারাবীর নামায পড়েছেন। যেমন :

হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. বলেন,

كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي ‌فِي ‌رَمَضَانَ ‌عِشْرِينَ ‌رَكْعَةً وَالْوِتْرَ

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে ২০ রাকাত নামায এবং বিতির আদায় করতেন।—আল মুজামুল কাবীর, তাবারানী, হাদীস : ১২১০২

মিকসাম রহ. হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন,

أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُصَلِّي فِي رَمَضَانَ عِشْرِينَ رَكْعَةً وَالْوِتْرَ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে ২০ রাকাত তারাবী এবং বিতির আদায় করতেন।—মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৭৬৯২

এক বর্ণনায় হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. বলেন,

كان النبيُّ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّى في شَهرِ رمَضانَ في غَيرِ جَماعَةٍ بعِشرينَ رَكعَةً والوِترَ

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে জামাত ছাড়া ২০ রাকাত তারাবী এবং বিতির আদায় করতেন। আস সুনানুল কুবরা, বাইহাকী, হাদীস : ৪৬৭৭

ইমাম কামাল ইবনুল হুমাম রহ. (মৃত্যু : ৮৬১ হি.) বলেন, হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত হাদীসটি সনদের বিবেচনায় যদিও যঈফ, তবে মুওয়াত্তা মালেকে বর্ণিত হাদীস দ্বারা ২০ রাকাত তারাবী সুপ্রমাণিত।—ফাতহুল কাদীর, ইবনুল হুমাম : ১/৪৬৭ দারুল ফিকির

 

সাহাবায়ে কেরামের (রাযি.) আমল

খুলাফায়ে রাশিদীনসহ সাহাবায়ে কেরাম রাযি. ও তাবেয়ীন, সালাফে সালিহীনের আমল এমনই ছিল। ২০ রাকাতের কম তারাবীর আমল খুঁজে পাওয়া যায় না। ইমাম মালেক রহ. বলেন, হযরত ইয়াযিদ ইবনে রুমান রহ. বলেছেন,

كَانَ النَّاسُ يَقُومُونَ فِي زَمَانِ ‌عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ فِي رَمَضَانَ بِثَلَاثٍ وَعِشْرِينَ رَكْعَةً

হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাযি. এর যুগে লোকেরা রমযানে ২৩ রাকাত (তারাবী) নামায আদায় করত।—মুওয়াত্তা মালেক, হাদীস : ৩৮০

ইমাম বাইহাকী রহ.ও এই বর্ণনাটি উল্লেখ করেছেন। তারপর ইমাম বাইহাকী রহ. ১১ রাকাত ও ২৩ রাকাতের বর্ণনার মধ্যে এভাবে সমন্বয় করেছেন যে, তাঁরা প্রথমে ১১ রাকাত আদায় করতেন। পরবর্তীতে ২০ রাকাত তারাবী ও তিন রাকাত বিতির আদায় করতেন।—আস সুনানুল কুবরা, বাইহাকী, হাদীস : ৪৬৮০

হযরত সায়েব ইবনে ইয়াযীদ রহ. বলেন,

كانوا يَقومونَ على عَهدِ عمرَ بنِ الخطابِ رضي الله عنه في شَهرِ رَمَضانَ بعِشرينَ رَكعَةً

হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাযি. এর যুগে রমযান মাসে লোকেরা ২০ রাকাত তারাবী আদায় করত।—আস সুনানুল কুবরা, বাইহাকী, হাদীস : ৪৬৭৯

ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ রহ. থেকে বর্ণিত,

أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ أَمَرَ رَجُلًا يُصَلِّي بِهِمْ عِشْرِينَ رَكْعَةً

হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাযি. এক ব্যক্তিকে আদেশ করেছেন, সে যেন লোকদেরকে নিয়ে ২০ রাকাত তারাবী আদায় করে।—মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৭৬৮২

হযরত আলী রাযি. এর ব্যাপারে এক বর্ণনায় আছে,

دَعا القُرّاءَ في رَمَضانَ فأَمَرَ مِنهُم رجلًا يُصَلِّى بالناسِ عِشرينَ رَكعَةً. قال: وكانَ عَلِىٌّ رضي الله عنه يوتِرُ بهِم

