তাফসীরুল কুরআনিল কারীম
সূরায়ে মুমিন
এ সূরা মক্কী, আয়াতসংখ্যা ৮৫
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ
আল্লাহর নামে শুরু করছি যিনি অতি দয়ালু ও অতি দয়াবান
حٰمٓ ۚ﴿۱﴾ تَنْزِیْلُ الْکِتٰبِ مِنَ اللهِ الْعَزِیْزِ الْعَلِیْمِ ۙ﴿۲﴾ غَافِرِ الذَّنْۢبِ وَ قَابِلِ التَّوْبِ شَدِیْدِ الْعِقَابِ ۙ ذِی الطَّوْلِ ؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ؕ اِلَیْهِ الْمَصِیْرُ ﴿۳﴾
অনুবাদ : حٰمٓ এর অর্থ আল্লাহ তাআলা—ই জানেন। এই কিতাব নাযিল হয়েছে আল্লাহর পক্ষ হতে, যিনি অতি পরাক্রমশালী এবং সমুদয় বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত। গোনাহ ক্ষমাকারী ও তওবা কবুলকারী, কঠিন শাস্তি প্রদানকারী, মহা ক্ষমতাধর, তাঁকে ব্যতীত আর কেউ ইবাদতের যোগ্য নয়, তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে।
তাফসীর
حٰمٓ : কতেক মুফাসসিরের মতে এটি আল্লাহ তাআলার নাম। কিন্তু পূর্ববর্তী ইমামগণের মতে এটি সূরাসমূহের শুরুতে উল্লেখিত ওই সমস্ত কাটা হরফের অন্তর্ভুক্ত, যেগুলোর অর্থ একমাত্র আল্লাহ তাআলা জানেন।
সূরায়ে মুমিনের ফযীলত ও বিশেষত্ব
বিভিন্ন হাদীসে উক্ত সূরার বহু ফযীলতের কথা বর্ণিত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে মাত্র কয়েকটি উল্লেখ করা হচ্ছে।
মুসনাদে বায্যারে হযরত আবু হুরায়রা রাযি. হতে বর্ণিত আছে—রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি দিনের শুরুতে আয়াতুল কুরসী এবং সূরায়ে মুমিনের প্রথম তিন আয়াত (অর্থাৎ শুরু থেকে اِلَیْهِ الْمَصِیْرُ পর্যন্ত) পড়বে, সে ওই দিন সর্বপ্রকার বিপদাপদ ও বালা—মুসিবত থেকে নিরাপদ ও মুক্ত থাকবে।—ইবনে কাসীর
আবু দাউদ ও তিরমিযীতে সহীহ ও বিশুদ্ধ সনদে মুহাল্লাব ইবনে আবি সাফ্রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার কাছে এমন ব্যক্তি বর্ণনা করেছেন যিনি খোদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছেন যে, (কোনো এক জিহাদে রাত্রে হেফাজতের জন্য) তিনি বলেছিলেন, যদি রাত্রে তোমাদের ওপর হামলা হয় তাহলে حٰمٓ لا ينصرون পড়বে, অপর রেওয়ায়েতে আছে حٰمٓ لا ينصروا অর্থাৎ তোমরা حٰمٓ পড়লে তোমাদের শত্রুবাহিনী কামিয়াব হতে পারবে না।
একটি বিস্ময়কর ঘটনা
হযরত ছাবেতে বুনানী বর্ণনা করেন, আমি হযরত মুসআব ইবনে যুবাইর রাযি.—এর সাথে কুফার কোনো এক এলাকায় ছিলাম। কোনো একপর্যায়ে আমি একটি বাগানে চলে গেলাম এ উদ্দেশ্যে যে, সেখানে দু—রাকাত নামায পড়ব। আমি নামায পড়ার আগে সূরায়ে মুমিনের প্রথম তিন আয়াত (অর্থাৎ حٰمٓ থেকে اِلَیْهِ الْمَصِیْرُ পর্যন্ত) পাঠ করলাম। হঠাৎ দেখতে পেলাম একজন ব্যক্তি একটি সাদা খচ্চরের ওপর আরোহণ করে আমার পেছনে আসছে। তার পরনে ছিল ইয়ামানী কাপড়। সে আমাকে বলল, যখন তুমি غَافِرِ الذَّنْۢبِ পড়বে তখন সাথে সাথে এ দুআ পড়বে,
ياَ غَافِرَ الذَّنْبِ اِغْفِرْلِيْ
‘হে গোনাহ ক্ষমাকারী! আমাকে ক্ষমা করে দিন।’
যখন قَابِلِ التَّوْبِ পড়বে তখন সাথে সাথে পড়বে,
يَا قَابِلَ التَّوْبِ اِقْبَلْ تَوْبَتِيْ
‘হে তওবা কবুলকারী! আপনি আমার তওবা কবুল করুন।’
যখন شَدِیْدِ الْعِقَابِ পড়বে তখন সাথে সাথে পড়বে,
يَا شَدِيْدَ الْعِقَابِ لَا تُعَاقِبْنِيْ
‘হে কঠিন শাস্তি প্রদানকারী! আমাকে শাস্তি দেবেন না।’
আর যখন ذِی الطَّوْلِ পড়বে তখন সাথে সাথে পড়বে,
يَا ذَا الطَّوْلِ طُلْ عَلَيَّ بِخَيْرٍ
‘হে অনুগ্রহশীল! আপনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করুন।’
হযরত ছাবেতে বুনানী রহ. বলেন, আমি এ উপদেশ শুনার পর এদিক—ওদিক তাকালাম, কিন্তু কাউকে পেলাম না। আমি ওই ব্যক্তির অন্বেষণে বাগানের দরজা পর্যন্ত গেলাম এবং মানুষকে জিজ্ঞাসা করলাম, তোমরা এমন একটি লোককে দেখতে পেয়েছ কি! কিন্তু কেউ তার সন্ধান দিতে পারল না।
ছাবেতে বুনানীর অপর এক বর্ণনামতে ওই লোকটি ছিলেন হযরত ইলিয়াস আলাইহিস সালাম।—ইবনে কাছীর
غَافِرِ الذَّنْۢبِ وَ قَابِلِ التَّوْبِ : ‘গোনাহ ক্ষমাকারী, তাওবা কবুলকারী।’ দুটির অর্থ যদিও প্রায় একই তা সত্ত্বেও ভিন্ন ভিন্নভাবে আনা হয়েছে এবং প্রথমে غَافِرِ الذَّنْۢبِ ‘গোনাহ ক্ষমাকারী’ উল্লেখ করার মাধ্যমে এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা তাওবা ছাড়াও কারও গোনাহ ক্ষমা করে দিতে সক্ষম। আর তাওবাকারীদের ক্ষমা করে দেওয়া ভিন্ন এক বিষয়।
[মাআরেফুল কুরআন থেকে সংকলিত]