হযরত আলী রাযি. রমযানে কোরআনের হাফেজদেরকে ডাকলেন। তাঁদের একজনকে ২০ রাকাত তারাবীর ইমামতি করার নির্দেশ দিলেন। তারপর হযরত আলী রাযি. তাদেরকে নিয়ে বিতির পড়তেন।—আস সুনানুল কুবরা, বাইহাকী, হাদীস : ৪৬৮২

ইবনে আবিল হাসনা রহ. থেকে বর্ণিত,

أَنَّ عَلِيًّا أَمَرَ رَجُلًا يُصَلِّي بِهِمْ فِي رَمَضَانَ عِشْرِينَ رَكْعَةً

হযরত আলী রাযি. এক ব্যক্তিকে আদেশ করেছেন, সে যেন লোকদেরকে নিয়ে রমযানে ২০ রাকাত তারাবী আদায় করে।—মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৭৬৮১

নাফে ইবনে ওমর রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

كَانَ ابْنُ أَبِي مُلَيْكَةَ يُصَلِّي بِنَا فِي رَمَضَانَ عِشْرِينَ رَكْعَةً

হযরত ইবনে আবী মুলাইকা রাযি. রমযান মাসে আমাদেরকে নিয়ে ২০ রাকাত তারাবী আদায় করেছেন।—মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৭৬৮৩

আব্দুল আযীয ইবনে রুফাই রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

كَانَ أُبَيُّ بْنُ كَعْبٍ يُصَلِّي بِالنَّاسِ فِي رَمَضَانَ بِالْمَدِينَةِ عِشْرِينَ رَكْعَةً وَيُوتِرُ بِثَلَاثٍ

হযরত উবাই ইবনে কা’ব রাযি. রমযান মাসে মদীনা শরীফে লোকদেরকে নিয়ে ২০ রাকাত তারাবী আদায় করতেন। তারপর তিন রাকাত বিতির আদায় করতেন।—মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৭৬৮৪

অতএব উম্মতের ক্ষোভ বৃদ্ধি পাওয়ার পূর্বেই হারামাইনে ২০ রাকাত তারাবী পুনর্বহাল করা হোক এবং হারামাইনে অনুষ্ঠিত যেকোনো দীনি কাজে চার মাযহাবের বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের পরামর্শ গ্রহণ করা হোক—এটাই ওলামায়ে কেরামের দাবি।

 

হজ—ওমরার ভিসা প্রদানে জটিলতা

হজ ইসলামের অন্যতম রোকন। ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। মুসলমানের নামায—রোযা পালনে যেমন কারও অনুমতির শর্ত নেই, হজ পালনেও কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। কেউ ইবাদত করতে চাইলে তাকে বাধা দেওয়ারও অধিকার কারও নেই। ভৌগলিক অবস্থান হিসেবে মক্কা—মদীনা সৌদি আরবের অংশ, তবে এই ভূখণ্ড কারও পৈত্রিক সম্পত্তি নয়। সৌদি সরকারের ইচ্ছে হলে তারা আমাদেরকে হজ—ওমরা পালনের অনুমতি দেবে, ইচ্ছে না হলে দেবে না, তাদের এই অধিকার নেই। করোনাকালে তাদের স্বেচ্ছাচারিতা প্রসঙ্গে হযরত মাওলানা মুফতী আবুল হাসান আব্দুল্লাহ দা. বা. বলেন, “হজ্ব তো ইসলামের অন্যতম প্রধান রোকন—স্তম্ভ। এটা মুসলমানদের অধিকার; যিনি যে দেশেই থাকুন না কেন। হজ্বের জায়গা এবং হারামাইন এলাকা সৌদি শাসকগণ তাদের মানচিত্রে নিয়ে গেছেন বলে এ স্থানগুলোতে বিশ্বের সাধারণ মুসলমানদের যাতায়াত আটকে দেওয়ার অধিকার তাদের নেই। এটা একটা প্রধান আপত্তির জায়গা। তারা তো মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে ভাচুর্য়াল মিটিং করে এ ব্যাপারে মতামত নিতে পারতেন। কিন্তু তা না করে সবাইকে অপেক্ষায় রেখে হঠাৎ হজ্বে অংশগ্রহণের সুযোগ বাতিল করে দিলেন একক সিদ্ধান্তে। ঘোষণা করলেন সামান্য সংখ্যক লোকের অংশগ্রহণে ‘প্রতীকী হজ্ব’ পালন হবে। বিশ্বের মুসলমানদের হজ্বে শরীক হতে না দেওয়ার এই একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার তাদের নেই; না শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে, না নৈতিক বিবেচনায়। মক্কা—মদীনা হিজাযে মুকাদ্দাসের এলাকা। এই অঞ্চল ইসলামী খেলাফত ছাড়া অন্য কোনো একক রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণাধীন থাকতে পারে না। বিশ্বব্যাপী ইসলামী খেলাফত থাকলে তার অধীনে থাকত হারামাইন। পৃথিবীতে এখন বহু স্বাধীন ও স্বতন্ত্র মুসলিম রাষ্ট্র। যেসব রাষ্ট্রে মুসলমানরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। এ অবস্থায় এই পবিত্র ভূমির ওপর একটি রাষ্ট্রের এমন একচ্ছত্র অধিকার ও কর্তৃত্ব থাকা যে, মনগড়াভাবে যাকে ইচ্ছা তাকে সেখানে হাজিরে বাধা দিতে পারবে—এটা চলতে পারে না।”—মাসিক আল কাউসার, প্রসঙ্গ : হজ্ব নিয়ে স্বেচ্ছাচার এবং সৌদি সরকারের অধিকার! : যিলকদ ১৪৪১ হি. / জুলাই ২০২০ ঈসায়ী

তৃতীয় বিশ্বের কোনো মুসলিম নাগরিক সৌদি যেতে হলে ভিসার জন্য তাকে অনেক বেগ পেতে হয়। অথচ উন্নত বিশ্বের কোনো অমুসলিম নাগরিকও সৌদি আরবের ভিসা চাইলে খুব সহজে পেয়ে যায়। সৌদি সরকারের মনে রাখা উচিত, হজ ও ওমরাকারীগণ সৌদির জন্য ভিসা চায় না, মক্কা—মদীনার জন্য ভিসা চায়। মক্কা—মদীনা না থাকলে মুসলমানরা তাদের কাছে এভাবে ভিসার আবেদন করত না।

হযরত মুফতী সাহেব দা. বা. বলেন, ‘বিশ্বের মুসলিমসমাজ আশ্চর্য হয়ে লক্ষ করেছে যে, সৌদি আরব ইউরোপ—আমেরিকাসহ বিশ্বের প্রায় সকল অমুসলিম ধনী রাষ্ট্রের নাগরিকদের এক মিনিটে অনলাইন/অন অ্যার‌্যাইভাল ভিসা দিচ্ছে, অথচ মুসলমানদের পবিত্র ওমরার জন্য এখনো ৪০ বছর হওয়ার শর্ত অব্যাহত রেখেছে (কিছু ব্যতিক্রম ক্ষেত্র ছাড়া)। (বর্তমানে অবশ্য এ শর্ত তুলে দেওয়া হয়েছে।—লেখক) তারা হয়ত বলবে, এর চেয়ে কম বয়সীরা গেলে অনেকে সৌদিতে থেকে যায়। এজন্যই আমরা বলছি, এতই যখন আপনাদের শঙ্কা তবে হারামাইনের এলাকায় বেষ্টনী দিয়ে সেখানেই হজ¦—ওমরাকারীদের সীমিত রাখুন এবং সে এলাকা স্বতন্ত্র ব্যবহারের অধীনে রাখুন। যাতে করে পুরো বিশ্বের মুসলিম সমাজ তাদের হারামাইনে গমনের অধিকার সুচারুরূপে ভোগ করতে পারে।’—মাসিক আল কাউসার, প্রসঙ্গ ঃ হজ্ব নিয়ে স্বেচ্ছাচার এবং সৌদি সরকারের অধিকার! : যিলকদ ১৪৪১ হি. / জুলাই ২০২০ ঈসায়ী

ভিসার ফি হিসাবে দিতে হয় মোটা অঙ্কের অর্থ। কোনো মুসলমান মক্কা—মদীনা যেতে হলে সৌদি সরকারকে কেন ফি দিতে হবে? ব্যবস্থাপনার জন্য ফি আদায় বোধগম্য ও যৌক্তিক হলেও মক্কা—মদীনাকে অর্থ উপার্জনের মাধ্যম বানানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই।

 

বিমান ভাড়া

বাংলাদেশ থেকে হাজীদের হজে যাওয়ার একমাত্র বাহন হলো বাংলাদেশ বিমান ও সৌদি এয়ারলাইন্স। এ ক্ষেত্রে উভয় দেশের এয়ারলাইন্স কতৃর্পক্ষ যে স্বেচ্ছাচারিতা করছে তা পৃথিবীতে নজিরবিহীন। সৌদিগামী সাধারণ যাত্রী বিভিন্ন এয়ারলাইন্সে যেতে পারলেও হাজীদের জন্য তার কোনো সুযোগ নেই। স্বাভাবিক অবস্থায় ইকোনোমি ক্লাসে যে সার্ভিস দেওয়া হয়, হজ ফ্লাইটের সার্ভিস তার চেয়েও অনেক নিম্নমানের। কিন্তু ভাড়া বিজনেস ক্লাসের চেয়েও অনেক বেশি। সমান দূরত্বে অন্য কোনো দেশে এত বেশি ভাড়া নেওয়া হয় না।

বাংলাদেশ থেকে পরিচালিত হজ ফ্লাইটে বাংলাদেশী হাজীগণ ছাড়া কোনো যাত্রী থাকে না। অথচ সৌদি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটগুলোতে সাধারণত বাংলা বোঝার মতো কোনো কর্মচারি থাকে না। ফ্লাইটগুলোতে নারী কেবিন ক্রুদের পোশাকও শালীন নয়। হজ ফ্লাইটে কি এ বিষয়টি বিবেচনা করা যেত না?

 

যমযম

হজ ও ওমরা পালনকারীদের সর্বাধিক আগ্রহের বস্তু হলো যমযম। বরকতময় এই পানি সকলেই নিজ দেশে নিয়ে যেতে চায়। বর্তমানে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে আইন হলো, পাঁচ লিটারের অধিক পানি কেউ বহন করতে পারবে না। কেউ যদি তার প্রাপ্য ওজনের সবটুকুতে যমযম বহন করতে চায় তাতে তাদের আপত্তি থাকার কোনো যৌক্তিক কারণ আমাদের জানা নেই। পানি বহনে যদি প্লেনের সেফটি নিয়ে সমস্যা দেখা দেয় তাহলে পাঁচ লিটার পানির জন্য যেমন নিরাপত্তা গ্রহণ করা হয় ১০—১৫ লিটার পানির জন্যও সেই সেফটি গ্রহণ করা সম্ভব।

 

ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা

আধুনিকতা, প্রযুক্তি সবদিক থেকেই সৌদি আরবকে একটি উন্নত রাষ্ট্র বলা যায়। হজ—ওমরার এতো বিশাল ব্যবস্থাপনার জন্য তাদের লোকবলেরও কোনো কমতি নেই। তা সত্ত্বেও তাদের ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা খুবই দুঃখজনক। ইমিগ্রেশনে ধীরগতি জেদ্দা বিমানবন্দরের সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ সফরের ক্লান্তির পর ইমিগ্রেশনের জন্য ঘণ্টাব্যাপী লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা বাইতুল্লাহর মুসাফিরদের জন্য খুবই কষ্টকর। যদিও ইউরোপ—আমেরিকার নাগরিকদের জন্য ভি. আই. পি ব্যবস্থা রয়েছে।

 

নারীর ক্ষমতায়ন ও হারামে নারী পুলিশ

নারীর ক্ষমতায়ন, নারী অধিকার নিশ্চিতকরণের উষ্ণ হাওয়া এখন সৌদি আরবেও বইছে। রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে শুরু করে সমাজের সকল ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। অফিস—আদালতের পাশাপাশি হারামাইনের হোটেল রিসিপশনেও নারীদেরকে দেখা যাচ্ছে। দেশে ও দেশের বাইরে সৌদি নারীরা খেলাধুলায় অংশ নিচ্ছে। স্টেডিয়ামে গিয়ে নারীরা খেলা দেখছে। ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়ন হলে মোট জনবলের এক তৃতীয়াংশ হবে নারী। নারীর ক্ষমতায়ন ও সংস্কারের এই ধাক্কা হারামাইন শরীফাইনেও আঘাত হেনেছে। নারীর হজ—ওমরা পালনে শরীয়তের অকাট্য নীতি ‘অভিভাবকের উপস্থিতি’র শর্ত রহিত হয়ে গিয়েছে। পুরুষের জন্য ইহরামের পোশাক বাধ্যতামূলক হলেও, নারীদেরকে মাতাফে প্রবেশের অবাধ অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তার ফলে মাতাফে, হাতীমে, হাজারে আসওয়াদে, মুলতাযামে নারী—পুরুষের ধাক্কাধাক্কির যে পরিবেশ সৃষ্টি হয় তা কল্পনা করলেও গা শিউরে উঠে।

দীর্ঘদিন পর্যন্ত নারীদের নিরাপত্তার জন্য বোরকা পরিহিত নারী কর্মী ছিল। বর্তমানে ইউনিফর্ম পরিহিত নারী পুলিশও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন হলে কি বোরকা পরিহিত নারী নিরাপত্তাকর্মীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করা যেত না? সময়ের সঙ্গে নিরাপত্তাকর্মীদের আচরণেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বাইতুল্লাহর মুসাফিরদের সঙ্গে রূঢ় ও কঠোর আচরণ করা হচ্ছে। গত ১৮ রমযান ১৪৪৪ হি. রবিবার বাদ আসর মসজিদে হারামে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা প্রত্যক্ষদর্শী সবাইকে আহত করেছে। মসজিদে হারামের দোতলায় বাবুল ওমরার কাছে নারীদের ভীড় হয়। এমন সময় একজন পুরুষ নিরাপত্তাকর্মী নারীদেরকে সরানোর জন্য তাদের গায়ে হাত দিয়ে এমন সজোরে ধাক্কা দিয়েছে, বিষয়টি ভাবতেও কষ্ট লাগে। নারী নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দেওয়ার পরও পুরুষদেরকে নারীদের গায়ে হাত লাগানোর প্রয়োজন কেন হলো তা বোধগম্য নয়।

যদিও আমাদের এ অঞ্চলের আইন—শৃঙ্খলা রক্ষাকারী ভাইদের তুলনায় তাদের আচার—আচরণ অনেক মার্জিত ও শালীন। তবুও বাইতুল্লাহ’র রক্ষীদের বহু দিন থেকে মুসলমানরা যে রূপে ও আচরণে দেখে অভ্যস্ত, তার ব্যত্যয় ঘটা দুঃখজনক। আশা করি, বিচ্ছিন্নভাবেও এমন ঘটনা আর ঘটবে না।

 

ইসলামী ঐতিহাসিক নিদর্শন বিলুপ্তিকরণ

আধুনিক বিশ্বে সকল ধর্ম ও মতে প্রাচীন নিদর্শন, পুরা—কীর্তিসমূহ সংরক্ষণ করা জাতীয় কর্তব্য মনে করা হয়। আন্তর্জাতিকভাবেও বিষয়টি স্বীকৃত। সকল দেশ ও ধর্মের মানুষ নিজেদের ইতিহাস—ঐতিহ্য রক্ষায় তৎপর। বরং এ ব্যাপারে সবাই খুবই সংবেদনশীল। তাতে সামান্য অঁাচ তাদের অনুভূতিতে আঘাত হানে। তাদের হৃদয়কে আহত করে। অথচ বর্তমানে সৌদি আরবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো বিলুপ্তপ্রায়। সৌদি শাসনামলের শুরু থেকেই তারা এর পেছনে নিজেদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব ব্যয় করছে।  বিদআত নিমূর্লের নামে ইসলামের সকল ঐতিহাসিক স্থান, বরকতময় স্থান ও বস্তুগুলো মিটিয়ে দিতে তারা তৎপর। বিশ্ব মুসলমানের প্রতিবাদ সত্ত্বেও তারা সেদিকে কর্ণপাত করেনি। আজ সৌদ পরিবারের সকল স্মৃতিবিজড়িত স্থান অতি গুরুত্বের সঙ্গে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এমনকি আমার দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করেছি যে, অভিনেতা সালমান খান কনসার্টে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব গেলে তার হাতের ছাপ সংরক্ষণ করা হয়েছে ঐতিহাসিক মর্যাদায়। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের স্মৃতিবিজড়িত স্থান সংরক্ষণ করা তো দূরের কথা, সেসবের নাম নিশানাও অবশিষ্ট রাখছে না। ভাবখানা তাদের এমন যে, পারলে তারা রওযা শরীফও মিটিয়ে ফেলত। এ সবই অতি বাড়াবাড়ি। এ ব্যাপারে আরও বিস্তারিত জানতে দেখুন, আসারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাতরে মে, মুফতী আবু লুবাবা শাহ মানসুর, সাঈদ; আসারে মুবারাকা কা তাহাফফুয, মাশআলে রাহ, খালেদ সাইফুল্লাহ রাহমানী : ৫৬—৬৪ আল মা’হাদুল আলী হায়দারাবাদ

 

শিল্প, সংস্কৃতি, বিনোদন ও পর্যটনকেন্দ্রের নামে বেহায়াপনার প্রচলন

সংস্কৃতি ও বিনোদনে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বর্তমান সৌদি সরকার কোমর বেঁধে নেমেছে। এ জন্য সরকার বিভিন্ন মেগা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে। আধুনিকায়নের নামে বিভিন্ন স্থানে বহুকালের পুরোনো মসজিদ ভেঙে সেখানে রাস্তা ও পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। রাষ্ট্রের আয় বাড়াতে ব্যাপকভাবে পর্যটন, শিল্প ও বিনোদনকেন্দ্র পরিবর্তন ও সংস্কার সাধন করছে। ইতোমধ্যে সংস্কারের রূপ কিছুটা হলেও বিশ্ববাসীর সামনে চলে এসেছে। গত নভেম্বরে জেদ্দা বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে কিছুদূর যাওয়ার পর বিশাল বিলবোর্ড চোখে পড়ল। তাতে লেখা ছিল, ‘আস সিনামা কুল্লু শাই’ (সিনেমা ইজ এভরিথিং—সিনেমাই সব)। এটি হলো সৌদি আরবের একটি নতুন শ্লোগান। এই শ্লোগান নিয়ে সেখানে চলছে সিনেমাপ্রেমীদের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা। দেশি—বিদেশি মুভি চলছে সিনেমাহলগুলোতে। জেদ্দা, রিয়াদসহ বড় বড় শহরে গানের কনসার্ট হচ্ছে। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের শিল্পীরা তাতে অংশ নিচ্ছে।

উদারতা ও পর্যটন শিল্পের নামে সব ধর্মের মানুষের জন্য জাযিরাতুল আরবের (আরব উপদ্বীপ) পবিত্র ভূমি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ঐতিহাসিক বিভিন্ন স্থানে ইউরোপ—আমেরিকার অর্ধনগ্ন নারীদেরকে আসার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। সামুদ জাতির ধ্বংসাবশেষের পাশ দিয়ে অতিক্রমের সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে বলেছিলেন, ‘তোমরা এই ধ্বংসাবশেষে ক্রন্দনরত অবস্থা ছাড়া প্রবেশ করো না। অন্যথায় তোমাদের উপর সে আযাব আসতে পারে যে আযাব তাদের উপর এসেছিল।’—সহীহ বুখারী, হাদীস : ৪৪১৯

আজ সামুদ জাতির ধ্বংসাবশেষ তামাশাস্থলে পরিণত হয়েছে। আজ তা বেহায়া নারী—পুরুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।

 

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হস্তক্ষেপ

সৌদি আরবের খালেস দীনি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও পরিবর্তন আনার চেষ্টা চলছে। হারামাইনসহ সৌদি আরবের মসজিদগুলোতে নিয়মিত কোরআন শিক্ষার আসর হয়। সেখানে বিশুদ্ধভাবে কোরআন মাজীদ তেলাওয়াত ও হিফয করানো হয়। কয়েক বছর যাবত এসব কোরআনের আসর থেকে মানুষকে দূর করার চেষ্টা চলছে। কাবা শরীফের সম্মানিত ইমাম, শায়েখ সালেহ আলে তালেব দা. বা. এই অবস্থা দেখে নীরব থাকতে পারেননি। কাবার মিম্বরে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, ‘মুনাফিকরা তাদের মঞ্চে বলে, তোমরা কোরআনের আসর বর্জন করো। আমরা আমাদের মসজিদের মিম্বর থেকে স্পষ্ট ভাষায় তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, হে মুসলমানগণ, তোমরা মুনাফিক ও বেঈমানদের অনুষ্ঠান বর্জন করো। তোমরা খোদাদ্রোহীদেরকে বয়কট করো। যারা এই সমাজে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা চালু করছে তাদেরকে বয়কট করো।’

 

হকপন্থী ওলামায়ে কেরামের উপর নির্যাতন

সৌদি প্রশাসনের এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে সেখানের হকপন্থী ওলামায়ে কেরামের অনেকেই মুখ খুলেছেন। তাদের এসব কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করেছেন। সরকার তাঁদের কথা না শোনে উল্টো দমন নীতি অবলম্বন করেছে। বিভিন্ন প্রকার মামলা দিয়ে প্রশাসন তাঁদেরকে গ্রেফতার করেছে। তাদের এই দমন—পীড়ন থেকে হারামের ইমাম—খতিবগণও রেহাই পাননি। এসবের বিরুদ্ধে খুতবা প্রদানের কারণেই হারামের সম্মানিত ইমাম ও খতিব, শায়েখ সালেহ আলে তালেব দা. বা. কে গ্রেফতার করে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। শায়েখ সালেহ আল মুনাজ্জিদ, শায়েখ আব্দুল আযীয আত তরিফী, শায়েখ সালমান আল আওদাহ, শায়েখ সিফির আল হাওয়ালী প্রমুখ আলেমগণ একইভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

 

কাফালা পদ্ধতি

সৌদি আরবসহ আরব রাষ্ট্রগুলোতে প্রচলিত অন্যায়, অযৌক্তিক ও অমানবিক একটি আইন হলো কাফালা পদ্ধতি। এর কারণে প্রায় সকল প্রবাসী শ্রমিকই জুলুমের শিকার হয়। ফুকাহায়ে কেরাম বলেছেন, কাফালার বিনিময় গ্রহণ করা নাজায়েয। ইসলামের দৃষ্টিতে কাফালা একটি সহমর্মিতা চুক্তি। তাই একে অন্যের সম্পদ আত্মসাতের উপায় বানানোর সুযোগ নেই। হঁ্যা, কাফিলের কোনো অর্থ ব্যয় হলে ন্যায়সঙ্গতভাবে সেটুকু সে গ্রহণ করতে পারবে, তার বেশি গ্রহণ করতে পারবে না। তাছাড়া সেখানে শ্রমিক ও গৃহকর্মীদের প্রতি নির্যাতনের দাস্তান তো আরও অনেক দীর্ঘ।

 

প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রতি আগ্রাসী মনোভাব

২০১৭ ঈসায়ী জুনের শুরুর দিকে সারা বিশ্বের মুসলমান সিয়াম সাধনায় রত। আকস্মিকভাবেই সৌদি মিত্রশক্তি (সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, বাহরাইন) কাতারের উপর নৌ—স্থল ও আকাশ পথে অবরোধ আরোপ করে। কাতারের একমাত্র স্থলসীমা রুদ্ধ হওয়ায় কাতার সাময়িক চাপের মুখে পড়ে। কাতারে খাদ্যের সবচেয়ে বড় যোগান আসত সৌদি আরব থেকে। সেসময় আমি স্বচক্ষে দেখেছি, দুই—তিন দিনেই কাতারের বাজারে চরম খাদ্য সংকট তৈরি হয়। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী কাতার পরিস্থিতি সামলে নেয়। তবে রমযান মাসে সৌদি আরবের মতো একটি মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিবেশী মুসলিম রাষ্ট্রের সঙ্গে যে আচরণ করেছে তা মুসলিম বিশ্বকে খুবই মর্মাহত করেছে। যে অভিযোগে কাতারের উপর অবরোধ আরোপ করা হয়েছিল তার কোনো সত্যতা আজও পাওয়া যায়নি। তিন বছরের অধিক সময় পর এই অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।

 

ইসরাইলের সঙ্গে সুসম্পর্ক

ইসলাম ও মুসলমানের চিরশত্রু ইহুদী জাতি। দখলদার ইহুদী রাষ্ট্র ‘ইসরাইল’ মধ্যপ্রাচ্যের বিষফেঁাড়া হিসেবে পরিচিত। অবৈধভাবে ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করে এই রাষ্ট্র জন্ম নেয়। ফিলিস্তিন, সিরিয়া, জর্ডান, মিশরের অসংখ্য মুসলমানের রক্তে রঞ্জিত তাদের হাত। অথচ বর্তমান সৌদি সরকার মুসলমানদের চেয়ে এই ইহুদীদের প্রতি অধিক সদয় ও কোমল। অন্যান্য আরব রাষ্ট্রগুলোও এখন ইসরাইলের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করছে। অচিরেই হয়তো সৌদি আরবেও ইসরাইলের দূতাবাস খোলা হবে। উদারতার নামে সৌদি সরকার নীতি—আদর্শ বিসর্জন দিচ্ছে। যাদেরকে খুশি করার জন্য এই বিসর্জন তারা কিছুতেই খুশি হবে না, যতক্ষণ মুসলমান নিজের ধর্ম ত্যাগ করে তাদের ধর্ম গ্রহণ না করবে।

সুধারণার কারণে ইতোপূর্বে সৌদি সরকারের অনেক কর্মকাণ্ডের ভালো ব্যাখ্যা আমরা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমরা মনে করেছিলাম এসব আইনি জটিলতা, ফিকহী মতভেদ সৌদি সরকারের অগোচরে, সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র। আমাদের ধারণা ছিল, মুসলিম জাতিকে সৌদি সরকার থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য, তাদের প্রতি বিরূপ ধারণা সৃষ্টি করার জন্য পরিকল্পিতভাবে অন্য কেউ এসব ঘটাচ্ছে। সৌদি প্রশাসন ও মুসলিম জাতির মধ্যে থাকা আস্থা নষ্ট করার জন্য কোনো সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। (সৌদি হুকুমত আওর উম্মতে মুসলিমা মে ইতিমাদ কি জরুরত, মুফতী রফিক আহমদ বালাকোটি, মাহনামা বায়্যিনাত, রবিউস সানী ১৪৩৮ হি.) কিন্তু আমাদের ধারণা ভুল ছিল। এমন সুধারণার সুযোগ এখন আর দেখা যাচ্ছে না। ইসলাম ও মুসলমানের শত্রুদের সঙ্গে হাত মেলানোর পর তাদেরকে ইসলামের কান্ডারি মনে করার অবকাশ কোথায়?

আল্লাহ তাদের সুমতি দিন। সৌদি শাসকদের খেদমতের (?) এই ধারা অব্যাহত থাকলে অচিরেই মুসলিমবিশ্ব প্রতিবাদে সোচ্চার হবে। মুসলিম উম্মাহ সৌদি বা অন্য কারও বলয়মুক্ত স্বতন্ত্র হিজাযের দাবি করবে। তাতে আশা ও আশঙ্কা দুটোই রয়েছে। সৌদি প্রশাসনের প্রতি যেমন অনাস্থা তৈরি হয়েছে, অন্য মুসলিম শাসকগণের প্রতিও আস্থার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তবে ইসলামে হতাশার কোনো স্থান নেই। কেউ তো অবশ্যই এগিয়ে আসবে, জালেমদের থেকে বিশ^ মুসলিমের অধিকার ছিনিয়ে আনবে, হারামাইন শরীফাইনের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে, ইনশাআল্লাহ।

লেখক, মুফতী ও মুহাদ্দিস, মারকাযে তালীমুল কুরআন মাদরাসা, সাইনবোর্ড

লেখক সম্পর্কে
Avatar

zobayer

একটি কমেন্ট করুন